Monday, May 30, 2011

নয়নতারা



আমার বাগানে আমি ফোটাতে চাই ফুল
বেল, যুঁই, চাঁপা , সূর্যমুখীও হতে পারে ।

বাড়ির পিছনে দেখি হয়েছে ফুল- নয়ন-তারা ।
থরে থরে ফুটেছে ওরা- আপনহারা ।
কে তাকে এনেছে ডেকে - কে দেয় জল ,
আপন খুশীতে দোলে হাওয়ার সাথে সাথে-বনাঞ্চল ।

আমি বাঁধতে চাই ঘর
নিঃশ্চিন্তপুর, বালির পাহাড়, নয়ত নদীর ধারে ।

পথের ধারে দেখি অনাথ শিশু -কেউ গিয়েছে ফেলে ।
তার নরম দেহ- স্নেহে নিলাম কোলে ।
তার মুখের হাসি- তার চোখের জল ,
কাড়ে -আমার আড়াল ।।

আমি চেয়েছি সুখে থাকা নীরবে নির্জনে
আমার আকাশে যেন থাকে তারা ,আলোর রোশনাই ,
তুমি রেখেছ ভালবাসা পৃথিবী জুরে ,কোথায় পালাই ।

Thursday, May 26, 2011

কবি নজরুল

আকাশ থেকে চুরি করে অসীম শূন্যকে
কেন রেখেছ তোমার চোখে ,
সাগরের গম্ভীর, গভীরতা
কেন ঢেকেছ তোমার বুকে ।
রুদ্রের আগুনে পুড়ে
জ্বালালে মশাল গানে গানে ।
তোমায় সেলাম করি
প্রনমী তোমায় কবি ;
তুমি রয়েছ বাঙালী প্রাণে প্রাণে ।
আকাশে কান পেতে শুনি আজো –
গান গায় তার বুলবুল –
বাংলা ভোলেনি আজো ভুলবেনা –
তোমায় কবি নজরুল ।।

Sunday, May 22, 2011

ব্যাঙ-এর ছাতা

ছোট্ট মেয়ে মিনি রানী
গায়েতে লাল জামা খানি
মুখ খানা তার অভিমানী
সামনে রঙ তুলি তবু আঁকছেনা ।

বাবা ভাবেন হোলোটা কি-
বসে কেন গিয়ে দেখি-
ছবি আঁকা হল নাকি –
থমথমে মুখ তবু মেয়ে কানছেনা ।

কি হয়েছে মিনি-মারে ,
আয়তো দেখি কোলের ধারে ,
জল কেন তোর চোখের পরে;
বাবা ডাকেন তবু মেয়ে শুনছেনা ।

শুনবনা আর কারো কথা ,
নেবনা রং-তুলি-খাতা ,
আঁকতে গেলাম ব্যাঙ-এর ছাতা ,
কিছুতেই সে আঁকাটা হচ্ছে না ।

এখন যে খুব রোদ উঠেছে ,
ঘাসের উপর রোদ পরেছে ,
ব্যাঙ্-এর ছাতা শুকিয়ে গেছে ;
দেখতে কেমন মনে যে আর পড়ছেনা ।

বাবা বলেন তাই বুঝি মা,
সুকুমারের তুই ঠাকুমা ,
আকাশ জোরে বৃষ্টি নামা ,
নইলে বাঙ-এর ছাতা যে আর হচ্ছেনা।

আমি পাতি রোম্যান্টিক

কেউ যদি আমায় নিয়ে হাসতে চায় ,
সে হাসুক না ।
আমি চিরটাকাল আবেগপ্রবন –
মন ভাসতে চায় তো ভাসুক না ।
অন্যে যদি ভাবতে বসে –
এর বড্ড আঠা চ্যাটচ্যাটে
পাতি ফুলিশ রোম্যান্টিক ।
সেটা তাদের নিজের জ্বালা-
আমার কি দায় বলতে যাওয়া ,
সে ভাবনাটা ঠিক না বেঠিক ।
তারা ভাবতে চায় তো ভাবুক না ।
আমি টাকার জন্য ছুটতে চাইনা –
লক্ষ্মী আসলে আসুক না ।
ঠকিয়ে খাওয়া ব্যাবসা কাদের-
খুঁজতে যাওয়া নিরর্থক,
তারা ঠগের ব্যাবসা ফাঁদুক না ।
যেমনি আমি আবেগ প্রবন –
তেমনি আমি বিশ্বাসী ,
আমার ভিতর-বাহির, জীবন-মরণ –
ঘিরছে তোমার নিঃশ্বাসই –
এ বিশ্বাসে হৃদয় আমার ভাসতে চায়-
তো ভাসুক না ।
কেউ যদি আমায় নিয়ে হাসতে চায়
তো হাসুক না ।।

Saturday, May 21, 2011

এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলা






বাংলা মায়ের এপাড় ওপাড় হিন্দু মুশলমান ।
এপাড়েতে থাকে দিদি ওপাড়ে ভাইজান ।
গানের কলি লিখে লিখে দিদি ভাসায় জলে ।
গানের ভেলায় সাজায় ভাই সুরে, ছন্দে, তালে ।
দিদির চোখে স্বপ্নে শুধু গলায় যে নেই সুরে ;
ভাইজান কয় দিদির দুঃখ করব আমি দূর ।
এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলা বাঁধব আমি সুরে –
সবুর কর দিদি ,সে দিন আর তো নেই দূরে ।
ভাইজান গায় উদার গলায় তার সুর ছুঁয়ে যায় মন ;
গর্বে স্নেহে ভরে ওঠে দিদির নরম মন ।
দিদি- আর ভাইজান তারা হিন্দু মুশলমান ,
এপাড় ওপাড় এক করল তাদের যুগল গান ।।

Wednesday, May 18, 2011

পরির্বতন

মমতা ছিনিয়ে নিল ক্ষমতা

বাম ফ্রন্টের শাসন শূণ্যগর্ভ ভাষণ
সিপিএমের বুলি বন্দুকের গুলি ।

কঙ্কালসার মানুষ গুল চোখে ক্ষিদের জ্বালা ।
এদের কি আর আসবে সুদিন ? বদলাবে দিন কালা ?

আকাশ-মাটি এক হয়েছে ভোরের সূর্য লাল ।
ঘাস ফুলেতে ছেয়ে গেছে ঐ দিগন্ত ভাল

বাংলা মায়ের যোগ্য মেয়ে এক মমতাময়ী
ইতিহাসের পাতায় নাম থাকবে বিশ্বজয়ী ।

চোখেতে তার স্বপ্ন আঁকা, প্রত্যয়ে বুক বাঁধা ।
সোনার বাংলা ফিরিয়ে আনার সুরেই গলা সাধা ।

বদলে দিল সেই মেয়ে এক খুন-জখমের রাজ ।
কঠিন হাতে এনেছে সে পরিবর্তন আজ ।

বাম ফ্রন্টের অপশাসন – হয়েছে আজ শেষ ।
দিকে দিকে জয়ধ্বনির বাজছে যে আজ রেশ ।।

Sunday, May 15, 2011


সম্পাদক সমীপেষু
সান্ত্বনা চ্যাটার্জী


আমি তো চাইনা
তবু তুমি আস –
দরজায় কড়া নেড়ে ফিরে ফিরে যাও ।
মাটিতে কান পেতে রাখি ...।

এখানে ‘সারমেয়’ লিখব না ‘কুক্কুর’ লিখলে ভাল হয় , এ নিয়ে ভাবনায় পেনসিল চিবলাম কিছুক্ষণ । আমি কেন সারমেয়-র মতন মাটিতে কান পাতব, এর কোনও সঙ্গত কারণ খুঁজে পেলাম না । না: , নতুন করে শুরু করতে হবে লেখাটা ।

একটা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক চিঠি লিখেছেন হুগলী থেকে । চিঠি লিখেছেন বলাটা ভুল হবে, তিনি আমার আবেদনে সাড়া দিয়েছেন । মানে রীতিমত সাড়ম্বরে সাড়া দিয়েছেন। তাঁর পত্রিকার নাম ‘দ্বিব্রতী ‘ । বেশ নাম । কবিতার পত্রিকা বের করেন অনিয়মিত ভাবে , মানে যখন হাতে লেখা থাকে তখন বের হয়, এই আর কি । দেশ পত্রিকায় ঠিকানা পেয়ে আমি নিজেই একটি চিঠি পাঠাই । আমার এখন সন্দেহ হয়, দেশ পত্রিকার কবিতা বিভাগের সম্পাদক আমার মতন অর্বাচীনের প্রত্যহ একটি করে নেহাতই নিম্ন মানের কবিতার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্যই এই লিটল ম্যাগাজিনের ঠিকানা প্রকাশ করে থাকবেন । তা সে কথা এখন থাক । এটি সেই চিঠির প্রত্যুত্তর । যাই হক সম্পাদকের চিঠি পেয়ে অত্যন্ত উৎসাহিত বোধ করছি । আমার পাঠান কবিতাটি তাঁর পছন্দ হয়েছে এবং আরও কিছু লেখার নিদর্শন নিয়ে দেখা করতে বলেছেন । তবে তাঁর দেখা করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং দেখা করার সর্ত আমাকে একই সংগে ভাবিত এবং সতর্ক করে তুলেছে । সম্পাদকের নাম ‘আলিঙ্গন চ... ‘।নামটা যেন কেমন কেমন, তা যাজ্ঞে, তবু তো আমার কবিতা পড়েছেন, আরও পড়তে চান, তা নামে আমার আপত্তি ছিলনা । কিন্তু তিনি আরও লিখেছেন যে তার বয়স উনত্রিশ, তিনি গৌরবর্ণ, এবং লম্বায় পাঁচ ফুট ন-য় ইঞ্চি । এবং তাঁর পরনে থাকবে হলুদ সার্ট, এবং নীল জিনস, এবং ডান হাতের কবজি তে বাঁধা থাকবে নীল রুমাল । তিনি কলেজ স্ট্রীটের কফি হাউসের সম্মুখে বিকাল পাঁচটার সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন শনিবার, ৬ জানুয়ারি । চিনে নিয়ে ডেকে নিতে হবে । ডেকে নিয়ে তার পর কি হতে পারে সে বিষয়ে কিছু বলেননি অবশ্য । চিঠির প্রথমেই তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথেই লিখেছেন “আমার নাম আলিঙ্গন, আমার কাছে কেউ সান্ত্বনা চাইলে আমি না দিয়ে পারি!”। নিশ্চয় আমার কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করবেন এমন একটা অমূলক ধারণ আমার মনের গভীরে উঁকি মারছিল ।

অনেক চিন্তা করার পর আমি এক সিদ্ধান্তে এলাম । আমার বয়স আটতিরিশ, এবং বিবাহিতা ; এবং নিন্দুকেও আমাকে কুরূপা বলবেন না ।তদুপরি আমার মনে কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছিল –এটা ঠিক সম্পাদকীয় পত্রালাপ নয় ।এমত অবস্থায় সশরীরে উপস্থিত হতে আমার যুগোপত সঙ্কচ এবং আশঙ্কা উপস্থিত হল এবং তাতে আমার লেখাটি গৃহীত হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কঠিন বলে আমার মনে হল । এমন মনে হবার কারণ হয়ত ছিল না, কিন্তু সম্পাদকের নিজ শারীরিক সৌন্দর্যের বর্ণনা আমাকে ভাবিত করল । কিন্তু চিঠি ফেলে দেবার মত মনের জোর আমার নেই। এত পত্রিকায় এত বছর ধরে কবিতা পাঠিয়ে পাঠিয়ে আমি হদ্দ হয়ে গেলাম, কোনও উত্তর আজ অবধি পাইনি। সবেধন নীলমণি এই ‘প্রেমিক-সম্পাদক’ ব্যতীত। অতএব আমি আমার লেখা বাছা বাছা কিছু প্রেমের কবিতা, কারণ সম্পাদকটিকে আমার প্রেমিক টাইপের মনে হবার সঙ্গত কারন ছিল, বেছে একটি খামে পুরে লেখকের হুগলীর ঠিকানায় পাঠাবার মনস্থ করলাম । কিন্তু মুশকিল হল, সেদিন শনিবার ৬ জানুয়ারি, এবং সেদিনই আমি চিঠি ডাকবাক্সে ফেলেছি । তাই সম্পাদক মশাই আজ খুবই চটিতং হবেন বুঝেও আমি নিরুপায়, ঘরে বসে রইলাম । আমি আশা করেছিলাম মহাশয়ের ক্রোধ আমার প্রেরিত খামের ভিতর উপস্থিত প্রেমের কবিতা গুলি প্রশমিত করতে সক্ষম হবে ।

একটি সপ্তাহ নিরুপ্রদপে বাহিত হল । আমি রোজই লেটার বাক্সটি আঁতি পাতি করে খুঁজি। যদি কোন অদৃশ্য কোনায় আমার নামে কোন চিঠি পরে থাকে , যদিও জানি সেরকম কোন কোনা চৌকো বাক্সটিতে নেই । সে দিন পেলাম চিঠি , বহু কাঙ্ক্ষিত সেই চিঠি । চট করে ঘরে এসে খাটে বসলাম । চিঠি খুলতে কিছু সময় লাগল , কারণ উত্তেজনায় আমার অঙ্গুলি কম্পমান । চিঠি পড়ার পর আমার, একে একে, অপমান, রাগ, উত্তেজনা এবং ভয় হতে শুরু করল ।

সম্পাদক ভয়ানক চটেছেন । তাঁর মতন একজন বড় মাপের কবি-সম্পদকেকে এতখানি অবহেলা । তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি অত্যন্ত বিচলিত আমার বিবেচনাহীন কর্মের ফলে, তাঁর অনেক মূল্যবান সময় বৃথা নষ্ট হয়েছে গত শনিবার কফি হাউসের সামনে । তিনি জানিয়েছেন আমি প্রথম দফায় যে লেখা পাঠিয়েছিলাম, (এবং যে গুলি সেবার তাঁর মতে অতি উত্তম ) অত্যন্ত কাঁচা হাতে লেখা । এর উপর অনেক ঘষা-মাজা করা দরকার, তবেই তারা দ্বীব্রতীর মাপের পত্রিকায় প্রকাশ পাবার যোগ্য হবে । তিনি আরও জানিয়েছেন যে আমার মতন বহু মহিলা তাঁর সান্নিধ্যে এসে ধন্য হয়েছেন এবং ফল স্বরূপ লেখার জগতে অনেক উপরেও উঠেছেন । তিনি এখনো, আমার এত অবিবেচনা মূলক কাজের পরেও, আমার সহিত বোঝাপড়া করতে রাজি আছেন যদি আমি যে কোন শনিবার বিকাল পাঁচটার পরে কলেজস্ট্রীটের লাইব্রারী [কোন লাইব্রেরীর কথা লিখেছিলেন এতদিন পরে সে কথা আমার মনে পড়ছে না ] তে গিয়ে দেখা করি। অন্যথায় আমার বাড়িতে এসে আমাকে সাহায্য করতে রাজি আছেন, যদি আমার বাসায় আসার বাস রুট এবং নম্বর তাকে লিখে পাঠাই । পাঠক নিশ্চয় মনে মনে ভাবছেন , এই ইন্টারনেট আর মোবাইলের যুগে, এমন চিঠি চালা-চালির সার্থকতা কোথায় । আসল কথাটাই তো আপনাদের বলা হয়নি । এ ঘটনাটি প্রায় সাতাশ বছর আগেকার, এবং আমার প্রথম এবং শেষ কোনও সম্পাদকের প্রতি আমার আবেদনের সত্য গল্প ।

এবার সম্পাদকের প্রস্তাবে তো আমার আত্মা খাঁচাছাড়া হবার উপক্রম । কি করি, কি করি চিন্তা করতে করতে আর একটি পত্রাঘাত । এবার খানিকটা চিন্তার সংগেই খাম খুললাম, কারণ আমি , বলা বাহুল্য, আমার বাড়ি আসার বাস রুট এবং নম্বর তাকে পাঠাই নি, জানতাম তিনি আবার ক্রুদ্ধ হয়েছেন । চিঠি পড়ে বুঝলাম তিনি আমার কবিতা প্রাপ্ত হয়েছেন । চিঠি পড়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা । চিঠিটি আমি আমার মেয়ের সঙ্গে যুক্তি করে সেদিনই টুকর। টুকর করে ছিঁড়ে গ্যাসের আগুনে নিক্ষেপ করেছিলাম । সেই চিঠির বক্তব্য আমি নিজের ভাষায় নিচে বর্ণনা করলাম ।

থুড়ি সে চিঠি বলা বাহুল্য আমার কবিতার উত্তরে লেখা । এখানে আমার কবিতাটি পেশ না করলে বোধ হয় সম্পাদকের উত্তর সাধারণের কাছে বোধগম্য হবেনা-

(আমার পাঠান কবিতা-জীবনের প্রতি )এখানে একটা কথা না বললে অন্যায় হবে, কবিতাটির নাম আমি দিয়েছিলাম 'মিলন'-যদিও শারীরিক মিলন আমার বিষয় ছিল না। কিন্তু সম্পাদক তার চিঠি তে এর নাম 'দহন' দেবার কথা বলেছিলেন । পাছে পরবর্তী কালে কোন পাঠক এমন ভ্রান্ত ধারণা করে বসেন তাই আমি 'মিলন' নাম পাল্টে 'জীবনের প্রতি' লিখেছি ।

এখন-ও হয়নি শেষ আশা,
মৃত্যুর শীতল ছায়া এখন-ও রয়েছে দূরে,
জানি আমি, জানে সে ও,
যাবনা যাবনা ফিরে,
তবু হৃদস্পন্দন,
তবু উষ্ণ স্নায়ু, বলে মৃদু স্বরে-
এসো আরও একবার
মিলনের আয়ু এখনো হয়নি শেষ,
স্পর্শ করেছ বীণা
ঝঙ্কার তার
রেশ রেখে গেছে কিনা, দেখো একবার ফিরে ।
জানি আমি, জানে সে ও
হয়ে গেছে শেষ- তবুও আবেশ
করে আছে বাসা।
পুঞ্জীভূত বেদনার মেঘ কখন হয়েছে ভাষা
নিয়ে যেও সাথে .
হয়েছে সময় ?
এখনি যে যেতে হয়-
তবু শান্তি তাতে,
বেদনার ভাষা যদি নিয়ে যাও সাথে ।।

......
(সম্পাদকের চিঠি)
সব টুকু মনে না থাকায় প্রধান বক্তব্য পেশ করলাম
এখন গভীর রাত, আমি রাত জেগে বসে এই চিঠি লিখছি, এবং আমি নিশ্চিত আপনিও
ঘুমাতে পারছেন না ,জেগে রয়েছেন । কিন্তু এমন কষ্ট পাবার কি দরকার, এই দূরত্ব রাখবার ই বা কি প্রয়োজন , যখন আমরা দু-জনাই ইচ্ছুক ( ইচ্ছার বিষয় ব্যক্ত করেন নি )। আমি আপনার উদ্দেশ্যে এই কবিতাটি লিখছি, আপনি অবশ্য-ই আমার এ কবিতাটি গ্রহণ করুন । কারণ আমার লেখা কোনও কবিতাই অধিক দিন পরে থাকেনা । কেউ না কেউ সেটি নিয়ে চলে যায় ।

কবিতাটি কিছুটা এরকম_

ঠোটে সিগারেটের আগুনের মতন
ছুঁয়ে গেল তোমার ঠোঁট ।
আমার হাত খেলে গেল তোমার
নরম ঢেউ নিয়ে ।
বেদানার দানার মিষ্টি স্বাদ আমায়
করে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি যখন হাঁদার মতন চিঠি হাতে দাঁড়িয়ে, মেয়ে ফিরল স্কুল থেকে । কি হয়েছে মা ?
চিঠি পড়ে ভয়ে মেয়ের অবস্থা মায়ের মতন । শিগগির ছেঁড়, ফেল ফেল , দাঁড়াও গ্যাস জ্বালাই দাঁড়াও, ফেল ফেল আগুনে ফেল...লেখা গুল পুড়ছে আর আমি আর আমার মেয়ে
সোয়াস্তির নিশ্বাস ফেলছি । কিন্তু কেন ছিঁড়ছে, কেন পোড়াচ্ছি, দু-জনার কেউ বুঝিনি । মেয়ে আমার কিশোরী , তার প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়, কিন্তু কিশোরীর মা, কেন এমন উজবুকের মতন কাজ করল আজও আমার মাথায় ঢোকেনি ।।

[আমি সম্পাদকের পাঠান প্রথম দুটি চিঠি ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছিলাম, এই অনুরোধ করে যে ভবিষ্যতে এমন ছ্যাবলা প্রকৃতির সম্পাদকের ঠিকানা যেন সেখানে দেওয়া না হয়- উজবুকের মতন কাজটা না করলে শেষ চিঠিটা পাঠাতে পারলে আমার অনুরোধ আরো জোরদার হত]

Wednesday, May 11, 2011

মাকে মনে পড়ে

আজ দিনটা মেঘলা, বৃষ্টি হয়েছে শুরু ,
রাস্তায় এক হাঁটু জল,
মেয়ে বললে ডেকে
আজ খিচুরি কর মা,
আজ খাবনা মাছের ঝোল ।

খিচুরির সাথে কি খাবি বিনু –
মা বলতেন ডেকে ,
ফুলুরি , বেগুনি ভাল লাগে খুব ,
ডিম ভাজা যদি থাকে ।
চিকেন পাকোড়া – মেয়ে বলে দূর থেকে ।

তোলা উনুনের গরমে মায়ের ফরসা মুখটা
লাল । আমি আর ভাই ,
গপা-গপ খাই বসে ।
আহা কি যে স্বাদ তার ।
ডিনার টেবিলে মেয়ে বলে-মা দারুন হয়েছে ফ্রাই ।

লাল পাড় সাদা সারিটা মায়ের –
প্রথম আমার কেনা ।
চোখে জল মুখে হাসিটি মায়ের
ফ্রেমের দেবি প্রতীমা ।
মাদার্স ডে-র গিফটা দেখ মা পছন্দ হল কিনা ।

মাগো কোনদিন বুঝিনি তুমি কতখানি জুরে ছিলে-
বুঝিনি আমার জীবনে তুমি
কতখানি ছিলে দামী ।
বুঝেছি তোমার স্নেহকে আজ মা,
মেয়ের পানেতে চেয়ে, স্নেহ যে নিম্নগামী ।

Friday, May 6, 2011

দুলুর সাইকেল

রেল লাইনের ধারটি ধরে
বুনো গন্ধে ভরা
হলুদ ফুলের ঝার ।

বুক ভরে বাতাস নিয়ে
দৌরে দৌরে চলে দুলু
দিনে হাজার বার ।

লাল মাটির পথ ,
ধুল ধুল ঝড় ।
দুলুকে কেউ ডাকে না যে –
আপন কিম্বা পর ।

দুলুয়ারে ঘরকে আয় ,
বাপ আমার মানিক ,
কে ডাকে কে চমকে
দুলু দাঁড়িয়ে থাকে খানিক ।

না কেউ নয় বাতাস বুঝি
সন সন সন ঝড় ।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি শুরু হল ।

তবু দুলু ছুটছে জোরে –
বাপটা যদি ফেরে ।
ট্রেনের সময় হল ।

বাপ গেছিল ভিন গাঁয়েতে
আনতে সাইকেল ।
প্রাণের ব্যা্টা চরতে চায় গাড়ি ।

বছর গেল মাস গড়াল ,
ছুটছে দুলু রোজ ,
বাপ যে তার ফিরল না আর বাড়ি।

Thursday, May 5, 2011

নকলনবিশ

হারুর বাড়ির চারতলাতে খুলেছে এক কারখানা ,
নকলনবিশ তৈরি হবে এক সাথে রোজ চারখানা ।
প্রথম ব্যাচে চশমা চোখে
মধু-বিধু-যদু-বুড়ু ,
ডাক্তারিতে নকলনবিশ খেতাপ পেয়ে-
করল শুরু ডাক্তারি এই পেশাটা ,
জমছে ভাল নেশাটা ।
পরের ব্যাচে নীলা-শীলা
হল প্রধান শিক্ষিকা ,
সঙ্গে ছিল রিয়া-টিয়া
মধুর সঙ্গে মক্ষিকা ।
হারুর মেয়ে হ্যাংলা নেড়ি
টুকছে দেখে পরীক্ষায় ,
মারল শীলা ছাতার বাড়ি
আঘাত হল অধিক তায় ।
নেড়ির কান্না শুনতে পেয়ে
স্ট্রাচার নিয়ে জলদি গিয়ে -
করল মধু চিকিতসা
যদুর তাতে কী ঈর্ষা ।
ওষুধ খেয়ে হারুর মেয়ে
যেই না পটল তুলল হায় ,
ডালের সঙ্গে ভাজা করে
খেয়ে নিল যদু রায় ।
পটল খেয়ে বদহজমে
চোঁয়া ঢেকুর তুলল যেই ,
ঠুকে দিল মকদ্দমা -
মানহানি এই মামলাতেই ।
হারুর উকিল সাধু ,সে তো
নকলনবিশ খেতাপধারী ,
চলতে নারে একপা হঠাত
হল যেন পায়া ভারি ।
হাকিম হাঁকেন আসামী কৈ-
নিয়ে আস এক্ষুনি ।
ছুটে গিয়ে আনল ধরে
অসমবাসী হাকিম কেই ।
বেড়ির মাথায় চুল কেন হয়-
এই না নিয়ে বচসায় ,
মধু গেল মারা তখন
পরল ধরা যদু রায় ,
হারুর কাছে খবর গেল
নকলনবিশ কারখানায় ,
ফাঁসীর দড়ি টানার জন্য,
নকল নবিশ প্যায়দা চাই ।
নকল নবিশ প্যায়দা বলে
আসল খুনী চলবে না ,
নকলনবিশ খুনি ছাড়া
ভবি তো ভাই ভুলবে না।

হারুর বাবা বিদেশ থেকে
এসে জান করল কি ?
নকিলনবিশ কারখানাটার
বন্ধ করল ভর্তুকি ।
কারখানাটা বন্ধ হতে
সবার পরল মাথায় হাত ,
বন্ধ হল রোজগার আর
বন্ধ হল পেটের ভাত ।

গল্প আমার শেষ হল না শুরু
তোরা বল দিকি ?
ঠিক যদি হয় বলব এরা
নকল নবিশ নয় দেখি ।।