আমাদের আপু স্যাম সবাই জেনেছে নাম,
প্রাইজ পেয়েছে ডগ শো এ,
আপু বাবা স্যাম ছেলে, দুইএ মিলে জিতে নিলে
প্রথম দ্বিতীয় ডগ হয়ে ।
ধপ ধপে সাদা লোম, কি নরম কি নরম
সারাদিন চটকাই বসে ।
বাটি বাটি ধুধ খায়, রাত্রে মাংস চায়
মাকে দেখে লেজ নাড়ে কষে ।
আপুর সাহস ভারি, বিড়ালের সাথে আড়ি,
তেড়ে যায় পুষি যদি আসে ।
যত বলি থাম থাম,
আরে ছি ছি রাম রাম,
মেনিটাকে মারবি কে শেষে !
শোনে নাতো কথা কিছু
ছটে শুধু পিছু পিছু ,
পুষিটাকে নিতে হয় কোলে ।
অত যদি তেজ তোর –গায়ে যদি অত জোর ,
মার দেখি হুলোটাকে ফেলে ।
কানকাটা হুলো বেটা, সাদা কালো ডোরা কাটা ,
বাঘের মতন চোখ দুটো ।
রোজ এসে দুধ খায়, মাছ নিয়ে চলে যায়-
দুপুরে যখন বাজে দুটো ।
আপু বলে- ঘেউ ঘ্যাঁকো-
থিক আছে এবার দেখো,
দেখো আমি কত বাহাদুর ।
এমন করব তাড়া, করে দেব পাড়া ছাড়া –
হুলোটাকে করে দেব দূর ।
সেদিন দুপুর বেলা, চলছিল লুডো খেলা
স্যাম এসে দাঁড়াল সেখানে ।
স্যামের সাহস নেই , বিপদ দেখলে তাই
ছুটে এসে জামা ধরে টানে ।
স্যাম আগে চলে ছুটে
পিছে আমি আর গুটে ,
কি জানি কি হয়েছে ঘটনা ।
চুপি চুপি বলি শোনো-
এ ঘটনা কোরোনা রটনা ।
লোম গুলো করে খারা
ফুলিয়ে গোঁফের তোড়া
ঠাস ঠাস চড় মারে হুলো ,
আপু ডাকে ঘেউ ঘেউ,
শোনাচ্ছে মেউ মেউ-
দোহাই আমায় নিয়ে চল ।
আপুকে নিলাম কোলে
স্যাম সাথে সাথে চলে ,
হুলো বেটা খেয়ে এক লাথ,
ডিগবাজি খেলো সাত হাত ।
আপু বাহদুর বীর লজ্জায় নতশির
খাটের তলায় স্থান নিল ।।
Thursday, April 28, 2011
সোনার বাংলা
তিন্তি তিতান তিন্তি তিতান
তিন্তি তিতান তিন্নি ,
ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড়
নাচছে দেখ গিন্নি।
নাঞ্ছে দেখ পুরুত ঠাকুর
নাচছে দেখ ঢাকিটা ,
নাচছে দেখ বাবামশাই
আর কে রইল বাকিটা ।
আর বাকি নেই আর বাকি নেই-
নাচছে দেখ সব্বাই ।
নাচছে কেন সবাই মিলে
ভাবছ তুমি বসে তাই ?
ভেবে ভেবে কুল পাবেনা-
এটা নাচের দেশ যে ,
নেচে নেচে চলে সবাই
দেখতে লাগে বেশ যে ।
ভোটের বাজনা বেজে গেছে
প্রার্থীরা সব ব্যাস্ত ,
রাস্তা জুড়ে নাচন-কাঁদন
লোক জমেছে মস্ত ।
বাবা-মশাই ভোট দিতে যান –
সঙ্গে নিয়ে ছেলের দল –
ভোটটা তুমি যাকেই দেবে-
হবে কি সেই একই ফল ??
হাসপাতালে রোগী মরে-
নেচে বেড়ান ডাক্তার ।
পুলিশ নাচে ঘুষের লোভে,
উকিল পাবে ভাগ তার ।
মন্ত্রী নাচেন ভাষন দিয়ে-
ভীষণ কর্ম-কান্ড ,
দেশ-বিদেশে নেচে বেড়ান ,
শূণ্য তাদের ফান্ডও ।
মন্ত্রি নাচেন, ক্যাডার নাচে
নাচেন যত আমলা ;
ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড়
মরছে সোনার বাংলা ।।
তিন্তি তিতান তিন্নি ,
ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড়
নাচছে দেখ গিন্নি।
নাঞ্ছে দেখ পুরুত ঠাকুর
নাচছে দেখ ঢাকিটা ,
নাচছে দেখ বাবামশাই
আর কে রইল বাকিটা ।
আর বাকি নেই আর বাকি নেই-
নাচছে দেখ সব্বাই ।
নাচছে কেন সবাই মিলে
ভাবছ তুমি বসে তাই ?
ভেবে ভেবে কুল পাবেনা-
এটা নাচের দেশ যে ,
নেচে নেচে চলে সবাই
দেখতে লাগে বেশ যে ।
ভোটের বাজনা বেজে গেছে
প্রার্থীরা সব ব্যাস্ত ,
রাস্তা জুড়ে নাচন-কাঁদন
লোক জমেছে মস্ত ।
বাবা-মশাই ভোট দিতে যান –
সঙ্গে নিয়ে ছেলের দল –
ভোটটা তুমি যাকেই দেবে-
হবে কি সেই একই ফল ??
হাসপাতালে রোগী মরে-
নেচে বেড়ান ডাক্তার ।
পুলিশ নাচে ঘুষের লোভে,
উকিল পাবে ভাগ তার ।
মন্ত্রী নাচেন ভাষন দিয়ে-
ভীষণ কর্ম-কান্ড ,
দেশ-বিদেশে নেচে বেড়ান ,
শূণ্য তাদের ফান্ডও ।
মন্ত্রি নাচেন, ক্যাডার নাচে
নাচেন যত আমলা ;
ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড়
মরছে সোনার বাংলা ।।
বিধান বাবু
একটা দুটো চারটে ছটা শীল পরেছে গোটা গোটা ;
সঙ্গে বৃষ্টি ফোঁটা ফোঁটা ;
গরম তবু গিয়েও যেন যাচ্ছে না ।
বন-বন-বন ঘুরছে পাখা ,জানলা দরজা পরদা ঢাকা
জলের গ্লাসে বরফ রাখা ;
তৃষ্ণা তবু মিটেও যেন মিটছে না ।
গোল গোল পাকিয়ে চোখ , বিধানবাবু করেন রোখ ,
অঙ্কগুলো খাতায় টোক ,
বিশুখোকার মাথায় কিছু ঢুকছে না ।
সোঁদা গন্ধ ঢুকছে নাকে, বাইরে আকাশ ডাকছে তাকে,
আজ কি পড়ায় মনটা থাকে ;
বিধানবাবু কেন যে ছাই বুঝছে না ।
এমন সময় এলেন মা, হাতে নিয়ে গরম চা ,
সঙ্গে আবার সরভাজা ;
বিশুর বুকে বাজছে ছুটির গান ।
চায়ের কাপে চুমুক মেরে, সরভাজাটা মুখে পুরে ,
অঙ্ক খাতা হাতে ধরে ;
বিধানবাবু টানেন বিশুর কান ।
লক্ষীছাড়া দুষ্টু বাঁদর , মনটা কোথায় থাকে রে তোর ,
অঙ্কগুলো মন দিয়ে কর ;
বিধানবাবু ছাড়েন সিংহনাদ ।
বিশুর কুকুর দুষ্টু ভুলো , খাটের তলায় ঘুমিয়ে ছিল ,
চমকে উঠে লম্ফ দিল ;
বিধানবাবু হলেন কুপোকাত ।
সঙ্গে বৃষ্টি ফোঁটা ফোঁটা ;
গরম তবু গিয়েও যেন যাচ্ছে না ।
বন-বন-বন ঘুরছে পাখা ,জানলা দরজা পরদা ঢাকা
জলের গ্লাসে বরফ রাখা ;
তৃষ্ণা তবু মিটেও যেন মিটছে না ।
গোল গোল পাকিয়ে চোখ , বিধানবাবু করেন রোখ ,
অঙ্কগুলো খাতায় টোক ,
বিশুখোকার মাথায় কিছু ঢুকছে না ।
সোঁদা গন্ধ ঢুকছে নাকে, বাইরে আকাশ ডাকছে তাকে,
আজ কি পড়ায় মনটা থাকে ;
বিধানবাবু কেন যে ছাই বুঝছে না ।
এমন সময় এলেন মা, হাতে নিয়ে গরম চা ,
সঙ্গে আবার সরভাজা ;
বিশুর বুকে বাজছে ছুটির গান ।
চায়ের কাপে চুমুক মেরে, সরভাজাটা মুখে পুরে ,
অঙ্ক খাতা হাতে ধরে ;
বিধানবাবু টানেন বিশুর কান ।
লক্ষীছাড়া দুষ্টু বাঁদর , মনটা কোথায় থাকে রে তোর ,
অঙ্কগুলো মন দিয়ে কর ;
বিধানবাবু ছাড়েন সিংহনাদ ।
বিশুর কুকুর দুষ্টু ভুলো , খাটের তলায় ঘুমিয়ে ছিল ,
চমকে উঠে লম্ফ দিল ;
বিধানবাবু হলেন কুপোকাত ।
Sunday, April 24, 2011
জীবন্মুখী ছবি
তোমার বয়স ষোলো
আর আমার বয়স আশি ।
তুমি বুক চিতিয়ে চল –
আমি খুক খুক খুক কাসি ।
তোমার জন্য উঠছে সুর্য
আমার অস্তগামী –
আমার গায়ে ছিন্ন বস্ত্র –
তোমার খানা দামী ।
তোমার চোখের তারায় হাজার
মানিক জ্বালায় আলো ।
আমার এই বৃদ্ধাবাসে –
আকাশ ভরা কালো ।
তবু তুমি-আমি আছি
এক ই সুতোয় বাঁধা –
খানিক জীবন আমার কাছে –
তোমার কাছে আধা ।
তোমার পথ চেয়ে চেয়ে
রোজ কাটাই দিন ।
না আসলে ধুসর , এলে
হয় সে রঙিন ।
তুমি আমার কৈশরের –
জীবনমুখী ছবি –
স্মৃতিটুকুন আছে আর
হারিয়ে গেছে সবি ।।
আর আমার বয়স আশি ।
তুমি বুক চিতিয়ে চল –
আমি খুক খুক খুক কাসি ।
তোমার জন্য উঠছে সুর্য
আমার অস্তগামী –
আমার গায়ে ছিন্ন বস্ত্র –
তোমার খানা দামী ।
তোমার চোখের তারায় হাজার
মানিক জ্বালায় আলো ।
আমার এই বৃদ্ধাবাসে –
আকাশ ভরা কালো ।
তবু তুমি-আমি আছি
এক ই সুতোয় বাঁধা –
খানিক জীবন আমার কাছে –
তোমার কাছে আধা ।
তোমার পথ চেয়ে চেয়ে
রোজ কাটাই দিন ।
না আসলে ধুসর , এলে
হয় সে রঙিন ।
তুমি আমার কৈশরের –
জীবনমুখী ছবি –
স্মৃতিটুকুন আছে আর
হারিয়ে গেছে সবি ।।
Friday, April 15, 2011
তুমি আর আমি শুধু...।
বৈশাখী কালো মেঘ নাকি তোমার চুলের রাশি ;
জানিনা, বুঝিনা আমি
কোনটা বেছে নেব ,
কাকে বেশী ভালবাসি ।
হেমন্তের গান নাকি তোমার না-বলা কথা ,
কাকে চাই নিভৃতে নির্ঘুম রাতে-
আমার হৃদয়ে কার আসনটি পাতা ।
দিগন্তরেখায় মাটি-আকাশের কানাকানি ।
তোমায় আমায় মিল কখোনো হবে না জানি।
কি করে বা হয় ,
তুমি-আমি মিলে গেলে
শুধু যে আমিটি পরে রয় ।
তৃষিত মাটিতে পড়ে বৃষ্টির জল ,
তোমাকে দেখব বলে
মন আমার হয়েছে চঞ্চল ।
তোমায় বোঝেনা কেউ
আর কেউ থাকেনা পাশেতে ,
আমিও চলেছি একা ,
শুধু তোমাকে যা নিয়ে সাথে ।
তুমি মানসী আমার
তুমি আমার কলপনা ।
আমার সর্বস্ব জুরে আছ তুমি ,
তুমি আমার সান্ত্বনা ।
জানিনা, বুঝিনা আমি
কোনটা বেছে নেব ,
কাকে বেশী ভালবাসি ।
হেমন্তের গান নাকি তোমার না-বলা কথা ,
কাকে চাই নিভৃতে নির্ঘুম রাতে-
আমার হৃদয়ে কার আসনটি পাতা ।
দিগন্তরেখায় মাটি-আকাশের কানাকানি ।
তোমায় আমায় মিল কখোনো হবে না জানি।
কি করে বা হয় ,
তুমি-আমি মিলে গেলে
শুধু যে আমিটি পরে রয় ।
তৃষিত মাটিতে পড়ে বৃষ্টির জল ,
তোমাকে দেখব বলে
মন আমার হয়েছে চঞ্চল ।
তোমায় বোঝেনা কেউ
আর কেউ থাকেনা পাশেতে ,
আমিও চলেছি একা ,
শুধু তোমাকে যা নিয়ে সাথে ।
তুমি মানসী আমার
তুমি আমার কলপনা ।
আমার সর্বস্ব জুরে আছ তুমি ,
তুমি আমার সান্ত্বনা ।
বেচারা
বেচারা
...শান্তনু......।
কথায় আছে স্বপ্নবিলাসী। তা সবাই বলে আমাদের বিলাস রায় অরফে মন্টু এই খেতাপ সহজেই অর্জন করতে পারে । ছোটোবেলায় হাফপ্যান্ট পরা অবস্থা থেকেই মন্টুকে দেখেলেই আমরা বলতাম এই যে স্বপ্ন বিলাসী এসে গেছেন । তা মন্টু ঠাট্টা তামাশা গায় মাখতনা কোনোকালেই। স্বপ্ন দেখা অত সোজা নয় বুঝলি, স্বপ্ন দেখতে এলেম দরকার । আমি কি রকম টেকনিকালার স্বপ্ন দেখি তোরা জানিস! শুনলে তোরা হিংসায় কাঁচা পেয়ারা হয়ে যাবি । তোরা হাজার চেস্টা করলেও আমার মতন স্বপ্ন দেখতে পারবিনা, বুঝলি – অনুভুতি দরকার, বুঝলি অনুভুতি – তোদের মতন কেঠো পাজীদের কম্ম নয় ।
কেনরে বেটা ! কি এমন স্বপ্ন দেখিস, যে আমরে দেখতে পারবনা । রতন তো রেগে আগুন ,আর রঙিন স্বপ্ন দেখাটা কি এমন ব্যাপার, এই তো সেদিন আমি দেখলাম লাল সালোয়ার পরে পরী চলেছে রাস.. এয়, এয় শরু হল প্রেমাক্ষান- চুপ- চুপ কর বলছি –আমরা সবাই তেড়ে উঠলাম । সত্যি একে নিয়ে আর পারা যায় না, দেখ না দেখ পরী কে টেনে আনে । তুই বেটা পরীর স্বপ্ন দেখার কেরে ? তোকে পাত্তা দেয়? একবারো তোর দিকে ফিরে তাকায় ? ফেকলু কোথাকার । পরীর স্বপ্ন দেখতে হলে বিমান দেখবে , পরীর সংগে ওর হেভি ইয়ে, পরী এখান দিয়ে যাবার সময় আড় চোখে কেমন তাকায় দেখেছিস বিমানের দিকে ! ছটকু ফোরোন কাটে ।
বেটা বিমানের চামচা , আমাদের ভাল না লাগলেও কেউ কিছু বলিনা । কি করে বলব – বিমানের চেহারাটা দেখলে গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না। এই লম্বা, ইয়া চওরা বুক, একেবারে অরন্যদেব ;আমরা তো সব ছুঁচো ওর কাছে ।আমাদের কি ইয়ে আছে শালা যে পরী বিমানকে ছেড়ে আমাদের দিকে তাকাবে ।
মনে মনে বিমানকে পরীর সামনে এক চড়ে নর্দমায় ফেলে দিলাম । এ ছাড়া আর উপায় কি , আর কি বা করতে পারি । পরী আমাদের পাড়ার সম্পদ । যেমন দেখতে, তেমনি লেখাপড়ায়, তেমনি খেলাধুলায় , এক্কেবারে, সর্বগুনসম্পন্না যাকে বলে ।পাড়ার সব যোয়ান ছেলেদের বুকে পরীর নামে ব্যাথা আছে । আমার ব্যাথাটা অনেক গভীর, অনেক বড় ক্ষত ।এরা সে ব্যাথার কি বোঝে , এক একটা গন্ডার ।পরীর বাড়িতে একমাত্র আমার যাওয়া-আসা আছে, তাই এরা আমাকে অনেকটা সমীহ করে । পরীর ছোটোভাই এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে, তাকে অঙ্কটা পড়াই আমি। আমাদের মধ্যে, ছটকুতো পানওয়ালা, গো-মুখ্যু আর বিমান অর্ধশিক্ষিত টাকাওয়ালা বাপের সুপুত্তুর , স্কুলের দশক্লাসের গন্ডী পাড় হয়নি । রতন গ্র্যাডুএট কিন্তু ওর বাবার সোনার দোকানে বসে । আমি আর মন্টু একসঙ্গে আষুতোষ কলেজ থেকে ফিজিক্সস অনার্স নিয়ে পাশ করে , কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে নাইটে এমবিয়ে করেছি । গত ছ-মাস ধরে বেকার ।
বিমানকে কিছু না বলার আরো কারন আছে ।ওর বাবা শালা প্রমোটার ,অনেক কালো টাকা পকেট সব সময় গরম। কারনে, অকারনে ধার দেয়, রেসটুরেন্টে নিয়ে খাওয়ার । এক্ষুনি দরাজ গলায় বল্ল –চল নবীনায় ম্যাটিনি শো-টা মেরে আসি । বিমান থাকলে আমরা কেউ পকেটে হাত দিই না । আজ আমার মুড নেই ।বললাম –না, রে তোরা যা , আমি আজ যেতে পারবনা ।
কেনরে তোর কি রাজকার্জ আছে ?
তোরা তার কি বুঝবি রে, আকাট মুখ্যুর দল ! আমার আজ একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে। বেশ গর্বের সঙ্গে কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে আমি উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম । মনটা শালা এখন নিমতিত । আমার তো সবি ছিল, শিক্ষা, পরিচয় , চেহারা –সবাই তো বলে আমাকে নাকি অনেকটা হৃতিকের মতন দেখতে । চাকরীও পেতে চলেছি । তবে আমি শালা বিমানের থেকে কম কিসে । যদি না ভগবান মেরে না রাখত । শালার ভগবানের কি আর কোনো কাজ নেই, লোক বেছে বেছে বাঁশ দেওয়া ।আমার ইন্টারভিউ দুপুর আড়াইটে ।এখন বাজে দশটাচল্লিশ , হাতে অনেক সময় । ঘুরে আসবনাকি কবিরাজের কাছ থেকে । শুনলাম বেটার ছেলে ধন্বন্তরী, একটা ট্রাই নেব নাকি!
আরে , আরে, কে রে ধাক্কা মারছিস । চমকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি ,মন্টুটা দাঁত কেলাচ্ছে – হাঁফ নিয়ে বল্ল –কোথায় ইন্টারভিউ রে তোর ! কিছু বলিসনিতো আগে ! আমি ভয়ানক মুখ করে বললাম –যাচ্ছি একটা শুভ কাজে, দিলি তো বাধা শালা আহাম্মক । মারব পাছায় এক লাথি । মুখ কাঁচু মাচু করে মন্টু – রাগ করছিস কেন রে । জানিস তো আমার বাড়ির অবস্থা । ছোট বোনটা শালা রোজ বিনুনি দুলিয়ে, ব্যাগ ঝুলিয়ে আপিস যাচ্ছে । প্রেস্টিজে আলকাতরা । তোর ছোটমামা তো ইনফোসিস এ –একটু বলিস না আমার হয়ে । তুই না আমার হাফ-প্যান্টের ইয়ার ! স্বপ্ন-টপ্ন সব ছাই রঙা হয় গেছে রে , রং-টঙ সব মুছে যাচ্ছে ।থালার মতন গোল মুখটাকে যথা-সাধ্য করুন করল ।
আমি চোখ সরু করে দেখলাম ওকে । বটে, এই নাকি স্বপ্নবিলাসী ।বেটাচ্ছেলে ছ-মাসেই টেকনিকলার থেকে সাদা-কালোতে নেমে এসেছে ।জীবনে রঙ না থাকলে স্বপ্নে দেখেনা যে, সে আবার স্বপ্নের, অনুভবের রেলা নায় ।
আমাকে দেখ, দ্যাখ শালা আমার দিকে তাকিয়ে । আমি স্বপ্নে পরীকে দেখেছি, শালা আমার বিছানায় । আমি পেরেছিরে, স্বপ্নে পেরেছি রে শুয়ার । ঘুমের থেকে উঠে তোদের মতন পা-জামা কাচতে দিতে হয়না রে আমায়, তবু আমি স্বপ্নে পেরেছি রে শালা ।
মন্টুর ঝুলে পরা হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে একরকম আত্মপ্রাসাদে মনটা ভরে উঠল । বোঝো এখন, ভাব শালা, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ কর । আমার মতন ইয়েরা স্বপ্নে করতে পারে কিনা জেনে নে । আমি তো শালা বলেই খালাস । পিছন ফিরে না তাকিয়ে হন হনিয়ে বাস স্টপের দিকে চললাম । বাঁশদ্রোনীর মহুয়া সিনেমা হলের পিছনের গলিতে বাড়ি, সেখানেই রোগী দেখেন ।যাই একবার লাক ট্রাই করে আসি ।
........................
......মন্টু......
যাচ্চলে । কিসের থেকে কি ! এত রাগের কি আছে রে বাবা । মনটা খারাপ হয়ে গেল । আমার ছোট বেলাকার বন্ধু, কিছু আর জানতে আমার বাকি নেই ওর বিষয়ে । করুনা হল আমার, রাগ এল না। আমি জানি তো শান্তনুর ব্যাথাটা কোথায় । বেচারা , স্কুলের শেষের দিকে যখন আমাদের সকলের ঠোঁটের উপর হাল্কা গোঁফের রেখা উঠছে, শরীরের বিশেষ স্থানে বিশেষ আবেদন, গলার স্বর ভাঙ্গা ভাঙ্গা, শান্তনু কেমন যেন অন্য রকম । মেয়েদের শরীর নিয়ে আলোচনায় যোগ দেয় না, মনমরা মতন হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
একদিন আমি চেপে ধরলাম – কি হয়েছে রে শান্তনু , এমন আলাদা আলাদা হয়ে ঘুরিস কেন ? বাড়িতে কোন ঝামেলা হল নাকি আবার । শান্তনুর বাড়িতে নানা অশান্তি । ওরা চার ভাই-বোন । ওদের বাবা ফুটবল প্লেয়ার ছিলেন, কালীঘাট ক্লাবে খেলতেন । একটা প্র্যাকটিস ম্যাচে বুক দিয়ে বল আটকাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন । অনেকদিন বিছানায় শোয়া ছিলেন, কোনরকম রোজগার নেই, সংসার চলেনা । সেই সময় বাবার বন্ধু শান্তনুর পল্লবকাকা এসে ওদের সংসারের হাল ধরলেন । ওদের বাড়িতেই থাকতেন, ওদের মা-কে বৌদি বলে ডাকেন । ভাই-বোনেদের মধ্যে শান্তনু সবথেকে বড়, তাই ওর অনেক কিছুই চোখে পড়ে যা বাকিরা বোঝেই না ।শান্তনু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারল, ওদের মা আর পল্লব কাকার মধ্যে একটা অন্য রকম সম্পর্ক আছে আর সেই নিয়ে বাবার সঙ্গে মার অনেক কথা কাটাকাটিও শুনতে হয়েছে তাকে রাত্রিবেলায় । এখন আমার মনে হয় হয়ত মাসীমার কিছু করার ছিলনা । চারটে ছেলে মেয়ে, অসুস্থ স্বামী, সংসার চলবে কি করে । হয় ঝিগিরি করতে হত নয় তো রাস্তায় নামতে হত, তার চেয়ে অনেক সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন মহিলা । কিন্তু এমন অপমানের জীবন মেসমশাই বেশীদিন সহ্য করতে না পেরে একদিন গলায় দরি দিলেন । কিছুদিন পাড়ায় লোকেদের ফিস-ফাস, ছিছিকার, একদিন থেমে গেল, কিন্তু একটি সরল-সোজা কিশোর মনে একটা বিরাট ধাক্কা । সে সময় শান্তনু বহুদিন আমাদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছে । স্কুল ফেরত আমাদের বাড়ি চলে আসত । ধীরে ধীরে এ-সব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছিল , কিন্তু কেমন যেন অন্তর্মুখী, তিক্ত আর অসহিষ্ণু ।
আচ্ছা মন্টু, একটা কথা জিগ্যাসা করব, কারুকে বলবি না তো ?
কি কথা রে?
কেনরে বেটা, কি কথা না বললে , প্রমিস করবি না ।
কি মুশকিল, এত চটে যাস কেন । এমনি জিজ্ঞাসা করলাম , না বলবনা কারুকে, কি হয়েছে বলনা ।
শোন, শুধু তোকে বলছি, আর কেউ জানেনা ,যদি কারুকে বলেছিস, তোকে কিন্তু গলা টিপে মেরে ফেলব বলে দিচ্ছি ।
এবার আমার ভয় এসে গেল । কেনরে তুই কি কোনো মার্ডার-টার্ডার ্প্ল্যান করেছিস নাকি ! না ভাই আমাকে বলতে হবেনা, তুই আর কারুকে বল বরঞ্চ । আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি ক্রিমিনাল নই ।আমার ওপর আমার মা, বোন তাকিয়ে আছে, তুই আর কিছু বলিস না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ । আমি একটু ভিতু প্রকৃতির মানুষ ।
শান্তনু কেমন অবাক হয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে রইল । তুই ভাবলি কি করে আমি কারুকে
মার্ডার করতে পারি । যাঃ শালা , ভাগ এখান থেকে , তুই আমার বন্ধু হবার যোগ্যই নস। ভিতুর ডিম কোথাকার, স্বপ্ন দেখেই জীবন কাটিয়ে দে, জীবনের কঠিন সমস্যার কথা তোকে কি বলব, আমি ই পাগল যে তোর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলাম ।
এবার আমি শান্তনুকে জরিয়ে ধরলাম, আমার ভুল হয়ে গেছে রে আমাকে ক্ষমা করে দে ।বল না । তুই তো জানিস তোর কোন কথা আমি কারুকে কোন দিন ও বলিনি । বল জানিস না?
শান্তনু কেমন ভাবালু মুখে তাকিয়ে ছিল । এবার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে নিচু স্বরে জিগ্যাসা করল – তোর পুরুষাঙ্গ কি শক্ত হয় ? প্রথমটা আমি ঠিক বুঝিনি –কিছুক্ষন ওর দিয়ে তাকিয়ে থেকেও যখন দেখলাম শান্তনু মাটির থেকে চোখ তোলেনা , হঠাত কথাটার অর্থ আমাকে যেন চাবুক মারল ? কেন রে, তোর বুঝি...মানে তুই কি...আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না ।
হ্যাঁ আমার মনে হচ্ছে আমি কোনদিন পারবনা ।
আমি হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে বললাম –না না তা কেন ভাবছিস ! হয়ত তোর এখনো সময় হয়নি, মানে অনেকের তো পরেও হয় । তুই ডাক্তার দেখা না ।
কোন কথা না বলে শান্তনু ফিরে গেল । ওর যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল – বেচারা ।
এ বয়সে এসে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শান্তনুর গন্ডোগোলটা হয়ত শারীরিক নয়, মানসিক । ছোটবেলা থেকে যে এত কিছু দেখেছে, এমন কি এক রাত্রে নাকি পল্লবকাকা আর মাসীমাকে একসঙ্গে এক বিছানাতেও দেখেছিল, সেই রাত্রির পরে পনেরদিন বাড়ি ফেরেনি রাত্রি বেলায় । আমার মা বাবা খুব স্নেহ করতেন, কিচ্ছুটি জিজ্ঞাসাও করেন নি, বাড়ি ফিরতেও বলেন নি । একদিন নিজে থেকেই বাড়ি ফিরেছিল । আমার খুব সন্দেহ হয়, অনেকবার ভেবেছি ওকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে বলব, কিন্তু যা রাগী, বলতে সাহস হয় নি ।
হ্যাঁ ‘বেচারা’ আমি এখনো ওর অপ্সৃয়মান শরীরের দিকে তাকিয়ে এই কথাই ভাবছিলাম ।
...পরী...
শান্তনুদা কেমন ভাল মানুষের মতন থাকে । দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানেনা । কিন্তু আমি জানি, সবকটা ছেলের মধ্যে সব চেয়ে চালু ছেলে । ভাইকে পড়াতে আসে যখন কতবার যাই ঘরে, চা নিয়ে, জলখাবার নিয়ে, মাঝে মাঝে আমার নিজের অঙ্কটা দেখাবার ছল করে, মুখের দিকে তাকিয়েও দেখেনা ।লাজুক লাজুক মুখে টাবিলের দিকে তাকিয়ে কথা বলে । কেন বাবা আমি কি বাঘ না ভাল্লুক । নাকি আমাকে দেখতে খারাপ । রাগে গা আমার জ্বলে যায় । দেখ বাবা বিস্বামিত্র, তোমার ধ্যান আমি ভাঙ্গাবই । এ আমার প্রতিজ্ঞা । ঈশশ...আমাকে উপেক্ষা !
ছটকুর পানের দোকানের সামনে আড্ডা মারা হচ্ছে । কি করে যে ওর মতন এমন শিক্ষিত ,মার্জিত ছেলে বিমানের মতন একটা গুন্ডার সঙ্গে আড্ডা মারে কে জানে ! বিমান তো আমাকে বিরক্ত করে মারল । বদমাশ কোথাকার । ওর সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করা যায়, শারীরিক হয়য়া যায়, কিন্তু প্রেম- ম্যা গো । বাবার টাকা আছে , মনে করেছে সবাই কে টাকা দিয়ে কিনে নেবে । মন্টুদাকে ধরতে হবে, ওর সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব । মন্টুদারও যেন কেমন কেমন ভাব ।ছোটবেলা থেকে দাদা বলে ডাকি, দাদার মতনই ভাবি ,ওর বোন লাবনী ,যদিও আমার থেকে দু-বছরের বড়, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।ওর কাছেই শান্তনুদার সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি । ওর জন্য আমার ভারি কষ্ট হয় । কেমন দুঃখের জীবন । আমার ভীষণ ইচ্ছে করে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করি, ভালবাসি , ওর সব দুঃখ, সব কষ্ট ভাগ করে নিই । আমার শান্তনু । একদিন ওকে আমার করে ছারবই । আমার জেদ তো জানেনা ।
ঐ তো শান্তনু আসছে এদিকে, ডাকব নাকি । ও শান্তনুদা কোথায় যাচ্ছ ? একবার তাকাও,
এখানে তো আর আমাকে অস্বীকার করতে পারবেনা বাবু, মনে মনে বলি ।
ওর থতমত ভাব দেখে আমার ভীষন মজা লাগছে ।
এই তো একটা ইন্টারভিউ আছে ?
কটার সময় ?
আড়াইটে ।
বাবা , সে তো অনেক সময় বাকী । চলনা চা খাবে ? এসনা প্লীজ । তোমার ইন্টারভিউ কোথায় গো ?
ক্যামাক স্ট্রীট ।
তাই নাকি ? চলনা আমরা জীবনকাকুর দোকানে চা-তেলে ভাজা খেয়ে নিই । আমি সেই সকালে বেড়িয়েছি, জান ! ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেছে । এস এস । শান্তনুর হাতটা ধরে এগিয়ে গেলাম । বাপরে বাপ কি ঠান্ড হাত । এই বয়সী ছেলের এমন ঠান্ড হাত হয় নাকি ?
আমাদের দেখে জীবনকাকু একটু অবাক হয়ে গেল দেখছি । কিরে তোরা দুজনে ? কি চাই ।
জীবন কাকু ভীষন ক্ষিদে পেয়ে গেছে । শান্তনুদাকে আমি ধরে এনেছি , ভাই কে পড়াতে গেছিল , একটু মিথ্যে কথা বলতে হল , আড় চোখে দেখলাম শান্তনুকে, মুখটা কি একটু লাল ? বাড়িতে মা ছিলনা, চাপাতা শেষ । ভাবলাম তোমার দোকানে চা খেয়ে যাই । এক প্লেট তেলেভাজা ও দিও ।
আমি এক তরফা অনেক কথা বলে গেলাম । তিনি নিরুত্তর । বিরক্তির একশেষ । চা তেলেভাজা শেষ, এবার কি করা । রাস্তায় নেমে একটু চাপা হেসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , কি হোল কি, এত চুপ চাপ । আমি কি এতই খারাপ যে একটা কথাও বলতে ইচ্ছে করেনা । এবার দেখলাম পাথর গলেছে ।
নানা , তা কেন । কোনদিন তো এরকম কাছে আসনি , তাই অবাক হয়েগেছিলাম । তার উপর তুমি আবার বিমানের ইয়ে ।বিমান রেগে গেলে আবার খুব মুশকিল কিনা ।
আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল । কে বলেছে আমি বিমানের ইয়ে । কে বলেছে বল শীগগিরি । আরে আরে এত রাগ করছ কেন । ছটকুর দোকানে শুনলাম কিনা, তাই বললাম । না হলে তো ভাল ।
কেন ভাল কেন ? আমার হাসি পেয়ে গেল ।
না মানে, গুন্ডা মতন তো, তাই বলছি আর কি । আমতা আমতা করছে দেখে আমার কষ্ট হল বেশ । ঠিক আছে । এবার থেকে কেউ এরকম বললে বলে দিও , একদম বাজে কথা । কি বলবে তো ?
শান্তুনু নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল – ঠিক আছে ।
তোমার ইন্টারভিউ তো এখনো অনেক দেরী আছে, আমাদের বাড়ি চলনা , একটা অঙ্ক এমন আটকে গেছে কিছুতেই পারছি না । শান্তনুর কোন আপত্তি না শুনে জোর করে নিয়ে এলাম বাড়ি । আমাদের পড়ার ঘরটা চিলেকোঠায় । সোজা উপরে নিয়ে গেলাম । উপরে উঠবার সময় দেখলাম মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত । বাবা তো অফিসে । ছোট ভাই স্কুলে ।
ঘরে ডুকে আমি শান্তনুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম । ভয়ানক চমকে নিজে ছাড়িয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাল । কি করছ ? কি আবার, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যা করে তাই । বলেই আমি শান্তনুর মুখটা টেনে নামিয়ে আনলাম, মুখটা উঁচু করে একটা গভীর চুমু দিলাম ওকে , আমার হাতটা ধীরে ধীরে ওর জামার বোতাম গুলো খুলে দিছিল । লক্ষ করলাম ওর শরীর ক্রমশ নরম হয়ে আসছে, একেবারেই বিমানের মতন নয় । এরকম অবস্থায় বিমানের নিম্নাঙ্গ শক্ত হয়ে আমার শরীরে আঘাত করতে থাকে । বিমানের হাত অস্থির হয়ে ওঠে আমার সারা শরীর জুরে । কিন্তু একি, শান্তনু কেমন নিস্তেজ, নির্বাক দাঁড়িয়ে । আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম । শান্তনুর মুখটা ফেকাশে, নীলচে হয়ে গেছে । আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। মাটির দিকে মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কি হয়েছে শান্তনু ! অন্য কারুকে ভালবাস?
মাথা নাড়ল – না, আমি , আমি পারিনা ।
আমার সর্বাং ঘৃণায় রি রি করে উঠলা । মুখে বললাম- ছিঃ । চলে যাও এখান থেকে, চলে যাও, দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারন করলাম ।
কিছু না বলে মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল । আমার বুকের ভিতর থেকে একটা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে এল । মনে মনে বললাম - বেচারা ।।
...শান্তনু......।
কথায় আছে স্বপ্নবিলাসী। তা সবাই বলে আমাদের বিলাস রায় অরফে মন্টু এই খেতাপ সহজেই অর্জন করতে পারে । ছোটোবেলায় হাফপ্যান্ট পরা অবস্থা থেকেই মন্টুকে দেখেলেই আমরা বলতাম এই যে স্বপ্ন বিলাসী এসে গেছেন । তা মন্টু ঠাট্টা তামাশা গায় মাখতনা কোনোকালেই। স্বপ্ন দেখা অত সোজা নয় বুঝলি, স্বপ্ন দেখতে এলেম দরকার । আমি কি রকম টেকনিকালার স্বপ্ন দেখি তোরা জানিস! শুনলে তোরা হিংসায় কাঁচা পেয়ারা হয়ে যাবি । তোরা হাজার চেস্টা করলেও আমার মতন স্বপ্ন দেখতে পারবিনা, বুঝলি – অনুভুতি দরকার, বুঝলি অনুভুতি – তোদের মতন কেঠো পাজীদের কম্ম নয় ।
কেনরে বেটা ! কি এমন স্বপ্ন দেখিস, যে আমরে দেখতে পারবনা । রতন তো রেগে আগুন ,আর রঙিন স্বপ্ন দেখাটা কি এমন ব্যাপার, এই তো সেদিন আমি দেখলাম লাল সালোয়ার পরে পরী চলেছে রাস.. এয়, এয় শরু হল প্রেমাক্ষান- চুপ- চুপ কর বলছি –আমরা সবাই তেড়ে উঠলাম । সত্যি একে নিয়ে আর পারা যায় না, দেখ না দেখ পরী কে টেনে আনে । তুই বেটা পরীর স্বপ্ন দেখার কেরে ? তোকে পাত্তা দেয়? একবারো তোর দিকে ফিরে তাকায় ? ফেকলু কোথাকার । পরীর স্বপ্ন দেখতে হলে বিমান দেখবে , পরীর সংগে ওর হেভি ইয়ে, পরী এখান দিয়ে যাবার সময় আড় চোখে কেমন তাকায় দেখেছিস বিমানের দিকে ! ছটকু ফোরোন কাটে ।
বেটা বিমানের চামচা , আমাদের ভাল না লাগলেও কেউ কিছু বলিনা । কি করে বলব – বিমানের চেহারাটা দেখলে গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না। এই লম্বা, ইয়া চওরা বুক, একেবারে অরন্যদেব ;আমরা তো সব ছুঁচো ওর কাছে ।আমাদের কি ইয়ে আছে শালা যে পরী বিমানকে ছেড়ে আমাদের দিকে তাকাবে ।
মনে মনে বিমানকে পরীর সামনে এক চড়ে নর্দমায় ফেলে দিলাম । এ ছাড়া আর উপায় কি , আর কি বা করতে পারি । পরী আমাদের পাড়ার সম্পদ । যেমন দেখতে, তেমনি লেখাপড়ায়, তেমনি খেলাধুলায় , এক্কেবারে, সর্বগুনসম্পন্না যাকে বলে ।পাড়ার সব যোয়ান ছেলেদের বুকে পরীর নামে ব্যাথা আছে । আমার ব্যাথাটা অনেক গভীর, অনেক বড় ক্ষত ।এরা সে ব্যাথার কি বোঝে , এক একটা গন্ডার ।পরীর বাড়িতে একমাত্র আমার যাওয়া-আসা আছে, তাই এরা আমাকে অনেকটা সমীহ করে । পরীর ছোটোভাই এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে, তাকে অঙ্কটা পড়াই আমি। আমাদের মধ্যে, ছটকুতো পানওয়ালা, গো-মুখ্যু আর বিমান অর্ধশিক্ষিত টাকাওয়ালা বাপের সুপুত্তুর , স্কুলের দশক্লাসের গন্ডী পাড় হয়নি । রতন গ্র্যাডুএট কিন্তু ওর বাবার সোনার দোকানে বসে । আমি আর মন্টু একসঙ্গে আষুতোষ কলেজ থেকে ফিজিক্সস অনার্স নিয়ে পাশ করে , কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে নাইটে এমবিয়ে করেছি । গত ছ-মাস ধরে বেকার ।
বিমানকে কিছু না বলার আরো কারন আছে ।ওর বাবা শালা প্রমোটার ,অনেক কালো টাকা পকেট সব সময় গরম। কারনে, অকারনে ধার দেয়, রেসটুরেন্টে নিয়ে খাওয়ার । এক্ষুনি দরাজ গলায় বল্ল –চল নবীনায় ম্যাটিনি শো-টা মেরে আসি । বিমান থাকলে আমরা কেউ পকেটে হাত দিই না । আজ আমার মুড নেই ।বললাম –না, রে তোরা যা , আমি আজ যেতে পারবনা ।
কেনরে তোর কি রাজকার্জ আছে ?
তোরা তার কি বুঝবি রে, আকাট মুখ্যুর দল ! আমার আজ একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে। বেশ গর্বের সঙ্গে কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে আমি উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম । মনটা শালা এখন নিমতিত । আমার তো সবি ছিল, শিক্ষা, পরিচয় , চেহারা –সবাই তো বলে আমাকে নাকি অনেকটা হৃতিকের মতন দেখতে । চাকরীও পেতে চলেছি । তবে আমি শালা বিমানের থেকে কম কিসে । যদি না ভগবান মেরে না রাখত । শালার ভগবানের কি আর কোনো কাজ নেই, লোক বেছে বেছে বাঁশ দেওয়া ।আমার ইন্টারভিউ দুপুর আড়াইটে ।এখন বাজে দশটাচল্লিশ , হাতে অনেক সময় । ঘুরে আসবনাকি কবিরাজের কাছ থেকে । শুনলাম বেটার ছেলে ধন্বন্তরী, একটা ট্রাই নেব নাকি!
আরে , আরে, কে রে ধাক্কা মারছিস । চমকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি ,মন্টুটা দাঁত কেলাচ্ছে – হাঁফ নিয়ে বল্ল –কোথায় ইন্টারভিউ রে তোর ! কিছু বলিসনিতো আগে ! আমি ভয়ানক মুখ করে বললাম –যাচ্ছি একটা শুভ কাজে, দিলি তো বাধা শালা আহাম্মক । মারব পাছায় এক লাথি । মুখ কাঁচু মাচু করে মন্টু – রাগ করছিস কেন রে । জানিস তো আমার বাড়ির অবস্থা । ছোট বোনটা শালা রোজ বিনুনি দুলিয়ে, ব্যাগ ঝুলিয়ে আপিস যাচ্ছে । প্রেস্টিজে আলকাতরা । তোর ছোটমামা তো ইনফোসিস এ –একটু বলিস না আমার হয়ে । তুই না আমার হাফ-প্যান্টের ইয়ার ! স্বপ্ন-টপ্ন সব ছাই রঙা হয় গেছে রে , রং-টঙ সব মুছে যাচ্ছে ।থালার মতন গোল মুখটাকে যথা-সাধ্য করুন করল ।
আমি চোখ সরু করে দেখলাম ওকে । বটে, এই নাকি স্বপ্নবিলাসী ।বেটাচ্ছেলে ছ-মাসেই টেকনিকলার থেকে সাদা-কালোতে নেমে এসেছে ।জীবনে রঙ না থাকলে স্বপ্নে দেখেনা যে, সে আবার স্বপ্নের, অনুভবের রেলা নায় ।
আমাকে দেখ, দ্যাখ শালা আমার দিকে তাকিয়ে । আমি স্বপ্নে পরীকে দেখেছি, শালা আমার বিছানায় । আমি পেরেছিরে, স্বপ্নে পেরেছি রে শুয়ার । ঘুমের থেকে উঠে তোদের মতন পা-জামা কাচতে দিতে হয়না রে আমায়, তবু আমি স্বপ্নে পেরেছি রে শালা ।
মন্টুর ঝুলে পরা হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে একরকম আত্মপ্রাসাদে মনটা ভরে উঠল । বোঝো এখন, ভাব শালা, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ কর । আমার মতন ইয়েরা স্বপ্নে করতে পারে কিনা জেনে নে । আমি তো শালা বলেই খালাস । পিছন ফিরে না তাকিয়ে হন হনিয়ে বাস স্টপের দিকে চললাম । বাঁশদ্রোনীর মহুয়া সিনেমা হলের পিছনের গলিতে বাড়ি, সেখানেই রোগী দেখেন ।যাই একবার লাক ট্রাই করে আসি ।
........................
......মন্টু......
যাচ্চলে । কিসের থেকে কি ! এত রাগের কি আছে রে বাবা । মনটা খারাপ হয়ে গেল । আমার ছোট বেলাকার বন্ধু, কিছু আর জানতে আমার বাকি নেই ওর বিষয়ে । করুনা হল আমার, রাগ এল না। আমি জানি তো শান্তনুর ব্যাথাটা কোথায় । বেচারা , স্কুলের শেষের দিকে যখন আমাদের সকলের ঠোঁটের উপর হাল্কা গোঁফের রেখা উঠছে, শরীরের বিশেষ স্থানে বিশেষ আবেদন, গলার স্বর ভাঙ্গা ভাঙ্গা, শান্তনু কেমন যেন অন্য রকম । মেয়েদের শরীর নিয়ে আলোচনায় যোগ দেয় না, মনমরা মতন হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
একদিন আমি চেপে ধরলাম – কি হয়েছে রে শান্তনু , এমন আলাদা আলাদা হয়ে ঘুরিস কেন ? বাড়িতে কোন ঝামেলা হল নাকি আবার । শান্তনুর বাড়িতে নানা অশান্তি । ওরা চার ভাই-বোন । ওদের বাবা ফুটবল প্লেয়ার ছিলেন, কালীঘাট ক্লাবে খেলতেন । একটা প্র্যাকটিস ম্যাচে বুক দিয়ে বল আটকাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন । অনেকদিন বিছানায় শোয়া ছিলেন, কোনরকম রোজগার নেই, সংসার চলেনা । সেই সময় বাবার বন্ধু শান্তনুর পল্লবকাকা এসে ওদের সংসারের হাল ধরলেন । ওদের বাড়িতেই থাকতেন, ওদের মা-কে বৌদি বলে ডাকেন । ভাই-বোনেদের মধ্যে শান্তনু সবথেকে বড়, তাই ওর অনেক কিছুই চোখে পড়ে যা বাকিরা বোঝেই না ।শান্তনু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারল, ওদের মা আর পল্লব কাকার মধ্যে একটা অন্য রকম সম্পর্ক আছে আর সেই নিয়ে বাবার সঙ্গে মার অনেক কথা কাটাকাটিও শুনতে হয়েছে তাকে রাত্রিবেলায় । এখন আমার মনে হয় হয়ত মাসীমার কিছু করার ছিলনা । চারটে ছেলে মেয়ে, অসুস্থ স্বামী, সংসার চলবে কি করে । হয় ঝিগিরি করতে হত নয় তো রাস্তায় নামতে হত, তার চেয়ে অনেক সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন মহিলা । কিন্তু এমন অপমানের জীবন মেসমশাই বেশীদিন সহ্য করতে না পেরে একদিন গলায় দরি দিলেন । কিছুদিন পাড়ায় লোকেদের ফিস-ফাস, ছিছিকার, একদিন থেমে গেল, কিন্তু একটি সরল-সোজা কিশোর মনে একটা বিরাট ধাক্কা । সে সময় শান্তনু বহুদিন আমাদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছে । স্কুল ফেরত আমাদের বাড়ি চলে আসত । ধীরে ধীরে এ-সব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছিল , কিন্তু কেমন যেন অন্তর্মুখী, তিক্ত আর অসহিষ্ণু ।
আচ্ছা মন্টু, একটা কথা জিগ্যাসা করব, কারুকে বলবি না তো ?
কি কথা রে?
কেনরে বেটা, কি কথা না বললে , প্রমিস করবি না ।
কি মুশকিল, এত চটে যাস কেন । এমনি জিজ্ঞাসা করলাম , না বলবনা কারুকে, কি হয়েছে বলনা ।
শোন, শুধু তোকে বলছি, আর কেউ জানেনা ,যদি কারুকে বলেছিস, তোকে কিন্তু গলা টিপে মেরে ফেলব বলে দিচ্ছি ।
এবার আমার ভয় এসে গেল । কেনরে তুই কি কোনো মার্ডার-টার্ডার ্প্ল্যান করেছিস নাকি ! না ভাই আমাকে বলতে হবেনা, তুই আর কারুকে বল বরঞ্চ । আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি ক্রিমিনাল নই ।আমার ওপর আমার মা, বোন তাকিয়ে আছে, তুই আর কিছু বলিস না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ । আমি একটু ভিতু প্রকৃতির মানুষ ।
শান্তনু কেমন অবাক হয়ে আমার দিয়ে তাকিয়ে রইল । তুই ভাবলি কি করে আমি কারুকে
মার্ডার করতে পারি । যাঃ শালা , ভাগ এখান থেকে , তুই আমার বন্ধু হবার যোগ্যই নস। ভিতুর ডিম কোথাকার, স্বপ্ন দেখেই জীবন কাটিয়ে দে, জীবনের কঠিন সমস্যার কথা তোকে কি বলব, আমি ই পাগল যে তোর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলাম ।
এবার আমি শান্তনুকে জরিয়ে ধরলাম, আমার ভুল হয়ে গেছে রে আমাকে ক্ষমা করে দে ।বল না । তুই তো জানিস তোর কোন কথা আমি কারুকে কোন দিন ও বলিনি । বল জানিস না?
শান্তনু কেমন ভাবালু মুখে তাকিয়ে ছিল । এবার চোখ মাটির দিকে নামিয়ে নিচু স্বরে জিগ্যাসা করল – তোর পুরুষাঙ্গ কি শক্ত হয় ? প্রথমটা আমি ঠিক বুঝিনি –কিছুক্ষন ওর দিয়ে তাকিয়ে থেকেও যখন দেখলাম শান্তনু মাটির থেকে চোখ তোলেনা , হঠাত কথাটার অর্থ আমাকে যেন চাবুক মারল ? কেন রে, তোর বুঝি...মানে তুই কি...আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না ।
হ্যাঁ আমার মনে হচ্ছে আমি কোনদিন পারবনা ।
আমি হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে বললাম –না না তা কেন ভাবছিস ! হয়ত তোর এখনো সময় হয়নি, মানে অনেকের তো পরেও হয় । তুই ডাক্তার দেখা না ।
কোন কথা না বলে শান্তনু ফিরে গেল । ওর যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল – বেচারা ।
এ বয়সে এসে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় শান্তনুর গন্ডোগোলটা হয়ত শারীরিক নয়, মানসিক । ছোটবেলা থেকে যে এত কিছু দেখেছে, এমন কি এক রাত্রে নাকি পল্লবকাকা আর মাসীমাকে একসঙ্গে এক বিছানাতেও দেখেছিল, সেই রাত্রির পরে পনেরদিন বাড়ি ফেরেনি রাত্রি বেলায় । আমার মা বাবা খুব স্নেহ করতেন, কিচ্ছুটি জিজ্ঞাসাও করেন নি, বাড়ি ফিরতেও বলেন নি । একদিন নিজে থেকেই বাড়ি ফিরেছিল । আমার খুব সন্দেহ হয়, অনেকবার ভেবেছি ওকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে বলব, কিন্তু যা রাগী, বলতে সাহস হয় নি ।
হ্যাঁ ‘বেচারা’ আমি এখনো ওর অপ্সৃয়মান শরীরের দিকে তাকিয়ে এই কথাই ভাবছিলাম ।
...পরী...
শান্তনুদা কেমন ভাল মানুষের মতন থাকে । দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানেনা । কিন্তু আমি জানি, সবকটা ছেলের মধ্যে সব চেয়ে চালু ছেলে । ভাইকে পড়াতে আসে যখন কতবার যাই ঘরে, চা নিয়ে, জলখাবার নিয়ে, মাঝে মাঝে আমার নিজের অঙ্কটা দেখাবার ছল করে, মুখের দিকে তাকিয়েও দেখেনা ।লাজুক লাজুক মুখে টাবিলের দিকে তাকিয়ে কথা বলে । কেন বাবা আমি কি বাঘ না ভাল্লুক । নাকি আমাকে দেখতে খারাপ । রাগে গা আমার জ্বলে যায় । দেখ বাবা বিস্বামিত্র, তোমার ধ্যান আমি ভাঙ্গাবই । এ আমার প্রতিজ্ঞা । ঈশশ...আমাকে উপেক্ষা !
ছটকুর পানের দোকানের সামনে আড্ডা মারা হচ্ছে । কি করে যে ওর মতন এমন শিক্ষিত ,মার্জিত ছেলে বিমানের মতন একটা গুন্ডার সঙ্গে আড্ডা মারে কে জানে ! বিমান তো আমাকে বিরক্ত করে মারল । বদমাশ কোথাকার । ওর সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করা যায়, শারীরিক হয়য়া যায়, কিন্তু প্রেম- ম্যা গো । বাবার টাকা আছে , মনে করেছে সবাই কে টাকা দিয়ে কিনে নেবে । মন্টুদাকে ধরতে হবে, ওর সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব । মন্টুদারও যেন কেমন কেমন ভাব ।ছোটবেলা থেকে দাদা বলে ডাকি, দাদার মতনই ভাবি ,ওর বোন লাবনী ,যদিও আমার থেকে দু-বছরের বড়, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ।ওর কাছেই শান্তনুদার সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারি । ওর জন্য আমার ভারি কষ্ট হয় । কেমন দুঃখের জীবন । আমার ভীষণ ইচ্ছে করে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করি, ভালবাসি , ওর সব দুঃখ, সব কষ্ট ভাগ করে নিই । আমার শান্তনু । একদিন ওকে আমার করে ছারবই । আমার জেদ তো জানেনা ।
ঐ তো শান্তনু আসছে এদিকে, ডাকব নাকি । ও শান্তনুদা কোথায় যাচ্ছ ? একবার তাকাও,
এখানে তো আর আমাকে অস্বীকার করতে পারবেনা বাবু, মনে মনে বলি ।
ওর থতমত ভাব দেখে আমার ভীষন মজা লাগছে ।
এই তো একটা ইন্টারভিউ আছে ?
কটার সময় ?
আড়াইটে ।
বাবা , সে তো অনেক সময় বাকী । চলনা চা খাবে ? এসনা প্লীজ । তোমার ইন্টারভিউ কোথায় গো ?
ক্যামাক স্ট্রীট ।
তাই নাকি ? চলনা আমরা জীবনকাকুর দোকানে চা-তেলে ভাজা খেয়ে নিই । আমি সেই সকালে বেড়িয়েছি, জান ! ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেছে । এস এস । শান্তনুর হাতটা ধরে এগিয়ে গেলাম । বাপরে বাপ কি ঠান্ড হাত । এই বয়সী ছেলের এমন ঠান্ড হাত হয় নাকি ?
আমাদের দেখে জীবনকাকু একটু অবাক হয়ে গেল দেখছি । কিরে তোরা দুজনে ? কি চাই ।
জীবন কাকু ভীষন ক্ষিদে পেয়ে গেছে । শান্তনুদাকে আমি ধরে এনেছি , ভাই কে পড়াতে গেছিল , একটু মিথ্যে কথা বলতে হল , আড় চোখে দেখলাম শান্তনুকে, মুখটা কি একটু লাল ? বাড়িতে মা ছিলনা, চাপাতা শেষ । ভাবলাম তোমার দোকানে চা খেয়ে যাই । এক প্লেট তেলেভাজা ও দিও ।
আমি এক তরফা অনেক কথা বলে গেলাম । তিনি নিরুত্তর । বিরক্তির একশেষ । চা তেলেভাজা শেষ, এবার কি করা । রাস্তায় নেমে একটু চাপা হেসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , কি হোল কি, এত চুপ চাপ । আমি কি এতই খারাপ যে একটা কথাও বলতে ইচ্ছে করেনা । এবার দেখলাম পাথর গলেছে ।
নানা , তা কেন । কোনদিন তো এরকম কাছে আসনি , তাই অবাক হয়েগেছিলাম । তার উপর তুমি আবার বিমানের ইয়ে ।বিমান রেগে গেলে আবার খুব মুশকিল কিনা ।
আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল । কে বলেছে আমি বিমানের ইয়ে । কে বলেছে বল শীগগিরি । আরে আরে এত রাগ করছ কেন । ছটকুর দোকানে শুনলাম কিনা, তাই বললাম । না হলে তো ভাল ।
কেন ভাল কেন ? আমার হাসি পেয়ে গেল ।
না মানে, গুন্ডা মতন তো, তাই বলছি আর কি । আমতা আমতা করছে দেখে আমার কষ্ট হল বেশ । ঠিক আছে । এবার থেকে কেউ এরকম বললে বলে দিও , একদম বাজে কথা । কি বলবে তো ?
শান্তুনু নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল – ঠিক আছে ।
তোমার ইন্টারভিউ তো এখনো অনেক দেরী আছে, আমাদের বাড়ি চলনা , একটা অঙ্ক এমন আটকে গেছে কিছুতেই পারছি না । শান্তনুর কোন আপত্তি না শুনে জোর করে নিয়ে এলাম বাড়ি । আমাদের পড়ার ঘরটা চিলেকোঠায় । সোজা উপরে নিয়ে গেলাম । উপরে উঠবার সময় দেখলাম মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত । বাবা তো অফিসে । ছোট ভাই স্কুলে ।
ঘরে ডুকে আমি শান্তনুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম । ভয়ানক চমকে নিজে ছাড়িয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাল । কি করছ ? কি আবার, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে যা করে তাই । বলেই আমি শান্তনুর মুখটা টেনে নামিয়ে আনলাম, মুখটা উঁচু করে একটা গভীর চুমু দিলাম ওকে , আমার হাতটা ধীরে ধীরে ওর জামার বোতাম গুলো খুলে দিছিল । লক্ষ করলাম ওর শরীর ক্রমশ নরম হয়ে আসছে, একেবারেই বিমানের মতন নয় । এরকম অবস্থায় বিমানের নিম্নাঙ্গ শক্ত হয়ে আমার শরীরে আঘাত করতে থাকে । বিমানের হাত অস্থির হয়ে ওঠে আমার সারা শরীর জুরে । কিন্তু একি, শান্তনু কেমন নিস্তেজ, নির্বাক দাঁড়িয়ে । আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম । শান্তনুর মুখটা ফেকাশে, নীলচে হয়ে গেছে । আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। মাটির দিকে মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
কি হয়েছে শান্তনু ! অন্য কারুকে ভালবাস?
মাথা নাড়ল – না, আমি , আমি পারিনা ।
আমার সর্বাং ঘৃণায় রি রি করে উঠলা । মুখে বললাম- ছিঃ । চলে যাও এখান থেকে, চলে যাও, দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারন করলাম ।
কিছু না বলে মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল । আমার বুকের ভিতর থেকে একটা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস বেড়িয়ে এল । মনে মনে বললাম - বেচারা ।।
Thursday, April 14, 2011
আশা নিরাশা
প্রতি বছর আশায় আশায় বসে থাকি ,
হয়ত এবার আসবে সে ;
আমার জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে,
জয়মাল্য হাতে নিয়ে করবে বরণ ,
প্রশংসায় পঞ্চমুখ ;
জ্বালিয়ে দেবে হীনমন্যতা ।
আর আমি দর্পে দিশাহারা ,
কারা কারা আমায় করেছিল অবহেলা
করেছিল তুচ্ছ্ব , সেই সব অবাঞ্চিত ,
মুচ্ছ-ধারী দের ঘার ধরে দেব শিক্ষা ।
কিন্তু সে আর আসেনা ,
বছর আসে বছর যায় ।
আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই বসে থাকি –
ওপরে ওঠা আর হয়না আমার ।
কেন যে সে শুধু আমাকেই করে অবজ্ঞা ।
দশক দশক এভাবে চলে গেল
দিন গুনে গুনে ।যেদিন ছিল আমার
সে আজ অনেক পিছনে,
তাকে তাকিয়েও দেখিনি একবার ।
আজ মনে হচ্ছে সে এসেছিল মৃদু পায় ,
প্রতি পলে পলে তুলেছে আমায় ,
আজ এইখানে বসে দেখি ,
নীচে বহু দূরে এখন ও আছে
তারা সুখে ঘর করে ।
ভালোবাসা বেঁধেছে তাদের বিনাডোরে ।
আমি তার আসার আশায়
বসে আছি একা
বৃদ্ধ শকুনের মতন উচ্চ শিখরে ।।
হয়ত এবার আসবে সে ;
আমার জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে,
জয়মাল্য হাতে নিয়ে করবে বরণ ,
প্রশংসায় পঞ্চমুখ ;
জ্বালিয়ে দেবে হীনমন্যতা ।
আর আমি দর্পে দিশাহারা ,
কারা কারা আমায় করেছিল অবহেলা
করেছিল তুচ্ছ্ব , সেই সব অবাঞ্চিত ,
মুচ্ছ-ধারী দের ঘার ধরে দেব শিক্ষা ।
কিন্তু সে আর আসেনা ,
বছর আসে বছর যায় ।
আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই বসে থাকি –
ওপরে ওঠা আর হয়না আমার ।
কেন যে সে শুধু আমাকেই করে অবজ্ঞা ।
দশক দশক এভাবে চলে গেল
দিন গুনে গুনে ।যেদিন ছিল আমার
সে আজ অনেক পিছনে,
তাকে তাকিয়েও দেখিনি একবার ।
আজ মনে হচ্ছে সে এসেছিল মৃদু পায় ,
প্রতি পলে পলে তুলেছে আমায় ,
আজ এইখানে বসে দেখি ,
নীচে বহু দূরে এখন ও আছে
তারা সুখে ঘর করে ।
ভালোবাসা বেঁধেছে তাদের বিনাডোরে ।
আমি তার আসার আশায়
বসে আছি একা
বৃদ্ধ শকুনের মতন উচ্চ শিখরে ।।
Tuesday, April 12, 2011
লাল সেলাম
লাল সেলাম শিকল নাকি ভেঙ্গে গেছে ,
কারাগার আজ মুক্ত ,
তবুও বিচার পায়না শ্রমিক,
আজো সে কেন অভুক্ত ।
তারা শ্রমজীবি, তারা কাজ করে ,
ঘামে ঝরে তার রক্ত ,
এস ভাই সব, এস তার পাশে ,
তার হাত কর শক্ত ।
সারাদিন তার যুদ্ধ চলেছে,
নেই দিন নেই রাত ,
সে হাত ডাকছে তোমাদের আজ
শেষ করো কালো রাত ।
শিকল যে তার হীনমন্যতা,
শিক্ষা পায়ের বেড়ি ;
তাকে মান দাও, শিক্ষিত কর –
আর কেন কর দেরি ।
শ্রমিক তোমার রক্ত ঝরিয়ে
গরেছ আমার দেশ ;
তোমার কাছে আমাদের ঋণ
কখোনো হবে না শেষ ।
আজকের এই প্রখর রৌদ্রে–
তোমার কাছে এলাম –
প্রাণের ভিতর ঝঙ্কারে আজ -
জানাই লাল সেলাম ।
কারাগার আজ মুক্ত ,
তবুও বিচার পায়না শ্রমিক,
আজো সে কেন অভুক্ত ।
তারা শ্রমজীবি, তারা কাজ করে ,
ঘামে ঝরে তার রক্ত ,
এস ভাই সব, এস তার পাশে ,
তার হাত কর শক্ত ।
সারাদিন তার যুদ্ধ চলেছে,
নেই দিন নেই রাত ,
সে হাত ডাকছে তোমাদের আজ
শেষ করো কালো রাত ।
শিকল যে তার হীনমন্যতা,
শিক্ষা পায়ের বেড়ি ;
তাকে মান দাও, শিক্ষিত কর –
আর কেন কর দেরি ।
শ্রমিক তোমার রক্ত ঝরিয়ে
গরেছ আমার দেশ ;
তোমার কাছে আমাদের ঋণ
কখোনো হবে না শেষ ।
আজকের এই প্রখর রৌদ্রে–
তোমার কাছে এলাম –
প্রাণের ভিতর ঝঙ্কারে আজ -
জানাই লাল সেলাম ।
একটি পুরান কথা
কিছুদিন চোখ বুঁজে ছিলাম ;
ভাবলাম যা দেখি, যা শুনি ,
সেটা হয়ত আমার বোঝার ভুল ।
কথা ঘুরিয়ে বলতে গেলে
বলা যায় , একটু উঁচু জায়গা থেকে
নিচের লোক জনকে
সমান চোখে দেখার ভান যাঁরা করেন ,
তাঁরা বড্ড বোকা ;
কারন যখনি নিচের লোকটা
সমকক্ষ ভেবে বসার অপরাধ করে বসবে,
সেদিনি বোঝা যাবে
কার কোথায় অবস্থান ।
জায়গাটা যে উঁচু
সে মান অবশ্য দুনিয়া করে ।
আমি তুমি সহমত না হলেও করবে ,
কারন যত উঁচূ আসন, তত দাম বেশী ।
মেশামিশি টা তাই রাশ টেনে রাখা দরকার ।
কে জানে কখন কার অহমিকায়
আঘাত লেগে যায় । তার দায় এড়াবার
একটি উপায় –বন্ধু বল যে তোমাকে
রাখে বুকে । বন্ধু সেই যাকে নিন্দুকেও ,
তোমার দুঃখের সাথী বলে চেনে ।
বলে রাখা ভাল- বুঝলেও ,
দুনিয়ার চলা মুশকিল এ-সব তত্ত্ব মেনে ।
ভাবলাম যা দেখি, যা শুনি ,
সেটা হয়ত আমার বোঝার ভুল ।
কথা ঘুরিয়ে বলতে গেলে
বলা যায় , একটু উঁচু জায়গা থেকে
নিচের লোক জনকে
সমান চোখে দেখার ভান যাঁরা করেন ,
তাঁরা বড্ড বোকা ;
কারন যখনি নিচের লোকটা
সমকক্ষ ভেবে বসার অপরাধ করে বসবে,
সেদিনি বোঝা যাবে
কার কোথায় অবস্থান ।
জায়গাটা যে উঁচু
সে মান অবশ্য দুনিয়া করে ।
আমি তুমি সহমত না হলেও করবে ,
কারন যত উঁচূ আসন, তত দাম বেশী ।
মেশামিশি টা তাই রাশ টেনে রাখা দরকার ।
কে জানে কখন কার অহমিকায়
আঘাত লেগে যায় । তার দায় এড়াবার
একটি উপায় –বন্ধু বল যে তোমাকে
রাখে বুকে । বন্ধু সেই যাকে নিন্দুকেও ,
তোমার দুঃখের সাথী বলে চেনে ।
বলে রাখা ভাল- বুঝলেও ,
দুনিয়ার চলা মুশকিল এ-সব তত্ত্ব মেনে ।
সুনীতা
সুনীতা
সুনীতা, ও সুনুমা আমার, কোথায় গেলি রে ! আয় তো এদিকে একবার ।উঃ , আর পারা যায় না ।মা যে কি করে, সারাদিন ডেকেই চলেছে । একটু যে শান্তিতে গল্পের বই পড়ব, তার যো নেই । কী হোলো কি মা, ডাকছ কেন ? সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।বাঃ, বেশ তো লুচি ভাজছ, বেশ সুন্দর ফুলছে দেখছি, দাও তো মা একটা , চিনি দিয়ে খেয়ে দেখি । আরে, আরে ...কি যে করিস ! দেখছিস তো আলুর চরচরিটা চাপান আছে, একটু সবুর কর না । না মা, লুচি দিয়ে চিনি দিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা । তা বলতো ডাকছিলে কেন ? না , বলছিলাম ওপরের ঘরটা একটু দেখে আয়না মা, সম্বিত ফিরল কিনা । মা, এটা তোমার নেহাত বাড়াবাড়ি । দাদা আর বার বছরের বাচ্চাটি নেই, যে স্কুল থেকে ফিরে লুকিয়ে ছাতে গিয়ে ঘুরি ওড়াবে । অফিস যাচ্ছে এখন তোমার ছেলে , গট মট করে বাড়ি ফিরবে হাঁক-ডাক দিয়ে বোঝাবে না, তার মর্জাদা এখন অনেক বেশি । সুনীতা, চুপ কর বলছি । বড্ড বাড় বেড়ে গেছ না , দেব মাথায় এক গাঁট্টা, কখন যে দাদা এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি । ঈশশ...মারো তো দেখি ... আমি কোমরে হাত দিয়ে ঘার বেঁকিয়ে তাকালাম । আচ্ছা আচ্ছ হয়েছে , এবার হাত মুখ ধুয়ে, কাপড় ছেড়ে আয় দেখি বাবা , আমি তোদের জলখাবার টেবিলে রাখছি । দাদা জামা কাপড় ছেড়ে এসে আমরা দুজনে রোজকার রুটিন চালু করি, সেটা হচ্ছে , মা আজ কি কি করেছে আর কি কি করেনি । কি কি করেছের মধ্যে আছে, মা সকাল এগারটা অব্দি না খেয়ে ছিল, আর ডাক্তার বলেছেন মার পেটে আলসার, তাই পেট খালি রাখা চলবে না, সকাল বেলায় তো একেবারেই নয় ; দ্বিতীয়ত, মা অন্তত পক্ষে আট কাপ চা খেয়েছে, যেখানে ডাক্তার বলেছেন সারা দিনে চার কাপের বেশি কিছুতেই নয় । সবার থেকে বড় অন্যায় , মা ভাত খাবার পরে, লুকিয়ে পাশের বাড়ির চারুমাসীর কাছে থেকে দোক্তা পাতা দিয়ে পান খেয়েছে ।
কি কি করেনি ? মা সময় মতন ওষুধ খায়নি । মা সময় মতন স্নান করেনি, সময় মতন খায় নি, দুপুরে একটুও বিশ্রাম নেয় নি......এর পরে চলল ছেলের শাসন । মা তো সব কথাই চুপ চাপ শোনে । মাথা নাড়ে আর বলে, এবার থেকে ডাক্তারের সব কথা শুনে চলব রে খোকা, আর রাগ করিস না । তোদের বাবা কে বলিস না সুনী মা আমার, তিনি বড্ড রাগা রাগি করবেন ।একেই প্রেসার চড়া, তুই কি চাস কোনো ক্ষতি হয়ে যাক ! এমন মায়ের ওপর কি আর রাগ করে থাকা যায় । একটু পরে ফিরলেন বাবা । ও সুনু মা আমার...আয় দেখি কাছে, তোর মুখটা দেখি একটু । ছুটে এলাম । বাবা আদর করে মুখটা তুলে ধরলেন । আহা এমন সরল, সুন্দর মেয়ে আমার কার না কার বাড়ি যাবে । সেখানে কি কেউ তোর কদর বুঝবে রে মা । পরের বাড়ি গিয়ে বুড় ছেলেটাকে ভুলে যাস না রে মা । ওমনি আমার চোখে আষাঢ়-শ্রাবণ । এমন করে বললে কিন্তু আমি বিয়ে করবনা বাবা । এমন সুখের বাড়ি ছেড়ে কি করে যে যাব আমি সত্যি কল্পনা করতে পারিনা । কিন্তু তা বললে কি হয় । আমার বিয়ে তো ঠিক । এই ফাল্গুনের বাইশ তারিকে, রবিবার, গোধুলি লগ্নে । ছেলের নাম রহিত রায় । আমার মনে মনে জপের মালা । এখন থেকেই আমার বুকের মধ্যে এত্ত খানি জায়গা করে নিয়েছে । তার ধারাল নাক, উঁচু কপালের নিভে উজ্জ্বল মর্ম্মস্পর্শি দৃষ্টি, অর্জুনের মতন লক্ষ্যভেদ করেছে । আমার হৃদয় তিরবিদ্ধ মাছের মতন ছটফট করে । কবে তার হাতে সমর্পন করে মুক্তি পাবে সে। তার বাড়ি হাওড়া বাতাইতলা, এখান থেকে অনেক অনেক দূর । কোথায় বালিগঞ্জ ফাঁড়ি আর কোথায় হাওড়া বাতাইতলা । কিন্তু এখন ঐ হাওড়া বাতাইতলা আমার কানে মধু ঢালে , আহা , কি আকর্ষন ঐ জায়গার, যেখানে আমার রহিত থাকে, যেখানে আমাকে সে নিয়ে যাবে । আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি । আচ্ছা রহিত কি এখন আমার কথা ভাবছে ? আমার কথা ভেবে সে কি করছে –মনে মনে আমায় আদর করছে কি? ভাবেই লজ্জায় আর আক অনির্বচনীয় সুখে আমার সারা শরীর কেঁপে ওঠে । দিন এগিয়ে আসে । ও সুনীতা স্যাঁকড়া এসেছে যে আয় দেখি গয়নার ডিসাইন টা দেখে যা । ও তুমি দেখ মা , আমার দেখার দরকার নেই । কি যে বলিস মা, তোর বিয়ে তুই না দেখলে চলবে কেন । আয় আয় মা, তর চুরির মাপ দিয়ে যা । যাই , গিয়ে বসি , আর মনে মনে ভারি লজ্জা করে । দেখ দেকি আমার জন্য আমার বাবা-মার কত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে । ঈশ , আমি যদি একটা চাকরি করতাম , তাহলে আমার বাবার এত কষ্টের টাকা এমন জলের মতন খরচ করতে দিতাম না । শোনো মেয়ের কথা , বাবা মেয়ের বিয়েতে খরচ ফরবে না তো কি বেচারাম সান্নাল করবে ! বেচারাম সান্নাল আবার কে মা? চুপ কর ঐ কথার কথা আর কি! আজ বিকেলে কোথাও বেরস না , সোনাবৌদি আসবে , তোকে নিয়ে বিয়ের সারি কিনতে যাবে । মা গো , বিয়ের জন্য শুধু দুটো সারি কিনবে কিন্তু, বিয়ের আর বৌভাতের । আর সারির কোনো প্রয়োজন নেই । একগাদা টাকা খরচ । কত সারি তো বিয়েতে পাওয়া যাবে মা । চুপ কর তো, তোকে আর পাকামি করতে হবে না। আমাকে সেখাস না সুনী , শুধু দুটো সারী দিলে লোকে যে নিন্দে করবে । তাছাড়া আমার বুঝি কোনো সখ নেই । আমার পাঁচটা নয় দশটা নয়, একটি মাত্র মেয়ে, তার বিয়েতে আমার যথা সাধ্য দেব । কিন্তু দেখ মা , আমার বাবা কে যেন কোথাও ধার না নিতে হয় ।তোমাদের যা যতটুকু আছে , তাই দিয়ে আমাকে বিদায় করবে । আর একটা কথা মা, ও বাড়ি থেকে কিছু পন টন চায় নিতো ? তাহলে কিন্তু আমি বিয়ে করব না । মনে মনে ভয় বুক শুকিয়ে গেল । কি হবে যদি ওরা পন চেয়ে থাকে । আমি রহিত কে ছাড়া কি বাঁচব নাকি ? কিন্তু না , তা তো হয় নি। মা তো হেসেই সারা । কি যে তুই বলিস , ওরা বুঝি তেমন লোক । তোকে যে ওদের খুব পছন্দ । বলেছেন আপনার মেয়েকে এক কাপড়ে বিদায় করলেও আমরা নিয়ে যাব । একটা ভীষন ভার বুক থেকে নেমে গেল ।
সুনীতা মা আমার ওঠ মা, সুর্য উঠতে চলেছে, উঠে বস মা, আমার কোলের কাছে আয়, দই-খৈ খেয়ে নে মা। এর পরে তো সারাদিন উপস । না মা আমার ভাল লাগছেনা । এখন আমি ঐ সব খেতে পারবনা। আর একটু ঘুমাতে দাও মা । দেখ মেয়েকে, ওঠ বাছা , আজ যে তোর বিয়ে । দই-খৈ খাওয়া হল ।
ওরে সাখ বাজা, উলু দে, ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ এসে গেছে যে । ওমা কত বড় মাছ পাঠিয়েছে দেখ । আর কত কি । নে নে তাড়াতাড়ি মেয়ে কে আন, গায়ে হলুদ সেরে ফেলতে হবে । অনেক বেলা হল যে।গায়ে হলুদ সারা হল, কত ছবি উঠল । দুপুর না গড়াতে, সোনাবৌদি এসে হাজির । সুনীতা ওঠ , উঠে বোস তো দেখি, তোকে বৌ সাজতে হবে যে । এর পরে রহিত যে উড়িয়ে নিয়ে যাবে তোকে । সাজা হল । আহা কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে । ওরে ঘোরা ঘোরা সাতপাকে বাঁধতে হবে যে । আর তো ছাড়ান নেই বাবাজীবন, চিরসাথী করে নিয়েছ । মাথার ওপর চাদরটা তোল একটু, তাকাও দু-জনে দেখ দুজনকে, মালা বদল কর । কাঁপা হাতে মালা বদল হল । চোখ তুলে তার চোখের গভীরে আর একবার হারিয়ে গেলাম ।
ফুলসজ্জা ! না কোনো কথা নয় । এমন রাত আমার জীবনে আর আসেনি, আর কোনোদিনও আসবে না। এমন হয় বুঝি এ রাত, এমন মধুর, এমন লজ্জার, এত সুখের । আমি তার দুহাতের মাঝে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলাম যেন । রহিত, আমার রহিত ।
সুনীতা , ও বৌ দেখ তোমার সঙ্গে পাশের বাড়ির বুলা নামের মেয়েটি দেখা করতে এসেছে । তবে আমি সাবধান করে দিচ্ছি । ওকে বেশি পাত্তা দিও না, তেমন সুবিধার মেয়ে নয় । বুঝলে – শাশুরি বোঝালেন । এলাম ভাই তোমার সংগে আলাম করতে । তোমার নাম বুঝি সুনীতা । বাঃ সুন্দর নাম, তেমনি সুন্দর দেখতে তোমায় । বিয়ের দিন আসতে পারিনি, কাজ ছিল । আজ এসেছি , এ নাও একটা ছোট্ট উপহার , ‘চোখের বালি’ । আজ থেকে আমি তোমাকে চোখের বালি পাতালাম । পড়েছ তো রবিঠাকুরের চোখের বালি । আমি দেখলাম একটি শ্যামলা , সুস্ক, রাগী ও অসুন্দর যুবতী । বোসো ভাই । নিশ্চয়, রবিঠাকুরের কোনো গল্প, উপন্যাস আমার না পড়া নেই ভাই । আর ‘চোখের বালি’ তো আমার বিশেষ প্রিয় । যুবতী সামান্য হাসল, হাসলে তাকে বেশ দেখায় । তোমার শাশুরি বলেননি আমার থেকে সাবধান থাকতে । মিথ্যা বলবনা বলে, চুপ করে থাকলাম । রহিত তো অফিস গেছে, তা তোমরা মধু-চন্দ্রিমা করতে কোথায় যাবে ? আমায় সমুদ্র বড় টানে , আমি বললাম । না বাপু সেটা বলতে যেওনা আবার, রহিতের তো পাহাড় পছন্দ, অন্তত আগে তো তাই বলত । জানিনা এখন মত পাল্টেছে কিনা । এ যুবতী সে কথা কেমন করে জানল , সে কথা আমি জানতে চাইলাম না । কিছু এদিল ওদিক কথা, শেষে আজ যাই ,যুবতী চলে যেতে আমার মন বড় অস্থির হল । রাতে বিছানায় দু-হাতের মধ্যে বেঁধে রহিত যখন আময় খুঁজছে , আমি বললাম , তুমি বুঝি পাহাড় ভালবাস ? হঠাত এমন প্রশ্ন কেন , অবাক আর বিরক্ত রহিত আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল । না আজ বুলা এসেছিল কিনা সেই বলল । এবার বিছানা থেকে উঠে সিগারেটে আগুন । তাই নাকি বুলা এসেছিল । কেন, কে আসতে দিল । আর কি বলেছে সে তোমায় ? ওর সঙ্গে আর বেশি কথা বোলো না। মেয়েটা ভাল নয় । সে রাতে এই পর্যন্ত ।
সুনীতা আছে ? না বাপু সে এখন খুব ব্যাস্ত, দেখা হবে না । তুমি আজ এস – আমার শাশুরি মা জানালেন । আমি তো জানলা থেকে তাদের দেখছি , তারা একতলায় সদরে দাঁড়িয়ে । এই তো আমি মা । আমার কাজ হয়ে গেছে, ওকে আসতে বলুন । শাশুরি সরে গেলেন । যুবতী আমার ঘরে । যাক তুমি ডাকলে তাহলে । আমি তো ভাবলাম রহিত তোমাকে বারন করে থাকবে । কেন বলতো , কেন এরা তোমাকে আসতে দিতে চায় না আমার কাছে ? আমি জিজ্ঞাসা না করে পারললাম না । আবার একটা মিস্টি হাসি । আচ্ছা সুনীতা, রহিত তোমাকে খুব ভালবাসে না? ভীষন, আমি অকপটে বললাম , বলে সুখ পেলাম । বুলার হাসিটা এবার সুন্দর লাগল না- তাই বুঝি ? আচ্ছা রহিত যখন তোমায় চুমু দেয়, ওর ডান হাতটা কি তোমার মাথায় চুলে বিলি কাটে ? নাকি ওর এ অভ্যাসটা পাল্টেছে ? আমার বুকে কি কেউ আগুনের শলা বিঁধিয়ে দিল । কষ্টে উচ্চারন করলাম , হ্যাঁ ।
তোমার এখানে এত কি কথা বাপু । বেলা হল সুনীতা যাও স্নান করে নাও । খেতে বেলা হয়ে যাবে যে । বুলা তুমি যাও তো বাপু, বাড়ি যাও এখন । আর এমন হুট বলতে বাড়ি চলে এসনা ।শাশুরির কথায় যুবতী উঠলেন ।সে রাতে যখন রহিত আমায় চুমু দিল , আমি আরষ্ঠ হয়ে আমার চুলে ওর ডান হাতটা খেলা করা অনুভব করছিলাম । শেষ-মেশ , আজ আমার শরীরটা ভাল নেই রুহিত , বলে পাশ ফিরে ঘুমের ভান ।
আমাকে জানতে হবে , ভিতরের ব্যাপারটা জানতে হবে । শাশুরি আজ কালীবাড়ি গেছেন , ফাঁকা বাড়িতে বুলাকে ডেকে আনলাম ।
। আমাকে বলত তুমি রহিতের এত কথা জান কি করে ? হাসিটা কি একটু বিদ্রুপের আজ – কি করে জানি, কারন রহিত আমার, রহিত আমার ছিল , আজ তোমার হয়েছে । আমি রহিতের রক্তের কনিকা কনিকা গুনে দিতে পারি । কেন তবে বিয়ে করনি তাকে? আমার কন্ঠস্বর আমি চিনতে পারলয়াম না । কারন আমি বুঝিনি রহিত লোভী, রহিত লম্পট, রহিত স্বার্থপর । আমাকে নিঃশ্বেস করে গ্রহন করেছে, তারপরে ছিবরে করে ফেলে দিয়েছে , কেন জান ; কারন তার টাকা চাই , সুন্দর বৌ চাই, সোনা চাই , যা আমার বাবা কোনোদিনো দিতে পারবেন না । হতে পারেনা বুলা- আমার বাবা কোনো বর-পন দেন নি । আমি ফুঁসে উঠলাম । তুমি বড্ড সরল, বড্ড বোকা সুনীতা ।পাড়ায় সবাই জানে এরা তোমার বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছে । কুড়ি ভরি সোনা, ফ্রিজ, প্লাসমা টিভি । আরো কত শুনতে চাও ?
তোমার কাছে কেন এলাম জানো সুনীতা । এরা তো পছন্দ করেনা তবু এলাম । তোমাকে একটা জিনিষ দেখাব । ব্লাউজের ভিতর থেকে একটা পুরান দোমরান কাগজ বের হল । দেখ পড়ে, দেখ না । এটা কি বুলাদি ?আমার হাত কাঁপছিল, কিন্তু আমি তবু নিলাম, আমি কাগজ খুললাম, একটা চিঠি, বাংলায় লেখা । প্রেম পত্র , আমার আদরের বুলা, তোমায় ছেড়া আমি আর থাকতে পারছিনা । তোমায় বুকে না ধরতে পারলে আমার যে ঘুম আসেনা রাতে । চল , যাবে আমার সঙ্গে, গ্যাংটক । অফিসের কাজে দুদিনের জন্য যাচ্ছি । কেউ জানতে পারবে না । চলনা দুটিতে ঘুরে আসি । আমাদের হনিমুন টা না হয় অগ্রিম সেরে রাখি । না বললে শুনব না । আসতেই হবে । দূর থেকে ছুঁড়ে দিলাম একটা লম্বা উম...।। তোমার, শুধু তোমার রহিত ।
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও । আর আমার বাড়ি এসনা । আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা । ঠিক যেন রাস্তার পাগল এমন চিল চিৎকার । যুবতীর মুখে-চোখে কি ক্রূঢ় হাসি ।
তুমি আমার বাবার কাছে টাকা নিয়েছ ? কে বলেছে । কেন বুলা । তোমাকে না বারন করেছিলাম আমরা ওর সংগে কথা বলতে । কেন তোমাদের মুখোশ খুলে যাবে বলে ? চুপ কর বলছি । বড্ড সাহস হয়েছে না । আমি ভালর ভাল, খারাপের খারাপ । কি ভেবেছিলে । আমার মতন ইঞ্জিনিয়ার , টপ পোস্টে চাকরী করি, মোটা মাইনে , নিজের বাড়ি , শুধু তোমার রূপ দেখে বিয়ে করেছি । তাবলে টাকা নেবে ? আলবত নেব । একশবার নেব । নেকামী পছন্দ নয় আমার, এস শুতে চলে । না না তুমি রহিত নও, তুমি অন্য কেউ । আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চল । ও বাবা , ও মা , ও দাদাগো , আমাকে বাঁচাও ।
আপনাদের মেয়েকে রেখে গেলাম । ওর যে মাথার অসুখ ছিল সে কথা তো আগে বলেন নি । রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন । না বাবা , সে কি কথা । কি হয়েছে, কি করেছে আমার মেয়ে । বাবা তুমি ওদের সামনে হাতজোর কোরোনা । যেতে দাও । কিন্তু সুনু মা , কি হয়েছে, কেন জামাই এত রাগ করছে বলবি তো ? কিসের রাগ, কোন জামাই । এই লোকটা তোমার জামাই নয় বাবা, এ রহিত নয় । রহিতকে এরা লুকিয়ে রেখেছে কোথাও । ও ঠিক ফিরে আসবে একদিন, এসে আমায় নিয়ে যাবে । ততদিন আমাকে নিজের মত থাকতে দাও ।
ডাক্তারবাবু ভালো লোক । আমাকে বকে না । কিন্তু বড্ড প্রশ্ন করেন ।।আমার কোনো অসুখ নেই যত বলি কেউ শোনেনা । এত্ত এত্ত ওষুধ । খাবনা আমি কোনো ওষুধ খাবনা ।
কত দিন, কত মাস, কত বছর কেটে গেল । আর কেউ ডাকেনা সুনীতা বলে, সুনুমা বলে । কেন ডাকবে আমি যে পাগল । আমি যে বাবার ঘারে এসে চেপেছি । আমি যে বাবা, মাকে লজ্জায় ফেলেছি । এখানে যে দাদা-বৌদি আমাকে আর ভালবাসেনা । আমি যে রহিত কে হারিয়ে ফেলেছি । রহিতের ঠিকানা হারিয়ে গেছে । নাকি বুলার ঠিকানাইয় চলে গেছে । না না তা কি করে হবে । সে তো অন্য রহিত, সে বুলার রহিত, সে আমার রহিত নয় । আমার রহিত আসবে, আমায় নিয়ে যাবে , আমি জানি, আবার আমাকে কেউ ভালবেসে, আদর করে ডাকবে, সুনীতা, সুনু সোনা......
............।
সুনীতা
চমকে উঠলাম । কি কি রহিত! কোথায় তুমি রহিত । কি হয়েছে বলনা আমায়। আবার , আবার, আবার তুমি ডাকলে – কি আকুতি তোমার স্বরে – আমি আসছি । কবে থেকে আমি তোমার এই ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, সারাদিন, সারারাত, নাওয়া, খাওয়া, শোয়া, সব কিছুর ওপাড়ে তোমার ডাক আসবে, আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারনা , তুমি আমার, শুধু আমার । এরা কেউ কিচ্ছু জানেনা । কি বলে জান, বলে তুমি নাকি চলে গেছ অনেক দূরে, আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা আমার কাছে । কি বোকা এরা না! জানেনা তুমি আমার স্বপ্নে আস, আমরা চুপি চুপি কথা বলি । মাঝে মাঝে ওই জানলার ওপারে তুমি এসে দাঁড়াও, আমায় হাতছানি দিয়ে ডাক । কিন্তু যাব কি করে, এরা যে আমায় বন্দী করে রেখেছে এই ঘরে । আজ কেন কেউ বাড়িতে নেই, আমার ঘরের দরজাও খোলা । আমি আসছি , আমি আসছি রহিত । কোনো সারাশব্দ নেই । নিঃশব্দ, নিঃঝুম বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় । আমায় যেতে হবে তোমার কাছে । কোথায় তুমি রহিত । ঐ তো, ঐ দূরে ভীরের মধ্যে মিশে চলেছ । তোমার ধুসর জামা, ধুসর প্যান্ট আমি ঠিক চিনতে পারছি । কেন লুকোচুরী খেলছ আমার সঙ্গে । তুমি ঈশারা করছ আমায় ! হ্যাঁ হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি , আমাদের লুকিয়ে চলতে হবে । তাই না! না হলে যে ওরা জানতে পেরে যাবে ।আমার ঠোঁঠের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে গেল । আর কত দূর রহিত, কত পথ তো হাঁঠলাম । আর কেন, এবার এস কাছে । আমি যে হাঁপিয়ে পড়েছি । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । এই ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে বেড়ে ঢাকের মতন ধক ধক করবে, আমি ভীষন ভয়ে কুঁকরে যাব । রহিত, লক্ষিটি আর দেরি কোরোনা । আমি কোথায়, এটা কোন রাস্তা । এখন কি দুপুর না সন্ধ্যে । সব গুলিয়ে যাচ্ছে । কি করব এখন আমি, না না ভয় পাব না, তুমি তো আছো, লুকিয়ে মজা দেখছ না রহিত ! আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেব । আচ্ছা ঐ ট্রাফিক পুলিশটা কে জিগ্যাসা করব? এটা কোন রাস্তা বলবেন আমাকে, আর এখন কি রাত না দিন সেটাও যদি একটু বলে দেন । কি অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে পুলিশটা কেন কি করেছি আমি ! কি রকম তেড়ে উঠল দেখ , কি রকম ভাবে বলল – যান যান রস্তার ওপারে গিয়ে হাঁটুন । তুমি দূর থেকে দেখছ রহিত আমার অপমান, তবু তুমি সামনে আসবে না! একি রাস্তায় এত রক্ত কেন ! এত লাল রক্ত । কি বলছেন , এটা রক্ত নয়, আবির, আজ দোল । কি কান্ড রহিত আমি ভুলেই গেছি আজ দোল । কত রঙ চার দিকে, সবাই রঙ মেখেছে । খুশির রং আনন্দের রঙ । শুধু আমিই সাদা কাপরে পথে পথে ঘুরছি, এস রহিত, কাছে এস, আমার তোমার রঙে ভরে দাও । কে , কে ডাকছেন আমায়, কে আপনি, আমার কাঁধে হাত রেখেছেন । আপনাকে কি রহিত পাঠিয়েছে । তাইতো বলি, রহিত কি আর আমাকে ফেলে দিতে পারে । নিজে আসতে পারবে না, তাই আপনাকে পাঠিয়েছে বুঝি ? কোথায় যেতে হবে বলুন, কোথায় গেলে রহিতের সঙ্গে দেখা হবে । ঐ ট্যাক্সি করে নিয়ে যাবেন আমাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন না, আমার আর দেরী সইছেনা । ওনারাও যাবেন আমাদের সঙ্গে, রহিতের বন্ধু আপনারা ! বাঃ বেশ, চলুন চলুন , না হলে আবার ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, কিছুতেই রহিতের কাছে যেতে দেবে না । আমার বুকের মধ্যে সানাই বাজছে রহিত, এতদিন পরে তুমি আমায় ডেকে নিলে । কতদিন পরে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি একটু শান্তি পাব আজ । এরা আমায় কেউ ভাল বাসেনা । বলে তুমি নাকি বুলাকে বিয়ে করেছ । কি অদ্ভুত কথা । তুমি কখন আমাকে ছেরে আর কারুকে ভালবাসতে পার নাকি ? সে যে তোমার স্বপ্নেও তুমি ভাবতে পারনা, সে আমি খুব ভাল জানি । মা আমায় আজকাল শুধু বকে আর জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয় , বলে ঘুমো, ঘুমো । কেন আমি কি পাগল যে সারাদিন ঘুমাব । আমি তো তোমার কাছে যাব, এই যেমন আজ যাচ্ছি । একি আপনারা এমন করছেন কেন ? আমার ভীষণ লাগছে যে । রহিত না আপনাদের বন্ধু, আপনাদের আমাকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে , তবে আপ্......উঃ, রহিত, তুমি এখনো আসবেনা ...ও মা গো, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আপনাদের দুটি পায়ে পড়ি , আমাকে রহিতের কাছে নিয়ে চলুন না...রহিত্...।তুমি কেমন ডাক পাঠালে, তুমি কেমন পরীক্ষা নিচ্ছ ? ওমা গো...মাআআআআআআ...
সুনীতা, ও সুনুমা আমার, কোথায় গেলি রে ! আয় তো এদিকে একবার ।উঃ , আর পারা যায় না ।মা যে কি করে, সারাদিন ডেকেই চলেছে । একটু যে শান্তিতে গল্পের বই পড়ব, তার যো নেই । কী হোলো কি মা, ডাকছ কেন ? সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।বাঃ, বেশ তো লুচি ভাজছ, বেশ সুন্দর ফুলছে দেখছি, দাও তো মা একটা , চিনি দিয়ে খেয়ে দেখি । আরে, আরে ...কি যে করিস ! দেখছিস তো আলুর চরচরিটা চাপান আছে, একটু সবুর কর না । না মা, লুচি দিয়ে চিনি দিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা । তা বলতো ডাকছিলে কেন ? না , বলছিলাম ওপরের ঘরটা একটু দেখে আয়না মা, সম্বিত ফিরল কিনা । মা, এটা তোমার নেহাত বাড়াবাড়ি । দাদা আর বার বছরের বাচ্চাটি নেই, যে স্কুল থেকে ফিরে লুকিয়ে ছাতে গিয়ে ঘুরি ওড়াবে । অফিস যাচ্ছে এখন তোমার ছেলে , গট মট করে বাড়ি ফিরবে হাঁক-ডাক দিয়ে বোঝাবে না, তার মর্জাদা এখন অনেক বেশি । সুনীতা, চুপ কর বলছি । বড্ড বাড় বেড়ে গেছ না , দেব মাথায় এক গাঁট্টা, কখন যে দাদা এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি । ঈশশ...মারো তো দেখি ... আমি কোমরে হাত দিয়ে ঘার বেঁকিয়ে তাকালাম । আচ্ছা আচ্ছ হয়েছে , এবার হাত মুখ ধুয়ে, কাপড় ছেড়ে আয় দেখি বাবা , আমি তোদের জলখাবার টেবিলে রাখছি । দাদা জামা কাপড় ছেড়ে এসে আমরা দুজনে রোজকার রুটিন চালু করি, সেটা হচ্ছে , মা আজ কি কি করেছে আর কি কি করেনি । কি কি করেছের মধ্যে আছে, মা সকাল এগারটা অব্দি না খেয়ে ছিল, আর ডাক্তার বলেছেন মার পেটে আলসার, তাই পেট খালি রাখা চলবে না, সকাল বেলায় তো একেবারেই নয় ; দ্বিতীয়ত, মা অন্তত পক্ষে আট কাপ চা খেয়েছে, যেখানে ডাক্তার বলেছেন সারা দিনে চার কাপের বেশি কিছুতেই নয় । সবার থেকে বড় অন্যায় , মা ভাত খাবার পরে, লুকিয়ে পাশের বাড়ির চারুমাসীর কাছে থেকে দোক্তা পাতা দিয়ে পান খেয়েছে ।
কি কি করেনি ? মা সময় মতন ওষুধ খায়নি । মা সময় মতন স্নান করেনি, সময় মতন খায় নি, দুপুরে একটুও বিশ্রাম নেয় নি......এর পরে চলল ছেলের শাসন । মা তো সব কথাই চুপ চাপ শোনে । মাথা নাড়ে আর বলে, এবার থেকে ডাক্তারের সব কথা শুনে চলব রে খোকা, আর রাগ করিস না । তোদের বাবা কে বলিস না সুনী মা আমার, তিনি বড্ড রাগা রাগি করবেন ।একেই প্রেসার চড়া, তুই কি চাস কোনো ক্ষতি হয়ে যাক ! এমন মায়ের ওপর কি আর রাগ করে থাকা যায় । একটু পরে ফিরলেন বাবা । ও সুনু মা আমার...আয় দেখি কাছে, তোর মুখটা দেখি একটু । ছুটে এলাম । বাবা আদর করে মুখটা তুলে ধরলেন । আহা এমন সরল, সুন্দর মেয়ে আমার কার না কার বাড়ি যাবে । সেখানে কি কেউ তোর কদর বুঝবে রে মা । পরের বাড়ি গিয়ে বুড় ছেলেটাকে ভুলে যাস না রে মা । ওমনি আমার চোখে আষাঢ়-শ্রাবণ । এমন করে বললে কিন্তু আমি বিয়ে করবনা বাবা । এমন সুখের বাড়ি ছেড়ে কি করে যে যাব আমি সত্যি কল্পনা করতে পারিনা । কিন্তু তা বললে কি হয় । আমার বিয়ে তো ঠিক । এই ফাল্গুনের বাইশ তারিকে, রবিবার, গোধুলি লগ্নে । ছেলের নাম রহিত রায় । আমার মনে মনে জপের মালা । এখন থেকেই আমার বুকের মধ্যে এত্ত খানি জায়গা করে নিয়েছে । তার ধারাল নাক, উঁচু কপালের নিভে উজ্জ্বল মর্ম্মস্পর্শি দৃষ্টি, অর্জুনের মতন লক্ষ্যভেদ করেছে । আমার হৃদয় তিরবিদ্ধ মাছের মতন ছটফট করে । কবে তার হাতে সমর্পন করে মুক্তি পাবে সে। তার বাড়ি হাওড়া বাতাইতলা, এখান থেকে অনেক অনেক দূর । কোথায় বালিগঞ্জ ফাঁড়ি আর কোথায় হাওড়া বাতাইতলা । কিন্তু এখন ঐ হাওড়া বাতাইতলা আমার কানে মধু ঢালে , আহা , কি আকর্ষন ঐ জায়গার, যেখানে আমার রহিত থাকে, যেখানে আমাকে সে নিয়ে যাবে । আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি । আচ্ছা রহিত কি এখন আমার কথা ভাবছে ? আমার কথা ভেবে সে কি করছে –মনে মনে আমায় আদর করছে কি? ভাবেই লজ্জায় আর আক অনির্বচনীয় সুখে আমার সারা শরীর কেঁপে ওঠে । দিন এগিয়ে আসে । ও সুনীতা স্যাঁকড়া এসেছে যে আয় দেখি গয়নার ডিসাইন টা দেখে যা । ও তুমি দেখ মা , আমার দেখার দরকার নেই । কি যে বলিস মা, তোর বিয়ে তুই না দেখলে চলবে কেন । আয় আয় মা, তর চুরির মাপ দিয়ে যা । যাই , গিয়ে বসি , আর মনে মনে ভারি লজ্জা করে । দেখ দেকি আমার জন্য আমার বাবা-মার কত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে । ঈশ , আমি যদি একটা চাকরি করতাম , তাহলে আমার বাবার এত কষ্টের টাকা এমন জলের মতন খরচ করতে দিতাম না । শোনো মেয়ের কথা , বাবা মেয়ের বিয়েতে খরচ ফরবে না তো কি বেচারাম সান্নাল করবে ! বেচারাম সান্নাল আবার কে মা? চুপ কর ঐ কথার কথা আর কি! আজ বিকেলে কোথাও বেরস না , সোনাবৌদি আসবে , তোকে নিয়ে বিয়ের সারি কিনতে যাবে । মা গো , বিয়ের জন্য শুধু দুটো সারি কিনবে কিন্তু, বিয়ের আর বৌভাতের । আর সারির কোনো প্রয়োজন নেই । একগাদা টাকা খরচ । কত সারি তো বিয়েতে পাওয়া যাবে মা । চুপ কর তো, তোকে আর পাকামি করতে হবে না। আমাকে সেখাস না সুনী , শুধু দুটো সারী দিলে লোকে যে নিন্দে করবে । তাছাড়া আমার বুঝি কোনো সখ নেই । আমার পাঁচটা নয় দশটা নয়, একটি মাত্র মেয়ে, তার বিয়েতে আমার যথা সাধ্য দেব । কিন্তু দেখ মা , আমার বাবা কে যেন কোথাও ধার না নিতে হয় ।তোমাদের যা যতটুকু আছে , তাই দিয়ে আমাকে বিদায় করবে । আর একটা কথা মা, ও বাড়ি থেকে কিছু পন টন চায় নিতো ? তাহলে কিন্তু আমি বিয়ে করব না । মনে মনে ভয় বুক শুকিয়ে গেল । কি হবে যদি ওরা পন চেয়ে থাকে । আমি রহিত কে ছাড়া কি বাঁচব নাকি ? কিন্তু না , তা তো হয় নি। মা তো হেসেই সারা । কি যে তুই বলিস , ওরা বুঝি তেমন লোক । তোকে যে ওদের খুব পছন্দ । বলেছেন আপনার মেয়েকে এক কাপড়ে বিদায় করলেও আমরা নিয়ে যাব । একটা ভীষন ভার বুক থেকে নেমে গেল ।
সুনীতা মা আমার ওঠ মা, সুর্য উঠতে চলেছে, উঠে বস মা, আমার কোলের কাছে আয়, দই-খৈ খেয়ে নে মা। এর পরে তো সারাদিন উপস । না মা আমার ভাল লাগছেনা । এখন আমি ঐ সব খেতে পারবনা। আর একটু ঘুমাতে দাও মা । দেখ মেয়েকে, ওঠ বাছা , আজ যে তোর বিয়ে । দই-খৈ খাওয়া হল ।
ওরে সাখ বাজা, উলু দে, ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ এসে গেছে যে । ওমা কত বড় মাছ পাঠিয়েছে দেখ । আর কত কি । নে নে তাড়াতাড়ি মেয়ে কে আন, গায়ে হলুদ সেরে ফেলতে হবে । অনেক বেলা হল যে।গায়ে হলুদ সারা হল, কত ছবি উঠল । দুপুর না গড়াতে, সোনাবৌদি এসে হাজির । সুনীতা ওঠ , উঠে বোস তো দেখি, তোকে বৌ সাজতে হবে যে । এর পরে রহিত যে উড়িয়ে নিয়ে যাবে তোকে । সাজা হল । আহা কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে । ওরে ঘোরা ঘোরা সাতপাকে বাঁধতে হবে যে । আর তো ছাড়ান নেই বাবাজীবন, চিরসাথী করে নিয়েছ । মাথার ওপর চাদরটা তোল একটু, তাকাও দু-জনে দেখ দুজনকে, মালা বদল কর । কাঁপা হাতে মালা বদল হল । চোখ তুলে তার চোখের গভীরে আর একবার হারিয়ে গেলাম ।
ফুলসজ্জা ! না কোনো কথা নয় । এমন রাত আমার জীবনে আর আসেনি, আর কোনোদিনও আসবে না। এমন হয় বুঝি এ রাত, এমন মধুর, এমন লজ্জার, এত সুখের । আমি তার দুহাতের মাঝে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলাম যেন । রহিত, আমার রহিত ।
সুনীতা , ও বৌ দেখ তোমার সঙ্গে পাশের বাড়ির বুলা নামের মেয়েটি দেখা করতে এসেছে । তবে আমি সাবধান করে দিচ্ছি । ওকে বেশি পাত্তা দিও না, তেমন সুবিধার মেয়ে নয় । বুঝলে – শাশুরি বোঝালেন । এলাম ভাই তোমার সংগে আলাম করতে । তোমার নাম বুঝি সুনীতা । বাঃ সুন্দর নাম, তেমনি সুন্দর দেখতে তোমায় । বিয়ের দিন আসতে পারিনি, কাজ ছিল । আজ এসেছি , এ নাও একটা ছোট্ট উপহার , ‘চোখের বালি’ । আজ থেকে আমি তোমাকে চোখের বালি পাতালাম । পড়েছ তো রবিঠাকুরের চোখের বালি । আমি দেখলাম একটি শ্যামলা , সুস্ক, রাগী ও অসুন্দর যুবতী । বোসো ভাই । নিশ্চয়, রবিঠাকুরের কোনো গল্প, উপন্যাস আমার না পড়া নেই ভাই । আর ‘চোখের বালি’ তো আমার বিশেষ প্রিয় । যুবতী সামান্য হাসল, হাসলে তাকে বেশ দেখায় । তোমার শাশুরি বলেননি আমার থেকে সাবধান থাকতে । মিথ্যা বলবনা বলে, চুপ করে থাকলাম । রহিত তো অফিস গেছে, তা তোমরা মধু-চন্দ্রিমা করতে কোথায় যাবে ? আমায় সমুদ্র বড় টানে , আমি বললাম । না বাপু সেটা বলতে যেওনা আবার, রহিতের তো পাহাড় পছন্দ, অন্তত আগে তো তাই বলত । জানিনা এখন মত পাল্টেছে কিনা । এ যুবতী সে কথা কেমন করে জানল , সে কথা আমি জানতে চাইলাম না । কিছু এদিল ওদিক কথা, শেষে আজ যাই ,যুবতী চলে যেতে আমার মন বড় অস্থির হল । রাতে বিছানায় দু-হাতের মধ্যে বেঁধে রহিত যখন আময় খুঁজছে , আমি বললাম , তুমি বুঝি পাহাড় ভালবাস ? হঠাত এমন প্রশ্ন কেন , অবাক আর বিরক্ত রহিত আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল । না আজ বুলা এসেছিল কিনা সেই বলল । এবার বিছানা থেকে উঠে সিগারেটে আগুন । তাই নাকি বুলা এসেছিল । কেন, কে আসতে দিল । আর কি বলেছে সে তোমায় ? ওর সঙ্গে আর বেশি কথা বোলো না। মেয়েটা ভাল নয় । সে রাতে এই পর্যন্ত ।
সুনীতা আছে ? না বাপু সে এখন খুব ব্যাস্ত, দেখা হবে না । তুমি আজ এস – আমার শাশুরি মা জানালেন । আমি তো জানলা থেকে তাদের দেখছি , তারা একতলায় সদরে দাঁড়িয়ে । এই তো আমি মা । আমার কাজ হয়ে গেছে, ওকে আসতে বলুন । শাশুরি সরে গেলেন । যুবতী আমার ঘরে । যাক তুমি ডাকলে তাহলে । আমি তো ভাবলাম রহিত তোমাকে বারন করে থাকবে । কেন বলতো , কেন এরা তোমাকে আসতে দিতে চায় না আমার কাছে ? আমি জিজ্ঞাসা না করে পারললাম না । আবার একটা মিস্টি হাসি । আচ্ছা সুনীতা, রহিত তোমাকে খুব ভালবাসে না? ভীষন, আমি অকপটে বললাম , বলে সুখ পেলাম । বুলার হাসিটা এবার সুন্দর লাগল না- তাই বুঝি ? আচ্ছা রহিত যখন তোমায় চুমু দেয়, ওর ডান হাতটা কি তোমার মাথায় চুলে বিলি কাটে ? নাকি ওর এ অভ্যাসটা পাল্টেছে ? আমার বুকে কি কেউ আগুনের শলা বিঁধিয়ে দিল । কষ্টে উচ্চারন করলাম , হ্যাঁ ।
তোমার এখানে এত কি কথা বাপু । বেলা হল সুনীতা যাও স্নান করে নাও । খেতে বেলা হয়ে যাবে যে । বুলা তুমি যাও তো বাপু, বাড়ি যাও এখন । আর এমন হুট বলতে বাড়ি চলে এসনা ।শাশুরির কথায় যুবতী উঠলেন ।সে রাতে যখন রহিত আমায় চুমু দিল , আমি আরষ্ঠ হয়ে আমার চুলে ওর ডান হাতটা খেলা করা অনুভব করছিলাম । শেষ-মেশ , আজ আমার শরীরটা ভাল নেই রুহিত , বলে পাশ ফিরে ঘুমের ভান ।
আমাকে জানতে হবে , ভিতরের ব্যাপারটা জানতে হবে । শাশুরি আজ কালীবাড়ি গেছেন , ফাঁকা বাড়িতে বুলাকে ডেকে আনলাম ।
। আমাকে বলত তুমি রহিতের এত কথা জান কি করে ? হাসিটা কি একটু বিদ্রুপের আজ – কি করে জানি, কারন রহিত আমার, রহিত আমার ছিল , আজ তোমার হয়েছে । আমি রহিতের রক্তের কনিকা কনিকা গুনে দিতে পারি । কেন তবে বিয়ে করনি তাকে? আমার কন্ঠস্বর আমি চিনতে পারলয়াম না । কারন আমি বুঝিনি রহিত লোভী, রহিত লম্পট, রহিত স্বার্থপর । আমাকে নিঃশ্বেস করে গ্রহন করেছে, তারপরে ছিবরে করে ফেলে দিয়েছে , কেন জান ; কারন তার টাকা চাই , সুন্দর বৌ চাই, সোনা চাই , যা আমার বাবা কোনোদিনো দিতে পারবেন না । হতে পারেনা বুলা- আমার বাবা কোনো বর-পন দেন নি । আমি ফুঁসে উঠলাম । তুমি বড্ড সরল, বড্ড বোকা সুনীতা ।পাড়ায় সবাই জানে এরা তোমার বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছে । কুড়ি ভরি সোনা, ফ্রিজ, প্লাসমা টিভি । আরো কত শুনতে চাও ?
তোমার কাছে কেন এলাম জানো সুনীতা । এরা তো পছন্দ করেনা তবু এলাম । তোমাকে একটা জিনিষ দেখাব । ব্লাউজের ভিতর থেকে একটা পুরান দোমরান কাগজ বের হল । দেখ পড়ে, দেখ না । এটা কি বুলাদি ?আমার হাত কাঁপছিল, কিন্তু আমি তবু নিলাম, আমি কাগজ খুললাম, একটা চিঠি, বাংলায় লেখা । প্রেম পত্র , আমার আদরের বুলা, তোমায় ছেড়া আমি আর থাকতে পারছিনা । তোমায় বুকে না ধরতে পারলে আমার যে ঘুম আসেনা রাতে । চল , যাবে আমার সঙ্গে, গ্যাংটক । অফিসের কাজে দুদিনের জন্য যাচ্ছি । কেউ জানতে পারবে না । চলনা দুটিতে ঘুরে আসি । আমাদের হনিমুন টা না হয় অগ্রিম সেরে রাখি । না বললে শুনব না । আসতেই হবে । দূর থেকে ছুঁড়ে দিলাম একটা লম্বা উম...।। তোমার, শুধু তোমার রহিত ।
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও । আর আমার বাড়ি এসনা । আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা । ঠিক যেন রাস্তার পাগল এমন চিল চিৎকার । যুবতীর মুখে-চোখে কি ক্রূঢ় হাসি ।
তুমি আমার বাবার কাছে টাকা নিয়েছ ? কে বলেছে । কেন বুলা । তোমাকে না বারন করেছিলাম আমরা ওর সংগে কথা বলতে । কেন তোমাদের মুখোশ খুলে যাবে বলে ? চুপ কর বলছি । বড্ড সাহস হয়েছে না । আমি ভালর ভাল, খারাপের খারাপ । কি ভেবেছিলে । আমার মতন ইঞ্জিনিয়ার , টপ পোস্টে চাকরী করি, মোটা মাইনে , নিজের বাড়ি , শুধু তোমার রূপ দেখে বিয়ে করেছি । তাবলে টাকা নেবে ? আলবত নেব । একশবার নেব । নেকামী পছন্দ নয় আমার, এস শুতে চলে । না না তুমি রহিত নও, তুমি অন্য কেউ । আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চল । ও বাবা , ও মা , ও দাদাগো , আমাকে বাঁচাও ।
আপনাদের মেয়েকে রেখে গেলাম । ওর যে মাথার অসুখ ছিল সে কথা তো আগে বলেন নি । রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন । না বাবা , সে কি কথা । কি হয়েছে, কি করেছে আমার মেয়ে । বাবা তুমি ওদের সামনে হাতজোর কোরোনা । যেতে দাও । কিন্তু সুনু মা , কি হয়েছে, কেন জামাই এত রাগ করছে বলবি তো ? কিসের রাগ, কোন জামাই । এই লোকটা তোমার জামাই নয় বাবা, এ রহিত নয় । রহিতকে এরা লুকিয়ে রেখেছে কোথাও । ও ঠিক ফিরে আসবে একদিন, এসে আমায় নিয়ে যাবে । ততদিন আমাকে নিজের মত থাকতে দাও ।
ডাক্তারবাবু ভালো লোক । আমাকে বকে না । কিন্তু বড্ড প্রশ্ন করেন ।।আমার কোনো অসুখ নেই যত বলি কেউ শোনেনা । এত্ত এত্ত ওষুধ । খাবনা আমি কোনো ওষুধ খাবনা ।
কত দিন, কত মাস, কত বছর কেটে গেল । আর কেউ ডাকেনা সুনীতা বলে, সুনুমা বলে । কেন ডাকবে আমি যে পাগল । আমি যে বাবার ঘারে এসে চেপেছি । আমি যে বাবা, মাকে লজ্জায় ফেলেছি । এখানে যে দাদা-বৌদি আমাকে আর ভালবাসেনা । আমি যে রহিত কে হারিয়ে ফেলেছি । রহিতের ঠিকানা হারিয়ে গেছে । নাকি বুলার ঠিকানাইয় চলে গেছে । না না তা কি করে হবে । সে তো অন্য রহিত, সে বুলার রহিত, সে আমার রহিত নয় । আমার রহিত আসবে, আমায় নিয়ে যাবে , আমি জানি, আবার আমাকে কেউ ভালবেসে, আদর করে ডাকবে, সুনীতা, সুনু সোনা......
............।
সুনীতা
চমকে উঠলাম । কি কি রহিত! কোথায় তুমি রহিত । কি হয়েছে বলনা আমায়। আবার , আবার, আবার তুমি ডাকলে – কি আকুতি তোমার স্বরে – আমি আসছি । কবে থেকে আমি তোমার এই ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, সারাদিন, সারারাত, নাওয়া, খাওয়া, শোয়া, সব কিছুর ওপাড়ে তোমার ডাক আসবে, আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারনা , তুমি আমার, শুধু আমার । এরা কেউ কিচ্ছু জানেনা । কি বলে জান, বলে তুমি নাকি চলে গেছ অনেক দূরে, আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা আমার কাছে । কি বোকা এরা না! জানেনা তুমি আমার স্বপ্নে আস, আমরা চুপি চুপি কথা বলি । মাঝে মাঝে ওই জানলার ওপারে তুমি এসে দাঁড়াও, আমায় হাতছানি দিয়ে ডাক । কিন্তু যাব কি করে, এরা যে আমায় বন্দী করে রেখেছে এই ঘরে । আজ কেন কেউ বাড়িতে নেই, আমার ঘরের দরজাও খোলা । আমি আসছি , আমি আসছি রহিত । কোনো সারাশব্দ নেই । নিঃশব্দ, নিঃঝুম বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় । আমায় যেতে হবে তোমার কাছে । কোথায় তুমি রহিত । ঐ তো, ঐ দূরে ভীরের মধ্যে মিশে চলেছ । তোমার ধুসর জামা, ধুসর প্যান্ট আমি ঠিক চিনতে পারছি । কেন লুকোচুরী খেলছ আমার সঙ্গে । তুমি ঈশারা করছ আমায় ! হ্যাঁ হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি , আমাদের লুকিয়ে চলতে হবে । তাই না! না হলে যে ওরা জানতে পেরে যাবে ।আমার ঠোঁঠের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে গেল । আর কত দূর রহিত, কত পথ তো হাঁঠলাম । আর কেন, এবার এস কাছে । আমি যে হাঁপিয়ে পড়েছি । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । এই ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে বেড়ে ঢাকের মতন ধক ধক করবে, আমি ভীষন ভয়ে কুঁকরে যাব । রহিত, লক্ষিটি আর দেরি কোরোনা । আমি কোথায়, এটা কোন রাস্তা । এখন কি দুপুর না সন্ধ্যে । সব গুলিয়ে যাচ্ছে । কি করব এখন আমি, না না ভয় পাব না, তুমি তো আছো, লুকিয়ে মজা দেখছ না রহিত ! আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেব । আচ্ছা ঐ ট্রাফিক পুলিশটা কে জিগ্যাসা করব? এটা কোন রাস্তা বলবেন আমাকে, আর এখন কি রাত না দিন সেটাও যদি একটু বলে দেন । কি অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে পুলিশটা কেন কি করেছি আমি ! কি রকম তেড়ে উঠল দেখ , কি রকম ভাবে বলল – যান যান রস্তার ওপারে গিয়ে হাঁটুন । তুমি দূর থেকে দেখছ রহিত আমার অপমান, তবু তুমি সামনে আসবে না! একি রাস্তায় এত রক্ত কেন ! এত লাল রক্ত । কি বলছেন , এটা রক্ত নয়, আবির, আজ দোল । কি কান্ড রহিত আমি ভুলেই গেছি আজ দোল । কত রঙ চার দিকে, সবাই রঙ মেখেছে । খুশির রং আনন্দের রঙ । শুধু আমিই সাদা কাপরে পথে পথে ঘুরছি, এস রহিত, কাছে এস, আমার তোমার রঙে ভরে দাও । কে , কে ডাকছেন আমায়, কে আপনি, আমার কাঁধে হাত রেখেছেন । আপনাকে কি রহিত পাঠিয়েছে । তাইতো বলি, রহিত কি আর আমাকে ফেলে দিতে পারে । নিজে আসতে পারবে না, তাই আপনাকে পাঠিয়েছে বুঝি ? কোথায় যেতে হবে বলুন, কোথায় গেলে রহিতের সঙ্গে দেখা হবে । ঐ ট্যাক্সি করে নিয়ে যাবেন আমাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন না, আমার আর দেরী সইছেনা । ওনারাও যাবেন আমাদের সঙ্গে, রহিতের বন্ধু আপনারা ! বাঃ বেশ, চলুন চলুন , না হলে আবার ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, কিছুতেই রহিতের কাছে যেতে দেবে না । আমার বুকের মধ্যে সানাই বাজছে রহিত, এতদিন পরে তুমি আমায় ডেকে নিলে । কতদিন পরে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি একটু শান্তি পাব আজ । এরা আমায় কেউ ভাল বাসেনা । বলে তুমি নাকি বুলাকে বিয়ে করেছ । কি অদ্ভুত কথা । তুমি কখন আমাকে ছেরে আর কারুকে ভালবাসতে পার নাকি ? সে যে তোমার স্বপ্নেও তুমি ভাবতে পারনা, সে আমি খুব ভাল জানি । মা আমায় আজকাল শুধু বকে আর জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয় , বলে ঘুমো, ঘুমো । কেন আমি কি পাগল যে সারাদিন ঘুমাব । আমি তো তোমার কাছে যাব, এই যেমন আজ যাচ্ছি । একি আপনারা এমন করছেন কেন ? আমার ভীষণ লাগছে যে । রহিত না আপনাদের বন্ধু, আপনাদের আমাকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে , তবে আপ্......উঃ, রহিত, তুমি এখনো আসবেনা ...ও মা গো, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আপনাদের দুটি পায়ে পড়ি , আমাকে রহিতের কাছে নিয়ে চলুন না...রহিত্...।তুমি কেমন ডাক পাঠালে, তুমি কেমন পরীক্ষা নিচ্ছ ? ওমা গো...মাআআআআআআ...
Subscribe to:
Posts (Atom)