Monday, April 28, 2014

চিন্তা চুরি

হারু এসে বললে বাবা জানো,
আমার পদ্য চুরি করে প্রথম হল পানু ;
বাবা বলেন , কি বলছিস বলতো ;
তুই যে ভাল পদ্য লিখিস এ কথা সে জানতো ?
কেমন করে পদ্য করে চুরি !
পদ্য তো নয় ছোলা কিম্বা মুড়ি ।
হাত দিয়ে তো যায়না  ধরা তা কে,
যত্ত সব আজব কথা,  যা তো এখান থেকে ।

হাত দিয়ে নাইবা ধরা গেল,
বুদ্ধি দিয়ে চুরি করে নিলো ।
কেমন করে ছন্দ-মিলে কথা বলতে পারি,
সেটা যখন মাথায় আমার এলো-
চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম তাকে ।
ভাব একবার !!
চুরি করে নিলো চিন্তা টা কে ।
আমার লেখা প্রকাশ হবার আগে ;
নিজে একটা মস্ত লিখে দিল ,
সবাই বললে ‘হিরের টুকর’ তাকে
তাই সে প্রথম হল ।

বাবা বলেন শোন রে তোকে বলি
যত ই আমরা ভেবে চিন্তে চলি,
এমন সব ধনি ঘরের চোর ,
 চালাক চতুর ভীষণ ধুরন্ধর 
অন্য  কিছু নতুন চিন্তা করে ,
শিগগিরি দে ইন্টারনেট এ ভরে ।
যা গেছে তা যাবার ছিল তোর ,
কিন্তু এবার ভয়টা পাবে চোর ;
ইন্টারনেট এ সময় দেখা যায় ।
চিন্তা চুরি অত্ত সোজা নয় ।
প্রথম চিন্তা নাম করা সেই চোর,
নিলেই বা কি -সব রাত ই হয় ভোর ।।
এখন থেকে চিন্তা চুরি গেলে
ধরবে পুলিশ সময় বোঝা গেলে ।




Friday, April 25, 2014

তুমি আমায় কর চুরি

যত ই লিখি গল্প টল্প
কবিতা আর ছড়া
সব লেখার ই ভিতর আছে
তোমার সুত্র ধরা
জীবন  থেকেই নেয়া  তো সব
তার বাইরে কিছুই নেই
লিখি যখন মনের মধ্যে
তোমার অনুভব
কবি তুমি শিল্পী তুমি
গায়ক সাহিত্যিক
বলি যদি আমার লেখা
আমার অহংকার কে ধিক
তুমি যখন  সূর্য হয়ে আলো জ্বালাও  প্রাণে
ডগমগিয়ে মনটা ছোটে
কবিতা আর গানে
অনেক সময় পাইনা খুঁজে
কোথায় যে যাও চলে
বন্ধ খাঁচায় বন্দী পাখি
ভাসে চোখের জলে
ভিড়ের মাঝে হটাত ছোঁয়া
এদিক ওদিক চাই
মিটমিটিয়ে হাসছ বসে
আমারই প্রাণটায় ,
যতদিন জীবন আছে আমি তোমায় ধরি
ফুরিয়ে  গেলে জীবন তুমি আমায় কর চুরি

Wednesday, April 23, 2014

যখন চুলে পাক ধরে

তোর প্রেম তোকে ফিরে চায় ;



যখন চুলে পাক ধরে
লোল চর্ম তবু ও জান্তব ক্ষুধা 
কিছু চায় 
কি করে তখন ?
তখন কি করে ফিরে পায়
আত্ম বিশ্বাস !
হৃদয়ের লজ্জা টা কে কোথায় লুকায়?
মন ডাকে ফিরে আয় 
মনের ভিতর - সেখানে সান্ত্বনা 
তোর প্রেম তোকে ফিরে চায় ;

তুমি ফিরবে না আর এমনি তো মনে হয়

যখন স্বপ্ন দেখার মন পরে থাকে,
আকাশে বাতাসে নি:শ্বাসে 
অভিলাষে ,
চোখের তারায় রোমে কূপে রোমে কূপে;
শুধু সান্ত্বনা মেলেনা যে
বিশ্বাসে 
তুমি ফিরবে না আর এমনি তো মনে হয়

আমার সত্য লজ্জা পায় ..

কিছুটা বাস্তব হতে ও পারে না ও বা
তবু ও ভালবাসা টুপ টাপ ঝোরে পরত যদি
মালিন্য বর্জিত
হয়না আজকাল আর কোনো সম্পর্ক
টাকা টাকা শুধু টাকা উঁকি মারে
যত কিছু চাওয়া পাওয়া আছে
যত খানি সুযোগ সুবিধা
সন্ধানী দৃষ্টি খুঁজে ফেরে
অসহায় মনটা শুধু ভালবাসা চায়
জীবনের কোনায় কোনায় 
ভরে গেছে লোভে 
মনটা আমার ফেটে পরে ক্ষোভে 
মিথ্যা নিয়ে বাঁচি কি করে যে
পাঁজর ফাটিয়ে কেঁদে মরি 
তবু মিথ্যা 
বলবে সে চোখ বুঁজে 
জোরে আরো জোরে মিথ্যা বলে যায়
আমার সত্য লজ্জা পায় ..

হলুদ গোলাপ

https://www.facebook.com/valobashaunlimited/posts/768838239802813?stream_ref=10
copy write of this story belongs to 'bhalobasar golpo'
© এই গল্পের সর্বসত্ত্ব ভালবাসার গল্প সংরক্ষণ করে।

হলুদ গোলাপ

ভাদ্র মাসের দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তবু যেন  গনগনে আগুন ঢালছে শরীরে  , ভাপসা গুমট আকাশ ঢাকা সাদা মেঘে কিন্তু বৃষ্টির নাম গন্ধ নেই - ঠিক যেন সতের তে পা রুবিনার নরম হৃদয় .

এক মাস হলও রুবিনার বাবা রোমানি দে মশাই  , স্ত্রী , পুত্র কন্যা সমেত উত্তর কলকাতার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতার  প্রান্ত দেশে একটি নূতন ফ্ল্যাট বাড়ি কিনে উঠে এসেছেন ; এ বাড়িতে সতের বছরের রুবিনার নিজস্ব ঘর, লাগাও স্নানঘর আর আছে, আছে  ছোট্ট একটি বারান্দা,  সে বারান্দায় পাঁচিলে হাতের তালুতে থুতনি রেখে রুবিনা বিষাদ প্রতিমার মতন বসে আছে,  শূন্য দৃষ্টি , ভারাক্রান্ত মনেতার শিশুকাল কাল হারিয়ে গেল হারিয়ে গেল শিশু কালের খেলার যত সাথী যত স্মৃতি

হটাত কেউ ডেকে বলল 'রঞ্জন বাড়ি আছে?' নিচে দুটি যুবক মুখ তুলে চেয়ে আছে, হলুদ পাজামা পাঞ্জাবিতে যেন মহাভারতের অর্জুন , যেমন ঋজু চেহারা তেমনি অন্তর্ভেদী দৃষ্টি , দৃষ্টির তির প্রথম দর্শনে অন্তরের অন্তঃস্থলে আঘাত করেছে,রুবিনা বিহ্বল ; বাক্যহীনা,

রঞ্জন বাড়ি নেই!  একটু যেন বিরক্ত প্রশ্ন কর্তা অর্জুনের সাথী কোনও এক অচেনা যুবক

না না  আছে আছে , বিব্রত রুবিনা ছুটতে ছুটতে গিয়ে  বলে দাদা তো কে ডাকছে?
কে?
অর্জুন!
কি?  রঞ্জন অবাক !
না না  তোর দুটো বন্ধু,  আমি চিনিন
তবে অর্জুন বললি কেন , আশ্চর্য!
কোনও মতে পালিয়ে বাঁচে রুবিনা
সেদিন রাতে রুবিনা এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখল । এক গোলাপ বাগান, সেখানে শুধুই হলুদ গোলাপ, রাশি রাশি
সূর্যের কিরণের মতন, সোনার ফুলের মতন হাসছে। সুন্দর একটা বাজনা ও শুনতে পেল রুবিনা, আর স্বপ্নের মধ্যেও মনে হল, গোলাপ তো গন্ধ ছড়ায়, বাজনা বাজাচ্ছে কেন। কিন্তু রুবিনা যত গোলাপ ধরতে যায়, সব সরে সরে যায়, কিছুতেই আর হাতের নাগালে আসেনা । সুখের স্বপ্ন কেমন করে দু;স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়, আর দুরু দুরু বুকে ঘুম থেকে জেগে উঠে বসে রুবিনা।
======
রুবিনার অর্জুন দীপক দত্ত রঞ্জনের কলেজের সিনিয়র ছাত্র এখন পার্ক্সট্রীট অঞ্চলে  একটি বহু জাতি প্রতিষ্ঠণে বড় পদে অধিষ্ঠিত , মোটা মাইনের চাকরি , বহু মেয়ের বাবার আশার আলো ।

সেই দীপক গত দু মাস পার্ক-স্ট্রীট মেট্রো স্টেশনে সতের বছরের রুবিনা কে একবার দেখেই হৃদয় হারিয়ে বসে আছে। দেখে নিবেদিত প্রাণ
রুবিনা উজ্জল শ্যাম বর্ণ,  পানপাতা মুখে  চাঁদের মতন কপাল, নরম ফোলাফোলা ফুলের পাপড়ির মতন দুটি ওষ্ঠ,  নিষ্পাপ দুটি কাজল টানা চোখ , সে চোখে  স্বপ্ন
তার লম্বা বিনুনি কোমর ছাড়িয়ে যায়,লম্বা লতানো দেহে   দুটি সুডৌল ঈষৎ  ভাড়ি স্তন আর ভারী নিতম্ব যেন কালিদাসের শকুন্তলার কথা মনে পরিয়ে দেয়।

দু টি মাস বহু চেষ্টা করে ও রুবিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অক্ষম দীপক রুবিনা রোজ মেট্রো স্টেশনে  নেমে লরেট কলেজে যায়, কিন্তু তার চোখ এদিক ওদিক দেখেনা, শান্ত, গম্ভীর ও লাজুক মেয়ে তার আশে পাশে তাকিয়ে দেখেনা ।

নিরুপায় দীপক রঞ্জন এর এক সতীর্থ কে ধরে দীপকের বাড়ি হাজির , অজুহাত অযাচিত উপকার রঞ্জন অর্থবিজ্ঞানের ছাত্র, আর দীপক সে বিষয়ে পড়া শেষ করেছে। তার কাছে অনেক কঠিন কঠিন, দুষ্প্রাপ্য বই আছে। দুজনার বন্ধু মনিদুলের সঙ্গে গিয়ে দীপক রঞ্জনের খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। এত বার আসে যায় কিন্তু কোনও দিনও রঞ্জনের বোনের সঙ্গে আলাপ হয় না। রঞ্জন রা রক্ষনবর্তী পরিবার, একটু সেকেলে, তাই দাদার বন্ধুর সঙ্গে বোনের মেলা মেশা পছন্দ করবে না।
কিন্তু দেখা হয় প্রায় প্রতি বার। হয় এক কাপ চা হাতে, অথবা এক গ্লাস জল, না হলে প্রায় বিনা কারণে একবার করে রুবিনা ঠিক দাদার ঘর থেকে ঘুরে আসে । দুজনের চোখে চোখে কথা হয়, মন দেওয়া নেওয়া হয় , হাসি বিনিময় হয়, তবে সবার অলক্ষ্যেহয়ত একটু জানিয়ে করলে ভাল হত।
রুবিন এখন কারনে অকারনে চমকে চমকে ওঠে, কেউ কি তার নাম ধরে ডাকল-রুবিনা, না না, মনের ভুল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অকারনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। মনে অনে গুন গুন করে। মা মেয়ের রকম দেখে ভাবেন -মেয়ে আমার বড় হয়ে গেল ।
এদিকে দীপক উপায়ন্তর না দেখে রঞ্জনের কাছে তার বোনের সংগে বিয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করল । রঞ্জন খুশী, এ তো খুব ভাল কথা, তবে
দীপক-দা আমি এক বার বাবা মা কে বলে দেখি কেমন!
বহুত খুব। মনের অনন্দে দীপক সূর্য হয়ে জ্বলে উঠল ।

রুবিনা যখন কলেজ থেকে সবে ফিরেছে তাকে বাবা মা আর দাদা ডেকে পাঠালেন।
কি হল আবার, হটাত জরুরী তলব ।
শোন মা, বাবা বললেন, তোর জন্য খুব ভাল একটা সম্বন্ধ এসেছে ।
কথা শেষ হতে পারল না, রুবিনা, কেঁদে কেটে একাকার। কেন আমি কি তোমাদের ঘারে বোঝা হয়েছি, হটাত বিয়ের সম্বন্ধ দেখছ । বিয়ে টা তো পাশ করতে দাও ।
এক ছুটতে ঘরে গিয়ে দড়াম করে দরজা দিল মেয়ে ।

বাবা, মা, দাদা কি বুঝলেন, এমন ভাবে বল্লে কি আর বিয়ের কথা তোলা যায়। সত্যি তো রুবিনা র কি বা বয়স, এত তাড়ার কি আছে, যদিও দীপক ভাল পাত্র, পালটি ঘর তবু মেয়ের মনে দুঃখ দেওয়া যায় না।

অতএব  দীপক কে গিয়ে রঞ্জন অনেক ক্ষমা তোমার চেয়ে বলল, ভাই তোমার মতন সুতপাত্র খুঁজলেও পাবনা , কিন্তু কি করি বল, একটি বোন, তার অনিচ্ছায় তো বিয়ে দেওয়া যায় না। রুবিনা এখন বিয়ে করবেনা ।
কোথাও একটা ভূমিকম্প হল কি? দীপকের কান ধরে সবার সামনে কেউ চড় মারল কি? কি অপমান, কি লজ্জা, কি ভয়ানক মেয়ে, এত ছলা কলা জানে, দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা। ছিঃ, নিজেকে যেন প্রকাশ্য রাস্তায় উলঙ্গ আবিষ্কার করল দীপক। নাঃ আর অপেক্ষা করা নয়, এর উচিত জবাব দিতে হবে।

বাবা মা একটি পাত্রী পছন্দ করে রেখেছিলেন, ভাল মেয়ে, ভাল ঘর, ভাল দেবে থোবে । অতএব সামনের বিয়ের তারিখেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল । শিলা ও দীপক মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে সিঙ্গাপুর গেছে। রঞ্জন বন্ধুর বাড়ি বিয়ের নিমন্ত্রন রক্ষা করতে গিয়ে দেখল সত্যি অনেক বড় ঘরে বিয়ে করেছে দীপক, গোল গাল ফরসা ফুলের মতন বউ, মাথা থেকে পা অবধি সোনায় মোড়া। নাঃ এ ঘরে নিজের বোন কে দিতে পারত না তারা, মধ্যবিত্য মানুষ। ভালই হয়েছে রুবিনা রাজি হয়নি।

রুবিনা তার আপন খেয়ালে থাকে, তাই দাদা কার বিয়েতে খেয়ে এল, জিজ্ঞসা ও করেনা, তার মন এক তারে বাঁধা, এক জনার ধ্যান প্রাণ জুরে ।।

এদিকে প্রায় তিন মাস হতে চলেছে, অর্জুনের দেখা নেই। দাদার আরও কত বন্ধু আসে যায়, মনিদুল ও আসে, কিন্তু সে কেন আসেনা । এক দিন আর থাকতে না পেরে রুবিনা দাদার ঘরে এক কাপ চা নিয়ে উপস্থিত, এই নে চা খা, অরে বাবা এ তো মেঘ না চাইতেই জল, ধন্যবাদ ভগিনী, তোমার মতন ভগিনী যেন ঘরে গরে, না ভাইয়ে ভাইয়ে থাকে।
ইয়ার্কি মারিস না দাদা। আচ্ছা তোর সেই বন্ধুটা কে তো আর দেখি না , অন্য কোথাও চলে গছে?
কোন বন্ধু, কার কথা বলছিস বল তো?
ঐ যে একটা হলুদ পাঞ্জাবী পরে এসেছিল...
হলুদ পাঞ্জাবী...ওহ দীপকের কথা বলছিস, ওর তো বিয়ে হয়ে গেল, এখন সিঙ্গাপুরে গেছে মধুচন্দ্রিমা করতে।
কি হল রুবিনা, চোখ ঘষছিস কেন?
কি যেন একটা পরেছে চোখে, দেখছি জল দিয়ে, ছুটতে নিজের ঘরে, স্নান ঘরে দরজা দিল। অর্জুন বিয়ে করেছে, কি করে, কি করে পারল? এ কি সত্যি, না ভুল শুনছে। অসম্ভব, দাদা ভুল জানে, কেউ মিথ্যা কথা বলেছে । এ হতে পারেনা , কিছুতেই হতে পারেনা।
স্নান ঘরে চোখে মুখে জল দিয়ে ঘরে এসে বসল রুবিনা- একটা কেমন ঘোর লাগা অবস্থা তার
রঞ্জন তার ঘরে এসে বলল, কি হল, চোখে জল দিলই! হ্যাঁ গো, ও কিছু না, যত রগড়াব তত আরও লাল হয়ে যাবে। রুবিনা এড়াতে চায়।
রঞ্জন তবু দাঁড়িয়ে থাকে। আচ্ছা আমাকে ঠিক করে বলত, দীপক কি তোকে কিছু বলেছিল, মানে বিয়ে করার কথা টথা! রুবিনার মুখের হাঁ টা বড় হয়ে ঝুলে পরে, কি!
না, মানে আমি জানি সেরকম কিছু হলে তুই ঠিক আমাদের জানাতিস। কিন্তু যখন দীপক বিয়ের প্রস্তাব দিল আম্ররা ভেবে ছিলাম তোর ও মত আছে।
বিয়ের প্রস্তাব, আমার ও মত...।তুমি কি বলছ যা তা, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা দাদা ।
তোর মনে নেই, একদিন তুই কলেজ থেকে যখন ফিরলি, বাবা তোকে একটা বিয়ের করা বললেন আর তুই রেগে মেগে অস্থির হয়ে গেছিলি।
হ্যাঁ তো!
দীপক তোকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি ভাবলাম বুঝি আমার আড়ালে তোরা দুজনে কথা টথা বলেছিস। তুই যখন না বলে দিলি, আমি দীপকের কাছে গিয়ে বললাম, আর দীপক কে দেখে মনে হল যেন আকাশ থেকে পড়ছে, যেন আমি হিব্রু বলছি, যেমন এখন তুই করছিস । যাক বাবা, তোর দিক থেকে কোনও আকর্ষণ ছিলনা যেনে নিশ্চিন্ত হলাম। রঞ্জন খুশী মনে বিদায় হল,।
জানতে পারল না তার কথা গুল হিব্রু নয় জ্বলন্ত কয়লার মতন তার আদরের বনের হৃদয়ে গেঁথে  যাচ্ছে। সারারাত কেঁদে ভাসাল রুবিনা। ভগবান তুমি নেই, তুমি কোত্থাও নেই। কি করে এত বড় অনর্থ হতে দিলে। দীপক তুমই আমাকে একবার ও কেন জানালেনা। আমি কি করে বাঁচব, অর্জুন, আমার অর্জুন ছাড়া, আমি যে অপূর্ণ,। সকাল বেলা বালিশ ভেজা, চোখের পাতা লাল, ফোলা । সবার অলক্ষ্যে মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াল রুবিনা। তরুন হৃদয়ের প্রথম প্রেম গোলাপের পাপড়ি যেন কেউ জুতোর তলায় ডলে দিয়েছে ।
প্রথম প্রেম, অনেক দিন সাথ দেয়, রুবিনাকেও দিল । তবু বছর খানেক পরে, কোনও দৈব শক্তির অলৌকিক উপকার এর আশা ছেড়ে \দিয়ে, বাবা মায়ের পছন্দ করা অধ্যাপক পাত্র গলায় মালা দিল রুবিনা। লাল চেলি, জোড়, সোনার সাজে যেন স্বপ্নের রাজকন্যা, বর বাবাজীবন খুব খুশী। তাকেও দেখতে সুদর্শন, সুপুরুষ, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সংবেদনশীলঅধ্যাপকের নাম অর্জুন রায় । নাম দেখে ঘৃণায় মুখ কুঁচকে উঠেছিল রুবিনার। না তার দীপক ছাড়া আর কারো নাম অর্জুন হতে পারেনা, মানায় না।
রুবিনা যেন একটি যন্ত্র , গায়ে হলুদ, শুভ দৃশটি, মালা বদল হয়ে গেল, সে টের পেলনা।
বিয়ে করে অধ্যাপক বউ নিয়ে বাড়ি গেলেন । বৌয়ের মুখে হাসি নেই, শুকন কাঠ ,বাড়ির লোকেরা বলাবলি করে।
অর্জুন বলেন, কম বয়সী মেয়ে, সবাই কে ছেরে এসেছে, একটু সময় দাও । সবাই বলে, বা-বাঃ আধিখ্যেতা, এখনি এই, দুদিন পরে কি হবে।
বৌভাতের রাতে, ঘরে দরজা দিয়েই খাটের একধারে ঘুটি-শুটি শুয়ে পরল , আমার ঘুম পাচ্ছে। অন্ধ্যাপক ধীর স্থির , তবু মনের কোনায় একটা কঠিন আঘাত নি;শব্দে সয়ে নিলেন।
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও, সামান্য হাসলেন অধ্যাপক।
সাতটা দিন কেটে গেল, বউ কথাও বলেনা, সর্বক্ষণ বাড়ির আর পাঁচজনের কাছে কাছে ঘোরে, আর রাত হলেই  এক পাশে ঘুম।
অধ্যাপক পরম স্নেহশীল এবং উদার চরিত্র। তিনি কোনও জোর খাটান না। অধ্যাপক স্বামীর এ হেন উদাসীনতা যে রুবিনার অবচেতনে একেবারেই দাগ কাটেনা সে কথা বলা ঠিক হবেনা । অবসর সময় রুবিনা ও ভাবতে বসে, তাহলে কি তাকে তার স্বামীর মনে ধরেনি। উপেক্কা করে আর উপেক্ষিত হওয়ার মধ্যে অনেক খানি ফারাক থাকে। আমি কোনো নারী ই উপেক্ষিত হতে চায় না। বরং স্বামীর এমন উদাসীন অবস্থান রুবিনাকে অন্তরমুখী করে তোলে। সে কি অন্যায় করছে। উনি কেন নিজে থেকে কথা বলেন না এমন নানা কথা প্রথম প্রেমের অপ্রাপ্তির থেকে রুবিনা কে অনেক খানি অন্যমনস্ক করে রাখে।

অষ্টমঙ্গলার দিন দু-জনে প্রথা মতন মেয়ের বাড়ি গেলেন। ঠিক সেইদিন ই দীপক তার বৌ শিলা কে নিয়ে দীপকের বাড়ি এসেছ। দীপক ও রুবিনার চার চোখের মিলন কিন্তু সে রকম কোনো কাঙ্খিত সারা জাগায় না রুবিনার মনে।দীপকের  হিরের বোতাম সজ্জিত পাঞ্জাবী , এবং তার স্ত্রী শিলার গয়নার আধিক্য , কেমন যেন  অঞ্জলী জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপন মনে  করিয়ে দেয়। দীপক কি তাহলে অর্থলোভী !

বিপরিতে তার সাধাসিধা স্বামীটিকে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য মনে হয় রুবিনার।

রঞ্জন পরস্পরের আলাপ করিয়ে দিতে গিয়ে একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারলনা,
অর্জুন-দা, দীপকের সাথে আমার বোনের বিয়ের কথা হয়েছিল, তাহলে আর রুবিনার অর্জুন প্রাপ্তি হত না
দীপক, সামান্য লজ্জা ঢাকতে বলে উঠল, ভাগ্যিস না বলেছিল ,না হলে তো আমার শিলা কে পেতাম না, হি হি হি হি।। কোথাও যেন রিন রিন শব্দে কাঁচ ভেংগে পড়ল। কোথায় আবার রুবিনার কানে।
রুবিনা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে, এটা দীপকের কণ্ঠস্বর, দীপকের হাসি, ঠিক যেন এক সুরেলা মেয়েলি হাসি, সরু মিহি স্বর।
নিজের অজান্তে নিজের বুকে হাত দিয়ে অন্তর্যামী কে ধন্যবাদ দেয়।  এমন এক মেয়েলি গলার পুরুষের প্রেমে পড়েছিল সে। এর গলায় প্রেমের কথা কেমন শোনাত ভেবেই বুক শুকিয়ে আসে। অত্যন্ত অন্যায় ভাবে তার এখন মনে হয়, যার অমন মেয়েলি হলুদ পাঞ্জাবি পছন্দ তার সব কিছুই মেয়েলি হবে ই তো। অথছ এই হলুদ পাঞ্জাবীই তাকে মুগ্ধ করেছিল, সে কথা আর মনে এলনা।
অর্জুন স্ত্রীকে লক্ষ করে বলেন, কোনও কষ্ট হচ্ছেনা তো তোমার।
অর্জুনের দৃপ্ত গাড় পুরুষালী কন্ঠস্বর যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতন রুবিনার কানে প্রবেশ করে। যেন অর্জুনের শব্দভেদী তির। এতদিন যাকে সযন্তে উপেক্ষা করে এসেছিল তাকে আজ বড় বেশী করে পুরুষালি এবং উদার চরিত্র বলে মনে হল। না তার স্বামী তার প্রতি উদাসীন নন।
বড় বড় আয়ত নিবিড় প্রেম পূর্ণ দৃষ্টিপাতে অর্জুন কে সিক্ত করে রুবিনা বলে, যেন আজ ই তাদের শুব দ্নৃষ্টি সস্মপন্ন হল গো আমি একটা হলুদ গোলাপ বাগানের কথা ভাবছিলাম।