সোনার পাখী
অনেক
অনেক বছর আগে এক যে ছিল দেশ আর সেই দেশে ছিল
এক মস্ত বড় রাজা, তার মস্ত বড় রাজ্য । রাজ্যটি ভারি সুন্দর। রাজার রাজত্যে সবাই খুশী, রাজা মশাই ভারি ভালো মানুষ
। তিনি প্রজাদের খুব সুখে রেখেছেন। সে রাজ্যে ক্ষেতে কত ধান, মাঠে কত ঘাস, সেখানে রাখাল
হাতে বাঁশি বাজায়। গাছে ঘাছে পাখি ডাকে ।
রাজার মনে শুধু একটি দু;খ, তার কোনো সন্তান নেই । রাজার আর সবই আছে, হাতি শালে
হাতি, ঘোরা শালে ঘোরা, সোনা, রুপা, সৈন্যা, সামন্ত কি নেই । রাজার সব থেকে প্রিয়
হল তাঁর বাগান। সে এক মস্ত বড় বাগান ; রাজার বাগান বলে কথা । শুধু মাপে নয়, সেই বাগানে কি নেই
! ছিল নানান রঙের ফুলের মেলা, সেখানে নানান প্রজাপতি ঊড়ে বেড়ায়, নানান পাখির ডাক।
আর ছিল ফলের বাগান , সেখানে আম, জাম, কলা, সব রকম ফল । তবে সবার থেকে আশ্চর্য ছিল
একটি আপেল গাছ । এমন গাছ কেউ কোথাও দেখেনি । সেই গাছে থরে থরে ঝুলে থাকত আপেল, না ,
লাল টুক টুকে নয়, একদম সোনালি ঝকে ঝকে , রোদে ঝল মলে সেই গাছে
ফলত আসল সোনার আপেল ।শুনেছ এমন কথা কেউ । তা রাজা সেই আপেল গাছের প্রতি বড় মায়া । সক্কালে উঠেই রাজার
মালী গিয়ে গুনে দেখত গাছে কটা আপেল । পরের দিন আবার গোনা-
পাছে সে আপেল কেউ যায় নিয়ে । এক সকালে তো মালীর
চোখ কপালে । গাছে যে কাল রাতের থেকে একটি আপেল কম । ভয়ে মালীর বুকের ভিতর কাঁপুনি । হায় এমন বে আক্কেলে কাজ কে করলে, কেমন করে রাজাকে গিয়ে বলি । ভয়ে হাঁটু ঠক ঠক, জিভ শুকিয়ে কাঠ, মালী গিয়ে রাজার পায়ের কাছে আছড়ে পড়ল। রাজা মশাই অনর্থ হয়ে গেছে । গাছ থেকে একটি সোনার আপেল চুরি হয়ে গেছে ।
রাজা
মশাই তো রেগে লাল । কার এত বড় সাহস , রাজার বাগানে চুরি । মালী তুমি সারা রাত
জেগে পাহারা দাও গাছ তলায় । কাল আমার চোর চাই । মালীর বয়স হয়েছে, সে বেচারি সারা রাত
খেটে রাতে কেমন করে জেগে থাকে । তবু রাজার আদেশ অমান্য
করা যায় না তাই তার বড় ছেলেটিকে ডেকে মালী বললে- বাপধন, তুমি আজ সারা রাত
আপেল
গাছের তলায় জেগে থেক, যেমনি দেখবে চোর, চিৎকার করে উঠ- সিপাহি
নিয়ে ঘিরে ধরব এক্কেবারে । পালাবার পথ পাবেনা
কোথাও । মালীর তিন ছেলে, বড় ছেলে লাল কমল, মেজ ছেলে নীল কমল আর ছোট ছেলে স্বর্ণকমল ।
লাল কমল রাতের খাওয়া সেরে গাছের তলায় গিয়ে বসে । রাত বাড়তে থাকে, চারি দিক নিঝুম হয়ে
আসে, অন্ধকার ঘন হয়ে ছেয়ে ফেলে , প্রাসাদের আলো একে
একে নিভে যায় , তবু সে তির ধনুক হাতে বসে থাকে । রাতে গড়িয়ে চলে ধীরে ধীরে মধ্যরাতে আকাশে তারারা চোখ টেপা টিপি
করে, দুরে ঘড়িতে বারটা বেজে
ওঠে আর কোথা থেকে একরাশ ঘুম এসে বড় ছেলে কে ছেয়ে ফেলে । বেচারি গাছের তলায় শুয়ে ঘুমের কোলে ঢলে পরে ।
পর
দিন সকালে সবাই দেখে আপেল গাছে আবার একটি সোনার আপেল চুরি গেছে । রাজা মালিকে ডেকে বলেন –মালী তোমার এ কেমন
ব্যাবহার , চোর ধরতে গিয়ে ঘুমিয়ে কাদা । তোমাকে আর একবার সুযোগ দিলাম, আজ রাতে নিশ্চয় চোর
ধরা চাই, নইলে তোমার গর্দান যাবে । মালী ছুটতে ছুটতে বাড়ি এসে মেজ ছেলেটিকে বলে, বাপ আমার,
আমি
বুড় হয়েছি, তোমার দাদা তো পারল
না, আজ তুমি একবার গিয়ে
দেখ, চোর যেন পালায় না। ঘুম এলে চোখে ঠাণ্ডা
জলের ঝাপট মের, কিন্তু খবর্দার ঘুমিও না , এই বলে মালী এক ঘটি
ঠাণ্ডা জলের সাথে নীল কমলকে পাঠালে রাত জাগতে । কিন্তু কি আশ্চর্য, রাত যেই বারটা , অমনি রাজ্যের ঘুম এসে মেজ ছেলেটিকে জোর করে ঘুম পাড়িয়ে দিলে
। পরের দিন সকালে ফের চুরি ধরা পরতে রাজা সিপাহি কে ডেকে বললেন
যাও মালিকে গারদে পোর, এমন অপদার্থ একটা রাত জেগে থাকতে পারেনা । বাগানের মালী, পাঁচটা না ছটা নয় একটা
সোনার আপেল গাছ, সে গাছের আপেল রক্ষা করতে পারেনা । কাল এর গর্দান যাবে । সে সময় মালীর ছোট ছেলে,
স্বর্ন কমল এসে রাজার পায়ে লুটিয়ে পড়লে । কেঁদে বলে, মশাই আমার বাবা কে ছেড়ে দিন, দয়া করুন । আমি কথা দিচ্ছি আজ আমি নিজে গাছের তলায় জেগে রাত কাটাব । আজ আপনার চোর ধরা পরবেই । না হলে কাল আপনি যেমন ইচ্ছে তেমন শাস্তি দেবেন । মালীর ছোট ছেলের যেমন নাম তেমনি রূপ , ঠিক যেন এক
দেব দুত । তেমনি তার স্বভাব। রাজ্যের ছোট বড় সবাই তাকে ভালবাসে। লম্বা-চয়ড়া যোয়ান
ছেলেটির এক মাথা কালো চুল, নাক খানি ধারাল, ভাসা ভাস স্বপ্নালু , মায়ামাখা দুটি
চোখে, বুদ্ধির ছাপ। রাজা বললেন ঠিক কথা, তবে তাই হক ।
মালী
তো বাড়ি ফিরে ছোট ছেলেকে জরিয়ে ধরল । না বাবা, তুই রাত জাগিস না, তাতে আমার যাই হক । এ নিশ্চয় কোন মায়াবীর কাজ, ঘুম পাড়িয়ে চুরি করে
। তুই আমার বড় আদরের আমার বুকের ধন । এমন বিপদের মুখে তোকে আমি যেতে দেবনা রে ।
ছোট
ছেলে অনেক বুঝিয়ে , অনেক আবেদন করে, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে
বাবার কাছে রাত জাগার অনুমতি আদায় করলে । মালী বললে, ঠিক আছে তুই যখন এত করে বলছিস আমি তোকে আপেল গাছে পাহারা দিতে
দেব, কিন্তু তোকে আমার এই তির ধনুক দিলাম । সারা রাত একে পাশে রাখবি, একবারের জন্য শুবি
না , ঘুমে এলে পায়চারি করবি
। সে রাতে ছোট ছেলে তির-ধনুক হাতে সোনার আপেল পাহারা দিতে গেল
। রাত যত বাড়ে,
ছেলের চোখ তত জুড়িয়ে আসে । ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া যেন গায়ে , মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে । পা টন টন করে ওঠে , কিন্তু বাবা কে কথা
দিয়েছে, তাই সে একটি বারের জন্য শুয়ে আরাম করেনা । অতি কষ্টে জেগে কাটায় সে । রাত যখন বারটা , ছেলেটি তাকিয়ে দেখে
একটি সোনার পাখি আপেল গাছ থেকে একটি আপেল মুখে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে । যেমনি দেখা অমনি পাখি লক্ষ করে তির চালায় সে । তির গিয়ে সোনার পাখির ডানায় লাগে । কিন্তু কি আশ্চর্য , তির পাখির কোন ক্ষতি
করতে পারেনা , কেবল তার ডানা থেকে এক খানি পালক খসে পরে, আর সে অপূর্ব সোনার পাখি সোনার আপেল মুখে করে উড়ে যায় ।
মালীর
ছেলে সকাল সকাল রাজ প্রাসাদে গিয়ে ্রাজা মশাই কে সোনার পালকটি দিয়ে সব কথা শোনায় । অমনি রাজা সভা ডাকেন, রাজার যত মন্ত্রী, যত আমলা,
যত পন্ডিত সবার কাছে তলব যায় , বিশেষ সভা বসবে । মন্ত্রীরা, আমলারা ,
পন্ডিতেরা সভা বেশ পরে এসে হাজির । রাজার কাছে সব কথা শুনে আর সোনার পালক দেখে , সবাই বলে,
এই পালক টি এমনই মূল্যবান যে রাজার সকল সম্পত্তি
একত্র করলেও সোনার পালকটির থেকে তার মূল্য কম হবে । কিন্তু রাজা মশাই তো রাজা মশাই । তিনি বললেন আমার পুর সোনার পাখি চাই । যে এনে দেবে তাকে তিনি
একশ সোনার মোহর পুরস্কার দেবেন । শুনে মালীর বড় ছেলে
চলল সেই সোনার পাখির সন্ধানে । সে মনে করলে এ বুঝি
ভারি সহজ কাজ । যেতে যেতে সে একটি জংগলের সামনে এসে দাঁড়াল । চেয়ে দেখে জংগলটির এক পাশে এক শেয়াল বসে । দেখেই সে হাতে তির ধনুক নিয়ে শিয়ালটির দিকে তাক করে । শিয়ালটি অমনি বলে ওঠে – তুমি আমাকে মেরনা । আমি জানি তুমি কি কাজে চলেছ । আমি তোমাকে সোনার পাখির সন্ধান দিতে পারি ।আমার কথা শুনে চললে তুমি তোমার কাজে সহজেই সফল হবে । তুমি এই রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে সন্ধে নাগাদ একটি গ্রামের ধারে
এসে উপস্থিত হবে । সেখানে দুটি যাত্রী নিবাস দেখতে পাবে । একটি পুড়ান ,
জরাজীর্ণ, অন্ধকার । আর তার ঠিক উলটো দিকে একটি সুন্দর , ঝক ঝকে ,
নতুন যাত্রী নিবাস । কিন্তু তুমি সেখানে রাত কাটাবে না । তুমি যাবে সেই পুড়ান, জরাজীর্ণ যাত্রী নিবাসে
। মালীর বড় ছেলেটি মনে মনে ভাবে এই বনের শিয়াল কি জানে যে এর কথা
শুনব । যেমন ভাবা তেমন কাজ । শিয়াল লক্ষ করে সে
তির চালায় । কিন্তু শিয়ালটি চালাক , সে পিছন ফিরে দ্রুত, লেজ তুলে বনের ভিতর মিলিয়ে যায় ।হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, আর ছেলেটি দেখে সে এক গ্রামের সীমানায় এসে পৌঁছেছে আর ঐ তো সামনেই
শিয়ালটির কথা মত দুটি যাত্রী-নিবাস . একটি বিশাল বিলাসবহুল, সাজান ,
গোছান , আলো ঝলমলে বাড়ি, সেখান থেকে বহু লোকজনের হাসি, গানের আওয়াজ এসে পৌঁছায়
তার কানে, আর তার ঠিক উল্টো দিকে একটি জরাজীর্ণ , টিম টিমে আলো জ্বলা, নংরা মতন একটি আবাস
। ছেলেটি মনে মনে ভাবে –কোন বোকা এই আনন্দময়
,আলো ঝলমলে পরিবেশ ছেড়ে, অমন একটি নিরানন্দ, অন্ধকার স্থানে যায় । এই ভেবে সে সেখানে
প্রবেশ করে । সেখানে প্রচুর সুখাদ্য, নানান পানিয়,
সুবেশী নারী, পুরুষ,
সকলেই আমোদ, আহ্লাদে মত্ত । তাদের সাথে মালীর বড়
ছেলেও আমোদ, প্রমোদে লিপ্ত হয় । দিন যায় দিন আসে, কিন্তু তার মন আর সে স্থান ছেড়ে যেতে চায়না । ক্রমে ক্রমে বছর গড়িয়ে যায়, ছেলেটি তার পূর্ব কথা
সবই ভুলতে বসে । তার নিজের দেশ, তার নিজের পরিচয়, সেই সোনার পাখি যার
সন্ধানে সে এতদূর এসেছে কিছুই আর তার মনে থাকেনা ।
বাড়িতে
তার স্বজন ,পরিজন, বাবা,
ভাই সকলেই চিন্তিত হয়ে পরে । অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে , মালীর মেজ ছেলে সোনার
পাখির এবং তার দাদার সন্ধানে বেড়িয়ে পরে । ঠিক বড় ভাইয়ের মতন
তারও সেই শিয়ালের সঙ্গে দেখা হয়,
দাদার মতনই শিয়াল তাকে দুটি বিপরীত যাত্রিনিবাসের কথা বলে এবং
একই উপদেশ দেয় । আর দাদার মতন মেজ ভাই
শিয়াল লক্ষ করে তির ছোঁড়ে । কিন্তু সে লক্ষ ভ্রষ্ট হয় ।মেজ ভাই যখন এসে সে গ্রামের ধারে দুটি যাত্রী-নিবাসের কাছে এসে
উপস্থিত হয়, তখন তার বড় ভাই জানালা থেকে তাকে দেখতে পেয়ে ছুটে আসে । ভাই কে দেখে তার ভাই এর কথা মনে পরে – ডেকে বলে আয় ভাই আয়, আমার কাছে আয় , এই খানে অনেক কিছু আছে, তোর কি চাই তুই সব
পাবি । মেজ ভাই শিয়ালের উপদেশ ভোলে নি, কিন্তু দাদার ডাক সে অগ্রাহ্য করতে পারেনা । মনে মনে ভাবে এত আলো, এত নাচ গান, এত খানা-পিনা, দাদাও আছে, একবার গিয়ে দেখি । কিন্তু একবার যে সেখানে
যায় , সে আর ফিরতে পারেনা । মেজ ভাই ও দাদার মতন
তার সকল পূর্ব কথা বিস্মৃত হয়ে,
সুখে দিন কাটাতে থাকে । তার মনেও পড়েনা , ঘরে তার বুড়ো বাবা
তার পথ চেয়ে বসে আছে । মনেও থাকেনা এক আশ্চর্য সোনার পাখির সন্ধানে
সে পথে বেড়িয়েছিল । এই ভাবে মাস, যায়,
বছর যায়, দুই ভাই দেশে ফেরার
কথা মনেও করেনা ।
অবশেষে
আর থাকতে না পেরে মালীর ছোট ছেলে বললে বাবা এবার আমায় একবার চেষ্টা করতে দাও । আমি সোনার পাখির সন্ধান নিয়ে আসি । মালী তো কিছুতেই ছাড়বেনা – না বাপ , না ,
তুই আমার চোখের মনি, বুকের ধন,
আমার সব গেছে, তোকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবনা । দেখ তোর দাদারা গেলে তো গেল আর ফিরে এলনা । না জানি কোন মায়াবী তাদের মায়া করেছে, কোন দানব তাদের ক্ষতি করেছে । তারা পারলেনা, তুই কি করে পারবি । চাই না সোনার পাখি, চাইনা পুরস্কার , তুই আমার ঘরের ছেলে
ঘরে থাক । কিন্তু ছেলে কিছুতে বাগ মানেনা । একা একা মন খারাপ করে ঘুরে বেড়ায় । খেতে চায় না,
শুতে চায় না, তার চোখে কালি পরে । মালী আর পারে না । ছেলে কে ডেকে বলে, আচ্ছা তবে তুই আয় । কিন্তু আমায় কথা দিয়ে যা, সোনার পাখির সন্ধান
পাওয়া মাত্র চলে আসবি । তোর দুই দাদার মতন ভিন দেশে হারিয়ে যাবিনা
। বাবার পায়ে হাত দিয়ে, আশীর্বাদ নিয়ে ছোট
ছেলে সুদিন দেখে সোনার পাখির সন্ধানে বেড়িয়ে পরে ।
বনের
কিনারায় এসে সে দেখে এক শিয়াল বসে । দাদাদের মতন শিয়াল
তাকেও একই উপদেশ দেয় । শুনে ছেলেটি অনেক ধন্যবাদ দিলে । সে তার দাদাদের মতন তাকে তির ধনুক দিয়ে মারতে যায় না । দেখে শিয়াল বলে – ও ছেলে তুমি আমার পিঠে
ওঠ আমি অনেক তাড়া তাড়ি তোমাকে সেখানে পৌঁছে দেব । ছেলে কে পিঠে নিয়ে শিয়াল দৌড় দেয় । দৌড় তো দৌড়,
যেন ঝড়ের গতি , হাওয়ায় দুই জনের
লোম, ছেলেটির মাথার চুল শন শন ওড়ে । এক নিমিষে, পাথর,
জংগল, মাটি, বালি পাড় করে , শিয়াল তাকে সেই গ্রামের
কিনারায় এনে দাঁড় করায় । ছট ছেলে শিয়ালের কথা মতন এদিন ওদিক না দেখে, জরাজীর্ণ বাড়িতে প্রবেশ করে । সেখানে খেয়ে দেয়ে সেই রাত সেখানেই বিশ্রাম নেয় । পরের দিন সকাল হতেই
শিয়াল এসে হাজির । সে বললে, আমার কথা মন দিয়ে শোন
, তুমি সোজা পথে চল এক সময় তুমি একটি বিরাট প্রাসাদ এর সামনে এসে
দাঁড়েবে। তার পাশে অনেক সেনা, কিন্তু তারা সবাই ঘুমে
অচেতন । তুমি কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যাবে । সেখানে একটি ঘরে একটি লোহার খাঁচায় তোমার সোনার পাখি বসে আছে
। তাকে নিয়ে তুমি বেড়িয়ে আসবে । তার পাশে রয়েছে একটি সোনার খাঁচা । কিন্তু সাবধান তুমি পাখিটাকে খাঁচা থেকে বাড় করার চেষ্টা করোনা
। তাহলে বিপদে পরবে । এই বলে ছেলে কে পিঠে
নিয়ে ঝড়ের গতিতে শিয়াল চলে,
পাহাড়, পর্বত, জংগল পাড়িয়ে । হাওয়ায় দুই জনের
গায়ের লোম, ছেলের চুল শন শন ওড়ে । প্রাসাদের সামনে এসে
ছেলেটিকে পিঠ থেকে নামিয়ে দেয় । ঐ তো সেনা রা ঘুমে
অচেতন । ঐ তো প্রাসাদের সিঁড়ী । ছেলে উপদেশ মতন সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঘরটি দেখতে পায় , যেখানে কাঠের খাঁচায় সোনার পাখি বসে । নিচেই একটি সোনার খাঁচা আর তার পাশে তিনটি সোনার আপেল । ছেলেটি ভাবে এমন সুন্দর পাখি, কাঠের খাঁচায় নিয়ে
যাব কেন , এত সুন্দর সোনার খাঁচা থাকতে । এই ভেবে সে খাঁচার দরজা খুলে পাখিটি বের করে আনে । আর যায় কোথা,
পাখিটি চিৎকার দিয়ে ওঠে, তার সে চিৎকার এ সেনারা জেগে উঠে ছেলেটিকে ধরে ফেলে আর তাকে
রাজার কাছে নিয়ে হাজির করে ।
রাজা
মশাই পর দিন চোরের বিচার সভা ডাকলেন । তাবড় তাবড় পণ্ডিত, মন্ত্রী, আমলা সবাই বিচার করে রাজার কাছে তাদের অভিমত দিলেন যে ছেলেটি
ঘোরতর অন্যায় করেছে, চুরির দোষে দোষী, তাকে উপযুক্ত শাস্তি
বিধান দিতে হবে । রাজা তার মৃত্যুর আদেশ দিলেন । তবে রাজা এ ও বললেন যে পাশের রাজার রাজ্যে একটি সোনার ঘোরা
আছে, তার গতি যেন হাওয়ার মতন, তার গায়ের থেকে সূর্যের আলো ঠিকরে আসে, অসাধারন সোনার ঘোরা ধরে এনে দিতে পারে, তবে তার শাস্তি মকুব আর শুধু তাই নয়,
সোনার পাখি ও তাকে দিয়ে দেওয়া হবে ।
মাথা
নত, মন ভারি,
ছেলেটি রাস্তায় এসে দাঁড়াল, কেমন করে এমন অসাধ্য কাজ সে সম্পন্ন করবে । কোথায় পাবে সোনার ঘোরা, তার জিয়ন কাঠি । এমন সময় তার সহায়ক সেই শিয়াল এসে হাজির । ছেলেকে ডেকে বললে , দেখলে তো আমার কথা
না শোনার কি ফল । তবুও আমি তোমাকে আবার ও সাহায্য করব । তুমি আমার পিঠে উঠে বস, আমি সোজা তোমাকে সেই
প্রাসাদে নিয়ে যাব, যেখানে সোনার ঘোরা বাঁধা আছে । তার পাশে তার সহিস নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে । তুমি ঘোরায় জিন দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসবে, সহিসের ঘুম ভাংগবেনা, তোমার কোন ভয় নেই । কিন্তু খবর্দার, তুমি শুধু পুড়ান চামড়ার জিন ঘোরায় চড়াবে, যে সোনার জিন টি কে পাশেই দেখবে তার দিকে তাকাবেও না । এই বলে ছোট ছেলেকে পিঠে নিয়ে ঝড়ের গতিতে উড়ে চলল, সব বাধা,
সব পাথর, সব কাঁটা পার করে । এমনি তার গতি যে দুই জনের গায়ের লোম, ছেলেটির মাথার চুল খাড়া
হয়ে উড়তে লাগল শন শন শন । প্রাসাদের সামনে এসে
শিয়াল তাকে পিঠ থেকে নামিয়ে দিলে । প্রাসাদের দিকে এগিয়ে
গিয়ে ছেলেটি দেখলে ঐ তো আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে
যে সোনার ঘোরা থেকে , তার পাশে নাক ডাকিয়ে ঘুমে অকাতর তার সহিস, ঐ তো সেই অসাধারণ জানোয়ার । কাছে এসে ছেলেটি ঘোরায় জিন দিতে এসে দেখে পাশেই পড়ে রয়েছে সোনার
জিন, তার যায়গায় এই ছেঁড়া, বিশ্রী চামড়ার জিন
চড়াবে সোনার ঘোরার গায় ?
তাই কি কখন হয় ? এমন ঘোরার পিঠে শুধু মাত্র সোনার জিন মানায় এই ভেবে যেই মাত্র
সে সোনার জিন হাতে নিয়েছে,
সহিস চোখ মেলে তাকাল । তাকিয়েই সে মহা চেঁচামিচি
শুরু করে দিল, চোর চোর,
ঘোরা চোর । আর যায় কোথা,
সব
প্রহরী এসে হাজির,
ছেলেটির কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে গেল রাজার সামনে
। আবার বিচার সভা, আবার বিচার, আবার ছেলেটি চোর সাব্যস্ত হল । আবার মৃত্যু দণ্ড কিন্তু এবারও তার একটি বাঁচার উপায় দেখা গেল
। পাশের রাজ্যে আছে এক অতি অপরূপা রাজকন্যা, তার রূপে স্বর্গের পরীরাও লজ্জা পায় । যদি তাকে সে নিয়ে আসতে পারে তবে সে মুক্ত, সোনার ঘোরা তার । লজ্জিত, অনুতপ্ত ছেলেটি রাস্তায় আবার ও এসে দাঁড়ায় । সে জানে তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, এবার সে বন্ধু শিয়াল কে কেমন করে মুখ দেখাবে ? কেমন করে বাবার কাছে ফিরে যাবে । কিন্তু তার মিত্র শিয়াল তাকে এখনো পরিত্যাগ করেনি । সে এসে বললে,
কেন তুমি আমার কথা শুনলেনা বলত । দেখ তো কত মুশকিলে পরেছ । ঠিক আছে এবার ও আমি তোমাকে সাহায্য করব । তুমি সোজা চলে যাও , সন্ধ্যা নাগাদ তুমি
এক প্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়াবে । সেখানে রাত বারটার
সময় রাজকুমারী স্নানঘরে যাবেন,
সেই সময় তুমি রাজকুমারী কে একটি একটা লাল
গোলাপ দেবে ; এই বলে শিয়াল স্বর্নকমলের হাতে একটি মন্ত্রপুত লাল টক টকে গোলাপ দিল,
সে গোলাপের সুগন্ধ চারি দিকে ছেয়ে গেল। তাহলেই রাজকুমারী তোমার
সাথে চলে আসতে রাজি হবে। কিন্তু খবর্দার , রাজকুমারী যদি তার বাবা ও মার কাছে বিদায় নিতে যেতে চায় তাহলে
কিছুতেই রাজী হবেনা । আবারো শিয়ালের কথা মতন সব কিছু ঠিক তেমনি
হয়, ঠিক রাত বারটায় স্নানঘরের কাছে আসতেই স্বর্নকমল দেখে একটি
অপরুপ সুন্দরী যুবতী , তার মাথায় মেঘের মতন চুল মেয়ের কোমর ছাড়িয়েছে, তার গায়ের রঙ যেন দুধে-আলতায়, তোর চোখ দুটি যেন বনের
হরিনীর মতন, ছোট্ট কপাল, ধনুকের মতন বাঁকা ভ্রু দুখানি, বাঁশির মতন নাক আর গোলাপের
পাপড়ির মতন নরম লাল দুটি ঠোঁট । মুগ্ধ স্বর্ন কমল, রাজকুমারীর হাতে লাল গোলাপ
দিতে, রাজ-কুমারী ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখে। আর তখনি দু-জনে দু-জন কে ভালবেসে ফেলে
। কিন্তু রাজা তো রাজী হবেন না মালীর ছেলের হাতে রাজকন্যার হাত দিতে, তাই রাজকুমারী
তার সঙ্গে পালিয়ে আসতেও রাজী হয় । কিন্তু রাজা , রানীর কাছে থেকে একটি
বার বিদায় নেবার জন্য, সে বড় কান্নাকাটি শুরু করে, তার চোখের জলে বুক
ভেসে যায়, তবু ছেলেটি রাজি হয়না । কিন্তু যখন রাজকুমারী ছেলেটির পায়ে লুটিয়ে পরে সে আর নিজেকে
কঠিন করে রাখতে পারেনা কিছুতেই । কিন্তু যে মাত্র রাজার
কাছে বিদায় চাইতে যাওয়া,
অমনি রাজা বলে ওঠেন আমি তোমাকে কিছুতেই আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে দেবনা, যদিনা তুমি আমার জানলার সামনে ঐ ছোট্ট পাহাড় টা দেখা যায় সেটা আটদিনের মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পার । ঐ পাহাড় টা এতটাই বড় যে সারা জগত চেষ্টা করলেও আটদিনের মাথায়
কিছুতেই তাকে ভেঙ্গে গুঁড় করতে পারবেনা । কিন্তু ছেলেটি সাতদিন
অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেটি কে ভাঙ্গার জন্য । আট দিনের দিন , তার বন্ধু শিয়াল এসে
বলে – তুমি শুয়ে বিশ্রাম নাও । এবার আমি এটাকে ভাঙ্গব । ছেলেটি এমনি ক্লান্ত সে মাটিতে শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে কাদা । সকালে উঠে দেখে কোথাও পাহাড় টার কোন চিহ্ন নেই । ছেলেটি রাজার কাছে এসে দাঁড়াতে, রাজা কি আর করেন নিজের রাজকন্যা ছেলেটির হাতে সমর্পণ করেন । শিয়ালটি বলে,
আমার কথা যদি শোন তুমি, রাজকন্যা,
সোনার ঘোরা আর সোনার পাখি তিনটিকেই নিজের
কাছে রাখতে পারবে । ছেলেটি বললে সেটা কেমন করে সম্ভব ! শিয়াল
বুঝিয়ে বলে, তুমি রাজার কাছে গিয়ে রাজকন্যা কে রাজার হাতে দিয়ে সোনার ঘোরায়
চড়ে বসবে, তার পর সবার কাছে একে একে বিদায় নেবে, কিন্তু মনে রেখ সবার শেষে রাজকন্যার কাছে আসবে । এসেই রাজকন্যাকে ঘোরায় উঠিয়ে ঘোরা চালিয়ে দেবে । যেমন শোনা তেমন কাজ , রাজকন্যাকে ঘোরায় নিয়ে
ছেলে শিয়ালের কাছে এসে হাজির । শিয়াল বলে এবার মন
দিয়ে আমার কথা শোন । এবার রাজপ্রাসাদের কাছে এসে আমি রাজকন্যাকে
নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করব । তুমি রাজার কাছে যাবে
ঘোরায় চড়ে । যখন রাজা সোনার পাখি নিয়ে আসবে তুমি বলবে
আগে পাখি আমার হাতে দিন,
আমি দেখব, এই সেই পাখি কিনা । হাতে পাখি পেলেই তুমি ঘোরা ছুটিয়ে দিও । শিয়ালের কথা মতন রাজকন্যা, আর সোনার পাখি নিয়ে
ছেলে সোনার ঘোরায় চড়ে ঘন জংগলের কাছে আবার এসে দাঁড়াল । এবার শেয়াল দেখা দিয়ে বলল, সব কাজই তো হল, তুমি দয়া করে আমাকে মেরে ফেল আর আমার মাথা আর পা গুলো তোমার
তরোয়াল দিয়ে ছিন্ন করে দাও । আশ্চর্য ও দুঃখিত স্বরে
ছেলে বললে এমন কাজ আমি কিছুতেই করতে পারব না । শিয়াল বললে ,
তবে তুমি যাও, কিন্তু তোমাকে শেষ কথা বলে যাই, এখান থেকে সোজা তোমার বাড়ি যাও । পথে কোন মানুষের প্রাণ
বাঁচাবার জন্য তোমার সর্বস্ব পণ করোনা আর পথে কোন নদীর ধারে বসে বিশ্রাম কর না । ছেলেটি মনে মনে ভাবলে এ আর এমন কি কথা । এ উপদেশ আমি সহজেই মেনে চলতে পারব । চলতে চলতে অবশেষে তারা সেই গ্রামে এসে উপস্থিত হল, যেখানে তার দুই ভাইকে ছেড়ে এসেছিল । গ্রামে এসে শোনে খুব উত্তেজনা, অনেক লোক জন জড়ো হয়ে কিছু বিষয় আলোচনা করছে । কৌতূহলী হয়ে ছেলেটি জানতে চাইল , কিসের জন্য এত উত্তেজনা । লোকেরা জানাল আজ দুটি মানুষের প্রাণদণ্ড হবে , কাড়ন তারা ডাকাত।
ছেলেটি
দেখে সেই দুটি মানুষ তারই দুই দাদা । ভাই দাদাদের প্রাণ বাঁচানর জন্য রাজার কাছে আবেদন করলে। রাজা বললেন আমি এদের ছেড়ে দিতে পারি, যদি তুমি তোমার কাছে যত টাকা আছে সব আমায় দিয়ে দাও । দাদাদের জীবন বাঁচানর জন্য ছেলেটির তার সব টাকা পয়সা রাজা কে
দিয়ে দাদাদের মুক্ত করল । এর পর তিন ভাই, রাজকন্য,
সোনার পাখি আর সোনার ঘোরা নিয়ে নিজের দেশের
দিকে যাত্রা শুরু করল । যেতে যেতে গ্রামের কিনারায় জংগলের পাশে একটি
শান্তি শীতল, ছোট্টও নদী বয়ে যেতে দেখে তার মনটা একটু বিশ্রাম নেবার জন্য
আকুল হয়ে উঠল । এতদিন এত পথে ঘুরে, এত কাজ করে,
সে খুবই ক্লান্ত হয়ে পরেছিল, তাই শিয়ালের উপদেশ ভুলে, সেই নদীর ধারে বসে, জলে মুখ, হাত,
পা ধুয়ে, ঠাণ্ডা বাতাস খেতে
লাগল । হটাত পিছন থেকে এসে তার লোভী ও দুষ্ট বুদ্ধি দাদারা ঠেলে নদীর
জলে ফেলে দিল । তাকে জলে ফেলে, দুজনে তাড়াতাড়ি, রাজকন্যা, পাখি আর ঘোরা নিয়ে দেশে ফিরে এলো । তাদের দেখে সবাই খুব খুশী ।রাজা কে গিয়ে তারা বললে মহারাজ, এই দেখুন এ সকল আমরা নিজেরা বুদ্ধি আর পরিশ্রম করে জিতে এনেছি
। রাজা খুব জাঁক যমক করে উৎসব শুরু করলেন, গ্রামের সবাই সেখানে নিমন্ত্রিত, নাচ,
গান, বাজনা, নানা সুস্বাদু খাবার পরিবেসন করা হল । সবাই খুশি,
কিন্তু রাজকন্যা হাসি ভুলে কেবল কাঁদে, পাখি গান করেনা, শুধু চুপটি করে ঘার
গোঁজ করে দাঁড়ে বসে থাকে,
আর ঘোরা দানাটি মুখে নেয়না । কি ব্যাপার ,
কি ব্যাপার, সবাই অবাক । সবাই নানা কথা ভাবতে
থাকল । ইতি মধ্যে ছোট ছেলে ধাক্কা খেয়ে নদীর তলায় গিয়ে পড়েছে বটে কিন্তু তার হাত, পা সব অক্ষত থাকে । এমন সময় তার সামনে তার শিয়াল বন্ধু এসে হাজির । এবার সে ছেলে কে সামান্য
বকুনি দিলে । কেন যে তুমি আমার কথা অমান্য করলে , তাহলে তো তোমার এত কষ্ট হত না । কিন্তু তবু আমি তোমাকে সাহায্য করব । তুমি আমার লেজটা ধর আমি তোমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যাব। যেমন বলা তেমন কাজ , নিমিষের মধ্যে ছোট
ছেলেকে নিয়ে শিয়াল উপরে উঠে এলো । কিন্তু সে বললে, দেখ তোমার দুই দাদা চারি দিকে পাহারা বসিয়েছে, তারা তোমাকে দেখতে পালেই, মেরে ফেলবে । তাই তুমি ছদ্মবেশে রাজ প্রাসাদে যাও । এই বলে শিয়াল মিলিয়ে গেল । ছেলেটি একটি ভিখারির মতন সেজে রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করলে । প্রাসাদের দরজায় পা রাখতেই, রাজকন্যা কান্না থামিয়ে
হাসিমুখে তাকালেন, পাখি গান গাইতে শুরু করল আর ঘোরা দানা মুখে দিল । এবার ছেলেটি রাজার কাছে এসে অকপটে সব কথা জানাতে, রাজা মশাই দুই দাদাকে রাজ্য থেকে নির্বাসন দণ্ড দিলেন । ছেলেটির সংগে রাজকন্যার বিবাহ দিলেন । এদিকে রাজার মালী
তো মনের দুঃখে শযাসায়ী । তাকে কঠিন অসুখে ধরেছে । তিন ছেলের ফিরতে দেরী দেখে সে
খাওয়া দাওয়া ত্যাগ করেছে । বড় দুই ছেলে ফিরে আসাতে সে খুশী হলেও প্রিয় স্বর্নকমলের
জন্য চিন্তায় মৃত্যু শযায় । এমন সময় তার ফিরে আসাতে মালী মনে শান্তি পেলেও তার
অসুখ সারাতে পারলনা কোন বদ্যি । একদিন ছোট ছেলের কোলে মাথা রেখে শেষ নিদ্রা ত্যাগ
করল । রাজার কোন পুত্র সন্তান ছিল না, নিঃসন্তান রাজা, ছেলেটি কে রাজকন্যার
সঙ্গে নিজের প্রাসাদে স্থান দিলেন আর তাঁর মৃত্যুর পরে তাকেই রাজা করবেন বলে তাকে যুবরাজ ঘোষণা করলেন ।
বহুদিন
কেটে গেছে, যুবরাজ এখন রাজা, । তিনি বাগানের ধারে পায়চারি করছেন, হটাত তার মিত্র শিয়াল এসে দাঁড়ালে । সে কাঁদতে কাঁদতে যুবরাজ কে মিনতি করতে লাগল, তুমি যদি সত্যি আমার উপকারের প্রতিদান দিতে যাও, তাহলে এই মুহূর্তে আমাকে মেরে ফেল, আমার মাথা এবং দুটি পা আমার দেহ থেক বিচ্ছিন্ন কর । আর তা যদি না কর তাহলে আমি বুঝব তুমি অকৃতজ্ঞ । নিরুপায় ছেলেটি মনের দুঃখে তার মাথা ও দুটি পা কেটে ফেলেলে । অবাক কাণ্ড,
মুহূর্তের মধ্যে সেখানে দাঁড়িয়ে এক সুপুরুষ
যুবা । আশ্চর্য হয়ে যুবরাজ জিজ্ঞাসা করলেন, কে তুমি আর কেনই বা
তুমি শিয়ালের বেশ ধরেছিলে, তুমি কি মায়াবী, যাদুকর ? যুবা হেসে বললে, না বন্ধু আমি
তোমার স্ত্রী রাজকুমারীর ভাই । এক সময় আমি একটি দরিদ্র পরিবারকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,
অন্যায় ভাবে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়েছি, সেই পরিবার এক পণ্ডিতের , তিনি আমাকে সাপ
দিয়েছিলেন আমি শিয়াল হয়ে থাকব, যদি কোন দিন কোন ভাল মানুষকে বিপদে সাহায্য করি, আর
সে আমার মাথা এবং পা কেটে ফেলে তবেই আবার আমি মানুষ । আজ আমি সাপ-মুক্ত হয়েছি
।
রাজ
বাড়িতে উতসব শুরু হল । রাজা, রানী, তাদের সন্তানেরা , আর প্রজারা সবাই ধন্য ধন্য
করতে লাগল ।
No comments:
Post a Comment