Friday, December 31, 2010

নতুন বছর

হ্যাপি নিউ ইয়ার আসছে শুনছি-
সেটা কি ভাবে আসে রে দাদা-
এলেই বা কি হয় !
ওমা সেত প্রতি শীতেই আসে ,
দেখিস না কত আলো, গান ,
কত খাবারের বাক্স ফেলা হয়,
এইখানে , এই ফুটপাথে -
সে সব বাক্সের গন্ধ চেটে খেলি গতবার ।
কি মজারে দাদা
এবারেও সে আসবে আবার !
গেলবার আমার বাক্সে, দাদা এক টুকর কেক ছিল,
বলিনি কারুকে ;এত লোভ হল,
দাদা, ভাগ দিই নি রে তোকে ।
তবে বলি শোন প্রায় প্রতি বাক্সেই
কিছু কিছু খাবার ফেলা যায় ,
কেউ কিছু বলিনা আমরা ,
যে পায় সে খায় ।
কেন রে দাদা, এরা খাবার দেয় ফেলে ,
আমাদের ডেকে দিলেই তো পারে,
ক্ষিদে না পেলে ।
ক্ষিদে, তেষ্টার ওরা কি বোঝবে বোকা ,
ওরা সখ করে খায় ।
শুনেছি সব টুকু খেয়ে নিলে ওদের নাকি
সন্মান চলে যায়।
সন্মান মানে কি রে দাদা,
সে কেন চলে যায় ?
তাকে তো কোনো দিন ও দেখিনি রে চোখে ,
তোকে কি করে বঝাই ।

Sunday, December 19, 2010

কল্পনার অন্তর্ধান

হঠাত বিদ্যুতের চমকের মতন ক্ষনিকের আলোয়
দেখলাম তোমার এলোমলো চুল
একরাশ কালো মেঘের মতন
ছড়িয়ে রয়েছে বুকে ,
গুরু গুরু দুরু দুরু শব্দ –
নেই কোনখানে ।
কেন সব চুপচাপ ।
তবে কি হঠাত-ই আবার
সেদিনের মতন
ঝড়ের গতিতে এসে ,
খালি করে নিয়ে যাবে আকাশ-
বাতাস জুরে দীর্ঘশ্বাস ;
সন সন বয়ে যাবে
উত্তরে ।
তোমার দু-চোখ
আজ ও কি থাকবে
বন্ধ অন্ধ আবেগে !
এস এস আরো একবার আকাশের থেকে নেমে
আমার এই বুকে
তোমার নরম হাতে জ্বালাও আমায়।
বিদ্যুত চাবুকে জাগে
মৃত পৌরুষ ।
পশ্চিম আকাশ ঘিরে আমার কল্পনা যাক
যাক অস্তাচলে ।
ভোরের আঁচলে করে নিয়ে এস তুমি
আশার আগু্নে আমি সেঁকে নিই
নিভন্ত অন্তর ।।

Tuesday, December 14, 2010

প্রাণের টানে

দূরের মানুষ দূরেই থাকে যদি না ডাক কাছে ,
যেমন দূরে আছে তোমার সুর্য তারা চাঁদ ;
যেদিন বোঝো কে পেতেছে জীবন-জোড়া ফাঁদ ,
বুঝবে বন্ধু তারা তোমার জীবন জুড়ে আছে ।

আমি তোমায় ডেকে ডেকে সারা হলাম তবু,
কে যে তুমি তাই বুঝিনি মিথ্যা ডাকা ডাকি ,
এমনি ভাবে নিজের মন নিজেকে দিয়ে ফাঁকি ;
বায়না ধরে আমায় তুলে ধরতে হবে প্রভু ।

প্রভু-ভৃত্য, বন্ধু-মিতা কোন পথটা সোজা ;
কোন পথটা চলতে গেলে কাঁটার ভাগ কম ,
কোন পথটা ফুরিয়ে গেলেও ফুরাবেনা দম ,
অনেক কিছু হিসাব করে তবেই যায় বোঝা ।

সেই বোঝাটা মাথায় থেকে নামিয়ে রেখে নিচে –
সহজ-সরল হৃদয় খুলে একটু খানি হাস ,
শত্রু-মিত্র ভুলে তুমি শুধুই ভালবাস ;
দেখবে সবাই কেমন যেন দাঁড়িয়ে প্রাণের কাছে ।।

Saturday, December 11, 2010

দাদামনি

কান্না আর না, আমার খুকু সোনামনি
পুতুল কিনে এনেছে দেখ, তোর সে দাদামনি ।
পুতুল আমার ছেলে যে মা ,বউ এনে দাও তবে,
রবিবারের দিনে তাদের বিয়ে দিতে হবে ;
বউ বাজারে বউ পাওয়া যায় ,
লালা চেলি আরে জোর
এনো দোকান থেকে ;
ধুম করে খুব বিয়ে দেব –
তাকিয়ে দেখবে লোকে ।

কিন্তু মাগো –
দাদামনি কোথায় গেল চলে ,
পুতুল কিনে দিল তবু
নিল নাতো কোলে ।
দাদামনি না থাকলে যে হয়না কোনো মজা ।
পুতুল বিয়ে কে দেবে মা, কে সাজবে রাজা ।
কতই হবে খেলে-ধুল, কত না হই-চই ,
সন্ধে হল মাগো আমার দাদামনি কই !

দাদা তোমার গেছে চলে অনেক দূরের দেশে ,
তারা হয়ে জ্বলছে সে যে রাতের আকাশে ।
দাদামনি ছিল আমার সাতরাজার ধন ।
তুই যে আমার চোখের মনি , তারই ছোটো বোন ।
আয় মা আমার কোলে চোখে ঘুম এসেছে ঐ ।
রাত্রি হল মাগো আমার দাদামনি কই ?

Thursday, December 9, 2010

ফেলে আসা মন

আমি রাতের বেলায় সুর্য দেখতে চাই
দিনের বেলায় চাঁদ ,
আমি হাঁটি হাঁটি পা পা ,
নিজের ডান হাত ধরে
পেড়িয়ে যেতে চাই ,
বুদ্ধিজীবির পাতা ফাঁদ ।

আমি মনের খাতায় লিখি কবিতার কথা ,
খাতার পাতায় আকি-বুকি ।
গোদা লোকে খুশী ভেবে ,
ধোপার হিসাব নয় লিখছে রেসিপি ।

আমি নীলবিষে জর্জরীত অন্তর মহলে মারি তালা ,
লোভীর মতন কেউ চেটে খায় ,
চোখের পাতায় ভাসা
সে বিষের জ্বালা ।

আমি হাতের মুঠোয় পেতে চাই
কবির পৃথিবী ,
নখের আয়নায় জীবন ।
কাল তুমি ছিলে আজ ফিরে পেতে চাই ,
সেই ফেলে আসা মন ।

লাগাম টেনে ধর

কবে কখন কেন ।
আমি ফুলের মালা গেথে
তোমার জন্য বসে ছিলাম অধীর আগ্রহে ,
আমি ভুলেও গেছি তা ।
সে হয়ত আমার খেলা
মেয়েবেলার ভুলের ,
সেই সুতোয় আর তো মালা যাবে নাকো গাঁথা ,
বৃথাই তুমি আসছ ফিরে
বারে বারে ,
খুঁজে ফিরছ শুকন ফুলের বাস ।

সেদিনের সেই শ্যামলা সরল মেয়ের,
বুকের ভিতর ফুটত শতদল ,
গন্ধে তার আপনি মাতাল মেয়ের
চোখের কোনায় পদ্মনদীর জল ।
তখন তার চোখের তারায়
স্বপ্ন ঝলমল-
চোখের কোনায় পদ্মনদীর জল ।

তোমার দেওয়া আশ্বাস তার
বুকের মাঝে স্বপ্ন বুনেছিল ।
তোমার আলিঙ্গনের ফাঁদে ,
সহজে সে তাই তো ধরা দিল ।

দিনের কঠিন তাপে ,
শুকন ফুলের মালা ,
হৃদয়নদী শুকিয়ে বালি ,
বুকের মাঝে জ্বালা ।

শ্যামলা মেয়ে আজ সে রুপসী ,
পিছন পানে চায়না ফিরে আর ।
কোমল মনে কঠিন আসন পেতে
বৃথা পুজার করবেনা জোগার ।

সেদিনের সেই শ্যামলা সরল মেয়ে
শিখে গেছে টানতে মনের রাশ ।

বৃথাই তুমি ফিরছ খুঁজে

শুকনো ফুলের বাস ।

মনে পড়ে

জোনাক জ্বলা রাতের অন্ধকারে –
তোমাকে মনে পড়ে –
নাম না-জানা পাখির ডাকের ছোঁয়া –
লাগায় যেন হৃদয়বীনার তারে ।

সেই কবে সেই সোনালি রোদ্দুরে –
ছুটে চলা পাথর বেয়ে
ক্ষুদেনদীর পাড়ে ,
তোমায়-আমায় চোখে-চোখে চাওয়া ।
দুরু-দুরু বুকের পাহাড় বেয়ে ,
তিরতিরিয়ে ঝরণা বয়ে যাওয়া ।

না-বলা সেই প্রাণের গোপন কথা ,
ঝিলিক মারে তোমার-আমার চোখে ।
না-গাওয়া সেই গানের সুরে ,
দোলাত মন সুখে ।

হাতে-হাতে ধরে পথে ছুটে-ছুটে চলা ,
ভুলে যেতাম দু-জনাতে
বয়ে যাচ্ছে বেলা ।
বয়ে গেছে সে-সব বেলা,
হাডিয়ে গেছে দিন ।
আজ আঁধারে দু-চোখ বিলীন-
জোনাক জ্বলা রাতের অন্ধকারে ,
মনের গোপন কপাট খুলে ,
বারে বারে তোমায় মনে পড়ে ।

Monday, September 27, 2010

ভারতীয় ছেলের বাবা


আমার ছেলে করবে জামাই ! তাই কখোনো হয় নাকি !
এই বাজারে ঐ দামেতে জামাই পাওয়া যায় নাকি !
কি বললে লাখের ওপর ফাউ দেবে,

বাড়ি, গারি, গয়না গাটি- মেয়ের সঙ্গে তাও ভেবে ।
বিয়ের এখন সিজন রে ভাই , দাম বাড়বে অনেক আরো ,
অফ সিজনে দেখব ভেবে সেলের সময় আসতে পার ।
মেজর পা-টা গেছে কাটা , তাকেও অজন করতে পারি ,
সেজও তেমন সিক্ষিত নয় , তার কথাটাও ভাবতে পারি ।
সেজর বেলায় রিডাকসানটা , কম হবে ভাই দিচ্ছি বলে ;
কি হল কি এরই মধ্যে যাচ্ছ চলে !
শ্যাম বাজারে জামাই অনেক সস্তা ! তুমি হাসালে ভাই ,
তাভের মাল ও করছি হাজির , কার কটা চাই ।
তাদের সাথে এসব মালের তুলনা হয়! তুমিই বল ,
পরখ যদি করবে নাহয় আমার সাথে সেথায় চল ।
তুমি আমার বন্ধু যখন বলছ নাহয় কমেই দেব ;
কিন্তু আগেই দিচ্ছি বলে নগদ দামটা ব্ল্যাকেই নেব ।
বুঝনা ভাই, বাজার খারাপ , টিক্টিকিরা লেগেই থাকে,
এসব কথা বোলোনা আর , যখন তখন, যাকে তাকে ।
ঠিকানাটা লিখেই নাওনা , নম্বর দুই চোর বাগান ,
নামতো আমার সবাই জানে , ছেলের বাবা ইন্ডিয়ান ।

Thursday, September 23, 2010

বাংলার খোকা খুকি

আমাদের খোকা সে,
ভেবনাকো বোকা সে ,
যদিও সে পারেনাকো গুনতে ,
যত বলি স্কুলে চল ,
সে কেবল খেলে বল ,
কথা যেন পায়না সে শুনতে ।
বয়সটা বেড়ে যায় ,
বন্ধুরা ছেড়ে যায় ,
তবু দেখ নেই তার লজ্জা ।
রকমটা দেখে তার ,
গায়ে জ্বর মা-বাবার ,
দাদু-দিদা নিয়েছেন শয্যা ।
খুকি তার ছোট বোন ,
করেছে একটা পণ ,
দাদাকে সে করবেই জব্দ ।
একা একা বসে ঘরে ,
চুপিচুপি বই পড়ে ,
লিখেছে সে এই বড় পদ্য ।
তার লেখা ছড়াতে,
দাদা চড়ে ঘোরাতে,
ধবি ঘাটে যায় জামা কাচতে ।
বিদ্যান বোন তার ,
হয়ে গেছে ডাক্তার ,
রোগী আসে তার কাছে বাঁচতে ।
খোকা বলে এইবার ,
বেড়ে গেছে বড় বার ,
জানেনা কি খুকিদের নেই দর ।
যদি হই মুখ্যু ,
নেই কোন দুঃখ্যু ,
বাংলায় খোকাদের ই দরকার ।
খুকিগুলো বড় হলে ,
বাবা-মা রা পরে ঝুলে ,
বড়-সর খোকা দেখে গলাতে ।
সোনা-দানা, টাকা যত ,
এমনি ই আসে সে তো ,
হয় নাতো ডাক্তারি ফলাতে ।
খুকি বলে তাই বটে ,
বুদ্ধিতো নেই ঘটে ,
সন্মান কাকে বলে জানেনা ।
গাধা আর ঘোরাকে ,
ছাঁদনার তলা তে ,
ঘোরালেও তারা বাঁধা পড়েনা ।

Wednesday, August 25, 2010

মাতৃভাষা নয় কেন

ওরা প্রশ্ন করে কেন নয় মাতৃ ভাষা দিয়ে ।
মাতৃদুগ্ধের মত ভাষা ও যখন অপ্রতুল ;
আঁতুরঘর ছেড়ে ভাষাহীন বেদনার কান্না
জমে ওঠে । তোলপাড় করে ।
ঐ ভেসে আসা ঢেউ জীবনের মানে বদলে দেয় !
সে সময় কেউ তো আসেনা কাছে
দেয়না সান্ত্বনা ।
কালো কালো অক্ষরের আঁকা বাঁকা রেখা
দুর-দুরান্তের পানে মিশে যায় আশার ধোঁয়াসায় ।
বলোনা বলতে নেই এসব কথা এমন অপ্রাপ্ত ভাষায় ,
লুকিয়ে রাখো অন্তঃপুরে , ওরা বলে ওঠে।
ঘষে মেজে পরিস্কার কর স্টেনলেশ স্টিলের মতন ;
তারপরে এস এই ঘরে ।

বকুলের মালা গাঁথা সারা ,দুঃসহ বেদনার রক্ত ঝরে পরে ।
ঠিক সে সময় জ্বলে ওঠে হৃদয় নামের পাগলটা;
যাঃ তোদের ভাষা আমার নয় ,
আমার ভাষা কাছের ভাষা ,
আমার ভাষা আমার-ই ।
জ্বালামুখী ভিসুভিয়াসের আগুনের ফুলকি
তারা, ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে
বহিঃপ্রকাশে ।
মাকেই যদি পেলাম না ,তার ভাষা যাক ভেসে ।
আমার আর পাবার কিছু নেই এ দেশে ।
আমার ভাষা যে আমার সুন্দরী এক মেয়ে ।

Friday, July 30, 2010

আমি পাহাড় দেখেছিলাম
তুমি মুষিক ,
দয়া নাকি ঘৃণা বুঝিনি
তবু পেড়িয়েছিলাম
তোমারই সহায়তায় ।
সে অনেক কাল আগের কথা
গত জন্ম যেন ।
ওপারে কিছুই পাইনি তেমন
যা চেয়েছিলাম ।
কেমন করে ফিরতে হবে
ছিলনা জানা । তবু আগের মতই
তোমার কাছে ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে
ফিরেছি একা ।
এবারে তোমার ঘৃণার ও যদি
দেখা না পেলাম ,
তবে বৃথাই জন্ম
এ কথা ঠিক ।
আমি পাহাড় দেখেছিলাম,
আর তুমি মুষিক ।।

Sunday, July 25, 2010

মিলন

যেদিন তোমার চোখে লালসা দেখেছিলাম ;
ঘৃণায় অন্তর পুড়ে ছাই !
এর পর মাঝে মাঝে
কারনে অকারনে
তোমার চোখের দিকে দৃষ্টি চলে যায় ।
কে তুমি ! দেখিনি তো আগে ।
কেন আস বারে বার ,
সবার অলক্ষে
আমার প্রতিটি কোষে আগুন ছড়াও ।
এত গুলি বছরের এত গুলি রাত ,
কেটে গেছে শুদ্ধতায় স্নান করে করে ।
দেবতার চরণতলে করে প্রনিপাত ।
আজ কেন ঘোমটায় নাচ !
কেন প্রাণ আনচান ,
কেন মন বলে –
বৃথা আমার জীবন ।
আমার নিজের ছায়া
তোমাতে দেখেছি ,
তুমি আমার আধার ।
ছোটো ছোট ঢেউ যেন
সাগরের গায় –
আমি তোমাতে হারাব আজ
শেষ শুদ্ধতায় ।

Thursday, July 15, 2010

পন্ডিত

দর্শণের পন্ডিত আমি ,
আমি করিনা কিছু কে ভয়;
বিশ্ববিজয় করব যে আমি ,
আমি হয় কে করব নয়।

বুঝেছি আমি আলোচনা করে ,
বহু গবেষনা , তর্কের পরে ,
আমার বুদ্ধি জানতে পারেনা
যাকে ,
সে কি সত্যি হয় ,
আমি ‘হয়’ কে করব ‘নয়’ ।

চন্দ্র, সুর্য্য গ্রহ তারা যত
রুপ, রস আর গন্ধের মত ,
সবই যে অলীক স্বপ্নের মত ,
শূণ্যে করব লয় ।

চলেছি আমি সত্যের পথে ,
কান্ট, হেগেল আর ব্র্যাডলের সাথে
আমি যে পড়েছি বই এর পাতাতে ,
সব কিছু নাশ হয় ।

চারি পাশে যত আছে বোকা সোকা
যত বিঙ্গানী , যত ডাকা বোকা ,
কারুকে আমি করিনা পরোয়া ,
জানি
কিসে থেকে কি যে হয় ।

প্রেম, ভালোবাসা যত অনুরাগ ,
বিষ্ঠার মত করে দেব ত্যাগ ,
জগতে কিছুই নেই সাধনার ,
চেতনাই যদি যায় ।

বুঝেছি আমি সকল ই মিথ্যা ,
আমিও মিথ্যা, তুমি ও মিথ্যা ।
বুঝিনি শুধু যে একখানি কথা –

চেতনা যে কারে কয় !!!

Thursday, July 8, 2010

লাবন্যদের কথা

নাই বা জানলে আমার অবসর
কি ভাবে কাটে একটা দুটো পাখি গুনে গুনে ।
আকাশের নীলে ঘুরি ওড়ার ছন্দে
আমার প্রাণের অনন্দে নেচে ওঠা ।
তবু তো থাকবে কিছুটা আড়াল
আমার নিজের করে ।
সাতপাকে বাঁধা পড়ে শেষ হয়ে গেছে
যা কিছু নিজের , আমার সব কিছু ,
তার উপর তোমার পূর্ণ অধিকার ,
নাই বা থাকল ।
নিশীথে কালো আকাশের বুকে তারাদের বন্যায়
আমি খুঁজি ফিরি আমার মিতা কে ;
তুমি নাইবা জানলে তা ।
আনার কবিতা তোমার চোখের তারায়
খুঁজবনা আমি । আমি জানি কোন খানে
বাজে স্বছন্দে।তোমায় আমায় বন্ধন হোক কাজে ।
মেয়ের বিয়ের বাজারের ফর্দটা ;
থাক তোমার জন্য তোলা ।শেষের সে দিন
মাথায় পরিও সিঁদুরের গোলা তুমি ।
আমার শরীর , মন ,
তোমাকে তো আমি করেছি সমর্পন
আগুনের ছোঁয়া নিয়ে ।
শুধে প্রাণের ভিতর থেকে থেকে বাজে
রিনিকি ঝিনিকি সুরে , কবিতা আমার
গান হয়ে যায় মিতার অন্তপুরে ;
থাক তারা সেই খানে ,
তাদের নিজের লাবন্যে ।।

Tuesday, June 29, 2010

নারী

ধুক পুক ধুক পুক বুকের ভিতর ।
বসে আছে কাল গুনে গুনে আসবে সে কবে
কবে দেখা হবে ।
সে এসে ও তো গেল চলে
দেখল না চেয়ে
কথাটি না বলে ।
নারীর মনের কথা বল দেখি তুমি ,
কে জেনেছে কবে

জনে জনে কথা বলে
হাসির দমকে ভেঙ্গে পরে ।
তার গ্রীবা ভঙ্গীমা , তার চটুলতা
মন্ত্রমুগ্ধ্ব স্তাবকের দল ,
খায় চেটে পুটে ।
কেউ তো জানে না তারা –
যত্ন সহকারে ।
রেখেছে সরিয়ে তার সে মাহেন্দ্র ক্ষন ,
যত কথা না-বলা না-শোনা
তোমার অপেক্ষায় ,
হাতে হাত রেখে চোখে রেখে চোখ ।
আর যত কাজ আছে আগে সারা হোক ।

সারা হল সব কাজ,
শেষ অতিথি গেলে ,
গভীর আশায় বুক বেঁধে ,
এসে সে দাঁড়াল কাছে।
দুরু দুরু বুকে ,
তোমার দুচোখে চোখ মেলে।

যে পথে সে গেল চলে, যে দরজা খুলে
সেই পথে চেয়ে চেয়ে নিজেকে দুষছ জানি,
কেন একবার তাকে ডাকলেনা ফিরে,
কেন তার ব্যাথাভরা চোখের তারায়
খুঁজলে না তুমি ,
যে কথা না বলা ।
কোন অসহ ক্রোধ

তোমার বুকের মধ্যে তীর হয়ে আছে ।
তুমি তো জাননা বন্ধু ;
নারী কিন্তু বোঝে ।।

Sunday, June 6, 2010

সে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায় সারাটি দিন ,
বসে থাকি একা একা ।
কি জানি কি লিখেছে যে ভাগ্যলেখা ।
বোঝালেও কি বুঝবে নাকি
সে যে ভীষণ বোকা ।
শূণ্য ঘরের দরজা জানলা হা হা খোলা ,
কখন যে কোন আসবে ডাকাত যায়না বলা ।
কোনো কথায় কান দেবে না ছুটছে খালি ।
পার হয়ে যায় বড় রাস্তা চোরা গলি ।
কাগজের টাকার পাহাড় করছে জরো ।
ধনী তাকে হতেই হবে আরো আরো ।
ছিঁচকে চোর আর বড় ডাকাত
ঘুরছে কেবল তাকে তাকে ,
কখন সুযোগ মিলবে তারা লুঠবে কাকে ।
আমি কেবল ঘরের ভিতর বসে বসে
তাকাই মুখে , আর কতদিন সময় গেলে
মন দেবে সে আমার দিকে ।
কবে সে যে খুঁজে পাবে সেই মুলধন ,
হৃদয় জুরে আছে যা
তার পায়না নাগাল কোন চোরে -
বিলিয়ে দিলেও সে ঘর খুলে।




Saturday, June 5, 2010

তুমি এসেছিলে

তুমি এসেছিলে আমি জানি ;
আমি বুঝিনি তোমায় তাই বুঝি চলে গেলে !
কি করে কে জানে এক তীব্র ব্যাকুলতা ,
হৃদয়ের মাঝখানে নিয়েছে যে বাসা ।
কোন মায়াবলে তুমি ছুঁয়ে দিয়ে গেলে ।
ধুল-বালি কাদা-মাটি নিয়ে কারবার ,
চারি পাশে ঘিরে রাখে কত কাঁটাতার ;
ঘুরে ফিরে দেখি যদি চিহ্ন কিছু
ফেলে রেখে গেলে !
হৃদয় নিশ্চিত জানে তুমি এসেছিলে ।
এই ধুল এই বালি এই আবর্যনা ,
থাক পরে আমি সরাবনা ।
শুধু এই কাঁটাতার নিজ হাতে ছিঁড়ে -
রক্তঝরা সন্ধায় আমার সান্ত্বনা ,
আমার মাটির ঘরে কারুকে না বলে ,
তুমি এসেছিলে ।।

Monday, May 31, 2010

সানাই

সুনীতা !
চমকে উঠলাম । কি কি রহিত! কোথায় তুমি রহিত । কি হয়েছে বলনা আমায়। আবার , আবার, আবার তুমি ডাকলে – কি আকুতি তোমার স্বরে – আমি আসছি । কবে থেকে আমি তোমার এই ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, সারাদিন, সারারাত, নাওয়া, খাওয়া, শোয়া, সব কিছুর ওপাড়ে তোমার ডাক আসবে, আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারনা , তুমি আমার, শুধু আমার । এরা কেউ কিচ্ছু জানেনা । কি বলে জান, বলে তুমি নাকি চলে গেছ অনেক দূরে, আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা আমার কাছে । কি বোকা এরা না! জানেনা তুমি আমার স্বপ্নে আস, আমরা চুপি চুপি কথা বলি । মাঝে মাঝে ওই জানলার ওপারে তুমি এসে দাঁড়াও, আমায় হাতছানি দিয়ে ডাক । কিন্তু যাব কি করে, এরা যে আমায় বন্দী করে রেখেছে এই ঘরে । আজ কেন কেউ বাড়িতে নেই, আমার ঘরের দরজাও খোলা । আমি আসছি , আমি আসছি রহিত । কোনো সারাশব্দ নেই । নিঃশব্দ, নিঃঝুম বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় । আমায় যেতে হবে তোমার কাছে । কোথায় তুমি রহিত । ঐ তো, ঐ দূরে ভীরের মধ্যে মিশে চলেছ । তোমার ধুসর জামা, ধুসর প্যান্ট আমি ঠিক চিনতে পারছি । কেন লুকোচুরী খেলছ আমার সঙ্গে । তুমি ঈশারা করছ আমায় ! হ্যাঁ হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি , আমাদের লুকিয়ে চলতে হবে । তাই না! না হলে যে ওরা জানতে পেরে যাবে ।আমার ঠোঁঠের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে গেল । আর কত দূর রহিত, কত পথ তো হাঁঠলাম । আর কেন, এবার এস কাছে । আমি যে হাঁপিয়ে পড়েছি । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । এই ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে বেড়ে ঢাকের মতন ধক ধক করবে, আমি ভীষন ভয়ে কুঁকরে যাব । রহিত, লক্ষিটি আর দেরি কোরোনা । আমি কোথায়, এটা কোন রাস্তা । এখন কি দুপুর না সন্ধ্যে । সব গুলিয়ে যাচ্ছে । কি করব এখন আমি, না না ভয় পাব না, তুমি তো আছো, লুকিয়ে মজা দেখছ না রহিত ! আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেব । আচ্ছা ঐ ট্রাফিক পুলিশটা কে জিগ্যাসা করব? এটা কোন রাস্তা বলবেন আমাকে, আর এখন কি রাত না দিন সেটাও যদি একটু বলে দেন । কি অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে পুলিশটা কেন কি করেছি আমি ! কি রকম তেড়ে উঠল দেখ , কি রকম ভাবে বলল – যান যান রস্তার ওপারে গিয়ে হাঁটুন । তুমি দূর থেকে দেখছ রহিত আমার অপমান, তবু তুমি সামনে আসবে না! একি রাস্তায় এত রক্ত কেন ! এত লাল রক্ত । কি বলছেন , এটা রক্ত নয়, আবির, আজ দোল । কি কান্ড রহিত আমি ভুলেই গেছি আজ দোল । কত রঙ চার দিকে, সবাই রঙ মেখেছে । খুশির রং আনন্দের রঙ । শুধু আমিই সাদা কাপরে পথে পথে ঘুরছি, এস রহিত, কাছে এস, আমার তোমার রঙে ভরে দাও । কে , কে ডাকছেন আমায়, কে আপনি, আমার কাঁধে হাত রেখেছেন । আপনাকে কি রহিত পাঠিয়েছে । তাইতো বলি, রহিত কি আর আমাকে ফেলে দিতে পারে । নিজে আসতে পারবে না, তাই আপনাকে পাঠিয়েছে বুঝি ? কোথায় যেতে হবে বলুন, কোথায় গেলে রহিতের সঙ্গে দেখা হবে । ঐ ট্যাক্সি করে নিয়ে যাবেন আমাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন না, আমার আর দেরী সইছেনা । ওনারাও যাবেন আমাদের সঙ্গে, রহিতের বন্ধু আপনারা ! বাঃ বেশ, চলুন চলুন , না হলে আবার ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, কিছুতেই রহিতের কাছে যেতে দেবে না । আমার বুকের মধ্যে সানাই বাজছে রহিত, এতদিন পরে তুমি আমায় ডেকে নিলে । কতদিন পরে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি একটু শান্তি পাব আজ । এরা আমায় কেউ ভাল বাসেনা । বলে তুমি নাকি রুনা কে বিয়ে করেছ । কি অদ্ভুত কথা । তুমি কখন আমাকে ছেরে আর কারুকে ভালবাসতে পার নাকি ? সে যে তোমার স্বপ্নেও তুমি ভাবতে পারনা, সে আমি খুব ভাল জানি । মা আমায় আজকাল শুধু বকে আর জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয় , বলে ঘুমো, ঘুমো । কেন আমি কি পাগল যে সারাদিন ঘুমাব । আমি তো তোমার কাছে যাব, এই যেমন আজ যাচ্ছি । একি আপনারা এমন করছেন কেন ? আমার ভীষণ লাগছে যে । রহিত না আপনাদের বন্ধু, আপনাদের আমাকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে , তবে আপ্......উঃ, রহিত, তুমি এখনো আসবেনা ...ও মা গো, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আপনাদের দুটি পায়ে পড়ি , আমাকে রহিতের কাছে নিয়ে চলুন না...রহিত্‌...।তুমি কেমন ডাক পাঠালে, তুমি কেমন পরীক্ষা নিচ্ছ ? ওমা গো...মাআআআআআআ...

Saturday, May 15, 2010

মহাকালের শ্রোতে


তুমি কি জানতে তাকে ,
একশ বছর পরে ,
যে মেয়েটি তোমার লেখা বুকে করে ,
থাকবে বসে আনমনা ,
পথভোলা ,
আকাশ পথে দৃষ্টি মেলে দিয়ে ।
তার খোলা চুল অথবা তার বেণি ,
সারির আঁচল অথবা ওড়নি -
হাওয়ায় দোলায় দুলছিল কি -
দিচ্ছিল হাতছানি ;
ফিরে ফিরে তোমার গভীর চোখে ,
ঘিরে ঘিরে তোমার প্রেমিক বুকে -
অদেখা এক অজানা সেই মেয়ে ,
ছড়িয়ে ছিল কোন সে মায়াজালে !
তুমি মধুর হেসে ,
তার উদ্দেশে ,
ভাসিয়ে দিলে তোমার অনুভব ,
মহাকালের শ্রোতে ,
তার ছোঁয়াতে রঙিন হয়ে উঠল মেয়ের মন ;
বুঝতে তুমি পেরেছিলে নাকি ,
কেমন হবে সে মাহেন্দ্রক্ষন ।


Saturday, April 10, 2010

কবির

আমি গান বাঁধি, গান গাই ,
সুরের ভেলায় ভেসে
উজান বেয়ে যাই ।

তোমায় পেলাম পথের মাঝে
দেখে তোমার কাম ,
ধরম, ভরম ছেড়ে
আমি নিলাম ‘কবির’ নাম ।

ঈশ্বর আল্লার নেই তো ভেদাভেদ ,
আমি তোমায় পাব কাছে,
এই ছিল মোর জেদ ।

গরীব মানুষ দেখে কানছে আমার প্রাণ ,
তাই দিদির আঁচল ধরে ,
রাজনীতিতে স্নান ।

রাজনীতিতে নতুন,
তবু বুঝতে নেই কো বাকী
সবার চোখে পরতে গেলে ,
ধরতে হবে ঢাকি ।

তাইতো দেখ আমি নতুন কথা বলি –
দিদি যাকনা চুলোয় ,
আমি পেয়েছি চোরা গোলি ।

মাওসেতুঙ্গের চেলা ,
আমি যুধিষ্ঠিরের নাতি ,
চার পাশে সব চোর ,
আমি হাওয়াতে কান পাতি ।

ঐ তো লোকে ডাকছে আমায়
বোকা বাক্স থেকে ,
নিজের প্রচার করতে হবে ,
একটু রেখে ঢেকে ।
এস এম এস এ পাঠিয়েছিলাম
পদত্যাগের চিঠি ;
এত লোকে চাইছে আমায় ,
কেমন করে উঠি !

ছত্রধরের গান, তানপুরাতে টান ,
দেশের সৈন্য হচ্ছে বলি ?
তাদের নেই জীবনের দাম ।
আমি এখন অহিংসক ,
গান্ধিজ়ীর চেলা ,
ঠান্ডা ঘরে বসে ভাসাই
মাওবাদীদের ভেলা ।।

Wednesday, March 31, 2010

রজনীগন্ধা

আমার ঘরের কাঁচের ফুল্ভানীতে রেখেছি তোমায় রজনীগন্ধা ,

তোমার মিস্টি গন্ধ লাভা ছড়ায় না ধমনীতে ।

এখন বাইরে ঘন অন্ধকারের বুক চিরে চিরে

চমকে উঠছে বিদ্যুত,

হাস্নুহানার গন্ধে মাতাল

সরীসৃপের মত উন্মত্ত আমিও ।

প্রবল বর্ষণের পর

ক্লান্ত রিক্ত দেহ,

পঙ্কিল ক্লেদাক্ত পথ অতিক্রম করে এসে দেখি

মনের ভুলে জানালা করিনি বন্ধ ,

চূর্ণ হয়েছে কাঁচ,

তাজা রজনীগন্ধা ধুলায় লুটায়, অসহায় ।

তোমার সবুজ দেহ বুকে নিয়ে নিলাম ঘ্রাণ ।

আঃ কি সুন্দর তুমি রজনীগন্ধা ।

তোমাকে দেখে মনে পড়ে সানাই এর সুর

আর কিছু অঙ্গিকার ।

তুমি হতে পারনা বন্য ।

তোমাকে সাজিয়ে রেখে আমি যাই হাস্নুহানার কাছে ,

স্নিগ্ধ সুরভী নিয়ে তুমি থাক প্রতীক্ষায় - আর

আমি খুঁজে ফিরি অরন্য ।

Sunday, March 28, 2010

স্টিফেন হাউস

ছেলে আমার চাকরি পেয়েছিল,
ফুটপাথে বসে আছি তার অপেক্ষায় ।
দূরে ঐ গাছের উপর শকুন বসেছে ,
কি তীব্র ব্যাগ্রতায় ।

দুদিন পাইনি দেখা,
কি জানি কেমন আছে একা একা ,
আমার চখের মনি, প্রাণের স্পন্দন ।
দুরাত ফেরেনি ঘরে ,
বসে আছি তার অপেক্ষায় ।

ছেলে আমার বলেছিল,
মাগো তুমি চিন্তা কোরোনাকো ,
ফিরে এসে খেয়ে নেব যা রেঁধেছ তাই ।
জন্মদিনের পরে দুটো দিন চলে গেছে ,
বসে আছি তার অপেক্ষায় ।

আগুনে ঝলসান কালো মাংসের তাল ,
প্লাসটিকে মুরে রেখেছিল কাছে ,
সে নাকি আমার ছেলে ।
এত দুঃখেও হাসি পায় ।
তোমরা কি চোখের মাথা খেলে ,
আমার খোকার ছবি এই দেখ ,
ঠিক যেন দেবদুত হেসে চেয়ে আছে ,
খোকা ওরে আয় কোলে আয় ,
বসে আছি তোর অপেক্ষায় ।

Saturday, March 13, 2010

আমরা কেউ বুদ্ধ নই


ফুটপাথে মানুষের বসতি দেখেও
না দেখেই চলে যাই, চলে যাও তুমিও
নিজেদের সাজানো সংসারে ।
কারন আমরা তো কেউ বুদ্ধ নই ।
তবু হৃদয়ের তন্ত্রীতে শির শিরে ব্যাথা ,
তবু বুকে সমুদ্র-মন্থন শেষে
যে গরল উঠে আসে ,
সে কালিতে মূর্ত্ত হয় তোমার কবিতা ।
আর আমি সে কাজলে দু-চোখ সাজাই ।

তোমার লেখনী বেয়ে পত্রিকায় উঠে আসে
দরিদ্র পরিবার ।
আর তুমি জায়গা করে নাও
পাঠকের হৃদয় মন্দিরে ।

আমার দু-চোখে কেন জল ছ্বল ছ্বল ,
আমার বুকের মাঝে নীল বিষ ব্যাথা ।
ফুটপাথে সংসার আমিও দেখেছি ,
তবু কেন কবিতায় লিখিনি সে কথা ।

এতদিনে শীতরাতে, গনগনে রোদে ,
কুঁকরে , ঝলসে গেছে ,
দু-চারটে জীবন।
কে তাদের নিয়ে ভাবে ।
তুমি আছে তোমার কাব্য জগতে ,
আমি মরি ঈর্ষায় ডুবে ।

Tuesday, March 9, 2010

ভুত-পেত্নি-দত্যি-দানা

ভুত-পেত্নি-দত্যি-দানা রাজপুত্র রাজকন্যা
কোথায় গেল চলে ।
দাদু-দিদা ভেবেই সারা খোকন যখন দেয় গো তাড়া
গল্প শুনতে এসে ।
সাত সমুদ্র তের নদীর পারে, রাক্ষসেদের ঘরে
রাজপুত্র যেত কেমন পক্ষীরাজে চড়ে ।
সোনার কমল থাকত ফুটে যেত সকল বাঁধন টুটে
সোনার কাঠি ছুঁলে
একশ বছর ঘুমের পরে রাজকন্যে দেখত ঘরে
এল রাজার ছেলে ।
দাদু তখন ছোট্ট ছেলে ঘেঁসটে সুয়ে মায়ের কোলে
ভাবত মনে মনে।
আমি যেন রাজার ছেলে পক্ষীরাজে পাখনা মেলে
ঘুরছি বনে বনে ।
বাঘ ভালুকে পাচ্ছিনাত ভয়
রাক্ষসদের রাজ্য কত, করছি আমি জয় ।
রাজকন্যা ঘুমিয়ে আছে রাক্ষসীদের ঘরে ,
তাকেও আমি আনব যে জয় করে ।

স্বপ্নে দেখা সেই যে রাজার মেয়ে ,
সেই তো দিদা, খোকন দেখ চেয়ে ।
ভুত-পেত্নি-দত্যি-দানা রাজপুত্র রাজকন্যা
যায়নি কোনখানে,
আছে তারা ঘুমের ঘোরে অনেক অনেক বছর ধরে
দাদু দিদার মনে ।

Tuesday, February 16, 2010

গোলাপ বাগান

Free translation of the short story "Shadow in the Rose Garden" by D H Lawrence


গোলাপ বাগান

সমুদ্রতীরবর্তি মোনোরম একটি কুটিরগৃহে আমাদের গল্পটির শুরু ।সকাল আটটা তিরিশ গত হয়েছে ।কুটিরটির ঠিক সমুখে লতান হলুদ গোলাপের গুচ্ছ রোদের আলোয় আগুনের ফুলকির মতন জ্বলজ্বল করছে। কুটিরের অভ্যন্তরে একটি যুবা-পুরুষকে দেখা গেল । সে একটি সংবাদ পত্রে মনঃসংযোগের ব্যার্থ চেষ্টা করে কাগজটি ত্যাক করে উঠে দাঁড়াল এবং ন পর্যায়ক্রমে সামনের টাবিল, দেয়াল ঘড়ি অবশেষে নিজের দামী হাতঘরিটির দিকে দৃষ্টি পাত করল । তার চোখে মুখে স্পস্টতই চরম অসহিষ্ণুতার আভাস। এর পর সে দেয়ালের ছবিগুলিএর দিকে মননিবেশ করল , পিয়ানোর রিডে অঙ্গুলি সঞ্চালন করে বুঝল সেটিতে চাবি বন্ধ

না তাকে দেখতে মন্দ নয় । যদিও তাকে দীর্ধকায় বলা যায় না, তবু ও যথেষ্ট, টান টান, সুঠাম তার দেহ সৌষ্ঠব । তার দৃষ্টিতে এখন স্পষ্টতই আত্মতৃপ্তির আভাস ।

কিছুটা বিষাদগ্রস্থ যুবা-পুরুষটি বাগানে প্রবেশ করল ।যুবকের পোষাক আষাক যথেস্ট ঝকঝকে, নতুন মুল্যবান এবং তাকে এই বেশে খুবই অভিজাল মনে হয় ।বাগানে পায়চারি করতে করতে সে একটি গাছে থেকে আপেল পেড়ে অন্যমনস্ক ভাবে একটি কামড় বসাল । বাঃ বেশ মিষ্টি তো । আর একটি কামড় বসাল সে ।এর পরে তার দৃষ্টি তাদের শয়নকক্ষের জানলায় একটি নারীমুর্তির উপর এসে স্থির হল । মেয়েটি তার স্ত্রী এবং সে দূর সমুদ্রের দিকে নির্মিশেষ তাকিয়ে ।
কিছুক্ষন তাকে লক্ষ করল যুবাপুরুষটি। মেয়েটি যথেষস্ট রুপসী । যদিও আপাত দৃষ্টিতে তাকে ছেলেটির থেকে সামান্য বয়স্ক বলে মনে হয় ।মেয়েটি সামান্য ফেকাসে । কিন্তু সে যথেস্ট সুস্বাস্থের অধিকারিনী ।তার মুখটি ঘিরে একমাথা ঘন চুল কাপালের উপর গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে পরেছে । বিশ্বসংসারের প্রতি সম্পুর্ন উদাসীন দৃষ্টি মেলে ধরেছে দূর সমুদ্রের প্রতি । তার এই আপাত উদাসীনাতা ছেলেটির কাছে পিড়াদায়ক । সে বাগান থেকে একটি ফুল তুলে জানলা লক্ষ করে ছুঁড়ে মারল । চমক ভেঙ্গে মেয়েটি তার প্রতি চকিত উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জানলা থেকে সরে গেল ।

যুবক ঘরে প্রবেশ করল । একটি সাদা পোষাকে মেয়েটি দৃপ্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়া ।

আমি অনেক্ষন অপেক্ষা করছি – ছেলেটির সুরে অনুযোগ ।
আমার জন্য নাকি প্রাতঃরাশের জন্য । মেয়েটি হাল্কা সুরে বলল । আমরা তো নটার সময় ঠিক করেছিলাম । আমি ভেবেছিলাম এতটা পথ এসে তুমি আজ একটু বিশ্রাম নেবে ।

তুমি তো জানই আমি রোজ পাঁচটায় উঠি আর ছটার পরে তো আমি কিছুতেই বিছানায় থাকতে পারি না। এরকম একটা সকালে বিছানায় পরে থাকা আর খানিতে পরে থাকা একই ।

আমি ভেবেছিলাম এখান এসে তুমি আর খানা-খন্দর খুঁজবেনা ।

মেয়েটি ঘুরে ঘুরে ঘর দেখছিল । ছেলেটির চোখে একসাথে মুগ্ধতা এবং অসোয়াস্তি ।

যুবাপুরুষের হাতটি নিজের হাতে নিয়ে মেয়েটি বলল -চল আমরা বাগানে যাই । মিসেস কোটস নিশ্চয় ততক্ষনে আমাদের প্রাতঃরাশের ব্যাবস্থা করবেন ।

আশা করি তারাতারি করবেন । ছেলেটি গোঁফে হাত বোলাল, মুখে পাইপ । একটু হেসে মেয়েটি তার কাঁধে মাথা রাখল ।

তারা সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেতেই এক সৌম্য এবং হাসিখুশি প্রৌঢ়া ঘরে প্রবেশ করলেন । তিনি মিসেস কোটস তাঁর উজ্জ্বল নীল চোখ মেলে তিনি অপস্পৃয়মান যুগল মুর্তির দিকে চেয়ে রইলেন । দুজনে দেখছি মাথায় মাথায় ।যদিও এ মেয়ে নিম্নমানের বিয়ে করার পাত্রী নয়, তবু ছেলেটিকে ওর সমকক্ষ বলে তো মনে হচ্ছেনা ।তিনি স্বগোতক্তি করলেন । এ সময় তাঁর কিশোরী নাতনি প্রাতঃরাশের থালা হাতে ঘরে প্রবেশ করল ।

জান দিদা ছেলেটা বাগানের আপেল ছিঁড়ে খাচ্ছিল ।

তাই নাকি সোনা । তা ভাল লাগলে খাবেনা কেন !

বাগানে এসেও ছেলেটির উতকর্ণ হয়ে কাপ-ডিশের শব্দের অপেক্ষায় ছিল । অবশেষে খেতে বসে সে নিশ্চিন্ত । কিছুক্ষন নিঃশ্বব্দে খাবার পরে –ছেলেটি প্রশ্ন করল-
তোমার কি এ জায়গাটা ব্রিডলিংটনের থেকে ভাল মনে হচ্ছে ।

নিশ্চয় ,কোনো তুলনাই হয় না । তাছাড়া আমার মনে হচ্ছে আমি আমার নিজের জায়গায় এসেছি – যে কোনো একটা নাম না জানা সমুদ্র-শহর নয় ।

তুমি কত দিন এখানে ছিলে ।

বছর দুই ।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সামান্য চিন্তা করল ছেলেটি । আমি তো ভেবেছিলাম তুমি কোনো নতুন জায়গায় যেতে পছন্দ করবে ।

মেয়েটী একটু চুপ করে থেকে বলল- কেন তোমার কি মনে হচ্ছে এ জায়গাটা আমার ভাল লাগবে না ।

কথাটা সহজ করে নেবার জন্য হেসে রুটিতে মারমালেড লাগাতে লাগাতে ছেলেটি বল্ল- আশা করি লাগবে ।

তার কথায় কান না দিয়ে মেয়েটি হালকা ভাবে বলল – এখানে কারুকে কিছু বলোনা যেন ফ্র্যাঙ্ক , মানে আমি কে, বা এখানে আগে থাকতাম , আমি এখানে বিশেষ কারুর সুঙ্গে দেখা করতে চাই না । আর এরা যদি আমার পুর্ব্ব পরিচয় পেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, আমরাও নিজের মনে থাকতে পারবনা ।

তা হলে এখানে এলে কেন ।

কেন তুমি বুঝতে পারছনা ।

না, মানে তুমি যদি কারুর সঙ্গে দেখাই না করতে চাও ।

আমি জায়গাটা দেখতে এসেছি , কোনো লোকের সঙ্গে দেখা করতে আসিনি ।

ছেলেটি আর কথা বাড়াল না ।

মেয়েরা ছেলেদের থেকে আলাদা হয় । আমি নিজেই জানিনা কেন এসেছি , কিন্তু দেখ তবু এসেছি । মেয়েটি আর এক কাপ কফি বানিয়ে এগিয়ে দিল আর সামান্য কাঁপা হাসি দিয়ে সাবধানে আঙ্গুল দিয়ে টাবিল থেকে পাঁউরুটির গূঁড়ো সরাতে সরাতে আবার বলল – শুধু আমার সম্মন্ধে এখানে কারুকে কিছু বোলোনা । আমি চাইনা আমার অতীত ফিরে আসুক ।

কফি কাপের উপর থেকে তাকে লক্ষ করছিল যুবকটি । গোঁফে হাত বোলাতে বোলাতে গদ গদ স্বরে বলল –তোমার বেশ জবরদস্ত অতীত আছে মনে হচ্ছে ।

একটু অপরাধী ভাবে তাকিয়ে, আদুরে গলায় মেয়েটি বলল, তুমি যেন আমায় ধরিয়ে দিও না ।

কৃতার্থ হেসে ছেলেটি অভয় দিল – না সে ভয় পেওনা ।

একটু পরে মেয়েটি বলল মিসেস কোটস কে অনেক কিছু বোঝাতে হবে , তাই এবালা তুমি একলাই ঘুরে এস । আমরা ঠিক একটায় খেতে বসব কিন্তু ।

কিন্তু মিসেস কোটসের সঙ্গে কি এমন কাজ যে তুমি সারা সকাল বেড়োতে পারবে না ।

আসলে আমার নিজেরও অনেক ছোটো খাটো কাজ আছে , কিছু চিঠি লিখতে হবে । আর আমার সেই জামার বিশ্রী দাগটা তুলতে হবে । এরকম নানা কাজ । তুমি বরং একলাই ঘুরে এস প্লিজ ।

ছেলেটির বুঝতে বাকি রইল যে সে এখন এর কাছে অবাঞ্ছিত, অতএব রাগ চেপে সে একলাই বেড়িয়ে পড়ল ।

সামান্য তফাতে মেয়েটিও বেড়িয়ে এল । তার পরনে একটি সাদা ফ্রক ।মাথায় গোলাপ দেওয়া মেয়েলি টুপি, একটি লম্বা লেশের ওড়না কাঁধের থেকে পরিপাটি নামান। সচকিত ভাবে ওড়নায় মুখ ঢেকে বেড়িয়ে গেল মেয়েটি ।

মাছুরেদের চলার পথটি ধরল মেয়েটি । ছাতায় তার মুখের অনেকটাই ঢাকা ।

টাউন চার্চ ছাড়িয়ে একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল মেয়েটি ।পাঁচিল ধরে যেতে যেতে একটা খোলা তোরনের সামনে এসে দাঁড়াল সে ।তোরন পেড়িয়ে সাদা নুড়ি ফেলা পথ বেয়ে সে এসে গেল তার সেই পরিচিত সিমেন্টের উঠোন আর তার লাগোয়া সবুজ মাঠের পাশে ।উঠোন পাড় করে তার সেই চেনা বাড়িটার দিকে এক পা এক পা করে এগতে শুরু করল ।জানলা গুল সব অন্ধকার, রান্নাঘরের দরজা হাট করে খোলা । প্রবল অনিশ্চয়তা এবং ততোধিক ব্যাগ্রতার সঙ্গে সে বাড়ির পিছনের বাগানের দিকে অগ্রসর হল ।

বাগানের মুখে এসে, হঠাত পিছনে ভারি পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়াল। তার সামনে উদ্যান রক্ষক, হাতে থালায় লাল টকটকে রাসবেরি- আজ বাগান খোলা নেই , শান্ত স্বরে সে বলল ।

ভীষন অবাক হয়ে মেয়েটি ভাবছিল, বাগান কি তারমানে সাধারনের জন্য খোলা থাকে আজকাল । কিন্তু মনের ভাব গোপন করে জিগ্যাস করল । কখন খুলবে ।

মংগল ও শুক্র বার বাইরের দর্শকের জন্য খোলা রাখেন রেক্টর ।

কিন্তু আজ তো সবাই চার্চে , এদিকে তো কেউ আসবেনা , করুন স্বরে অনুনয় করে মেয়েটি ।

সামনে থেকে সরে যেতে যেতে লোকটি জানিয়ে দিল – আজ রেক্টর বাড়িতে আছেন । মেয়েটি কে চলে যেতে বলতে মায়া হচ্ছিল তার ।

বুঝতে পারে, খুব সুন্দর করে হেসে মেয়েটি অনুনয় করল, শুধু গোলাপ বাগান টি একবারটি দেখতে পারি ।

তা পারেন, কিন্তু বেশী সময় নেবেন না ।

মুহুর্তে সব কিছু ভুলে মেয়েটি যেন অতীতে ফিরে গেল । বিচলিত, অত্যাগ্রহী এক রমনী । সে লক্ষ করল বাগান মুখী সব কটা জানলা খোলা এবং অন্ধকার ।মনে হয় বাড়িটা জনমানব শূন্য, প্রাণহীন । দেখে তার কমনীয় মুখখানিতে বেদনায় কালো ছায়া ঘনিয়ে এল । সে ঘাস পেড়িয়ে বাগানে প্রবেশ করল। বাগানের প্রান্তে সব্জে-নীল সাগর তাতে সকালের ঘন কুয়াশা ভেদ করে যে রৌদ্রকনা এসে পড়েছে তার এক অলৌকিক শোভা ।সাগর আর আকাশের নীলের মাঝে মাঝে কালো কালো পাথর মাথা তুলে আছে । মেয়েটির মুখে প্রবল সুখ এবং অপরিমেয় দুঃখের এক অপূর্ব মিশ্রন ।তার পায়ের কাছে বাগান তার সদ্য রৌদ্রে স্নাত নানা বিধ ফুলসম্ভার নিয়ে লুটিয়ে আছে । নীচে ঘন কালচে সবুজ গাছের সারি ।বাগানের এক কোনায় একটি গাছের তলায় একটি ছোটো বেঞ্চি পাতা , এ তার অতি পরিচিত পরিবেশ ।এর পরে কিছুটা খোলা বারান্দা , তাতেও নানা বিধ ফুলের গাছে , সেখান থেকে দুটি পথ বাগানের দু ধারের ঢাল বেয়ে নিচে চলে গেছে ।ছাতা বন্ধ করে সে ফুলের বাগানের মাঝখানদিয়ে হেঁটে চলল, উন্মনা, আত্মস্থা । এই সেই গোলাপ বাগান, চারি পাশে শুধু গোলাপ, লতানে গোলাপ, গোলাপ চারা, লাল , সাদা, গাঢ় গোলাপি গলাপের শোভা চারি পাশে, হলুদ গোলাপ গুচ্ছ যেন সোনার ছ্বটা ।স্বপ্নাবিষ্টের মতন সে ধীরে ধীরে বুক ভরে ঘ্রাণ নিল ।হঠাত অন্নমনস্কভাবে সে টকটকে লাল গোলাপের গায়ে পরম মমতায় স্পর্শ করল, মা যেমন আনমনে তার সন্তান কে স্পর্শ করে । যেমন এক অতি কোমল প্রাজাপতি ফুলে ফুলে খেলা করে । অন্যমনে ঘুরতে ঘুরতে সে একটি গোলাপ চত্বরে এসে থমকে গেল ।

সেই উজ্জ্বল, রঙিন ফুলের মেলা যেন আপন সৃস্টির খেয়ালে নিজেই মগ্ন । ফুল তো নয় যেন একরাশ, উচ্ছ্বল প্রগলভ তাজা প্রাণ । সে কেন এখানে এমন বিষাদমগ্ন । প্রাণ ভরে নির্মল বাতাসের ঘ্রাণ নিয়ে যেন নিজেকে উজ্জিপীত করল সে । একটি বেঞ্চে এসে বসে তার ছাতা বন্ধ করল । এই বাগানে তার ছাতা বরই বেমানান । এর রঙ বড় বেশী উগ্র ।গোলাপ বাগানে সে যেন এক গোলাপ কুঁড়ি ফোটার আগেই যে ঝরে গেছে । তার গোলাপ জন্ম সার্থক হলনা, বিকশিত হলনা সে বিস্মরনে বসে আছে, স্তব্ধ, মুগ্ধ, আত্মস্থ, এক তরুন, তাজা প্রাণ । ।একটি কালো মৃত মৌমাছি তার কোলে এসে পড়ল, যেন এক সাদা গোলাপ কুঁড়িতে পোকা ধরেছে ।

আচমকা এক কালো ছায়া তার এমন মধুর সোনালী প্রভাতী স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দিল । নিঃশ্বব্দ পায়ে এসেছে এক মূর্তিমান ভগ্নদূত ।উঠে দাঁড়াল মেয়েটি । কে জানে কে, কি কথা জানতে চাইবে ।লোকটির পরনে মূল্যবান কালো পোষাক ।সামান্য পৃথুল, মিলিটারি চেহারার এক অভিজাত যুবা-পুরুষ , মাথার ঘন কালো চুল পরিপাটি আঁচড়ান ।পুরুষোচিত একজোরা টান টান গোঁফ ।কিন্তু তার চাল চলন যেন কেমন কেমন ।কালো চোখের তারা মেয়েটির প্রতি ন্যস্ত, কিন্তু সে দৃষ্টি ঠিক পুরুষোচিত বলা যায়না । সেই চোখের দিকে ভাল করে তাকিয়ে, সহসা মেয়েটির শরীর থেকে সকল শক্তি যেন অপসারিত হল, রক্তশূন্য, চলতশক্তিরহিত হয়ে সে পুনরায় তার বেঞ্চিতে বসে পড়ল ।

যুবা-পুরুষটি তার পাশে জায়গা করে নিল- টান টান ভদ্রতায় বলল –
আমি কি আপনাকে বিরক্ত করলাম ।

কি অসহায় , স্থানুবত বসে আছে সে ।তার এত পরিচিত, তার প্রিয়বর, তার অতীত তার পাশে বসে । সেই চেনা হাতে, সেই চেনা আংটি , সবই তো আগের মতন, কিন্তু কিছুই আগের মতন নেই, কি নেই, কি! তার চেনা পৃথিবী কোথায় হাড়িয়ে গেল, সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে । লোকটি তার বলিষ্ঠ উড়ুতে হাত রেখে বসে আছে । তার জীবনের দুরন্ত প্রেম যার স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে, সেই হাত তার কাছে যেন এখন বিভীষিকা । পকেটে হাত ঢুকিয়ে কেমন চুপি চুপি জিগ্যাসা করল –

আমি কি ধুমপান করতে পারি !

অবশ্য মেয়েটি যে তার কোনো উত্তর করলনা , সেটা যেন তার গোচরেই এল না ।সে আছে যেন তার নিজস্ব জগতে ।আমাকে কি ওর একটুও মনে নেই !স্থানুর মতন বসে এই কথাই ভাবছিল মেয়েটি ।তাকে সহ্য করতে হবে , সব সহ্য করতে হবে ।

আমার কাছে তামাক নেই –এক রাশ চিন্তা নিয়ে কথাটা উচ্চারন করল যুবক ।

কোনো কথাই কানে ঢুকছিলনা । উতকন্ঠা জমেজমে তার হৃদয় এখন বরফের মতন শীতল ।সবই কি শেষ, সবই কি হাড়িয়ে গেছে, কিছু মাত্র বাকী নেই !প্রিয় পুরুষের মুখের দিকে তাকিয়ে এই কথাই শুধু ভেবে চলেছে ।


আমি ‘ডন কটন’ ব্যাবহার করি । অনেক দাম তো তাই ধুমপান করার সময় ভাবতে হয় ।আমার আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল নয়, জানেন ই তো । আমার অনেক গুলো মামলা চালাতে হয় ।
বুকে যেন ভারি পাথর চাপা, বরফ শীতল স্বরে বলল – জানিনা তো ।

মাথা ঝুঁকিয়ে মিলিটারি কায়দায় অভিবাদন করে সে উঠে গেল । তার অপ্সস্পৃয়মান শরীরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে ছিল মেয়েটি। এই কি সেই পুরুষ যার প্রতিটি অঙ্গ তার শরীরে কামনার আগুনে ছরিয়ে দিত । সেই দৃঢ়, বলিষ্ঠ সুঠাম শরীর এখন নরম, পৃথুল । এ সে নয় । এ কিছুতেই সে হতে পারেনা ।এক অজানা ভয় মেয়েটিকে গ্রাস করল । সহসাই আবার ফিরে এল লোকটি । পকেটে হাত গলিয়ে বলল- আমি কি ধূমপান করতে পারি । তা হলে হয়ত আমার মাথাটা একটু পরিস্কার হবে ।

মেয়েটির পাশে বসে পাইপে তামাক ভরছে । বেশ মনে আছে সে সব দিনেও তার আঙ্গুলগুল কাঁপত । সে বেশ অবাক হয়েই ভাবত, এমন একজন স্বাস্থবান পুরুষ তার আঙ্গুল এত কাঁপে কেন । কিন্তু এখন তো তার হাত এত কাঁপছে, যে হাত থেকে কতক তামাক মাটিতে পরে গেল ।

জানেন আমার অনেক আইনি কারবার আছে । আইন কানুন এত গোলমেলে ব্যাপার, উকিলদের আমি এত করে বোঝাতে চাই – কিন্তু ওরা কিছুতেই বুঝতে পারেনা আমি ঠিক কি চাইছি ।


বসে বসে তার বকবকানি শোনে মেয়েটি । এই হাত সে কতবার গভীর প্রেমে চুম্বন করেছে, এই চোখের তারায় কতবার হাড়িয়ে গেছে । তবু এ সে নয় । এক ভয়ানক নিস্তব্ধতা তাকে ঘিরে ধরেছে । লোকটি অন্ধের মতন মাটি হাতরাচ্ছে আর তামাক কুড়াচ্ছে আর এক সীমাহীন যন্ত্রনার মধ্যে সে বসে আছে , কেন কিসের আশায় ! তাকে থাকতে হবে , তাকে এর শেষ দেখতে হবে । একবার ঐ চোখে তাকে খুঁজে পাবার শেষ চেষ্টা করতে হবে ।

কিছুক্ষনের মধ্যেই লোক্টি উঠে দাঁড়ায় । আমি যাই । প্যাঁচা আসছে । ওর নাম প্যাঁচা নয় কিন্তু আমি ডাকি – স্বরযন্ত্রকারীর মতন নিচু গলায় কথা গুল বলে সে । দেখি আসছে কিনা ।

মেয়েটি উঠে দাঁড়ায় , তার সামনে সুবেস, সুঠাম, সৈনিক সুলভ এক অভিজাত যুবা-পুরুষ ; তার অতীত, তার একমাত্র প্রেম । মেয়েটি নির্মিশেষ তাকিয়ে থাকে, দেখে আর দেখে – যদি সে একবারের জন্যও তাকে চিনতে পারে , যদি লোকটির মধ্যে তার পুরাতন প্রেমিকের কনামাত্র সে খুঁজে পায় ।

একাকী, নিশ্ব হৃদয় , সে অসহায় ভাবে বলে ওঠে – আমাকে চিনতে পারছ !

এবার তার দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে আসে লোকটি । কিন্তু সে দৃষ্টিতে কোনো পরিচিতি নেই । সে দৃষ্টি কোন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের নয়, সে এক অদ্ভুত নির্বোধ দৃষ্টি ।

তার মুখের কাছে মুখ নামিয়ে এনে , একাগ্র, সুতীব্র দৃষ্টি পাত করে বলে -হ্যাঁ আমি চিনিত তোমাকে । ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়ে উন্মাদ লোকটির দৃষ্টি অনুসরন করে মেয়েটি ।

ঠিক এ সময় দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে আর একটি লোক – আজ বাগান খোলা নেই ।

উন্মাদ লোক্টি ফিরে তাকায় ।নিচু হয়ে মাটি থেকে তামাক তুলে নিয়ে পরিচারক বলে –আপনার তামাক ফেলে যাচ্ছিলেন বাবু ।

এই ভদ্রমহিলা আমার বন্ধু । আমি এনাকে আজ দুপুরে খাবার আমন্ত্রন জানাচ্ছিলাম ।

মেয়েটি পিছন ফিরে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল । তাকে পালাতে হবে, এই গোলাপ, এই বাগান, ঐ পোড়ো বাড়ি তার অন্ধকার জানালা , এই সব ফেলে তাকে পালাতে হবে । দ্রুত পায়ে সেই নুড়ি পথ পেড়িয়ে বড় রাস্তায় এসে গেলেও সে তার হাঁটার গতি কম করল না । রুদ্ধশ্বাসে প্রায় ছুটে পথ অতিক্রম করে নিজের শয়ন কক্ষে এসে সে স্থির হল । তার সমস্ত সত্ত্বাকে কে জেন ফালা ফালা করে কেটেছে – তাকে বোধহীন , চিন্তাশক্তিরহিত করে ছেড়েছে । খাটে বসে সে জানলায় বাইরে তার শুণ্য দৃষ্টি মেলে দিল । যে সুন্দরী আইভি লতা জানলার বাইরে দোল খাচ্ছিল, তাকে সে দেখেও দেখলনা । দূর সমুদ্রের উপর সুর্যের আলো পড়ে এক অপরুপ মায়াজালে ঢেকে রাখেছে । স্বামী ফিরে এসেছেন ।বাগানে তার চলাফেরা আর বাক্যালাপ শুনতে পেল ।স্বামীটির কিছুটা যেন বিষন্ন পদক্ষেপ ভিতরে এসেও আবার বাগানের দিকে ফিরে গেল । কিছুক্ষন পরে বেশ সপ্রভিত, সচেতন ভাবে স্বামীটি দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল ।

স্বামীর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসল মেয়েটি । একটু থমকে, বেশ অধৈর্যভাবে জিগ্যাসা করল তার স্বামী -

কি ব্যাপার , শরীর খারাপ নাকি !
না তো – এখন এ সব কথা তার একটু ও ভাল লাগছিল না ।
ক্রুদ্ধ এবং বিস্মিত দৃষ্টি মেলে আবার জিগ্যাসা করল যুবা-পুরুষ্টি – কি ব্যাপার !

কিছু নয় ।

বার কয়েক পায়চারি করে জানলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল । বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জিগ্যাসা করল – কারু সঙ্গে দেখা হয়েছে নাকি ?

চেনা কারুর সঙ্গে নয় ।

মেয়েটির এই ব্যাবহার ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠেছে । তার কি কোনো মুল্যই নেই । কেউ নয় সে । অসহ্য রাগে তার হাত মুস্টি বদ্ধ হয়ে উঠল । না আর নয়, সে ঘুরে দাঁড়িয়া প্রশ্ন করল -

কিছু একটা হয়েছে যাতে তুমি বিচলিত, তাই না!

নাতো কিছুই হয়নি ।তার স্বামীটির অস্তিত্ব তার কাছে এখন অসহনীয়, বিরক্তিকর ।

রাগে স্বামীটির গলার রগ ফুলে উঠল কিন্তু রাগের কোনো সঙ্গত কারন না থাকায় সে রাগ চেপে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল ।

মেয়েটির প্রায় সকল অনুভুতি লোপ পেয়েছে ।যেটুকু অবশিস্ট ছিল তা তার স্বামীর প্রতি অসহনীয় বিদ্বেষে পরিনত হয়েছে । স্বামীর উপস্থিতি ই তার কাছে যন্ত্রনাদায়ক এখন ।

বসে বসে সে বুঝতে পারে নিচে রাত্রির খাবার দেওয়া হয়েছে ।ডিনারের বেলের টিং টং শব্দ-ও তার কানে আসে । কিন্তু সে যেন চলতশক্তিরহিত । অবশেষে স্বামীর ডাকাডাকিতে নিচে এসে খেতে বসে ।

খাবার টেবিলে তার স্বামী কথা বলার অনেক চেস্টা করে, যেন কিছুই হয়নি । কিন্তু নিস্ফল প্রয়াস । স্বামীর কন্ঠ স্বর এখন তার কাছে বিষতুল্য, অসহ্য বিরক্তিকর ।নিঃশব্দে দ্রুত খাওয়া শেষ করে সে তার শয়ন কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় ।কারন স্বামীর প্রতিটি প্রশ্ন তার ক্ষত স্থানে প্রবেশ করে যেন তাকে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করছে ।অসহনীয় ক্রোধ এবং অসহায় অপমানের তীর যুবাপুরুষ্টির অন্তরাত্মাকে বিদ্ধ করতে থাকে । তার স্ত্রী তাকে নীচ চোখে দেখে এই বোধ তার হৃদয় কে কালিমায় ভরিয়ে তোলে ।সঠিক না জানলেও বুঝতে তার আর বাকি নেই তার স্ত্রী তাকে ভালবাসেনা, কোনোদিনো বাসেনি ।সে যেন তাকে সহ্য করে মাত্র , অন্তরের কোনো টান নেই । সে সামান্য খনি শ্রকিক মাত্র ছিল , আর তাই বোধ হয় তার স্ত্রীর কাছে তার কোনো মুল্য নেই , এই বোধ তাকে এক হীনমন্যতায় ভোগায় ।এ সব না না কারনে তার মন স্ত্রীর প্রতি বিরুপ হয়ে ওঠে ।

তাদের শয়ন কক্ষের দিকে ফিরে চলল । ভারাক্রান্ত , ত্রস্ত হৃদয়ে মেয়েটি সেই পায়ের শব্দ অনুসরন করছিল । বাইরে থেকে দরজা খোলার চেষ্টা করে, একবার দুবার, তিনবার, দরজা খোলেনা ।

তুমি কি দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে ? মৃদু কন্ঠে জিগ্যাসা করে যাতে মিসেস কিটস জানতে না পারেন ।

হ্যাঁ, একটু দাড়াও ।

পাছে দরজা ভেঙ্গে ফেলে এই ভয় দরজা অগত্যা খুলে দেয় মেয়েটি । কিন্তু তার মন তিক্ততায় ভরে ওঠে – তাকে কেন একটু একা থাকতে দিচ্ছেনা ।

জানলায় পিঠ দিয়ে , মুখে পাইপ চেপে জিগ্যাসা করল – কি হয়েছে !

মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মেয়েটি অনুনয় করল – আমাকে একটু একা থাকতে দাও ।

অপমানে সারা মুখ কাল হয়ে উঠেছে – তবু বলল – তোমার কিছু একটা হয়েছে তাই না !

হ্যাঁ , কিন্তু তারজন্য তুমি আমাকে বিরক্ত করতে পারনা ।

আমি তোমাকে বিরক্ত করতে আসিনি । কি হয়েছে তোমার ?

কন্ঠে ঘৃণা ও বিষ ঢেলে সে চেঁচিয়ে উঠল – তা জেনে তোমার কি হবে ।

কোথায় যেন একটা তার কেটে গেল , সুর কেটে গেল । ভীষণ চমকে তার হাত থেকে চুরুট পড়ে যাচ্ছিল, সে কোনরকমে সামলে নিয়ে , পোষাক থেকে তামাক ঝেড়ে ফেলে মুখ তুলে স্ত্রীর দিকে তাকাল ।
ছাইরঙ্গা ফেকাসে বিকৃত মুখে মুখে সে বলল – আমি জানতে চাই ।

কেউ কারু দিকে সোজা সুজি তাকাতে পারছেনা । স্বামীর প্রতি যতই বিদ্বেষ বোধ করুক, সে বুঝতে পেরেছিল তাকে আর ঠেকান যাবেনা । তারি ঘুরে দাঁড়িয়ে সে তার স্বামীর উপর পুর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল-

তোমার সে কথা জানার কোনো অধিকার আছে কি?

এহেন অপমানের আঘাতে যুবা-পুরুষ্টির চোখদুটি যন্ত্রনাক্লিষ্ট হয়ে ঊঠল । তার স্বামীর সেই আহত দৃষ্টি ও বেদনার্ত মুখশ্রী ক্ষনেকের জন্য মেয়েটির হৃদয়কেও আপ্লুত করলেও তার এই দুর্বলতাকে বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা । জোর করে নিজেকে কঠিন করে নিল, সে তো তার স্বামীকে কোনদিন ভালবাসেনি, আজ ও ভালবাসেনা ।

আঘাত করার অভিপ্রায় তার যেন আরো সুদৃঢ় হল – তুমি জান নিশ্চয় আমি এখানে থাকতাম ।

উত্তরে নির্বাক মাথা হেলায় যুবক ।

সে সময় আমি মিসেস টরিল হলের গৃহ সঙ্গীনি ছিলাম । মিসেস হল আর রেক্টর বন্ধু ছিলেন । আরচি রেক্টরের একমাত্র পুত্র । এই খানে একটু থামল সে। তার শুভ্র পোষাক টানটান করতে কঠিন স্বরে শুরু করল আবার -

আরচি তখন সেনাবিভাগে কাজ করত । অবশ্য পরে সে সেনাবিভাগ থেকে সেচ্ছাবসর নেয় ।আমরা পরস্পর কে খুব ই পছন্দ করতাম ।

খেলাচ্ছলে এই গর্হিত আচরনের বিবরন দেওয়া, যুবকের ছেলেটির শিরা উপশিরায় যেন ক্রোধের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছিল ।

কত বয়স ছিল তার ?

কখন, আমি যখন ওকে প্রথম দেখি, নাকি যখন ও চলে গেল !

যখন তোমাদের প্রথম দেখা হয় ।

দেয়ালের দিকে চোখ রেখে মেয়েটি বলে তখন ওর বয়স ছিল চব্বিশ । তারমানে এখন ওর বয়স একত্রিশ, না না বত্রিস হবে । কারন আমার বয়স এখন উনত্রিশ আর আর্চি আমার থেকে ঠিক তিন বছরের বড় ।

তারপরে কি হল ?

আমরা পরস্পরের বাকদত্ত্ব ছিলাম একবছর । কারুকে কিছু বলা হয়নি । তারা কেউ কিছু জানত কিনা জানিনা, কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ এ নিয়ে কোন কথা কখনো বলেনি । তার পরে তো ও চলে গেল ।

প্রচন্ড রাগে হিতাহিত ঞ্জানশূণ্য, এক হিংস্র বন্য প্রাণীর মতন শিকার লক্ষ করে ঝাঁপিয়া পড়ল – ও তোমাকে ল্যাং মাড়ল তার পরে?

ছোট্ট উত্তর – হ্যাঁ ।

ক্ষিপ্ত, বাকশূণ্য দুটি বণ্য প্রাণী যেন সাময়ীক যুদ্ধ বিরতি ঘোষনা করেছে ।

তারপরে হঠাত-ই সে আফ্রিকায় যুদ্ধ করতে চলে গেল । অসহনীয় বেদনায় তার কন্ঠস্বরে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব এনে দিল যেন – ঠি যেদিন তোমার সংগে আমার দেখা সেদিনি মিস বার্চ তার অসুস্থতার কথা জানান । তার দু-মাস পরে তার মৃত্যু সংবাদ পেলাম ।

এটা তারমানে আমাকে বাগাবার আগের ঘটনা !

কোন উত্তর না পেয়ে আরো হিংস্র হয়ে উঠল স্বামীটি – বিশ্রীভাবে চোখ সরু করে বলে উঠল – তাই তোমার প্রেমিকের বাড়ি দেখতে গেছিলে। তাই সকালে একা হতে চেয়েছিলে ,

এখন ও স্ত্রীকে নিরুত্তর দেখে অসহিষ্ণুভাবে দরজা ছেড়ে জানলার সামনে তার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়াল । তার হাত পিছমোড়া করে রাখা, তার সেই কর্কশ হাতের দিকে তাকিয়ে মেয়েটির মনে হল তার স্বামী কি সাধারন, কত অকিঞ্চিতকর তার চেহারা ।

অত্যন্ত অনিচ্ছায় যেন বাধ্য হয়ে স্ত্রীর দিকে দৃষ্টি ফেরায় – কতদিন ধরে চালিয়েছিলে ওর সংগে !

কি বলতে চাও – ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করে মেয়েটি ।

আমি বলছি, কতদিন ধরে চালিয়েছিলে তোমাদের প্রেমলীলা !

এর কনো উত্তর দেবার প্রবৃত্তি হচ্ছিলনা তার । তবু কিছুক্ষন পর বলল –জানিনা চালিয়েছে বলতে কি বোঝাতে চাইছ তুমি । প্রথম সাক্ষাতেই আমি তাকে ভালবেসে ফেলি । তার দশ মাস পরে আমি মিস বার্চের কাছে কাজ করতে যাই ।

তোমার কি মনে হত সে তোমায় ভালবাসত –যেন ভেংচে উঠল।

আমি জানি সে আমায় ভালবাসত ।

তোমাকে ফেলে সে পালাল কেন তবে ?

এর পর কিছুটা সময় নিঃশব্দে অতিবাহিত হল – এ সময়টুকু যেন বিদ্বেষ ও বেদনায় ভরা একখানি পেয়ালার ।

ভীত বরফশীতল কন্ঠে প্রশ্ন করে ছেলেটি – তোমরা কতদূর এগিয়েছিলে ?

খোঁচাটা তীব্রতার জন্য প্রস্তত ছিল না মেয়েটি । স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চিতকার করে উঠল মেয়েটি –তোমার এই ঘুরিয়ে প্রশ্ন করাকে আমি ঘৃণা করি । আমরা পরস্পরকে ভালবাসতাম , আমাদের বিয়ের ঠিক ছিল এবং আমরা প্রেমিক প্রেমিকা ছিলাম , সন অর্থে, সর্ব্বত ভাবেই ।তুমি কি ভাবলে তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা । আর তাছাড়া তোমার তো এ ব্যাপারে কিছুই বলার থাকতে পারেনা । তোমাকে জানার অনেক আগেই আমরা পরস্পর কে জানি ।

প্রেম ভালবাসা, প্রেমিক প্রেমিকা , ন্যাকামীর চূড়ান্ত । রেগে আগুন হয়ে ভেংচে উঠল তার স্বামী ।
এতে আমার কিছু বলার নেই মানে ! তুমি বলতে চাও তুমি যা ইচ্ছা করে বেড়িয়েছ, তার পরে যখন সে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তখন আমার কাছে এসেছ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আর এ বিষয় আমার কিছু বলার নেই !

ও পক্ষের নীরবতা তাকে পুনরায় প্রশ্ন করতে বাধ্য করে –
তুমি বলতে চাও তোমরা সব কিছু করেছ ?

কেন, তোমার কি মনে হয় !

স্বামীটি কেন্নর মতন গুটিয়ে এতটুকুন । আশ্চর্য বিয়ের আগে আমাকে একবার বলার ও প্রয়োজন মনে করলে না ।

তুমি তো আমাকে জিগ্যাসা করনি ।

জিগ্যাসা করা প্রয়োজন বলে ভাবিনি ।

তাহলে ! তোমার তো এটা ভাবা উচিত ছিল ।
যেন এক অসহায় শিশুর মতন , শূণ্য হৃদয়ে দাঁড়িয়া । এক একটি কথা, এক একটি ঘটনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে , হৃদয় যন্ত্রনাক্লিস্ট, বেদনায় পরিপূর্ন ।
আমি তাকে আজ দেখেছি । সে মৃত নয়, সে সম্পুর্ণ উন্মাদ ।

কি ভীষন ভাবে চমকে উঠল তার স্বামী – পাগল !

সম্পুর্ণ উন্মাদ । নিজের অজান্তেই যেন বলে চলেছে মেয়েটি ।

তোমাকে চিনতে পেরেছে !
না ।

এক নতুন চোখে সে তার স্ত্রী কে আজ আবিস্কার করল । পরিস্থিতির প্রকৃত তাৎপর্য তার কাছে এবার পরিষ্কার , মেয়েটির বেদনা এবং আঘাতের গভীরতা কতটা অতলস্পর্শী তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল যেন । তাদের দুজনার মধ্যখানে কোন অচ্ছেদ্য, অলংঘনীয় ব্যাবধান বাসা করে আছে তার সম্যক পরিচয় পেল সে আজ । এখানে রাগ, অভিমান, বিদ্বেষের কোন যায়গা নেই । একটি বিশাল অতলান্ত গভীর খাদের দু-ধারে দুই নারী ও পুরুষ তাদের আপন আপন বেদনা , বঞ্চনা, যন্ত্রনা ও বিদ্বেষএর গোলকে আবৃত যেন । এই অপরিসীম বেদনা এবং বঞ্চনার সাগর পেড়িয়ে সমতলে আসা অসাধ্য না হলেও অবশ্যই সুকঠিন এবং অসীম সময় সাপেক্ষ । এই নারীর কাছে এই মুহুর্তে তার কোনো স্থান নেই । তাকে একা রেখে ধীরেপায়ে শয়নকক্ষ ত্যাগ করল তার স্বামী ।

Monday, February 15, 2010

কেন বৃদ্ধাশ্রমে মা



ফুটপাথে তোমার দেখে চমকে উঠেছিলাম ।
মাগো তোমার কাপড় কেন ছেঁড়া !
যে হাত পেতেছ – কত শীর্ণ ,
ফুলে আছে নীল নীল শিরা ।

দু-চার আনা দয়া করে, কেউ বা দুটাকা দেয়,
আমি দেব দশ ।
আহারে, খাওনি বুঝি সারা দিন,
দোকানী বুড়িমাকে দাও তো রুটি
আরো কিছু মিষ্টির রস ।

বিস্ময়ে হতবাক তুমি খাও পেট ভরে –
আমি বিব্রত ! প্রণাম কোরোনা করে জোরে।

প্রতিদিন নানা পথে দান করি –
সে কি শুধু পুণ্য সঞ্চয় –
হয়ত তাই, হয়ত বা নয় ।

পথে যত ভিখারিনী বুড়ি
তাদের কষ্ট দেখে বুক ফেটে যায় ।
বৃদ্ধাশ্রমে মা আমার থাকে কেন –
উত্তর পাবেনা তবু –সে জিঞ্জাসার !

Friday, February 12, 2010

কথামালা


ছোটো ছোটো দুঃখ্য, ছোটো ছোটো সুখ
সাজিয়ে রেখে মনের এলবামে ,
অবসর মত খুলে খুলে দেখি ।
দুঃখ্যের তীব্রতা, সুখের শিহরণ ,
আলতো বুক ছুঁইয়ে যায় ,
হারিয়ে যাওয়া কত কথারা
স্ম্রৃতির পর্দায় ফুটে ফুটে ওঠে ।
সবুজ শ্যাওলা ধরা স্যাঁত স্যাঁতে দেয়ালে
আমার কথাকে আমি সাজাবনা ।
মন-আমার চলে যাবে
কালের গ্বহরে ।
তোমাদের বুকে সঁপে যেতে চাই
আমি আমার কথা কে ।

এই বর্তমানে, আমার অন্তরে ,
ডেকে আনি আলো হাসি গান ।
রোদ পেয়ে দুঃখ্য ফুল ঝরে ঝরে পরে ,
সুখপাখি গান গায় চেনা চেনা সুরে ,
হারান দিনের কথা মালা হয়ে
গাঁথা হয় কালির আখরে ।

Thursday, February 11, 2010

জীবন গাড়ির শেষ কামরায়


দাক্ষিনাপণের বেঞ্চে বসে কফি খেলাম আমরা দু-জন
বুড়-বুড়ি ;
সময় বদলে যায়, মানুষ বদলায় না ।
সাম্নের বেঞ্চিক্সে চায়ের কাপে ধঁইয়া উড়িয়ে
কথার ফুলঝুরি জ্বালাচ্ছিল যে ক্-জনা
তরুন-তরুনী, তাভের হাসির তাপে
স্মৃতি সেঁকে নিলাম ।শরীর বদলেছে ,
মন তো বদলায়নি একটুকু ।
বসন্তকেবিনের মোগলাই -কলেজ কেটে ম্যাটিনি
সবি আছে আগের মতন- শুধু নেই পুরান মানুষ ।
চায়ের কাপের উপর- চুরি করে দৃষ্টি বিনিময়
এক চিলতে হাসি -বুকের মধ্যে বেজে ওঠে বাশি
ফেলে আসা দিনের সুরে । চাও কি ফিরে জ়েতে ,
কফির ধোঁইয়ার উপ্অর দু-জোরা চোখ মিলে যায় ,
না না কখোনো নয় ।
তোমাকে ফেলে যাওয়া নেই কোথাও ।
মাঝে মাঝে ফিরে ফিরে দেখা ,
সেই সব সবুজ-কোমল, মাধুরী মেশান
নেশা ধরান দিন গুলো , আর কিছু নয় ।
পাকা চুলে, কোঁচকান চামড়ায়, বেশ আছি
আমরা দু-জন বুড়-বুড়ি ,
জীবন গাড়ির শেষ কামরায় ।

Thursday, February 4, 2010

পাখি

আমার ভিতরে বসে ডানা ঝাপটায় ,

কোন পাখি -কবুতর !

তার বকম বকম ডাকে

ডুবে যায় প্রাণ , উদাসী ব্যাথায় ।

তবু তার ডাক ,

ঘেরে পাকে পাকে.

আমার হিয়াকে -

রাখে বন্দী করে এই ইঁটের পাঁজায় ।

আমার চোখের কোনে ডানা ঝাপটায়

কোন পাখি - সেকি সবুজ টিয়াটি ?

কবে পাবে ছাড়া যাবে উড়ে

সহস্র যোজন দূরে ওই নীল আকাশে ,

ছাড়া কবে যে পাবে সে ।

আমার জীবন জুড়ে বসে আছে কোন পাখি

সে কি তোতা ।

যত কথা তার যেন সেখান বুলিটি ।

নাই হেল-দোল নাই আশা ,

যত ভালবাসা সব ঢেলেছে আগুনে ,

সে আগুনে সেঁকে খায়

চাপ চাপ ব্যাথা ।।

সমুদ্র- হৃদয়

বিশ্বনাথ হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়াল মালতী সেনের কিউবিকেলের সামনে । বলতো মিলিদি এবার কাকে প্রধাণ অতিথি করে আনছি; তুমি ভাবতেও পারবেনা । কমপুটারের খোলা স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে , সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করে মালতী- কেন কাকে আনছিস - আমিতাভ না কি শাহরুখ খান ! কিন্তু বিশ্বনাথ দমবার ছেলে নয়, ছেলেটার অফুরন্ত প্রাণ শক্তি; এতই উচ্ছল, চঞ্চল যে তার উপর রাগ করে থাকা যায় না।

উঁহু হলনা, বললাম না তোমাদের তাক লাগিয়ে দেব। এবার প্রধান অতিথি বিজন রায় দি গ্রেট। কলকাতার ভ্যান গগ - কি ভুল বললাম ? মালতীর শীল্প প্রীতি কারু অজানা নয় এখানে । মালতী মাথা নামিয়ে গভীর মনজোগে তার সামনে খোলা ফাইলে চোখ রাখে ।বুকের ভিতর দামাম বাজছে যেন । কিশোরি মেয়ের মতন রাঙ্গা হয়ে ওঠে মুখ । বিব্রত মালতী কি করবে, কি বলবে, কোথায় মুখ লুকাবে ভেবে পায়না ।


মালতী কে বাঁচায় দীপ্তেন্দু । নিজের জায়গা থেকে চেঁচিয়ে ডাকে - এইযে বিশু খুব তো ভ্যানগগ ভ্যানগগ করছিস, প্রধান অতিথি হলেই চলবে, আর আর্টিস্ট লাগবে না। লোকে গান শুনতে আসবে অনুষ্ঠানে , প্রধান অতিথি রাখ ; আরতি না করে দিয়েছে শুনেছিস। ঐ টাকায় হয় না । নতুন আর্টিস্ট ধর । এখন তো ডুপ্লিকেটের যুগ । তাড়াতাড়ি যা - না হলে অনিক ও ফস্কে যাবে । মালতী হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ।


স্বপ্নের জগতের মানুষ মালতী। সমুদ্র তাকে টানে । সমুদ্রের গভীরতা, তার গাম্ভির্য, তার উদ্দাম উদাসীনতা মালতীর ভালবাসার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে । এই কঠিন বাস্তব জগতে ভালবাসার মতন কোমল, অবাস্তব স্বপ্ন বার বার ভেঙ্গে যায় কাঁচের ঘরের মতন। গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলে মালতী ।
******

মিলি, তোমার ভার আমি নিতে পারবনা, তুমি জানো। বল জাননা ! কেমন একটা রুক্ষ স্বরে বলে অঠে বিজন। বালির উপর পিঠ করে থাকা মালতী কোনো উত্তর করে না ।


তুমি তো জান আমি ছন্নছারা, ঘরছারা, বাউল । এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারিনা আমি । ঘর , সন্সার আমার জন্য নয়। আমি তোমায় সাথে নিয়ে চলতে পারবনা । আমার জীবন, আমার তাত্মা, আমার সবকিছু আমি আমার সৃস্টির জন্য সরিয়ে রেখেছি মিলি, সেখানে তোমার কোনো জায়গা নেই । মিলি, মিলি শুনছ ।

মিলি তার ডান হাতটা বিজনের বুকের বাঁ-দিকে রাখে আস্তে করে , যেন ওজন করছে । মিলির তোখের দিকে তাকিয়ে বিজনের কথা থেমে যায় । সহসাই যেন মিলির দৃষ্টু বিজনের একেবারে বুকের ভিতর প্রবেশ করে তার চলাটা একেবারে থামিয়ে দেয় একটা ব্যাথার মতন আনন্দে তার হৃদয় শিউরে ওঠে । মিলি বুঝতে পেরে হাসে ।

সমুদ্রের এক একটা ঢেউ যেন আরো কাছে এসে যাচ্ছে । এই ঘন বর্ষায় খ্যাপা মিলির টানে সমুদ্রের তীরে ছুটে আসা বিজন মিলির চোখের গভীরে হারিয়ে যায় - 'কি চাও মিলি, কি চাও আমার কাছে;' মনে মনে বলে বিজন ।স্টুডিওতে রাখা ক্যানভাস, তুলি , রঙ, কিছুই এই পাগল করা, বুক থমকে দেওয়া চোখ-দুটোকে ধরতে পারে না। অনেক চেষ্টা করেছে বিজন। ঠিক এমনি একটা ছবি আঁকবে যা দেখে দর্শক হৃদয় ঠিক তারই মতন থমকে যাবে ।- তা হয়না বিজন। ছবির আমি আর তোমার আমি কি এক !'

ভীষণ ভাবে চমকে উঠল বিজন। মিলি কি তার মনের কথাও শুনতে পায়। মিলির শরীরের ছোটোছোটো ঢেউগলো কাছে টানে বিজঙ্কে। ভীষণ আকুল হয়ে বলে ওঠে বিজন- মিলি চল ফিরে যাই। চোরাবালির মধ্যে দুজনে হারিয়ে যাব। শেষ হয়ে যাব দুজনে চিরদিনের মতন। তাই কি চাও তুমি!

বিজনের চিবুকের ভাঁজ একটা আঙ্গুল রাখে মালতী- চোরাবালি নয় বিজন- আমরা দুজনে দুজনের মধ্যে হারিয়ে যাব। যেমন সমুদ্রের ঢেউ সমুদ্রের মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার ওঠে, আবার হারায়। ঠিক তেমনই করে নতুন নতুন করে হারাব দুজনে দুজনের মধ্যে। চেয়ে দেখ বিজন এখানে তুমি আর আমি, ঐ আকাশ আর সমুদ্র। ঢেউ আর বালি, মেঘ আর বৃষ্টি। আর কেউ নেই । চল আমরা আজ প্রথমবার হারিয়ে যাই।

কোথায় হারিয়ে গেলি আবার- সুদর্শনার ডাকে চমকে ওঠে মালতী, হাসে অল্প । ঘরি দেখে এবার, পাঁচটা বাজে। ্টেবিলের কাগজ গুছিয়ে উঠে দাঁড়ায় মালতী। সুদর্শনা ব্যাগ হাতে করেই দাঁড়িয়েছিল। দুজনে গল্প করতে করতে চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের দিকে এগিয়ে যায়। পথে চেনা ফলওলার কাছে এক কেজি আম কেনে মালতী, যা দাম হয়েছে এবার আমের, তবু কেনে মালতী। বুলতু আম বড় ভালবাসে আর মেয়েঅন্ত প্রাণ মালতীর ।

দেখতে দেখতে সান্সকৃতিক অনুষ্ঠানের দিন এগিয়ে আসে। মালতীর অস্থিরতাও বাড়তে থাকে । বিজন কি এখনও তাকে মনে রেখেছে । তার কি মনে আছে এই সংস্থায় মালতী কাজ করে । গত বার বছরে কত কি পরিব্ররতন হয়েছে । মালতীর জীবনে বিমান এসেছে, এসেছে তাদের মিলিত সন্তান বুলতু । বিমান ও মালতীর বিবাহিত জীবন এক কথায় বলা যায় একটি বিপর্যয় । বিমান ও মালতী দু-মেরুর প্রতীক। মালতী কোমল , বিমান কঠিণ, মালতী ভালবাসে কবিতা, ভালবাসে শীল্প, বিমানের মতে কবিতা ভাবাবেগের ট্র্যাশ, শীল্প তার কাছে নিরর্থক । মালতীর প্রিয় গন্ধরাজ, বিমানের পিয় হুইস্কি । সন্ধ্যার পর যখন বিমানের ঘর্মাক্ত শরীর, নেশায় চুড় বস্থায় সোফার ওপর হাত-পা ছড়িয়ে পরে থাকে, মালতীর সারা স্বত্ত্বা যেন ঘৃণায় শিঊরে ওঠে । শরীর সর্বস্ব বিমানের কাছে মালতীর সুন্দর দেহ এক বিরাট আকর্ষন , কিন্তু মালতীর হৃদয় মানেনা । তার প্রাণের অর্ঘ সে অপাত্রে কেমন করে ঢালে ! মালতীর সমর্পন যে অপূর্ন, বিমানের মনে সে সন্দেহ ছুঁএ ছুঁয়ে যায়, কিন্তু এর কারন খোঁজার মতন ধৈর্য বা মানসিকতা কোনটাই তার নেই । এক অর্থে সে সুখী, কারন সে বোধহীন । দীর্ঘ বার বছরে বিমান আরো ভারিক্কী হয়েছে, আরো বেরসিক, আরো সুরাসক্ত, আরো নির্বোধ ।মালতীর জীবনের সব রঙ মুছে গেছে, নিভে গেছে চোখের আলো, ভালবাসার স্বপ্ন বিমানের রুক্ষ স্বভাবের কাছে এসে ভেঙে পরেছে । গত একমাসে বিন্দু বিন্দু জল পরে সে চড়াপরা ভাঙ্গা হৃদয়ে
একটা চেনা সুর ছুঁইয়ে যাচ্ছে । মালতী আবার হারিয়ে যাচ্ছে তার স্বপ্নের জগতে ।

আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিল মালতী, কোন শাড়িটা পড়বে। বুলতু পাশে এসে দাঁড়ায়, তুমি লাল শিফন্টা পর মা। দারুন দেখায় তোমায়। হ্যাঁ, তোর মায়ের তো বয়স বাড়ছেনা কমছে, মন্তব্য করে বিমান । নিঃশ্বব্দে মালতী ঘন শ্যামলা সবুজ রঙের ঢাকাই শাড়িটা বার করে। সারা গায়ে মেরুন বুটি আর ঘন আঁচল। তার সঙ্গে বেছে নেয় মেরুন মিনে করা দুটো সোনার চুড়ি, একটা সরু সোনার চেনের সঙ্গে মেরুন মিনে করা লকেট আর , তেমনই একজোরা দুল । প্রসাধন শেষে যখন উঠে দাঁড়ায় মালতী, মেয়ে বুলতু আবেগে জরিয়ে ধরে মালতীকে। ওমা তুমি কি সুন্দর। মেয়েকে তাড়া দেয় মালতী। দেরী হয়ে যাবে যে, তাড়াতারি জামা ছেড়ে নে দেখি। দুজনেই যাবে কারন বিমান গান বাজনা শুনে সময় নস্ট করার পাত্র নয় । একটা ট্যাক্সি নেয় আজ মালতী। মেয়েকে নিয়ে যখন অনুষ্ঠান সভায় এসে পৌঁছয় তখন সভাপতির ভাষন শুরু হয়ে গেছে । বিশ্বনাথ ছুটে আসে- এত দেরী করে কেন । বিজন রায় এসে গেছেন । সবাই কত অটোগ্রাফ নিলো। বুলতুর মাথায় টোকা মেরে বললে- তোর মা একদম বোগাস। বিজন রায়ের মতন শিল্পীর কদর বোঝেনা । মা-মেয়েকে সামনের সারিয়ে দুট খালি চেয়ারে বসিয়ে দেয় ।

সভাপতির ভাষন শেষ হয়েছে। এবার প্রধান অতিথি বিজন রায়কে কিছু বলতে অনুরোধ করা হল। মালতী তাকিয়েছিল। মাইকের সামনে এসে দাঁড়াল বিজন। সেই চোখ, সেই নাক, সেই ঠোঁঠ, একমাথা চুল এখনও আছে। কিন্তু তাতে সাদার ছোঁয়া লেগেছে। খদ্দরের পাঞ্জাবী আর পাজামা গায়। বয়স বিজনকে ছুঁতে পারেনি। তেমনি ঋজু ভঙ্গি , ্সোজা, পাতলা চেহারা । বিজন রায় কি বললেন কিছু শুনতে পেলোনা মালতী। ওনার বলা বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে। সবাই হাততালি দিচ্ছে। দেউ একজন ছুটে এসে সই নিল একটা । এবার স্টেজ থেকে নেমে চলে যাচ্ছেন বিজন রায়। মালতীর বুকের মধ্যেকার পাঁজর ভেঙ্গে যাচ্ছে । কিন্তু না বিজন রায় এই দিকেই আসছেন। মালতীর সামনে এসে দাঁড়াল বিজন। চোখের কোনায় হাসি। মুখ গম্ভির । তার হাতে একটা প্যাকেট। সেটা মালতীর দিকে এগিয়ে ধরে গম্ভীর স্বরে বলে বিজন- অনেক ধন্যবাদ। আপনার একটা প্রাপ্য ছবি আমার কাছে গচ্ছিত ছিল। আসলটা আমার কাছেই আছে । এটা তার নকল- সেটা দেখে আঁকা । এটা আপনার। যন্ত্রচালিতের মতন হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নেয় মালতী। বিজন রায় বেড়িয়ে গেলেন। সবাই এবার ঘিরে ধরে মালতীকে। বাবা, ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছিল। তুমি তো আচ্ছা মহিলা। অমন একটা লোককে চেন, সে কথা বলনিতো । আরও কত কি। মেয়ে বুলতু মালতীর হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে খুলে ফেলে। একটা ছবি। বিশাল সমুদ্র আর আকাশের মিলন । তীরে বালুর উপর খোলা চুলে বসে এক রমনী। কি গভীর তার চোখের দৃষ্টি, কি আবেগ, কি মায়াময় । বুলতু বলে- ওমা ঠিক যেন তুমি মা, কিন্তু থেকে সুন্দর, আরো অনেক অনেক সুন্দর ।

হারানো ভুলে যাওয়া সমুদ্রের জোয়ার এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মালতীকে, এই পার্থিব জগতের কাছ থেকে, সবার থেকে অনেক অনেক দূরে, এক সমুদ্র হৃদয়ে ।

Thursday, January 21, 2010

প্রেম যখন অবৈধ



অবৈধ,

তাই এত আকর্ষণ,

শুধু দূর থেকে দেখ ,

তাই চাও বন্ধন ,

আমার প্রতি প্রেম নেই ,

প্রেম আছে অন্তরে তোমার

কল্পনার সাথে ,

যদি কাছে পাও

চাইবেনা আমাকে আর ,

সে দুঃখ অপার- তোমার আমার ,

তার চেয়ে এই ভাল

আশার প্রদীপ জ্বাল ,

কর তপস্যা ,

ভিক্ষা চেয়ে ফিরনা আমার কাছে ,

বিরহ-বেদনা ভার লাগে ভাল ,

যতদিন আছে দূরে ,

যদি আস অন্তঃপূরে ,

পাবেনা আমায়

বাহির থেকে দেখো আমায় ,

স্পর্শ কোরো সুরে ।।

Wednesday, January 20, 2010

কেবল আমার ভালবাসা



দূরের থেকে হঠাত দেখলাম

সেও দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাটফর্মে ;

তার এই অসময়ে আসা কেন ,

এ নিয়ে আমার ভাবনা যেন ,

নিভে যাওয়া প্রদীপের জ্বলবার আশা ।

এর নাম ভালবাসা নয় দু-জনার ,

প্রকৃতির মাঝে প্রেম কুঁড়ি হয়ে থাকে ,

মাঝে মাঝে অসময়ে

অঘোষিত তার আগমন ,

শিহরণ তুলে যায় চলে ,

রেশ রেখে যায় ,

মনে হয় এই বেশ ,

তার এই মাঝে মাঝে আসা ,

যার কোনো নেই দায়,

কেবল আমার সেই ভালবাসা ।।


Monday, January 18, 2010

প্রতারক


তোমাকে বিদায় করে এসে দেখি ,

অশ্রু হয় ঘিরেছ আমায় ।
সানাইয়ের সুরে সুরে রক্ত ঝরে পরে ,
বুকের রক্ত মেশে লাল চেলি -জোড়ে ।
গোধুলিএর রঙে রাঙা গোলাপি আকাশ ,
প্রতিচ্ছবি ফেলেনি এখানে ,
এই বুকের ভিতর ।
নীল বিষ ব্যাথা ঠেলে ঠেলে ওঠে ,
।চোখে, মুখে, ঠোটে ,
কুমকুম চন্দন ফোঁটার আড়ালে ,
রঙ মাখা মুখে আর গালে ।
বেনারসী সারী গায়ে বউ হয়ে বসি ।

জীবনের নতুন প্রভাতে ,
প্রতারক আমি ,
উপহার দিতে তাকে ,
এ হৃদয় বাসী ।

Friday, January 1, 2010

রক্ষক - ভক্ষক

আধুনিক মাটি, আনবিক ব্যাধি ভরা,
জরার্জীন গাটি, আঁকা বাঁকাশিরা,
কালেরে লন্ডভন্ড, করেছে এ কি কান্ড
কঙ্কাল করেচে মানুষ,
ভাল ছিল গান্ডীব ধণুষ ।
আত্মীয় কাকে বলি, আত্মা নেই আর ।
আছে শুধু বুভুক্ষুর আর্ত হাহাকার ।
অরে মহাকাল তোর ললুপ রসনা
ফেলে রেখে গেছে কেন জীর্ন বাসনা !
চিতা জ্বলে দূরে আমি সমুখে দাঁড়ায়ে,
চেয়ে চেয়ে দেখি বিশ্ব কি ভাবে হাড়ায়
দয়া, মায়া, ক্ষমা , প্রেম, বিশ্বাস সততা,
দূষণে ঘিরেছে প্রাণ, শুধু চাই যে ক্ষমতা ।
মার, কাটো , শেষ কর, কর বলাতকার ,
কন্যাসম ! তাতে বল যায় আসে কার !
মিথ্যা বোঝার ভার নিয়ে দেহ ঘিরে
নগ্ন অন্তরে দেখ পশু বাস করে ।
ফিরে নাও ফিরে নাও ফিরে নাও এরে,
অট্টহাস্য বিদ্রূপের আছে শুধু ঘিরে ।
বিচার কে করে, কাকে নালিশ বা করে,
পশুর অধম জীব পুলিশের ঘরে ।
এই যদি সভ্যতা, চাই না তা আর,
টেনে আন পথে ওকে
চাই অসভ্য বিচার ।।