Tuesday, April 12, 2011

সুনীতা

সুনীতা


সুনীতা, ও সুনুমা আমার, কোথায় গেলি রে ! আয় তো এদিকে একবার ।উঃ , আর পারা যায় না ।মা যে কি করে, সারাদিন ডেকেই চলেছে । একটু যে শান্তিতে গল্পের বই পড়ব, তার যো নেই । কী হোলো কি মা, ডাকছ কেন ? সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ।বাঃ, বেশ তো লুচি ভাজছ, বেশ সুন্দর ফুলছে দেখছি, দাও তো মা একটা , চিনি দিয়ে খেয়ে দেখি । আরে, আরে ...কি যে করিস ! দেখছিস তো আলুর চরচরিটা চাপান আছে, একটু সবুর কর না । না মা, লুচি দিয়ে চিনি দিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা । তা বলতো ডাকছিলে কেন ? না , বলছিলাম ওপরের ঘরটা একটু দেখে আয়না মা, সম্বিত ফিরল কিনা । মা, এটা তোমার নেহাত বাড়াবাড়ি । দাদা আর বার বছরের বাচ্চাটি নেই, যে স্কুল থেকে ফিরে লুকিয়ে ছাতে গিয়ে ঘুরি ওড়াবে । অফিস যাচ্ছে এখন তোমার ছেলে , গট মট করে বাড়ি ফিরবে হাঁক-ডাক দিয়ে বোঝাবে না, তার মর্জাদা এখন অনেক বেশি । সুনীতা, চুপ কর বলছি । বড্ড বাড় বেড়ে গেছ না , দেব মাথায় এক গাঁট্টা, কখন যে দাদা এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি । ঈশশ...মারো তো দেখি ... আমি কোমরে হাত দিয়ে ঘার বেঁকিয়ে তাকালাম । আচ্ছা আচ্ছ হয়েছে , এবার হাত মুখ ধুয়ে, কাপড় ছেড়ে আয় দেখি বাবা , আমি তোদের জলখাবার টেবিলে রাখছি । দাদা জামা কাপড় ছেড়ে এসে আমরা দুজনে রোজকার রুটিন চালু করি, সেটা হচ্ছে , মা আজ কি কি করেছে আর কি কি করেনি । কি কি করেছের মধ্যে আছে, মা সকাল এগারটা অব্দি না খেয়ে ছিল, আর ডাক্তার বলেছেন মার পেটে আলসার, তাই পেট খালি রাখা চলবে না, সকাল বেলায় তো একেবারেই নয় ; দ্বিতীয়ত, মা অন্তত পক্ষে আট কাপ চা খেয়েছে, যেখানে ডাক্তার বলেছেন সারা দিনে চার কাপের বেশি কিছুতেই নয় । সবার থেকে বড় অন্যায় , মা ভাত খাবার পরে, লুকিয়ে পাশের বাড়ির চারুমাসীর কাছে থেকে দোক্তা পাতা দিয়ে পান খেয়েছে ।

কি কি করেনি ? মা সময় মতন ওষুধ খায়নি । মা সময় মতন স্নান করেনি, সময় মতন খায় নি, দুপুরে একটুও বিশ্রাম নেয় নি......এর পরে চলল ছেলের শাসন । মা তো সব কথাই চুপ চাপ শোনে । মাথা নাড়ে আর বলে, এবার থেকে ডাক্তারের সব কথা শুনে চলব রে খোকা, আর রাগ করিস না । তোদের বাবা কে বলিস না সুনী মা আমার, তিনি বড্ড রাগা রাগি করবেন ।একেই প্রেসার চড়া, তুই কি চাস কোনো ক্ষতি হয়ে যাক ! এমন মায়ের ওপর কি আর রাগ করে থাকা যায় । একটু পরে ফিরলেন বাবা । ও সুনু মা আমার...আয় দেখি কাছে, তোর মুখটা দেখি একটু । ছুটে এলাম । বাবা আদর করে মুখটা তুলে ধরলেন । আহা এমন সরল, সুন্দর মেয়ে আমার কার না কার বাড়ি যাবে । সেখানে কি কেউ তোর কদর বুঝবে রে মা । পরের বাড়ি গিয়ে বুড় ছেলেটাকে ভুলে যাস না রে মা । ওমনি আমার চোখে আষাঢ়-শ্রাবণ । এমন করে বললে কিন্তু আমি বিয়ে করবনা বাবা । এমন সুখের বাড়ি ছেড়ে কি করে যে যাব আমি সত্যি কল্পনা করতে পারিনা । কিন্তু তা বললে কি হয় । আমার বিয়ে তো ঠিক । এই ফাল্গুনের বাইশ তারিকে, রবিবার, গোধুলি লগ্নে । ছেলের নাম রহিত রায় । আমার মনে মনে জপের মালা । এখন থেকেই আমার বুকের মধ্যে এত্ত খানি জায়গা করে নিয়েছে । তার ধারাল নাক, উঁচু কপালের নিভে উজ্জ্বল মর্ম্মস্পর্শি দৃষ্টি, অর্জুনের মতন লক্ষ্যভেদ করেছে । আমার হৃদয় তিরবিদ্ধ মাছের মতন ছটফট করে । কবে তার হাতে সমর্পন করে মুক্তি পাবে সে। তার বাড়ি হাওড়া বাতাইতলা, এখান থেকে অনেক অনেক দূর । কোথায় বালিগঞ্জ ফাঁড়ি আর কোথায় হাওড়া বাতাইতলা । কিন্তু এখন ঐ হাওড়া বাতাইতলা আমার কানে মধু ঢালে , আহা , কি আকর্ষন ঐ জায়গার, যেখানে আমার রহিত থাকে, যেখানে আমাকে সে নিয়ে যাবে । আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি । আচ্ছা রহিত কি এখন আমার কথা ভাবছে ? আমার কথা ভেবে সে কি করছে –মনে মনে আমায় আদর করছে কি? ভাবেই লজ্জায় আর আক অনির্বচনীয় সুখে আমার সারা শরীর কেঁপে ওঠে । দিন এগিয়ে আসে । ও সুনীতা স্যাঁকড়া এসেছে যে আয় দেখি গয়নার ডিসাইন টা দেখে যা । ও তুমি দেখ মা , আমার দেখার দরকার নেই । কি যে বলিস মা, তোর বিয়ে তুই না দেখলে চলবে কেন । আয় আয় মা, তর চুরির মাপ দিয়ে যা । যাই , গিয়ে বসি , আর মনে মনে ভারি লজ্জা করে । দেখ দেকি আমার জন্য আমার বাবা-মার কত টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে । ঈশ , আমি যদি একটা চাকরি করতাম , তাহলে আমার বাবার এত কষ্টের টাকা এমন জলের মতন খরচ করতে দিতাম না । শোনো মেয়ের কথা , বাবা মেয়ের বিয়েতে খরচ ফরবে না তো কি বেচারাম সান্নাল করবে ! বেচারাম সান্নাল আবার কে মা? চুপ কর ঐ কথার কথা আর কি! আজ বিকেলে কোথাও বেরস না , সোনাবৌদি আসবে , তোকে নিয়ে বিয়ের সারি কিনতে যাবে । মা গো , বিয়ের জন্য শুধু দুটো সারি কিনবে কিন্তু, বিয়ের আর বৌভাতের । আর সারির কোনো প্রয়োজন নেই । একগাদা টাকা খরচ । কত সারি তো বিয়েতে পাওয়া যাবে মা । চুপ কর তো, তোকে আর পাকামি করতে হবে না। আমাকে সেখাস না সুনী , শুধু দুটো সারী দিলে লোকে যে নিন্দে করবে । তাছাড়া আমার বুঝি কোনো সখ নেই । আমার পাঁচটা নয় দশটা নয়, একটি মাত্র মেয়ে, তার বিয়েতে আমার যথা সাধ্য দেব । কিন্তু দেখ মা , আমার বাবা কে যেন কোথাও ধার না নিতে হয় ।তোমাদের যা যতটুকু আছে , তাই দিয়ে আমাকে বিদায় করবে । আর একটা কথা মা, ও বাড়ি থেকে কিছু পন টন চায় নিতো ? তাহলে কিন্তু আমি বিয়ে করব না । মনে মনে ভয় বুক শুকিয়ে গেল । কি হবে যদি ওরা পন চেয়ে থাকে । আমি রহিত কে ছাড়া কি বাঁচব নাকি ? কিন্তু না , তা তো হয় নি। মা তো হেসেই সারা । কি যে তুই বলিস , ওরা বুঝি তেমন লোক । তোকে যে ওদের খুব পছন্দ । বলেছেন আপনার মেয়েকে এক কাপড়ে বিদায় করলেও আমরা নিয়ে যাব । একটা ভীষন ভার বুক থেকে নেমে গেল ।

সুনীতা মা আমার ওঠ মা, সুর্য উঠতে চলেছে, উঠে বস মা, আমার কোলের কাছে আয়, দই-খৈ খেয়ে নে মা। এর পরে তো সারাদিন উপস । না মা আমার ভাল লাগছেনা । এখন আমি ঐ সব খেতে পারবনা। আর একটু ঘুমাতে দাও মা । দেখ মেয়েকে, ওঠ বাছা , আজ যে তোর বিয়ে । দই-খৈ খাওয়া হল ।

ওরে সাখ বাজা, উলু দে, ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ এসে গেছে যে । ওমা কত বড় মাছ পাঠিয়েছে দেখ । আর কত কি । নে নে তাড়াতাড়ি মেয়ে কে আন, গায়ে হলুদ সেরে ফেলতে হবে । অনেক বেলা হল যে।গায়ে হলুদ সারা হল, কত ছবি উঠল । দুপুর না গড়াতে, সোনাবৌদি এসে হাজির । সুনীতা ওঠ , উঠে বোস তো দেখি, তোকে বৌ সাজতে হবে যে । এর পরে রহিত যে উড়িয়ে নিয়ে যাবে তোকে । সাজা হল । আহা কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে । ওরে ঘোরা ঘোরা সাতপাকে বাঁধতে হবে যে । আর তো ছাড়ান নেই বাবাজীবন, চিরসাথী করে নিয়েছ । মাথার ওপর চাদরটা তোল একটু, তাকাও দু-জনে দেখ দুজনকে, মালা বদল কর । কাঁপা হাতে মালা বদল হল । চোখ তুলে তার চোখের গভীরে আর একবার হারিয়ে গেলাম ।

ফুলসজ্জা ! না কোনো কথা নয় । এমন রাত আমার জীবনে আর আসেনি, আর কোনোদিনও আসবে না। এমন হয় বুঝি এ রাত, এমন মধুর, এমন লজ্জার, এত সুখের । আমি তার দুহাতের মাঝে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলাম যেন । রহিত, আমার রহিত ।

সুনীতা , ও বৌ দেখ তোমার সঙ্গে পাশের বাড়ির বুলা নামের মেয়েটি দেখা করতে এসেছে । তবে আমি সাবধান করে দিচ্ছি । ওকে বেশি পাত্তা দিও না, তেমন সুবিধার মেয়ে নয় । বুঝলে – শাশুরি বোঝালেন । এলাম ভাই তোমার সংগে আলাম করতে । তোমার নাম বুঝি সুনীতা । বাঃ সুন্দর নাম, তেমনি সুন্দর দেখতে তোমায় । বিয়ের দিন আসতে পারিনি, কাজ ছিল । আজ এসেছি , এ নাও একটা ছোট্ট উপহার , ‘চোখের বালি’ । আজ থেকে আমি তোমাকে চোখের বালি পাতালাম । পড়েছ তো রবিঠাকুরের চোখের বালি । আমি দেখলাম একটি শ্যামলা , সুস্ক, রাগী ও অসুন্দর যুবতী । বোসো ভাই । নিশ্চয়, রবিঠাকুরের কোনো গল্প, উপন্যাস আমার না পড়া নেই ভাই । আর ‘চোখের বালি’ তো আমার বিশেষ প্রিয় । যুবতী সামান্য হাসল, হাসলে তাকে বেশ দেখায় । তোমার শাশুরি বলেননি আমার থেকে সাবধান থাকতে । মিথ্যা বলবনা বলে, চুপ করে থাকলাম । রহিত তো অফিস গেছে, তা তোমরা মধু-চন্দ্রিমা করতে কোথায় যাবে ? আমায় সমুদ্র বড় টানে , আমি বললাম । না বাপু সেটা বলতে যেওনা আবার, রহিতের তো পাহাড় পছন্দ, অন্তত আগে তো তাই বলত । জানিনা এখন মত পাল্টেছে কিনা । এ যুবতী সে কথা কেমন করে জানল , সে কথা আমি জানতে চাইলাম না । কিছু এদিল ওদিক কথা, শেষে আজ যাই ,যুবতী চলে যেতে আমার মন বড় অস্থির হল । রাতে বিছানায় দু-হাতের মধ্যে বেঁধে রহিত যখন আময় খুঁজছে , আমি বললাম , তুমি বুঝি পাহাড় ভালবাস ? হঠাত এমন প্রশ্ন কেন , অবাক আর বিরক্ত রহিত আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল । না আজ বুলা এসেছিল কিনা সেই বলল । এবার বিছানা থেকে উঠে সিগারেটে আগুন । তাই নাকি বুলা এসেছিল । কেন, কে আসতে দিল । আর কি বলেছে সে তোমায় ? ওর সঙ্গে আর বেশি কথা বোলো না। মেয়েটা ভাল নয় । সে রাতে এই পর্যন্ত ।

সুনীতা আছে ? না বাপু সে এখন খুব ব্যাস্ত, দেখা হবে না । তুমি আজ এস – আমার শাশুরি মা জানালেন । আমি তো জানলা থেকে তাদের দেখছি , তারা একতলায় সদরে দাঁড়িয়ে । এই তো আমি মা । আমার কাজ হয়ে গেছে, ওকে আসতে বলুন । শাশুরি সরে গেলেন । যুবতী আমার ঘরে । যাক তুমি ডাকলে তাহলে । আমি তো ভাবলাম রহিত তোমাকে বারন করে থাকবে । কেন বলতো , কেন এরা তোমাকে আসতে দিতে চায় না আমার কাছে ? আমি জিজ্ঞাসা না করে পারললাম না । আবার একটা মিস্টি হাসি । আচ্ছা সুনীতা, রহিত তোমাকে খুব ভালবাসে না? ভীষন, আমি অকপটে বললাম , বলে সুখ পেলাম । বুলার হাসিটা এবার সুন্দর লাগল না- তাই বুঝি ? আচ্ছা রহিত যখন তোমায় চুমু দেয়, ওর ডান হাতটা কি তোমার মাথায় চুলে বিলি কাটে ? নাকি ওর এ অভ্যাসটা পাল্টেছে ? আমার বুকে কি কেউ আগুনের শলা বিঁধিয়ে দিল । কষ্টে উচ্চারন করলাম , হ্যাঁ ।

তোমার এখানে এত কি কথা বাপু । বেলা হল সুনীতা যাও স্নান করে নাও । খেতে বেলা হয়ে যাবে যে । বুলা তুমি যাও তো বাপু, বাড়ি যাও এখন । আর এমন হুট বলতে বাড়ি চলে এসনা ।শাশুরির কথায় যুবতী উঠলেন ।সে রাতে যখন রহিত আমায় চুমু দিল , আমি আরষ্ঠ হয়ে আমার চুলে ওর ডান হাতটা খেলা করা অনুভব করছিলাম । শেষ-মেশ , আজ আমার শরীরটা ভাল নেই রুহিত , বলে পাশ ফিরে ঘুমের ভান ।

আমাকে জানতে হবে , ভিতরের ব্যাপারটা জানতে হবে । শাশুরি আজ কালীবাড়ি গেছেন , ফাঁকা বাড়িতে বুলাকে ডেকে আনলাম ।
। আমাকে বলত তুমি রহিতের এত কথা জান কি করে ? হাসিটা কি একটু বিদ্রুপের আজ – কি করে জানি, কারন রহিত আমার, রহিত আমার ছিল , আজ তোমার হয়েছে । আমি রহিতের রক্তের কনিকা কনিকা গুনে দিতে পারি । কেন তবে বিয়ে করনি তাকে? আমার কন্ঠস্বর আমি চিনতে পারলয়াম না । কারন আমি বুঝিনি রহিত লোভী, রহিত লম্পট, রহিত স্বার্থপর । আমাকে নিঃশ্বেস করে গ্রহন করেছে, তারপরে ছিবরে করে ফেলে দিয়েছে , কেন জান ; কারন তার টাকা চাই , সুন্দর বৌ চাই, সোনা চাই , যা আমার বাবা কোনোদিনো দিতে পারবেন না । হতে পারেনা বুলা- আমার বাবা কোনো বর-পন দেন নি । আমি ফুঁসে উঠলাম । তুমি বড্ড সরল, বড্ড বোকা সুনীতা ।পাড়ায় সবাই জানে এরা তোমার বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছে । কুড়ি ভরি সোনা, ফ্রিজ, প্লাসমা টিভি । আরো কত শুনতে চাও ?
তোমার কাছে কেন এলাম জানো সুনীতা । এরা তো পছন্দ করেনা তবু এলাম । তোমাকে একটা জিনিষ দেখাব । ব্লাউজের ভিতর থেকে একটা পুরান দোমরান কাগজ বের হল । দেখ পড়ে, দেখ না । এটা কি বুলাদি ?আমার হাত কাঁপছিল, কিন্তু আমি তবু নিলাম, আমি কাগজ খুললাম, একটা চিঠি, বাংলায় লেখা । প্রেম পত্র , আমার আদরের বুলা, তোমায় ছেড়া আমি আর থাকতে পারছিনা । তোমায় বুকে না ধরতে পারলে আমার যে ঘুম আসেনা রাতে । চল , যাবে আমার সঙ্গে, গ্যাংটক । অফিসের কাজে দুদিনের জন্য যাচ্ছি । কেউ জানতে পারবে না । চলনা দুটিতে ঘুরে আসি । আমাদের হনিমুন টা না হয় অগ্রিম সেরে রাখি । না বললে শুনব না । আসতেই হবে । দূর থেকে ছুঁড়ে দিলাম একটা লম্বা উম...।। তোমার, শুধু তোমার রহিত ।


তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও । আর আমার বাড়ি এসনা । আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা । ঠিক যেন রাস্তার পাগল এমন চিল চিৎকার । যুবতীর মুখে-চোখে কি ক্রূঢ় হাসি ।

তুমি আমার বাবার কাছে টাকা নিয়েছ ? কে বলেছে । কেন বুলা । তোমাকে না বারন করেছিলাম আমরা ওর সংগে কথা বলতে । কেন তোমাদের মুখোশ খুলে যাবে বলে ? চুপ কর বলছি । বড্ড সাহস হয়েছে না । আমি ভালর ভাল, খারাপের খারাপ । কি ভেবেছিলে । আমার মতন ইঞ্জিনিয়ার , টপ পোস্টে চাকরী করি, মোটা মাইনে , নিজের বাড়ি , শুধু তোমার রূপ দেখে বিয়ে করেছি । তাবলে টাকা নেবে ? আলবত নেব । একশবার নেব । নেকামী পছন্দ নয় আমার, এস শুতে চলে । না না তুমি রহিত নও, তুমি অন্য কেউ । আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চল । ও বাবা , ও মা , ও দাদাগো , আমাকে বাঁচাও ।


আপনাদের মেয়েকে রেখে গেলাম । ওর যে মাথার অসুখ ছিল সে কথা তো আগে বলেন নি । রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন । না বাবা , সে কি কথা । কি হয়েছে, কি করেছে আমার মেয়ে । বাবা তুমি ওদের সামনে হাতজোর কোরোনা । যেতে দাও । কিন্তু সুনু মা , কি হয়েছে, কেন জামাই এত রাগ করছে বলবি তো ? কিসের রাগ, কোন জামাই । এই লোকটা তোমার জামাই নয় বাবা, এ রহিত নয় । রহিতকে এরা লুকিয়ে রেখেছে কোথাও । ও ঠিক ফিরে আসবে একদিন, এসে আমায় নিয়ে যাবে । ততদিন আমাকে নিজের মত থাকতে দাও ।

ডাক্তারবাবু ভালো লোক । আমাকে বকে না । কিন্তু বড্ড প্রশ্ন করেন ।।আমার কোনো অসুখ নেই যত বলি কেউ শোনেনা । এত্ত এত্ত ওষুধ । খাবনা আমি কোনো ওষুধ খাবনা ।

কত দিন, কত মাস, কত বছর কেটে গেল । আর কেউ ডাকেনা সুনীতা বলে, সুনুমা বলে । কেন ডাকবে আমি যে পাগল । আমি যে বাবার ঘারে এসে চেপেছি । আমি যে বাবা, মাকে লজ্জায় ফেলেছি । এখানে যে দাদা-বৌদি আমাকে আর ভালবাসেনা । আমি যে রহিত কে হারিয়ে ফেলেছি । রহিতের ঠিকানা হারিয়ে গেছে । নাকি বুলার ঠিকানাইয় চলে গেছে । না না তা কি করে হবে । সে তো অন্য রহিত, সে বুলার রহিত, সে আমার রহিত নয় । আমার রহিত আসবে, আমায় নিয়ে যাবে , আমি জানি, আবার আমাকে কেউ ভালবেসে, আদর করে ডাকবে, সুনীতা, সুনু সোনা......

............।

সুনীতা
চমকে উঠলাম । কি কি রহিত! কোথায় তুমি রহিত । কি হয়েছে বলনা আমায়। আবার , আবার, আবার তুমি ডাকলে – কি আকুতি তোমার স্বরে – আমি আসছি । কবে থেকে আমি তোমার এই ডাকের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, সারাদিন, সারারাত, নাওয়া, খাওয়া, শোয়া, সব কিছুর ওপাড়ে তোমার ডাক আসবে, আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারনা , তুমি আমার, শুধু আমার । এরা কেউ কিচ্ছু জানেনা । কি বলে জান, বলে তুমি নাকি চলে গেছ অনেক দূরে, আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা আমার কাছে । কি বোকা এরা না! জানেনা তুমি আমার স্বপ্নে আস, আমরা চুপি চুপি কথা বলি । মাঝে মাঝে ওই জানলার ওপারে তুমি এসে দাঁড়াও, আমায় হাতছানি দিয়ে ডাক । কিন্তু যাব কি করে, এরা যে আমায় বন্দী করে রেখেছে এই ঘরে । আজ কেন কেউ বাড়িতে নেই, আমার ঘরের দরজাও খোলা । আমি আসছি , আমি আসছি রহিত । কোনো সারাশব্দ নেই । নিঃশব্দ, নিঃঝুম বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম রাস্তায় । আমায় যেতে হবে তোমার কাছে । কোথায় তুমি রহিত । ঐ তো, ঐ দূরে ভীরের মধ্যে মিশে চলেছ । তোমার ধুসর জামা, ধুসর প্যান্ট আমি ঠিক চিনতে পারছি । কেন লুকোচুরী খেলছ আমার সঙ্গে । তুমি ঈশারা করছ আমায় ! হ্যাঁ হ্যাঁ , বুঝতে পেরেছি , আমাদের লুকিয়ে চলতে হবে । তাই না! না হলে যে ওরা জানতে পেরে যাবে ।আমার ঠোঁঠের কোনায় এক চিলতে হাসি খেলে গেল । আর কত দূর রহিত, কত পথ তো হাঁঠলাম । আর কেন, এবার এস কাছে । আমি যে হাঁপিয়ে পড়েছি । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করছে । এই ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে বেড়ে ঢাকের মতন ধক ধক করবে, আমি ভীষন ভয়ে কুঁকরে যাব । রহিত, লক্ষিটি আর দেরি কোরোনা । আমি কোথায়, এটা কোন রাস্তা । এখন কি দুপুর না সন্ধ্যে । সব গুলিয়ে যাচ্ছে । কি করব এখন আমি, না না ভয় পাব না, তুমি তো আছো, লুকিয়ে মজা দেখছ না রহিত ! আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেব । আচ্ছা ঐ ট্রাফিক পুলিশটা কে জিগ্যাসা করব? এটা কোন রাস্তা বলবেন আমাকে, আর এখন কি রাত না দিন সেটাও যদি একটু বলে দেন । কি অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাকে পুলিশটা কেন কি করেছি আমি ! কি রকম তেড়ে উঠল দেখ , কি রকম ভাবে বলল – যান যান রস্তার ওপারে গিয়ে হাঁটুন । তুমি দূর থেকে দেখছ রহিত আমার অপমান, তবু তুমি সামনে আসবে না! একি রাস্তায় এত রক্ত কেন ! এত লাল রক্ত । কি বলছেন , এটা রক্ত নয়, আবির, আজ দোল । কি কান্ড রহিত আমি ভুলেই গেছি আজ দোল । কত রঙ চার দিকে, সবাই রঙ মেখেছে । খুশির রং আনন্দের রঙ । শুধু আমিই সাদা কাপরে পথে পথে ঘুরছি, এস রহিত, কাছে এস, আমার তোমার রঙে ভরে দাও । কে , কে ডাকছেন আমায়, কে আপনি, আমার কাঁধে হাত রেখেছেন । আপনাকে কি রহিত পাঠিয়েছে । তাইতো বলি, রহিত কি আর আমাকে ফেলে দিতে পারে । নিজে আসতে পারবে না, তাই আপনাকে পাঠিয়েছে বুঝি ? কোথায় যেতে হবে বলুন, কোথায় গেলে রহিতের সঙ্গে দেখা হবে । ঐ ট্যাক্সি করে নিয়ে যাবেন আমাকে, হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন না, আমার আর দেরী সইছেনা । ওনারাও যাবেন আমাদের সঙ্গে, রহিতের বন্ধু আপনারা ! বাঃ বেশ, চলুন চলুন , না হলে আবার ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, কিছুতেই রহিতের কাছে যেতে দেবে না । আমার বুকের মধ্যে সানাই বাজছে রহিত, এতদিন পরে তুমি আমায় ডেকে নিলে । কতদিন পরে তোমার বুকে মাথা রেখে আমি একটু শান্তি পাব আজ । এরা আমায় কেউ ভাল বাসেনা । বলে তুমি নাকি বুলাকে বিয়ে করেছ । কি অদ্ভুত কথা । তুমি কখন আমাকে ছেরে আর কারুকে ভালবাসতে পার নাকি ? সে যে তোমার স্বপ্নেও তুমি ভাবতে পারনা, সে আমি খুব ভাল জানি । মা আমায় আজকাল শুধু বকে আর জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয় , বলে ঘুমো, ঘুমো । কেন আমি কি পাগল যে সারাদিন ঘুমাব । আমি তো তোমার কাছে যাব, এই যেমন আজ যাচ্ছি । একি আপনারা এমন করছেন কেন ? আমার ভীষণ লাগছে যে । রহিত না আপনাদের বন্ধু, আপনাদের আমাকে নিয়ে যেতে পাঠিয়েছে , তবে আপ্......উঃ, রহিত, তুমি এখনো আসবেনা ...ও মা গো, আমি যে মরে যাচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আপনাদের দুটি পায়ে পড়ি , আমাকে রহিতের কাছে নিয়ে চলুন না...রহিত্‌...।তুমি কেমন ডাক পাঠালে, তুমি কেমন পরীক্ষা নিচ্ছ ? ওমা গো...মাআআআআআআ...

No comments:

Post a Comment