Wednesday, October 31, 2012

চলে গেলে কবি


লিখেছিলাম ফিরে  এসে  দ্যাখা   করব স্বাতিদি
প্রনাম করব যদি থাক কলকাতায় ;
লিখেছিলাম নীললোহিত চিঠির পাতায় .
 ভেবেছিলাম কবির সঙ্গে মেলাবো কথামালা
কবি কি   হেসেছিলে  মনে মনে
সামান্য মানুষের এত সাহস হয়!
হাঁটু গেড়ে ভিক্ষা করার কথা ,
আমি ভেবেছিলাম তার কাছে আসার  যোগ্য হয়েছি

লেখা নিয়ে কথা বলতে যদি
কবির যোগ্যতায় ;কবির অন্তর না ছুঁতেও পারি,
তবু গনেশের কৃপায় পৌঁছে যাব ঠিক
কবির দরজায় ..

স্বাতিদি কাছে টেনে নিলে
তোমার চিরকালীন নম্রতায় ,
তবু আমি সময় চেয়েছি ;
তিরিশ বছর কি কম নয় !
আরো তিন মাস সময় চেয়েছি 
কবি দর্শন কামনায় ..

চলে গেলে কবি -
তুমি কি মনে মনে হেসেছিলে
একালের একলব্যের মানসিকতায় !
আমার অনাগত জাতক কে ঠেলে ফেলে
চলে গেলে কবি !



Sunday, May 27, 2012

ফিরে আয়



সীমা পারাপার দ্বর্থহীন ভাষায়
জয় করেছ  সীমানা ছাড়িয়ে ,
তবু তুমি হাঁটছ একা ,
যুগ যুগান্তর ।
কি করে পার-
সব কিছু  হারিয়ে পরিপূর্ণ –
শুধু অনুভবে চূর্ণবিচূর্ণ কর তাকে
যে ডাকে তোমায় –ফিরে আয় !
ফিরে আয় ।।

বেল-কুঁড়ি


বেল-কুঁড়ি তার লাজুক মনে যত কথা রাখে লুকিয়ে
একটা একটা সাদা পাতা  তার ভরা থাকে সৌরভে ।
তুমি জান আমি জানি ,
নরম হৃদয় তবুও হয়ত কেউ কেউ গেছে দলে
কুঁড়ি থেকে তাই ঝরে গেছে পেলবতা ,
সেই থেকে তার কাজল মেঘেরা
ঢেকে দিল চাঁদ তারাকে ,
আকাশে এখন শুধুই দহন
ফুলেদের ভাষা হারিয়ে
শ্লেষ দেয় শুধু ছড়িয়ে ।
তুমি জান আমি জানি –
তবুও পারত কেউ কেউ তুলে নিয়ে
কিছু কথা ফিরে দিতে ।
আমি শুধু এক রাত্রি জ্বালাই তার সেই
পাতা ছিঁড়ে
কিছুটা নিংড়ে নিতে ।।




Wednesday, May 23, 2012

তুমি আসবে কি


তখন ঝড়ের শেষে খর কুটো হলুদ পাতারা
বিছানা পেতেছে-

ছড়িয়ে রয়েছে লাল কৃষ্ণচুড়ারা –
ধুলোয় ঢেকেছে চোখ দুটো –
এক ফোঁটা জলের জন্য তৃষ্ণার্ত
গাছের মত আমিও দাঁড়িয়ে রাজ পথে ।
তুমি আসবে কি আসবেনা -
হলুদ বসনা আমি তীর্থের কাক ।
সেদিন বয়স ছিল কুড়ি ।।
অনেক দশক পাড় করে –
বর্ষার ঘনঘটা – জলে ভেজা রাতে
জানালার গ্রিল ধরে চোখ পেতে রাখি –
অন্ধকারের পথ পাড় করে দিতে-
তুমি আসবে কি!

Friday, May 11, 2012

মনের ভাষা


মনের ভাষা

মনের কথা যখন এলো মেলো-
নিজে বুঝলে ও বোঝাতে পারি না-
তখন কিছু পদ্য বা কবিতা
না হয়ত নিছক ই গান হয়ে যায়।
যে ভাষায় ভালবাসতে পারি,
যে ভাষায় অনায়াসে ঘৃণা করি
যে ভাষা আস্টে পৃষ্টে জরিয়ে রয়েছে
ভিতর বাহির ।
সে ভাষা স্বতন্ত্র, সে ভাষা মেলেনা
সবার । যে বোঝে সে বোঝে-
বাকি টুকু  অধরা রয়ে যায় ।।

মনে হয় আমার কবি  বড় ই প্রাচীন
মধ্যযুগীয় কথা বলে ।
আমার ভিতর বসে ঘাপটি মেরে
লেখনী চালায় হাতে ধরে ।
আমি যে আকাশে তাকাই
প্রখর তাপের দিনে
সে আকাশে তারার রোশনাই ঢালে
মনে মনে ।
তার সস্নেহ আলিঙ্গনে মুছে দেয় ক্লেদ
গ্লানি , অকৃপণ হাতে ভেজায় আমায় ।
আমি নিঃস্ব নিরুপায় চেয়ে চেয়ে দেখি
সে আমার দুঃখ সাজায় কবিতায় ।।


Wednesday, May 9, 2012

বন্ধু আমার




মনের ভিতর আগুন
জ্বলে পুড়ে ছারখার
নদীটা আমার ;
দাবানল আজ বনাঞ্চলে
শাড়ির আঁচলে ঢেকেছি
সে হাহাকার
যত টুকু বালি তলানিতে ,
ঝড় আসে - ছারখার
এই নদী তবু  পারবে
কি বেঁচে ফিরে এসে
সাগরের ডাকে সাড়া দিতে ;
প্রতিজ্ঞা আমার
হবে কি পূরণ
দূর থেকে কোনো আপনজন
ছুঁড়ে দেয় এক টুকর আকাশ
মেঘ মল্লার
তার সেই দানে
আপ্লুত এই মন জানে -
টুপুর-টাপুর বৃষ্টির পর
ঝরবে শ্রাবণ ধারা  -
ছাপিয়ে দুকুল ছুটবে সে ঠিক তার পথে-
মানবে না হার
বন্ধু আমার অঞ্জলি পেতে নিয়েছি সে উপহার ।।

Tuesday, May 8, 2012

অপেক্ষা

আমার দিন রাত কার অপেক্ষায় কেটে যায়
আমি নিজেই বুঝিনা
তুমি বুঝবে কি !
যদি ভেবে থাক আগুনের অঙ্গিকারে
সত্ত্বা বিকিয়েছি
বিকিয়েছি দেহ মন প্রাণ
ফিরে নিতে পার এখন তখন
জমা-খরচের খাতায়
তখনো থাকবে কিছু বাকি ;
মনের জানলা খোলা
নিঃশব্দ বাতাস উকি দিয়ে যাবে
একে একে আলো হাসি গান
বিশ্বাস কোন একদিন ছুঁয়ে যাবে ঠিক
তোমার ও অন্তর ;
আমি বসে থাকব
তার আশার আশায় ;
ভালবাসা গভীর হোক নিঃশব্দতায় ।।

Sunday, March 25, 2012

প্রশ্ন

যখন  সুন্দর তুমি কথা বল,


মিষ্টি হেসে ভালবেসে –

যখন আমার মনের মধ্যে

ফুল বাগানের দোয়েল ডাকে সুরে ;

দূরে দূরে বহু দূরে ছড়িয়ে থাকে

সেই আবেগের রেশ ।

ঠিক তখনি মেঘের ভেলায় সয়ার হয়ে

বৃষ্টি এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় যে

আমার মন – কোন অজানার দেশ ।।



তখন সন্ধ্যা সূর্য ঢলো ঢলো –

শহরজুরে নিয়ন বাতি জ্বলে ।

আমার তখন দেয়াল ভাঙ্গার খেলা ,

কলকাতাটা তখন অস্তাচলে ।



উঁকি দিয়ে আমার ছোট্টো ঘরে,

উড়িয়ে নিয়ে যায় কে আমার মন ।

আমি থাকি জানলার গ্রিল ধরে,

মনের ভিতর ঝড় ওঠে শন শন ।



যখন তুমি আমার এ হাত ধর,

মিষ্টি হেসে ভালবেসে -

তখন আমার বুকের ভিতর ঢাকের বাদ্যি ,

মাথার উপর আকাশ ভরা তারা

ঘরের যত ইট পরে যায় খসে ।

ছোট্ট আমার বাসায় তুমি

উঁকি দিয়ে গেলে কেন অসীম শূন্যে মিশে ।




















































Sunday, March 11, 2012

খুঁজেছি তোমায়


খুঁজেছি তোমায় আমি অনেক খুঁজেছি ,
রোদে ঝরে বৃষ্টিতে ,
সকাল সন্ধ্যায় ,
বৃষ্টি মাখা ছাতে ফোটা রজনীগন্ধায় .
মাঠের সবুজে আর আকাশের নীলে
বইয়ের পাতাতে আর   কাগজে কলমে ,
কবিতার ছন্দে আর গদ্য কবিতায় ,
পেয়েছি তোমায় তবু 
 পাইনি বলা যায় ;
আস তুমি তবু কেন সব টুকু নয় .
সব খানে যেন  কিছু ফাঁক  থেকে যায় .
ধোঁয়া ওঠা কাপের চায়ে ,
চুমুকে খুঁজেছি ,
বোতলের তরলে তুমি আছ সে  বুঝেছি .
আকন্ঠ পান করে রক্ত কনিকায় ,
ধীরে ধীরে মিশেছ তুমি ,
শিরায় শিরায়
এসেছ , তোমার সাথে রাত কেটে যায় .
তবু যাও চলে . ,
ঠিক যেমন ভাবে নেশা ছেড়ে  যায় .
তুমি আছ চেতনাতে
চির আনন্দময়ী -
তবু কেন সব টুকু ফাঁকি মনে হয় 1


Thursday, March 1, 2012

মাটি থেকে এত দুরে পৃথিবীর আকর্ষণ তাই এত বুঝি

সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পাখির ডানায় মুখ গুঁজি

তোমার আকাশে সাদা মেঘের খাতায়

রোজ দেখি পাখির পালক ঝরে যায়

পৃথিবীর টানে .

আকর্ষণ কেউ যদি দিতে পারে খুলে ,

তোমার ঠিকানা ভুলে আকাশের নীল ফুঁড়ে

অসীম ব্যাপ্তিতে মিশে যাই .

ঠিকানা হারিয়ে যদি মিশে যেতে পারি-

পরিচিতি থাকবে কি কোনো

নতুন- পুরানো ?

অখন্ড অস্তিত্ব আর অসীম ব্যাপ্তি নেশা

হাত ছানি দিয়ে ডাকে এখানে ওখানে ,

ব্যস্ত জীবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে

আমি যদি নিজেকে না পাই ,

সে ব্যাপ্তির কে বুঝবে মানে ?

Wednesday, February 29, 2012

এখনো আছিস তুই এখনো আছিস

এক টুকরো আলো হয়ে অন্ধকার এ মিশে

যে কালে যে দেশে

মন্দির এ মসজিদ এ কাশী বা মেক্কায়

মরেনি মানুষ .

সে কাল সে দেশ থেকে ছেরেনি বন্ধন

যত খুন যত মৃত্যু যত অহংকার

আকাশ বাতাস ভরা যত হাহাকার

যত রক্ত লাল

শিরায় শিরায় নাচে

তারও চেয়ে শক্তিময়ী

এক বিন্দু বিশ্বাস

ধরেছে নিশ্বাস

ঘৃনা তাকে পারবেনা ছুঁতে ..










Monday, February 13, 2012


চিন্তামণির চিন্তা

চিন্তামণি মহা চিন্তায় পরে গেছেন দেখতে দেখতে দশ বছর হল কর্ত্তা গত হয়েছেনচিন্তামণির শরীর স্বাস্থ্য বড়ই ভোগাচ্ছেআজ বাতের ব্যথা, কাল পেটের ব্যথা, একটা না একটা লেগেই আছে আজকাল সব সময় শুয়ে শুয়েই কাটান চিন্তামণি ছেলেরা বড় হয়েছে, যে যার সংসার নিয়েই ব্যস্ত ।   চিন্তামণির যে কি ভাবে সময় কাটে একা একা, সে নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই পেটের ছেলে শত্রু হয়েছে সব নাতী, নাতনী অবশ্য ঠাম্মার ঘরে আড্ডা জমায়, কিন্তু তারাও কেউ সে অর্থে চিন্তামণির সঙ্গী নয় এদের মায়ের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা চলবেনা, ফোঁস করে উঠবে এক একটা ক্ষুদে শয়তান

ছেলের বৌদের কথা না বলাই ভাল, এক একটা এক এক রকম বড় বৌ মালতী তবু যা হক শাশুড়ির দেখাশোনা করে শরীরে মায়া-দয়া আছে তার খাওয়া দাওয়া, ওষুধ-পত্র ঠিক সময় দিয়ে যায় তাঁর কথা মত চলেও চিন্তামণি থাকেনও তো বড়র সংসারে কিন্তু কত্তার আমলের সে দাপট আর নেই অতবড় সংসারটা নিজে এক হাতে সামলেছেন এতকাল এখন সবাই ভিন্ন ভিন্ন সংসার পেতেছে কোন সংসারের আর তাঁর কর্তৃত্ব চলেনা

এত বড় বাড়ি, কত্তার ব্যাঙ্কের জমান এত টাকা সবই চিন্তামণির নামে তবু দেখ সবাই কেমন নিজের নিজের সংসার করে নিয়েছেএত বিষয় সম্পত্তির দখল ছেড়ে একদিন টুপ করে চলে যেতে হবে কত্তার মতন এই চিন্তাই তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে

মাত্র ষাট বছর বয়েসে অমন একটা স্বাস্থ্যবান পুরুষ কেমন হটাত চলে গেলেন কেউ কিছু বোঝার আগেই সব শেষ রাতের খাওয়ার পর চিন্তামণি তার পান-দোক্তা-পাতা নিয়ে বসেছেন, হটাত একটা ধুপ শব্দ শুনে ঘুরে দেখেন কত্তা মাটিতে পড়ে ধর ধর, ডাক ডাক করে সবাই জড়ো হয়ে তাঁকে খাটে শোয়ান হল, ডাক্তার এসে নাড়ি ধরে বলেন সব শেষ ভগবান সে অভিশপ্ত রাতের কথা মনে পড়লে এখনও সারা অঙ্গে কাঁটা দেয় ডাক্তার বললেন কি যেন একটা নাম, হ্যাঁ ঐ সেরিবেরাল নাকি যেন; তিনি ঠিক সবসময় মনে রাখতে পারেন না কি করেই বা মনে থাকবে তিনি তো আর বৌদের মতন লেখাপড়া শেখেননি অমন লেখাপড়া শেখার মুখে আগুন দেমাকে মাটিতে পা পরেনা এদের সব সময় শাশুড়িকে নিচু চোখে দেখে এরা ঠিকই টের পান তিনি যদিও মুখে কেউ  কিছু বলেনি কক্ষনোমেজবৌ মানসী কে সহ্য করতে পারেন নাএম এ পাশ আরও কি কি পাশ, বড়লোক বাপের মেয়ে, তায় আবার কলেজের মাস্টারনী দেমাকে মাটিতে পা পরেনা চিন্তামণিকে মানুষ বলেই গ্রাহ্য করেনা যখন চিন্তামণি হক কথা গুলো প্যাটর প্যাটর করে শোনান, নিরুত্তরে পাশ কাটিয়ে চলে যায় একে কি বলে অবজ্ঞা নয় ? চিন্তামণি মানস চক্ষে দেখতে পান, গট গটিয়ে ছেলের কাছে গিয়ে বলছে বাব্বা তোমার মার কথাবার্তা যেন কেমন, অশিক্ষিতের মতন চিন্তামণি লিখে দিতে পারেন, এই কথাই বলে সে , নিজের কানে না শুনেও নিশ্চিত তিনি মেজ ছেলে বিমান ও তো দু-দণ্ড এসে বসে না মায়ের কাছেযত গল্প ঐ বউয়ের সঙ্গে যেন কপোত-কপোতী, দিন রাত বকম বকম- কি এত কথা আছে, মায়ের আলোচনা ছাড়া

নিজের কচি বয়সের কথা মনে পড়ে যায় চিন্তামণির কি ভালই না বাসত মানুষটা বাড়ি থেকে বেরবার সময় দরাজ গলায় আসি গো আর ফিরে এসে –“কৈ গো, কোথায় গেলেডাকে মন ভিজিয়ে দিতেন অত বড় বড় ছেলে-বৌ সবাই তো দেখেছে শেষ দিনটি পর্যন্ত মাথায় করে রেখেছিলেন ঐ একটা মানুষ চিন্তামণির সব সুখ হরণ করে নিয়ে চলে গেল মানুষটাকে সবাই ভালবাসত ছেলের বৌগুল এত আস্কারা তো তাঁর জন্যই পেয়েছে

একটা মেয়ের বড় সখ ছিল ;কিন্তু হল তিনটেই ছেলে কত্তা বলতেন তোমার মেয়ে নেই তো কি, তিন তিনটে ছেলের বউ, অদের মেয়ের মতন ভালবাসা, দেখবে মেয়ের অভাব বোধ করবেনা ঐ রকমই কথা বলতেন মানুষটা বউরা কে কি খেতে ভালবাসে, ডেকে ডেলে জিজ্ঞাস করতেন, কিনেও আনতেন বাজার থেকে বলতেই হবে বউরা শশুরমশাইকে খুবই মান্যি গণ্যি করত আর কত্তা থাকতে চিন্তামণির কটুবাক্যগুলি বেমালুম হজম করে যেত কত্তা চলে যাবার পরে কেউ আর আমলই দিতে চায় না থাকত একটা মেয়ে, চিন্তামণি দেখিয়ে দিতেন, কেমন করে মেয়ে মানুষ করতে হয় শুধু লেখাপড়া শিকলেই হল ? আর কিছু শিখতে হবে না ! যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে কতবার বলেছেন ওদের শুনিয়ে এই যে মেজ বউ, সারাদিন-তো কাজের অছিলায় বাড়ির বাইরে সকালে শাশুড়ির চা-জলখাবার করে দিয়ে, ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করত, বিমানের অফিসের জিনিস গুছিয়ে দিয়ে, চটি ফটর ফটর কলেজে বিকালে ফিরেও ঐ চা-ছাড়া আর কোন কাজে হাত দিতে দেখেন নি কি কত-গুল খাতাপত্তর নিয়ে বসত , আর ছেলেকে পড়াত ঘটা করে সব ছুতো, কাজ ফাঁকি দেবার, বোঝেন ঠিকই অতটুকুন ছেলে তাকে অত পড়াবার কি আছে বাপু আসল কথা সংসারের কুটোটি নাড়বেনা মহারাণী ঠাকুর-চাকরের অভাব ছিলনা, তবু হাজার হোক বাড়ির বউ, সে যদি হেঁসেলে না যায়, ভাল দেখায় কি! সারা শরীর জ্বলে যেত চিন্তামণির এই বউটির কথাও বড় কাটা কাটা

এই তো সেদিন কি কথায় শুধু একটু বলেছেন- আমার আর কদিনএর পরে তো সব তোমাদেরই হবেকি আর বলব আমার ভাগ্যটাই খারাপনা হলে তিন তিনটে ছেলের বৌ থাকতে আমার এই দশা হয় মা বলে ডাকলেই তো আর হল না মার মতন মনে করতে হবেতোমাকে তো একটা কথা বলার যো নেই ফোঁস করে ওঠোনিজের মার সঙ্গেও কি এভাবে কথা বল নাকি ? কি জানি বাবা তোমাকের কেমন শিক্ষা-দীক্ষা এই তো আমার ছোট বোনের মেয়ে কি সুশীলশাশুড়িকে মাথায় করে রেখেছেসাত চড়ে রা নেই জামাইটিও পেয়েছে তেমনি সেদিন দেখি বোনের পা টিপে দিচ্ছে, বড় বাতের ব্যথায় ভোগে তো তাদের দেখেও তো শিখতে পার আমার পোড়া কপাল ছেলে, বৌ কারো কাছে একটু সেবা পাইনা এমন ছেলে বউ থেকে মেয়ে-জামাই থাকা ঢের ভালবুড়ো বয়সে একটু  সেবা পেতাম এই টুকুন মাত্র বলেছেন, তার উত্তরে মেজ-বউ মানসী যা বললে শুনে থ মেরে গেলেন চিন্তামণি শুধু চিন্তামণি কেন, চিন্তামণির বাকি বোনেরা, আর ভাই হীরা-লাল এরা মাঝে মাঝেই আসে দিদির খোঁজ নিতে, এদের কাছে ছেলে-বৌ এর কথা বলে বুকের জ্বালা মেটান চিন্তামণিসবাই তো শুনে অবাক গালে হাত দিয়ে ছোট বোন সুমতি বললে- বল কি গো, এই কথা বলল তোমায়, এত বড় সাহস বলত যদি আমার বৌ এমন কথা দেখতে কি হাল করতামআমার ছেলের বৌ তো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস পায়না কি করবে বল, তুমি ভাল মানুষ, তায় জামাইবাবু নেই সবই অদৃষ্ট বুঝলে সবই কপাল ,
বুড়ো হয়ে আজকাল চিন্তার খেই হাড়িয়ে যায় চিন্তামণির আসল কথাটাই তো এতক্ষণ মনে ছিলনা হ্যাঁ মেজ-বৌ মানসী কথা শুনল চুপ করে- তার পরে বললে- যাই বল মা, পরের মেয়ে যেমন আপন হয় না- পরের মাও তো আপন হয় নাআর তোমার অদৃষ্ট খারাপ কি, তিনতিনটে বউয়ের একটি তো অন্তত তোমাকে দেখে ছোটো কলকাতার বাইরে, কি করেই বা সেবা করবে আমাকে তোমার পছন্দ নয়, কিন্তু দিদি তোমায় দেখে না এ কথা বলতে পারণা অদৃষ্ট খারাপ তো আমার, আমার তো আর একটা বই শাশুড়ি নেই, তা সেই তুমিও আমায় দেখতে পারনা তুমি কি আমায় নিজের মেয়ে মনে কর, বলতো বুকে হাত দিয়ে আর ছোটো মাসী মেয়ে ঝুমার কথা বলছ তো, সে তো এখানে এলেই শাশুড়ির চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করেআড়ালে যার এত নিন্দা করে, লোকদেখানো আদিখ্যেতা করার কি দরকার তোমার ছেলে বেশিবার আমার মার কাছে গেলেই তো তুমি রাগ কর, ছোট-মাসীর জামাই কি করে ভাল হয় তোমার কাছে, বুঝিনা বাবা যাই ওদিকে আবার টুটুনের বাবার আসার সময় হয়ে গেল

শোনো কথাকথার কি ছিরি নিন্দা করবে নাই বা কেনরুমার শাশুড়িকে তো দেখেছেন চিন্তামণিউঠতে বসতে খিচ খিচ করেরূমা নেহাত ঠাণ্ডা মেহে তাই চুপ থাকেপড়ত যদি মানসীর পাল্লায়, দুদিনে ঠাণ্ডা হয়ে যেতঅতটুকুন মেয়ে, শাশুড়ির মুখের ওপর বলে কিনা তার কাছে শিখতে হবে মা হওয়ানিজের মার কাছে এসে বসেনা, যে ছেলে, শাশুড়ির কাছে গিয়ে পরে থাকলে হ্যাংলা বলবেন না? কি আশ্চর্য


বড় বউ মালতী এখন চা দিয়ে গেল না কেন কে জানেএই বয়সে এত শুয়ে থাকলে বাতে ধরবে যে এক সংসারে থাকতে মানসীর হাতে সকাল বিকাল, সময় মতন চাটা পেতেন চিন্তামণিচারটের সময় কলেজ থেকে ফিরত মানসী, ফিরেই এক কাপ গরম চা করে এনে দিতমেয়েটা কাজের কিন্তু বড্ড ঢ্যাঁটা নিজের সঙ্গে কোথায় যেন মিল খুঁজে পান মানসীরযতই কেন মুখে রাগ করেন ভিতরে ভিতরে তারিফ না করে পারেন না বলেন বটে মানসী এসে ছেলে বিমান কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মনে জানেন কথাটা যথার্থ নয় বিমানটা তো চিরকালের রগচটা আর একগুঁয়েছোটবেলা থেকে তার যত কথা বাবার সঙ্গে হোস্টেল থেকে চিঠি দিত বাবাকেতার কি চাই না চাই সব ফিরিস্তি বাবার কাছে কতবার লিখেছেন চিন্তামণি- তোমার যা যা দরকার আমাকে লিখে জানিও, আমি কিনে পাঠিয়ে দেব-কিন্তু কোন দিন কি শুনেছে? বাবা-অন্ত প্রাণ ছিল ছেলের কত্তাও বড় ভালবাসতেন বিমান কে আর তার সঙ্গে মানসী কে

এই এসেছে এতক্ষণে চা নিয়েবাবারে বাবা, বসে বসে হাঁফ ধরে গেলবড় বউ মালতী কাজে কর্মে বড় ঢিলাসকালে ঘুমের থেকে উঠতেই চায় নাবাড়িসুদ্ধ লোক উঠে গেল, বউ পরে পরে ঘুমায়প্রথম প্রথম বকাবকি করতেন চিন্তামণি- এখন আর কিছু বলেন নাসে দিনকাল আর নেই ওর উপর ই তো ভরসানিজের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকিলে কি আর এ সব অকর্মাদের মুখ চেয়ে থাকেনভগবান মেরে রেখে দিয়েছেন সব দিক দিয়ে


এক এক করে নাতী নাতনীরা ফিরছে স্কুল থেকেপাঁচটা বেজে গেল বোধহয় এখন আর সময়ের হিসাবও থাকেনা চিন্তামণিরকত্তা বেঁচে থাকতে ঠিক সাড়ে পাঁচটায় বাড়ি ফিরতেনগাড়ি ছিল অফিসেরঘরের সঙ্গে এই লাগোয়া বারান্দায় বসতেন দুজনেকত্তার সঙ্গে আর এক কাপ চা খেতেন চিন্তামণি সে সব সুখের দিন মনে পড়লে চোখের কোনায় জল জমে যায়এমন মানুষকে ছেড়ে একা পরে থাকতে হবে স্বপ্নেও ভাবেন নিকার কপালে যে কি লেখা আছে

আজ শরীরটা জুতের নেই দুপুরের খাওয়া মনে হয় বেশি হয়ে গেছে গলার কাছটাতে কি যেন আটকে আছেপেট ভারমাথাটা  টিপ টিপ করছে দু-একবার ওকে উঠল যেন মনে হল দু-পুরে ভাতের সঙ্গে কি খেয়েছেন মনে করার চেষ্টা করলেন কিন্তু সে রকম কিছু খেয়েছেন বলে তো মনে পড়ল নাএকটু নেমে বারান্দায় এলেন চিন্তামণি চেয়ার টেনে বসলেন মেজর ছেলে টুটুন কে দেখে কাছে ডাকলেন কি রে- ওখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আর সব কোথায় , তোর দাদা, দিদি রা টুটুন ঠোঁটে হাত দিয়ে ইশারা করল, তাই বল লুকিয়েছিস? তা আয় না আমার চেয়ারের পেছনে লুকা, কেউ দেখতে পাবেনা হটাত মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল মনে হলে পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে আঁধার

চোখ খুলে নিজের ঘর চিনতে পারলেন না চিন্তামণি কোথায় আছেন কিছু বুঝলেন নাঘরে একটা হাল্কা নীল আলো জ্বলছে সরু খাট, ঘরটা অচেনা, পাশে কেউ বসে আছে চেয়ার নিয়ে, নড়া চড়া করাতে কপালে একটা ঠাণ্ডা হাত রাখল অচেনা গলায় বলে উঠল, উঠবেন না, আপনি হাসপাতালে আছেনহাসপাতালে , কেন আমার কি হয়েছে আপনি মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলেন মনে আছে কি? আপনার একটা ছোট হার্ট অ্যাটাক হয়েছে চিন্তা করবেন না, এটা ভাল নার্সিং হোমডাক্তারবাবু দেখে গেছেন, ওষুধ দিয়ে গেছেন আপনি এখন ভাল আছেনঘুমিয়ে পড়ুন কাল সকালে আপনার বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা হবে আমার ছেলেরা আমাকে রেখে গেছে এখানে? ওরা সব বাড়ি চলে গেছে আপনি এসেছেন এখানে দু-দিন হল এ দু-দিন, রাত ছেলে বৌ সবাই ছিল , কেউ বাড়ি যায় নিআজ আপনি ভাল আছেন দেখে ডাক্তার বাবু ওনাদের বাড়ি যেতে বলেছেনওনাদের ও তো বিশ্রাম দরকার চিন্তামণি আবার বালিশে মাথা নামিয়ে নিলেন । 

কখন ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেছেন খেয়াল ছিল নাসকালে নার্সের ডাকে ঘুম ভাঙল তাদের কাজ-কর্ম সেরে চলে যাবার পরে, ডাক্তার এলেন বেশ ছেলেমানুষ হাসি-খুশি ডাক্তার কেমন আছেন মাসীমা ? ভাল আছি বাবা- এক গাল হাসি চিন্তামণির বাস আর কোন চিন্তা নেই, আর সাতদিনে আপনার ছুটি আরও সাতদিন? কেন বাবা আমি তো ভাল আছি তা তো আছেন, কিন্তু আমাদের যে আরও কিছু কাজ আছেকত-গুল পরীক্ষা করত হবে কিছু দিন অবসার্ভেসানে রাখতে হবে যে, নাহলে তো আপনার ছেলেদের কাছে বকুনি খেতে হবে ডাক্তার হেসে বেড়িয়ে গেলেন মাথা ঘুরিয়ে চিন্তামণি দেখেন ঘরটি বেশ বড় আর ঘরে তিনি একা নন আর একটি খাট পাতা আর তাতে এক বয়স্ক মহিলা, চিন্তামণির থেকে বেশ বড় বলেই মনে হল, শুয়ে আছেন তার পাশে কোন আয়া বা নার্স দেখতে পেলেন নানার্স সকালের খাবার নিয়ে এলো খাট সামান্য উঁচু করে দিয়ে পেটের সামনে একটা চৌকি পেতে দিল তাতে প্লেটে, বাটিতে করে জলীয় খাবার এটা কি, এ আমি খাইনা , আঁতকে উঠলেন চিন্তামণি নার্স সান্ত্বনা দেয় , আজ খেয়ে নিন , কাল থেকে শক্ত খাবার দেওয়া হবে আপনাকে এটা পরিজ , আজ খেয়ে-নিন যেন দশ বছরের মেয়ে কে বোঝাচ্ছে মুখ ভার করে খেয়ে নিতে হল খাওয়া হয়ে গেলে, মুখ মুছিয়ে বেড়িয়ে গেল মেয়েটা এবার ভিসিটর্স আসবে, আয়া বলল একটা ঘণ্টা বাজল কিছু পরে ঘরে ঢুকল, ছোট-ছেলে আর বউ, সান্টু আর বুবু এ কি রে তোরা- কবে এলি ? এই তো কাল এসেছি তুমি যা কাণ্ড বাঁধিয়েছ না এসে কি করে থাকি একেবারে হার্ট এটাক করে ছাড়লে কি এত চিন্তা তোমার মা ? ছেলে এসে জরিয়ে ধরল কতদিন পরে তোদের দেখলাম রেশরীর খারাপের খবর পেয়ে তবু তো এলিআয় বস, একটু ভাল করে দেখি তোকে মা, ছেলের রকম দেখে আয়া মিটি মিটি হাসছিল কিছু পরে ছোট বলল এখন আমি নিচে যাই মা- তোমাকে দেখার লম্বা লাইন একে একে বড়, মেজ, নাতীরা সবাই এলো একটা দুটো কথা সবার সঙ্গেই বললেন চিন্তামণি মনটা সামান্য ভাল হল বার বার করে বলে দিলেন, ঠিক ঠাক ভাবে থাকিস সবআমি বাড়ি নেই, কি জানি কি করছিস সব সংসার আলাদা হলে কি হবে, বাড়ি তো এক, তিনি এ ফ্ল্যাট ও ফ্ল্যাট করে বেড়ান শরীর ভাল থাকলে ওরা তো সবাই দিনে একবার অন্তত ঘরে এসে দেখা করে যায় একা একা মন মানেনা এখানে আরও কত দিন থাকতে হবে কে জানে

সকালে বিকালে ভাগ করে ছেলে বৌ আসছে ছোট ছেলে চলে গেছে ব্যাঙ্গালোরে, চাকরীর যায়গা- কতদিন আর ছুটি নেবে মা ভাল আছে দেখে গেছে কিন্তু বড় আর মেজ বৌ পালা করে সকালের আর রাত্রের খাবার ঠিক নিয়ে আসে বাড়ি থেকে চিন্তামণির খাওয়া নিয়ে বড় পিটপিটানি, ওরা জানে আজ শনিবার কলেজ ছুটি মানসী দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছে টিফিন কারিটা আয়ার হাতে দিয়ে বসেছে পাশে চিন্তামণি আয়াটিকে একটু ঘুরে  আসতে বললেন সে যেতে মানসী কে বললেন- আমাকে দোকান থেকে একটা পান এনে দেবে আর একটু দোক্তা পাতা মানসী বলে উঠল তার চেয়ে তোমার জন্য এক চিমটে বিষ নিয়ে আসতে বললেই পারতে মা শোনো কথা- দোক্তা পাতা খেলে কেউ মরেনা মানসী কেউ মরে কিনা জানিনা তুমি এখন দোক্তা-পাতা পাবেনা শুধু পান বলত এনে দিচ্ছি প্রবল বিরক্তি চেপে চিন্তামণি রাজি হলেন মানসী বেড়িয়ে যেতে পাশের বেডের দিকে তাকালেন দেখলেন দিদি, দেখলেনকি কপাল করেই এসেছি পাশের রুগীনিটি এতদিনে কিছুটা সুস্থ হয়েছেন এতদিন স্যালাইন দেওয়া ছিল কাল রাতে খুলে দিয়েছে উঠে বসেছেন আজ উত্তরে দিদিটি স্মিত হাসলেন তারপর বললেন আপনার মেয়ে ? কি যে বলেন মেয়ে কি-এ টি মেজ ছেলের বউ দিদিটি আশ্চর্য হলেন তাই নাকি আমি তো ভেবেছিলাম মেয়েসত্যি বোঝা যায়না একেবারে আপনি ভাগ্যবান অবাক হলেন চিন্তামণি তার পরে কি মনে হতে বললেন দিদি আপনার কাছে কারুকে আসতে দেখি না যে ? ছেলে মেয়ে এখানে থাকেনা বুঝি ? দিদিটি একটা চাপা শ্বাস ফেললেন আছে বৈকি , দু ছেলে, দু বৌ, দুই নাতি সবি আছে এখানেই আছে , কলকাতায় চিন্তামণি তাকিয়ে রইলেন তারা আসেনা কেন জানতে চাইছেন তো ? তারা আসবেনা আমাকে তারা ত্যাগ করেছে মানে মানে আমি এখন একটা বোঝা, যেটা কে তারা আর টানতে রাজি নয়
চিন্তামণি সাবধানে জিজ্ঞাসা করলেন- ওদের বাবা বুঝি সেরকম কিছু রেখে যাননি

রেখে গেছেন বৈ কিবাড়ি, টাকা, গহনা সব রেখে গেছেন ওদের বাবা অনেকদিন ভুগেছিলেন সে সময় আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, সুধা আমি মনে হয় আর বেশী দিন নেই যদি বল তোমার নামে সব লিখে দিইছেলেরা রইল তোমার যাবার সময় ওদের সমান ভাবে ভাগ করে দিও আমি রাজী হইনি দিদি বলেছিলাম ওসব বিষয় সম্পত্তির ঝামেলায় আমার ফেলনা তুমি আমার ছেলেদের আমি বুক দিয়ে মানুষ করেছি ওরা আমার দু-চোখের মনি তুমি ওদের ভাগ করে দাওআমি দুজনার সঙ্গেই থাকব, মাকে তো আর ভাগ করা যায় না তখন আমার কথা শুনে অন্তরীক্ষে ভগবান হেসেছিলেন আমি বুঝিনি বাবা যাওয়ার বছর খানেকের মধ্যে দুই ভাই ভিন্ন হল আমাকে নিয়ে তাদের বড় জ্বালা দুই-বউ ঝগড়া শুরু করল, এবলে আগে তুমি রাখ, ও বলে আগে তুমি রাখ যদিও বা সে সমস্যা মিটল, বড় ছেলের কাছে ছমাস, তো ছোট ছেলের কাছে ছ মাস , কিন্তু অপমানের ভাত আমার আর হজম হলনা দিদি আমি বললাম আমাকে নিয়ে তোদের এত সমস্যা তো আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আয় দু-জনে এক পায়ে খাড়া এ দুঃখ রাখার জায়গা নেই দিদি, কারুকে বলতেও পারিনা, সহ্যও করতে পারিনা বুকটা ফেটে যায় আমার আপনাকে দেখে আমার বড় ভাল লাগে ভাবি আমার মনে নিশ্চয় ময়লা ছিল, বউদের নিশ্চয় আমি ভাল মনে নিতে পারিনি, নাহলে ভগবান আমাকে এত বড় শাস্তি কেন দিলেন দিদিটি আঁচলে মুখ চাপা দিলেন হতভম্ব চিন্তামণি চিন্তাশক্তি রহিত হলেন এমনও হয়- পৃথিবীতে এমন সন্তানও জন্মায় যাদের কাছে  মা বোঝা , এ কি শুনছেন তিনি

কত্তা বেঁচে থাকতে জিজ্ঞাসা করতেন তোমাকে রাজরানী করব বলেছিলাম, করতে পেরেছি তো?” সোহাগে আহ্লাদে বুকের মধ্যে ফুলে ফুলে উঠত আর মনে হত পৃথিবীতে আমার মতন সুখী কে আছেআজ হটাত সেই সুখ বুক ঠেলে উঠল আনন্দে, গরবে চোখের কোনা ভিজে ভিজে চিন্তামণি সে জল বালিশে পরতে দিলেন এ আনন্দাশ্রু; হৃদয়কে শুদ্ধ করেছে

মা এই নাও তোমার পানচমকে তাকালেন চিন্তামণি হাসি মুখে মানসী দাঁড়িয়ে দাও মা দাও চিন্তামণি হাত বাড়ালেন তিনি লক্ষ করলেন না তার আদরের সম্বোধনে বিস্মিত মানসী চেয়ে আছে নির্মিশেষে মানসী পাশে বসে চিন্তামণির কপালে হাত রাখল চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করল মা তোমার চুল বেঁধে দ