Sunday, August 28, 2011

সমান্তরাল



মাকড়সার জাল হাতে এঁকে দেখালে আমায়


আমি অবাক বনে বলেছিলাম ,


দু-খানা সরল রেখা টান না তোমার হাতে,


যে রেখা অনন্ত অনাদি চলবে পাশাপাশি ,


তবু মিলবে না কোনদিনও ।
সে বলল – ও সরল রেখা


শুধু হাতে যায় নাটানা।


তাছাড়া মাকড়সার জাল কেমন


জটিল রহস্যময় ।


সরল রেখার মধ্যে কি আছেআকর্ষণ ।


সে তো চলেছে অন্তহীন চলেছে সোজা ।


তাকে বোঝা তো কঠিন নয় ।
আমার যেন মনে হয় –


সমান্তরালের অনাদি, অনন্ত রহস্যসহজ নয় ।


আমার চিন্তার জালছিন্ন-ভিন্ন করে


রোজ সে জাগিয়ে রাখে –


কেমন করে জানা যায়,


কেমন করেযায় বোঝা ।


এরা যদি অবিনশ্বর, যদি এরা কালাতীত-


তবে কি সত্য দুই- কে বলে দেবে !

ইচ্ছে





আমার ভীষণ ইচ্ছে করে


তোমার শার্টের কাপড় হতে,


কিম্বা ধর তোমার বুকের বোতাম ।


তাহলে কেমন তোমার নরম গরম


বুকের ছোঁয়া পেতাম ।।


যখন তুমি রাখতে আমায় খুলে ,


আলনাটাতে থাকতাম ঝুলে –


সকালের প্রতীক্ষায় ।


তোমার গন্ধ সারা রাত –


মাতাল বিবশ করে


ছেড়ে তো যেতো না আমায় ।।

ঋতু পরিবর্তন

এ এক হয়েছে জ্বালা,
ঘরেতে আমার ঝুলছে মস্ত তালা ।
পূজার ছুটিতে গেছিলাম ভাই দেশে,
বিপদে পড়েছি দেখ দেখি ফিরে এসে।
ঘরটি আমার বেঘর হল কি তবে,
এমন ঘটনা কে বল শুনেছে কবে ।
বাড়িওলাটিকে বললাম করজোড়ে
ঘরটি আমার খুলে দিন দয়া করে ।
বলব কি ভাই তা তাজ্জব কথা-
বাড়িওলা বলে কেশে –
যার ঘর সেই চাবি নিয়ে যাক এসে ।
হাঁ করে খানিক হাওয়া খেয়ে ভাই
বললাম সাবধানে- তার মানে-
আমি তো অমুক বাবু ,
বাঁকা হেসে বুড়ো বলে কিনা
আমি হচ্ছিনা ওতে কাবু ।
আমি বোকা নই অত-
দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট মেয়ের মত
নাক মুখ সব,পাজামা পড়েছে, তাজ্জব তাজ্জব ।
ঘোর কলি কাল এযে,
মেয়েছেলে চোর কি জানি করবে কি যে ।
তাড়াতাড়ি গিয়ে পানের দোকানে
আয়নাটা নিয়ে দেখি
মেয়েছেলে আমি সত্যি হয়েছি একি ।
হায় কি যাদুর প্রকোপ বেড়েছে দেশে ।
এক থেকে আর এক হয়েগেছি ফেঁসে ।

মায়ের ঠিকানা

ছোটো বেলার গল্প মাগো-বল না আমায় আজ,
তুমিও কি মা মরতে ভয়ে-পড়ত যখন বাজ ।
বৃষ্টি শুরু হলে-যেতে কিমা লুকিয়ে ছাতে,
কারুক্কে না বলে । বৃষ্টি যখন যেত থেমে
ছাতের থেকে এসে নেমে,কি করতে ছল –
তোমারও কি ছিল না কেউ, দিত না কেউ জল
ঢেলে মাথার পর –সর্দি লেগে যেন তোমায়
ধরে নাকো জ্বর । একলা বসে ভাবতে কি মা
এটা কেমন ধারা, বিচার ভগবানের –
বোঝেনা যে কেন রে কেউ, তোর কান্নার মানে
রাতের বেলা একলা শুয়ে, পেতে কি মা ভয় ,
ভুত তাড়াতে বলতে কি মা, জয় রামের জয় ।
আমার যে মা ভাল্লাগে না, একলা বসে থাকা ।
কাগজ কলম নিয়ে শুধুই ,খেলার বাড়ি আঁকা ।
তোমার বাড়ি কতটা দূর, বলনা আমায়-
নাহয় তুমি নিজেই এসে, নিয়ে যাও সেথায় ।
আমি থাকব লক্ষ্মী হয়ে, করব না দুষ্টুমি ,
শুধু তুমি থেক পাশে আমার কপাল চুমি ।
তোমার পাশে নিয়ে আমায় থেকো সারাদিন,
তোমায় ছেড়ে যাব না মা, কোথাও কোনদিন ।
বর যদি মা ডাকে আমায়, বলে এস আমার ঘরে,
তিন সত্যি যাব না মা ,রেখো তোমার করে ।
দিদির যখন বিয়ে হল নিয়ে গেল বর-
মনের দুঃখে কোথায় গেলে ফিরলে না আর ঘর !
এবার দেখো দু-হাত দিয়ে রাখব তোমায় ঘিরে,
শুধু আমায় লক্ষ্মী মাগো নিয়ে যা তোর ঘরে ।।

Saturday, August 27, 2011

আজি এ প্রভাতে রবির কর

সবার আমায় প্রশ্ন করে ,বলে ডেকে ডেকে ,
তাল মিলিয়ে বলতে কথা শিখলে কোথা থেকে !
আধুনিক এই যুগের সাথে মিলিয়ে ফেল পা,
দেখবে সবাই দিচ্ছে তালি, পাচ্ছ বাহবা ।
খোলা তোমার খাতা যেন শিশুবোধের পাতা ,
অ, আ ,ক, খ লিখছ কেন, চেনা-জানা কথা !
কঠিন শব্দ চয়ন করে, বেতাল সুরে ভরে ,
দেখাও দেখি নতুন ভাল লেখা সৃষ্টি করে ।
অভিনব নতুন কিছু লিখব মনে করে ,
জেগে ছিলাম রাতের বেলা, কলম হাতে করে ।
জানলা দিয়ে জোতস্নারেতের কিরণ এলো ঘরে ,
সেই পুড়ান চাঁদের আলো দেখি নতুন করে ।
নীল আকাশে চাঁদের সাথে তারার মেলা যত,
মনে হল নীল আঁচলে জরির সুতোর মত ।
চুমকি লাগা ওড়না গায়ে, হাসছে যেন শ্যামলা মেয়ে,
দেখছে চেয়ে চেয়ে –চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে –
বলছে গেয়ে গেয়ে ।
রাতের বেলা নতুন কিছু হলোনা আর লেখা ,
সকাল বেলায় লিখব নাহয় সূর্য দিলে দেখা ।
ভোরের বেলা নতুন রবির পেলাম যখন দেখা –
ভানু-সিংহের নাম যেন দেখছি আছে লেখা ।
দিবাকরের কর এলো যে আমার হৃদয় মাঝে ,
পুড়ান আর নতুন ধ্বনি একই সুরে বাজে ।
আবহমান কালের ধারা চলছে বেয়ে বেয়ে,
নৌকা বয়ে যাচ্ছে যেন আমায় সাথে নিয়ে ।
নতুন আর পুরাতনের ভেদ পড়েনা চোখে ,
আধুনিকা নই গো আমি চির নূতন বিশ্বলোকে ।।

Friday, August 19, 2011

মন রে আমার মন

মন রে আমার মন –
কার আশাতে থাকিস উচাটন ।
বন্ধ যে সব দ্বার
সেইখানে তোর আঘাত বারে বার ।
বোঝেনা তোর কথা –
জানাস সেইখানে তোর ব্যথা –
মন রে আমার মন-
কেন ভুল পথে তুই চলিস সারাক্ষণ ।
দিক-দিগন্ত ভেদ করে আর
কালকে ঝেড়ে ফেলে
তুই কেন তোর পাখনা দিসনা মেলে ।
বন্ধ দরজা যদিও বা কেউ খোলে,
কি আসে যায় তাতে ।
তোর আকাশ তবুও ঢাকা থাকবে ঘরের ছাতে ।
দুঃখ-সুখে, দিনে রাতে
অরণ্যে পর্বতে ,
কার আশাতে থাকিস উচাটন ।
মন রে আমার মন,
অখণ্ড এক আকাশ জুরে
আগল খোলা ঘর ।
চিরন্তনী কাল আছে, নেই
কেউ আপন কিম্বা পর ।
অসীম শূণ্যে, ক্ষণকালের
এই যে জীবন,
এই তো পরম পাওয়া ।
জানিস নাকি এ পথে আর
নেই তো ফিরে যাওয়া ।
মন রে আমার মন
কোনও দিনও বুঝলি না তুই কেন –
কার আশাতে থাকিস উচাটন ।

Monday, August 15, 2011

কে বিচার চায়

মাথায় হাত, হতাশ নিরাশ্রয়
বসে আছে খোলা আকাশের নীচে,
চোখে দুঃস্বপ্নের ছবি
বুকে হাহাকার –বাপ তার রক্তে স্নাত
হারিয়ে গেছে পাঁচ হাত জমির তলায় ।
বিচার চাই! কারা ঐ হেসে ওঠে
পৈশাচিক বিদ্রূপের হাসি !
বোকা গ্রামবাসী, অভুক্ত, নাংগা
বেয়াদপ ,চোপ ।
চুপ করেই তো ছিল এরা এতদিন ।
বছর বছর যায়, চোখে জল, পেটে খিদে,
কি করে যে দিন কাটে কিসের আশায় ।
হটাত কার আশ্চর্য ছোঁয়ায়
নড়ে চড়ে বসে ছায়া গুলো
আমরাও মানুষ, আমাদেরও বুকের ব্যথা
ঐ ওদের সমান ।
কার ভরসায় নিষ্প্রদীপ প্রাণ গুল
উঁচু দিকে চায় –এখন
আমাদের ও এসেছে সময় ।
মানুষের মত বাঁচব এবার,
নিয়ে পরিবার ।
তবু কেন শুভ্র বেশ, পক্ব কেশ –
ছোট মাপের লোকটা গর্জায় –
কে কখন মরেছে কোথায় –
তার জন্য বিচার চায়!!
অর্বাচীন লোকটাকে বল ডেকে-
দিন পাল্টেছে,
এখন থেকে –বাঙালির কপাল লিখন
নেই তার হাতে ।
ধুতি কোঁচা সামলিয়ে –
যেন থাকেন তফাতে ।
বেআবরু করে দেবে দরিদ্র গ্রামবাসী ,
টেনে এনে ফেলবে রাস্তায় তাকে
যত আছে ভুখা বঙ্গবাসী ।।


Wednesday, August 10, 2011

কালজয়ী প্রেম

তোমাকে ভালবেসে এত কিছু করি
টাকা, বাড়ি, গারি –
সময়ের স্রোতে ভেসে চলা ।

যেদিন ফেরালে মুখ ,
ক্ষত বিক্ষত বুক –
দিক বিদিকে হাহাকার ,
রক্তে রক্তে জ্বালা ।

শিশু পুত্র চেয়ে আছে মুখে ,
কি করে রক্ষা করি ওকে ,
বৃশ্চিক দংশনে কাঁদে ,
শিরা উপশিরা ।

অসহায়, আমি অসহায় ,
দুহাতে জড়িয়ে ধরি বুকে,
ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও একে
দুরারোগ্য পীড়া ।

মৃত্যুর করাল ছায়া
গ্রাস করে কেন তাজা প্রাণ ।
বার্দ্ধক্যের এপারে বসে ,
তবু কেন ভালবাসি,
তবু কেন গাই আমি জীবনের গান ।

দিন যায়, মাস যায়, বছর বছর যায় চলে ,
তুমিও চলেছ সাথে , কালজয়ী প্রেম
আদি অন্তহীন ,
উত্তর মেলেনি কোনও কালে ।।

Tuesday, August 9, 2011

অরূপ রতন

ছিলাম যখন অন্ধকারে,
ঝড়, বৃষ্টি, ঝঞ্ঝা চারিধারে ,
অন্ধজনের মতন বাড়িয়েছিলাম হাত ,
সঁপেছিলে অরূপরতন
কেটে গেল দুঃস্বপ্নের রাত ।।
তোমার সে দান রেখেছিলাম
হৃদয় মাঝে আঁচল দিয়ে ঢেকে ,
দুঃখ, কষ্ট যতই আসুক ,
হারাবনা আর কিছুতেই একে ।।
হৃদাকাশে মেঘ বৃষ্টি
এখনও আসে যায়,
সূর্য থাকে তার জায়গায় ,
উদয় অস্তাচলে ।
মনের জমিতে নরম মাটি ,
কত লোকে আসে যায় ,
তোমার দয়ায় ,
তবুও সেখানে এখনও ফসল ফলে ।
চোখের তারায় আঁধার-আলো
খেলা করে যায় জীবন জুরে ,
মনের গভীর অন্তঃপুরে ,
বিশ্বাস আলো জ্বালে ।
সেই বিশ্বাস দানা বেঁধে
আজ হয়েছে যে মহীরুহ,
বিরাট আকার বিশাল দৃঢ়তা
শান্তির ছায়া ফেলে ।।

Thursday, August 4, 2011

আড়ি

কতদিন দেখা নেই গণেশের সাথে,
ভাবে খুকু কথা সেই মাথা রেখে হাতে ।
খুকু খুকু ডেকে আজ সারা হল সব ,
খুকু কেন চুপ চাপ নেই কলরব ।
খুকুর বন্ধু সব শোনো বলি তবে ,
গণেশটা এলে ফিরে, খুকু কথা কবে ।
এত দিন হয়ে গেল আসে নাসে কেন ,
আর কেউ দেশে আর যায় নাকো যেন ।
সে না এলে কার সাথে খুকু করে আড়ি ,
গণেশকে বল যেন আসে তাড়াতাড়ি ।
কত কথা খুকুটার পেটে আছে জমে ,
বলছেনা বলে দেখ খিদে গেছে কমে ।
গণেশকে ‘বোকা’ বলে হেসেছিল খুকু!
সে তো শুধু ঠাট্টা গো বোঝে না এটুকু?
হেরো বলে দুয়ো দিয়ে নেচেছিল নাকি,
গণেশ যে মহা-পাজি ভুলে গেছ তাকি ।
পেটুক বলে ও নাকি ডেকেছিল কবে-
গোপন কথাটা আজ শোনো বলি তবে ,
মামা-মাসি যত টফি, চকলেট দিল ,
টিনের বাক্সে এক রেখেছে সেগুলো ।
গণেশটা ফিরে এলে খাবে এক সাথে ।
তোমর তো দোষ ধর খালি সব তাতে ।
ছুটি তো হয়েছে শেষ স্কুল ঘুলে গেল,
গণেশ কে তাড়া তাড়ি চিঠি লেখে ফেল ।
দেরি যেন করে না সে আর,
পথ চেয়ে খুকু শুধু করে ঘরবার ।
দেমাকিটা এলে ফিরে পরে ,
দেখো ঠিক খুকুমণি দেবে আড়ি করে ।।

Tuesday, August 2, 2011

ভাবনা

আমার ভাষা আমার জন্য,
তোমার জন্য নয়তো
আমার মতন ছোট্ট ছেলে ,
আছে কোথাও হয়তো,
আমি যখন বলব 'চ' যাই
নীল পাহাড়ের দেশে,
আমার সঙ্গে চলবে সে ঠিক
কল্প-রথে ভেসে ।
আমি বলব "ভুতের দেশে
মামদো ভুতের বাড়ি যাই ,
ছোট্ট বন্ধু বলবে -"এমা
এটাই তো ঠিক আমি চাই "।
তুমি বলবে- ভেল্কি নাকি !
এ সব তোমার চালাকি ,
কি করেই বা বুঝবে তুমি
ছোট্ট হবার জ্বালা কি !
ভাব মুলুকের, ভাবের দেশের
ভাবের ভাষা বোঝে যেই ,
আমার ভাষা তারই জন্য,
আর তো কারো এন্ট্রি নেই ।