Friday, September 23, 2011

নাম মাহাত্ম


একটা নাম-
গড়েছে একটা জগত
নামে কি থাকে প্রাণ!
যে শোনে সেই হাসে ।
নামের দাম,
যে জানে সেই জানে।
পাগলপারা যে জন ভালবাসে ।

চোখেতে তার জগত করে বাসা,
ভাবের ঘরে ঠাসা ,
তাকায় না সে ফিরে ।
পাখির মতন নাচে সে শুধু
নামটি ঘিরে ঘিরে ।।

নামের স্রোতে ভাসে-
নামের সাথে গন্ধ আসে,
স্বপ্ন চোখে ভাসে ।

নাম যে আর নামটি শুধু নয়;
নাম যে তার জগতটাকে
করেছে মধুময় ।।

সুন্দরী এক গাছের নাম




কাল এসেছিল ঝড় এই বনে
ভীষণ তান্ডব করে গেছে তারা ,
দেখ কত ভাঙ্গা ডাল পরে আছে,
পরে আছে পাখির ছানারা মুখ থুবরিয়া ।
বড় বড় গাছ সব
কাত হয়ে আছে এক পাশে ,
শিকড় নিয়েছে উপড়িয়ে-
পাগল বাতাসে ।।

একটা একলা গাছ সুন্দরী,
আছে সোজা মাথা উঁচু করে-
যেন পোড়া কাঠ- পাতাহীন ।
মনে হয় বাজ পড়েছিল কাল রাতে,
সুন্দরী গাছ নয় আর,
ওটা প্রাণহীন ।।

ঐ গাছে পাতার আড়ালে,
বাসা করেছিল জোরা পাখি।
বুকে তার ছিল আশা,
ছিল ডাকাডাকি-
পিয়া পিয়া পিয়া ।।
আসছে না সাথী কেন ফিরে ,
পাখির কান্না তাকে ঘিরে ।।
গাছটার গেছে যাক প্রাণ
প্রকৃতির স্নেহ রূপে বাজ ,
নিভিয়ে দিয়েছে ছোট হিয়া ;
এই বনে ঐ গাছে
ডাকবেনা আর কোনও পাখি
পিয়া পিয়া পিয়া ।।

Thursday, September 22, 2011

প্রেমের জ্বর




ঝরনা ছোটে ঝরনা চলে
পাথর বেয়ে যায়,
মন পাথারে প্রেম বয়ে যায়
প্রেমের পরীক্ষায় ।
ডাইনে বামে দাঁড়িয়ে হতাশ
দাঁড়িয়ে প্রেমিক কুল,

জোর করে তাই প্রেম সাগরে
মন হারালে কুল ।
কাউকে ছোঁয়া আধেক দেওয়া,
কাউকে দেওয়া পুরো ।
প্রেম আগুনে মন পুড়েছে
এবারে তুই জুরো ।

সে আসে ,
সে যায়,
সে থাকে কিছুক্ষণ ,
তারপরে যায় পাথর বেয়ে,
মাড়িয়ে শরীর মন ।

ঝরনা ছোটে ঝরনা চলে
পাথর বেয়ে যায়,
প্রেমের জোয়ার শরীর ছুঁয়ে,
মন ছাড়িয়ে যায় ।

মনের কোনায় ঘুমায় প্রেমিক,
প্রেমিক , প্রেমের জ্বর ;
প্রেম চাস তো শরীর ছেড়ে ,
হৃদয় খুলে ধর ।।

কবির স্বপ্ন পুরাণ




তুমি আসনি কাছে, আসনি কাছে
আসনি কোনোদিন
আমি শরীর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে

চেয়েছি প্রতিদিন

কলম কেউ টেনে ধরে,
গলাটা ধরে চেপে ;
বুকের মাঝে
নানা রকম শব্দ ওঠে কেঁপে

তারা চাপাই থেকে যায়-
ভাষা শুধু বলে আমায় ,
হায়রে বন্ধু হায়
অণু আর প্রেরণা তোর
জোরা তো লাগেনা
নতুন কোনও ভাবনা-ঠিকানা
পাওয়া  গেলনা  আর
মনের আকাশ শুধুই হল ভার

মনের আকাশ-বাতাস ভারি হল
ঝড় হলো না-বৃষ্টি উড়ে গেল
এলো মেলো শব্দ-বাতাস
মনেই গেল মিশে
কবি হবার আশা যত
স্বপ্নে গেল ভেসে ।।

লাগাম


লাগাম টেনে ধর বন্ধু লাগাম টেনে ধর ,
মনের কোনায় আপদ ঘুমায় এবার বিদায় কর
পদ্ম গন্ধী হৃদয় তোমার সুবাস থাকুক ছেয়ে
আপন যে জন হবে না তার থেকোনা পথ চেয়ে
কোনও এক অলস সময় পড়বে মনে যদি,
ভেবে নিও কাল যে ছিল আজ সে মরা নদী ।
জীবন তোমার নয় খেলাঘর , নেশার পাত্র নয়,
অপাত্রে হে বন্ধু জীবন আর কোরো না ক্ষয় ।
দেবার পাত্র শেষ হয়েছে আর তো কিছু নেই,
বন্ধু জনের ঘর ভাঙ্গেনি মনের আশা এই ।
বুঝতে আমায় ভুল কোরোনা, তাও বা যদি কর ,
তবুও হে বন্ধু মনের লাগাম টেনে ধরো ।।

Wednesday, September 21, 2011

কিছু কথা


অনেক কথা থমকে গেল তোমার চোখে চেয়ে।
মেঘ করেছে হৃদয় ছেয়ে,
ঝড় উঠেছে মনে,
দুষ্টু হাসি ঝিলিক মারে,
তোমার চোখের কোনে ।

হৃদয় কেন ভারি, কেন বুক করে দূর দূর,
আশঙ্কা সব ভাসিয়ে দিল হাসির সমুদ্দুর
কেন এত ভয় , কেন দুঃখ এত কর ,
এ খেলাঘর নয়, জীবন শক্ত হাতে ধর
তোমার চোখের ভাষায় ছিল এমনই ইঙ্গিত
থমকে গেল আমার কথা বেদনা সঙ্গীত


তুমি আমি সন্ন্যাসী তো নই,
আছে প্রাণে সত্য টুকু চাওয়া
চিত্ত পাগল আবেগ প্লাবন স্রোতে ,
তাইতে কেবল তোমার কাছে যাওয়া
আকর্ষণটা মন্দ কিনা ভালো ,
একি কেবল ছায়া কিম্বা আলো ,
সত্য এ যে জানি শুধু এই
অকপটে স্বীকার যদি করে,
তবে কি আর পাপ সেখানে নেই
পাপ-বোধে কি তাকাও না আর চোখে ,
ভাব কি যে মন্দ বলবে লোকে
ভয় লজ্জা আমার নেই যে কেন
তোমায় যখন দেখি সবার মাঝে ,
হৃদয় বীণার ঝঙ্কারেতে বাজে ,
শুধু মাত্র তুমিই আছ যেন
পাপ যদি হয় পাপীই আমি তবে ,
মন্দ বলে বলুক আমায় সবে
শুধু তুমি সত্যি টুকু জেন
শরীর মন আর হৃদয় দিয়ে চাই
তুমি ছাড়া কেউ সেখানে নেই
আমার প্রেমে ফাঁক নেই কো কোন

Monday, September 19, 2011

খোকার স্বপ্ন


মায়ের স্বপ্ন

স্বপ্ন চোখে ভাসে
মায়ের স্বপ্নে খোকা হাসে
ঘুমের থেকে উঠে দেখে
দেয়াল চারি পাশে

কঠিন দেয়াল যত ,
কঠিন তারি মত ;
স্বপ্ন এমন ভাঙ্গা ,
স্বপ্নে খোকার নরম দুটি চরণ ছিল রাঙ্গা

নরম ছিল মুঠি
হাঁটত গুটি গুটি
টলো মলো পায়ে
বছর গেলে মায়ের খোকা চলত রাঙ্গা পায়ে

মায়ের কোলটি ঘেঁসে
দাঁড়াত সে এসে ,
ঘুমটি এলে পরে ;
মায়ের কোলে পরম সুখে থাকত ঘুমের ঘোরে

ইটের দেয়াল
সিমেন্ট দিয়ে বাঁধান ঘর বাড়ি ,
তাই  তে খোকা করেছে কি আড়ি
মায়ের সাথে আজ ,
খোকার ডাকে স্বপন-পুরে আসবে কখন মাগো ;
সাঙ্গ করে দালান বাড়ির কাজ

মা কাঁদে হায়,
হায়রে জীবন-
বেঁধেছ আজ এ কোন জাঁতা কলে !
খোকার স্বপ্ন কেঁদেই গেল চলে

Saturday, September 17, 2011

শিশু সৈন্য


দিনের পর দিন চলে যায় রাতের পর রাত ,
তুমি ও জান আমিও জানি, পেট ভরে নেই ভাত ।
তবুও পথে চলতে হবে, তবুও কাঁটা দলতে হবে,
লক্ষে যেতে হলে ।
অদৃশ্য শিকলে বাঁধা মানুষের মিটিং-এ মিছিলে ।
সেখানে আছে তো শুধু কথা আর কথা  ,
শুষ্ক বারতা ।
তবু এক দিন সূর্য উঠবে পশ্চিমে ,
ভাত দেবে, ছাত দেবে , গরীবের মাথা গুনে ,
আমাদের নেতা ;
মালিক শিকল নাড়ে ঝম ঝম ঝম ,
পথ চল, ভোট দাও
আশা কর কম ।
তোমাদের শিশু দাও আমাদের সাথে ,
গড়ব সৈন্য হাতে হাতে ,
ভাত দেব, ছাত দেব গদি ফিরে পেলে ;
গোনো দেখি কমরেড কত বাচ্চা পেলে ।।

Thursday, September 15, 2011

কেন আমি লিখি


কবি তুমি কোন তাড়নায় দেখেছিলে
ঝলসান রুটি এক পূর্ণিমায়,
কামের পিছন ছুটে ছুটে
চার হাত-পায় ,
ভেঙ্গে গেল মন ।
নিচের খিদেই শুধু –
বুকে ধরায় রঙ -আমার
কামড়ে ধরা কাম ।

মায়ের কোলেতে কাঁদে
জ্বরে ধরা ছেলে –
পূর্ণিমায় গ্রহণ লেগেছে যেন ,
মা ডাকেন চাঁদের ললাটে-
আয় টিপ দিবি আয় –
আমার মনটা কাঁদে হায় হায় হায় ,
আমায় কেন যে শুধু কাম কামড়ায় ।

জ্যোৎস্নার বিভোর মায়ায় ,
কবি তুমি ডাক দিয়েছিলে ,
আয় তোরা আয়, খেলি বন-জ্যোৎস্নায় ;
কেমন সে সুন্দর রাত,
কেমন সে মুকুলিত আমের পল্লব ,
কি ছিল সে মাতাল  হাওয়ায় ,
আমার হৃদয় কাঁদে হায় হায়  হায় ;
কেন আমি ছুটি শুধু কামের তাড়ায় ।

শেষের সে দিনটিতে কবি,
তোমার কথার মালা লে ফেলে রেখে গেলে ,
 ভালবেসে  তুলে নিয়ে,
রেখে দিই হৃদয়ের গোপন কোনায় ।
সে মালার সুগন্ধে হৃদয় হারায় –
আমার সকল কাঁদে হায় হায় হায় ।
কেন আমি লিখি শুধু কামের তাড়ায় ।।


Sunday, September 11, 2011

অসঙ্গতি

কবি তোমার বয়স হল চার কুড়ি আর আট,
এখন তোমার ফুল বাগানে
সাদা তুলোর আঁটি,
তবুও তোমার নাভির নীচে
টাকার সুড়সুড়ি ,
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবে কি
তোমার পোড়া কাঠি ।
নিঘৃণে মা, দিদিমা দিচ্ছ ঢেলে থালায় ,
বৌ যে এখন একলা ঘরে
খাটের আলো জ্বালায় ।
কোমরে জোর না থাকে তো
আসতে দাও ঘরে ।
তবুও এখন টাপুর টুপুর
বৃষ্টি ঝরে পরে

জ্যোৎস্না খুঁজে ফিরি

তুমি ডাকলে -
জ্যোৎস্নায় পা ডুবিয়ে চলে এস মালতী ,
আমার কঙ্কালটা হেসে ওঠে ,
তার খাঁচায় খাঁচায়
অমাবস্যার অন্ধকার ,
তবু আমি জ্যোৎস্না খুঁজে বেড়াই ।
তার নরম আলোয়
ডুবে যেতে চাই মালতীর মত ।
অশান্ত, অবাধ্য মেঘ ঢেকে ফেলে চাঁদ,
তারারা উঁকি মারে -জগত ঘুমায় ;
আমি জ্যোৎস্না খুঁজে ফিরি
অমাবস্যার কালো হাত
ছিন্ন-ভিন্ন করে -রাতের বেলায়
জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো
খেলা করে কোন ঘরে
তুমি দাও বলে ।

Monday, September 5, 2011

অবাক-সবাক জীবন দর্শন

তোমার পথে চলব বলে
পথ হেঁটেছি অনেকটা,
কখন মস্ত ভুল করেছি ঘুরে গেছে দিক,
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি
চিনি না তো এ পথটা,
ভাবছি মনে ফিরব নাকি,
এই পথটাই ঠিক !
লেখা আমার অন্ত্যমিলে
আটকা পড়ে থাকে,
বেরোতে চায় না ।
মিল যদি বা থাকে লেখায়
দোষটা কি আর তাতে ,
ছন্নছাড়া হতে হবে,
কেন এ বায়না !
তোমরা স-বাক, তোমরা তরুণ
টগবগিয়ে চল ।
আমার লেখা বড্ড নরম
কি আর করি বল !
আমার মাটি শুকন এখন
ফেটে সে চৌচির ,
মনের মধ্যে এখন তখন
ছেলেবেলার ভিড় ।
কঠিন জীবন দর্শন
আরও কঠিন যে তার ভাষা ।
মাঠ করেনি কর্ষণ
তাতে ফসল ফলার আশা ।
জীবন কঠিন বাস্তব
বিয়োগান্তে ভরা –
তাইতে ভাসি কল্পনাতে,
আসি কবির পাড়া ।
এখানে তো কচি ঘাস ও
ভীষণ জীবনমুখী কঠিন কথা বলে ।
যেদিন হবে শুকনো কেঠো
হয়ত লিখবে মিষ্টি কিছু
আমার মন তো বলে ।।

Sunday, September 4, 2011

বিয়েবাড়ির হট্টগোলে

বিয়েবাড়ির জমজামাটি আলোর মাঝখানে,
ছুঁয়ে গেল একজোড়া চোখ
নরম উত্তাপে ।।
বেনারসি জরির পাড়ে
আলতা রাঙ্গা পা,
মুখখানি তার পানের পাতা ,
সোনায় মোড়া গা ।
সবকিছু দেয় ভুলিয়ে সেই চোখ –
মন বলে আজ এখান থেকেই জীবন শুরু হোক ।
তার ফোলা ফোলা অধরখানি লাল,
সিঁদুরে, চন্দনে সাজে গাল-
ছোট্ট মিষ্টি বংশী নাকে
হীরের নাকছাবি ।
ডাগর ডাগর কালো চোখে
আমার বুকের চাবি ।

কেন এমন অনর্থ, কেন খুললে
বন্ধঘর ।
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে কেন
টোপর পড়া বর ।
বিয়েবাড়ির হট্টগোলে, ডুবল মন পাপে –
তোমার কাজল কালো চোখ
ভরল কেন হৃদয় আমার
নরম উত্তাপে ।

মায়াবী ক্ষণ

মন ছুটেছে ঝর ঝর ঝর পাহাড়ি ঝরনা ,
ছলাত ছলাত ঢেউ উঠেছে জলে ,
চারি পাশে পাহাড় ঢাকে রূপালি ওড়না ,
মাঝখানেতে উপত্যকা সবুজ সমতলে ।

উপত্যকার সবুজ ঘিরে ফুলের আলপনা ,
ফুলে ফুলে উড়ছে প্রজাপতি ,
মনের ভিতর গান ধরেছে রঙ্গিন কল্পনা ,
মনের পায়ে বনহরিনের গতি ।

আকাশ ঘিরে আবির আজ কে দিয়েছে ঢেলে ,
মিলে মিশে গোলাপি আর সোনা ,
পেড়িয়ে পাহাড় সূর্য ঐ যায় যে অস্তাচলে ,
এমন খুশী মন বলে ভুলবনা ।।

হীরের কুচি ঝক ঝক ঝক জ্বলে আকাশ জুরে,
সাতনলা হার পরিয়ে দিল মন ,
এমন রাত এই জীবনে আর কি আসে ফিরে !
আর কি আমি দেখতে পাব এই মায়াবী ক্ষণ ।