সুনীতা !
চমকে উঠলাম । কি কি রহিত! কোথায় তুমি রহিত । কি হয়েছে বলনা আমায়। আবার , আবার, আবার তুমি ডাকলে – কি আকুতি তোমার স্বরে – আমি আসছি । কবে থেকে আমি তোমার এই ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, সারাদিন, সারারাত, নাওয়া, খাওয়া, শোয়া, সব কিছুর ওপাড়ে তোমার ডাক আসবে, আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারনা , তুমি আমার, শুধু আমার । এরা কেউ কিচ্ছু জানেনা । কি বলে জান, বলে তুমি নাকি চলে গেছ অনেক দূরে, আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা আমার কাছে । কি বোকা এরা না! জানেনা তুমি আমার স্বপ্নে আস, আমরা চুপি চুপি কথা বলি । মাঝে মাঝে ওই জানলার ওপারে তুমি এসে দাঁড়াও, আমায় হাতছানি দিয়ে ডাক । কিন্তু যাব কি করে, এরা যে আমায় বন্দী করে রেখেছে এই ঘরে । আজ কেন কেউ বাড়িতে নেই, আমার ঘরের দরজাও খোলা । আমি আসছি , আমি আসছি রহিত । কোনো সারাশব্দ নেই । নিঃশব্দ, নিঃঝুম বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় । আমায় যেতে হবে তোমার কাছে । কোথায় তুমি রহিত । ঐ তো, ঐ দূরে ভীরের মধ্যে মিশে চলেছ । তোমার ধুসর জামা, ধুসর প্যান্ট আমি ঠিক চিনতে পারছি । কেন লুকোচুরী খেলছ আমার সঙ্গে । তুমি ঈশারা করছ আমায় ! হ্যাঁ হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি , আমাদের লুকিয়ে চলতে হবে । তাই না! না হলে যে ওরা জানতে পেরে যাবে ।আমার ঠোঁঠের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে গেল । আর কত দূর রহিত, কত পথ তো হাঁঠলাম । আর কেন, এবার এস কাছে । আমি যে হাঁপিয়ে পড়েছি । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । এই ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে বেড়ে ঢাকের মতন ধক ধক করবে, আমি ভীষন ভয়ে কুঁকরে যাব । রহিত, লক্ষিটি আর দেরি কোরোনা । আমি কোথায়, এটা কোন রাস্তা । এখন কি দুপুর না সন্ধ্যে । সব গুলিয়ে যাচ্ছে । কি করব এখন আমি, না না ভয় পাব না, তুমি তো আছো, লুকিয়ে মজা দেখছ না রহিত ! আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেব । আচ্ছা ঐ ট্রাফিক পুলিশটা কে জিগ্যাসা করব? এটা কোন রাস্তা বলবেন আমাকে, আর এখন কি রাত না দিন সেটাও যদি একটু বলে দেন । কি অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে পুলিশটা কেন কি করেছি আমি ! কি রকম তেড়ে উঠল দেখ , কি রকম ভাবে বলল – যান যান রস্তার ওপারে গিয়ে হাঁটুন । তুমি দূর থেকে দেখছ রহিত আমার অপমান, তবু তুমি সামনে আসবে না! একি রাস্তায় এত রক্ত কেন ! এত লাল রক্ত । কি বলছেন , এটা রক্ত নয়, আবির, আজ দোল । কি কান্ড রহিত আমি ভুলেই গেছি আজ দোল । কত রঙ চার দিকে, সবাই রঙ মেখেছে । খুশির রং আনন্দের রঙ । শুধু আমিই সাদা কাপরে পথে পথে ঘুরছি, এস রহিত, কাছে এস, আমার তোমার রঙে ভরে দাও । কে , কে ডাকছেন আমায়, কে আপনি, আমার কাঁধে হাত রেখেছেন । আপনাকে কি রহিত পাঠিয়েছে । তাইতো বলি, রহিত কি আর আমাকে ফেলে দিতে পারে । নিজে আসতে পারবে না, তাই আপনাকে পাঠিয়েছে বুঝি ? কোথায় যেতে হবে বলুন, কোথায় গেলে রহিতের সঙ্গে দেখা হবে । ঐ ট্যাক্সি করে নিয়ে যাবেন আমাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন না, আমার আর দেরী সইছেনা । ওনারাও যাবেন আমাদের সঙ্গে, রহিতের বন্ধু আপনারা ! বাঃ বেশ, চলুন চলুন , না হলে আবার ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, কিছুতেই রহিতের কাছে যেতে দেবে না । আমার বুকের মধ্যে সানাই বাজছে রহিত, এতদিন পরে তুমি আমায় ডেকে নিলে । কতদিন পরে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি একটু শান্তি পাব আজ । এরা আমায় কেউ ভাল বাসেনা । বলে তুমি নাকি রুনা কে বিয়ে করেছ । কি অদ্ভুত কথা । তুমি কখন আমাকে ছেরে আর কারুকে ভালবাসতে পার নাকি ? সে যে তোমার স্বপ্নেও তুমি ভাবতে পারনা, সে আমি খুব ভাল জানি । মা আমায় আজকাল শুধু বকে আর জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয় , বলে ঘুমো, ঘুমো । কেন আমি কি পাগল যে সারাদিন ঘুমাব । আমি তো তোমার কাছে যাব, এই যেমন আজ যাচ্ছি । একি আপনারা এমন করছেন কেন ? আমার ভীষণ লাগছে যে । রহিত না আপনাদের বন্ধু, আপনাদের আমাকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে , তবে আপ্......উঃ, রহিত, তুমি এখনো আসবেনা ...ও মা গো, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আপনাদের দুটি পায়ে পড়ি , আমাকে রহিতের কাছে নিয়ে চলুন না...রহিত্...।তুমি কেমন ডাক পাঠালে, তুমি কেমন পরীক্ষা নিচ্ছ ? ওমা গো...মাআআআআআআ...