সকালে উঠে দেখি গ্যাস নেই ; একি –
কেরোসিনের ডিব্বাটাও যে খালি ।
দেবার জন্য এক কাপ গরম চা
কাঠকয়লা দিয়ে উনুন ধরায় মলি ।
চা খেয়ে মনটা হল শান্ত ,
মা বললেন খোকা, দুধটা কিনে আনত ।
চল্লিশ কবে গেছে চলে,
মা এখনো ডাকে খোকা বলে ।
চার প্যাকেট দুধ এনে দিলাম মলির হাতে ,
বলে এলাম মাকে- রাতের বেলা একটু খানি
পায়েস দিও পাতে ।।
থলি হাতে নিয়ে, জামা দিলাম গায়ে ,
দেরাজ থেকে টাকা নিয়ে চটি দিলাম পায়ে ।
কিনে নিলাম চারখানা ডিম ,
কিলো খানেক আলু আর শুকনো কটা সিম ।
মাছের বাজার ভীষন চড়া
সবজি কিছুই যায় না ধরা ,
সিম আলুটা ছাড়া
বাজার ভীষন চড়া ।
বাজার দেখে মলিরানীর মুখটা হল কালো ।
এমনিতেও সে দেখতে নয়কো ভালো
তার উপরে রাগলে দেখায় কালো ।
ব্যাস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি গামছা কাঁধে নিয়ে ,
দরজা দিলাম স্নানের ঘরে গিয়ে ।
গায়ে মেখে তেল দিলাম খুলে কল ,
কিন্তু একি কলে নেইকো জল ।
ছাড়া জামা নাচার হয়ে
নিলাম পরে গায়ে –
বালতি হাতে নিয়ে পথের ধারে যাই ।
পথের কলে বিরাট লাইন
সাধ্য নেইকো ভাঙ্গব আইন;
ফিরে এলাম চলে ;
বৌকে ডাকি – ভাত দাও গো বলে ।
গামছাখানা হাতে নিয়ে প্যাকেট করি
রেপিং পেপার দিয়ে ;
হাজিরার খাতায় সই করে
স্নানটা নেব সেরে ।
গিন্নিকে করতে খুশী
জোর করে মুখে টেনে হাসি ,
আলুনা সিমের চচ্চরি গলাধ্বকরন করি ।
মাকে বলে ‘আসি’ ছুটলাম তাড়াতাড়ি
ন’টার বাসটা গেল বুঝি ছাড়ি ।
শুনতে পেলাম পিছন থেকে
গিন্নি আমার বলছে হেঁকে –
আজকে যেতে হবে দিদির বাড়ি-
আপিস থেকে ফিরো তাড়াতাড়ি ।
অফিসে দেখি মহা হট্টগোল
মহনবাগান কাল খেয়ে গেছে গোল
ইস্টবেঙ্গলের সাপর্টার আমি ।
নিয়ে গেল একশ টাকা কান ধরে টানি ,
মিষ্টি খেতে হবে আজ,
কাল কাল দিয়ে গোল ; ভারি গন্ডোগোল ।
অফিসেও আজ দিনটা গেছে ভারি মন্দ
সুন্দরী মিস সেন করেছ কথা বন্ধ ;
ছুতো-নাতা নিয়ে কতবার গেছি পাস দিয়ে
মুখে নেই হাসি – বড় বড় হাই তোলে
চোখ করে বন্ধ ।আজ আমার কপালটা মন্দ ।
অফিসের বড়বাবু হল ঘরে এসে
হেসে হেসে বললেন নাকি সুরে কেশে ;
কি করেছেন হরেন বাবু , ইংরাজী যে হল কাবু
স্পেলিং সে তো কবেই গেছেন ভুলে ,
গ্রামার বুঝি খেয়েছেন গুলে !
চেয়ে দেখি মিস সেন এতক্ষনে হেসেছেন ,
ভারি ন্যাকা মেয়ে ।
রাগ চেপে মনে
হাঁটা দিলাম বাস ধরবার টানে
এসে দেখি বাপরে কি কান্ড-
মিছিল চলেছে প্রকান্ড ,
হাতে নিয়ে নাল নীল ঝান্ডা ,
বাসের আশা করে দিল ঠান্ডা।
বাসের আশা ছেড়ে
পা বাড়ালাম হাঁটা পথ ধরে ।
অনেক কষ্টে এলাম যখন বাড়ি ;
দিন্নির মুখ দেখি যেন তোলা হাঁড়ি ।
রসিকতা করে বলতে গেলাম ‘সখী
এলাম ফিরে ‘।
থ্যাবড়া নাক ঘুরিয়ে , মোটা শরীর মুরিয়ে
গিন্নি গেলেন ফিরে রান্না ঘরে ।।
খেতে বসে দেখি, পায়স নেই –এ কি!
চেঁচিয়ে ডাকি মাকে –বলি খেতে দাও না দেখে ?
পায়েস কোথায় গেল ?
মা বললেন এসে –কি করি আর বল –
ছিল নাতো জানা , প্যাকেটের দুধ আসলে ছানা ।
আজ তোর কপালটা মন্দ ,
সকাল থেকেই দুধে ছিল টক টক গন্ধ ।।
সকাল থেকে যে রাগটা রেখে ছিলাম চেপে ;
এবার বুঝি উঠল সেটা ক্ষেপে ,
আমার ছোট্ট ছেলে, ঠামার কোলে বসেছিল
হাত পা মেলে ।
তার কানটা ধরে , দিলাম কষে চড় ,
রেগে বলি –যখনি দেখি কোলেই আছে বসে –
তোর নেইকি পড়া লেখা ?
ছেলের চোখে দেখি জলের রেখা ।
নিজের উপত হল ভীষন ঘৃণা ,
আমার অক্ষমতার নেই দেখি সীমা ,
সব অপমান সহ্য করি মাথা করে নিচু ,
অন্যায় অবিচারে বলিনাতো কিছু ।
এসে ফিরে ঘরে , অসহায় ছেলেটাকে মেরে
শোধ তুলি । মুখে বলি আদর্শের বুলি ।
ধিক আমি অক্ষম পুরুষ –
সপথ নিলাম আজ থেকে হব আমি মানুষ ।
আমার চিন্তার শ্রোত গেল থেমে ,
মনে হল ঘরের ভিতর বাজ এসেছে নেমে ।
মুখের সামনে ড্যানা নেড়ে
গিন্নি দেখি বলছে তেড়ে –
আজ রাতে হবে নাকি শোয়া ,
অনেক্ষন তো হয়ে গেছে গুষ্টির খাওয়া ।
সুবোধ বলকের মত গিন্নির পিছু পিছু ,
চললাম শুতে আমি মাথা করে নিচু ।।
No comments:
Post a Comment