Wednesday, January 5, 2011

স্বাপ্নবিলাসী

কথায় আছে স্বপ্নবিলাসী। তা সবাই বলে আমাদের বিলাস রায় অরফে মন্টু এই খেতাপ সহজেই অর্জন করতে পারে । ছোটোবেলায় হাফপ্যান্ট পরা অবস্থা থেকেই মন্টুকে দেখেলেই আমরা বলতাম এই যে স্বপ্ন বিলাসী এসে গেছেন । তা মন্টু ঠাট্টা তামাশা গায় মাখতনা কোনোকালেই। স্বপ্ন দেখা অত সোজা নয় বুঝলি, স্বপ্ন দেখতে এলেম দরকার । আমি কি রকম টেকনিকালার স্বপ্ন দেখি তোরা জানিস! শুনলে তোরা হিংসায় কাঁচা পেয়ারা হয়ে যাবি । তোরা হাজার চেস্টা করলেও আমার মতন স্বপ্ন দেখতে পারবিনা, বুঝলি – অনুভুতি দরকার, বুঝলি অনুভুতি – তোদের মতন কেঠো পাজীদের কম্ম নয় ।

কেনরে বেটা ! কি এমন স্বপ্ন দেখিস, যে আমরে দেখতে পারবনা । রতন তো রেগে আগুন ,আর রঙিন স্বপ্ন দেখাটা কি এমন ব্যাপার, এই তো সেদিন আমি দেখলাম লাল সালোয়ার পরে পরী চলেছে রাস.. এয়, এয় শরু হল প্রেমাক্ষান- চুপ- চুপ কর বলছি –আমরা সবাই তেড়ে উঠলাম । সত্যি একে নিয়ে আর পারা যায় না, দেখ না দেখ পরী কে টেনে আনে । তুই বেটা পরীর স্বপ্ন দেখার কেরে ? তোকে পাত্তা দেয়? একবারো তোর দিকে ফিরে তাকায় ? ফেকলু কোথাকার । পরীর স্বপ্ন দেখতে হলে বিমান দেখবে , পরীর সংগে ।ওর হেভি ইয়ে, পরী এখান দিয়ে যাবার সময় আড় চোখে কেমন তাকায় দেখেছিস বিমানের দিকে ! ছটকু ফোরোন কাটে ।
বেটা বিমানের চামচা , আমাদের ভাল না লাগলেও কেউ কিছু বলিনা । কি করে বলব – বিমানের চেহারাটা দেখলে গলা দিয়ে আর কথা বেরোয় না। এই লম্বা, ইয়া চওরা বুক, একেবারে অরন্যদেব ;আমরা তো সব ছুঁচো ওর কাছে ।আমাদের কি ইয়ে আছে শালা যে পরী বিমানকে ছেড়ে আমাদের দিকে তাকাবে ।

মনে মনে বিমানকে পরীর সামনে এক চড়ে নর্দমায় ফেলে দিলাম । এ ছাড়া আর উপায় কি , আর কি বা করতে পারি । পরী আমাদের পাড়ার সম্পদ । যেমন দেখতে, তেমনি লেখাপড়ায়, তেমনি খেলাধুলায় , এক্কেবারে, সর্বগুনসম্পন্না যাকে বলে ।পাড়ার সব যোয়ান ছেলেদের বুকে পরীর নামে ব্যাথা আছে । আমার ব্যাথাটা অনেক গভীর, অনেক বড় ক্ষত ।এরা সে ব্যাথার কি বোঝে , এক একটা গন্ডার ।পরীর বাড়িতে একমাত্র আমার যাওয়া-আসা আছে, তাই এরা আমাকে অনেকটা সমীহ করে । পরীর ছোটোভাই এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে, তাকে অঙ্কটা পড়াই আমি। আমাদের মধ্যে, ছটকুতো পানওয়ালা, গো-মুখ্যু আর বিমান অর্ধশিক্ষিত টাকাওয়ালা বাপের সুপুত্তুর , স্কুলের দশক্লাসের গন্ডী পাড় হয়নি । রতন গ্র্যাডুএট কিন্তু ওর বাবার সোনার দোকানে বসে । আমি আর মন্টু একসঙ্গে আষুতোশ কলেজ থেকে ফিজিক্সস অনার্স নিয়ে পাশ করে , কলকাতা বিশ্ববিদ্যাল থেকে নাইটে এমবিয়ে করেছি । গত ছ-মাস ধরে বেকার ।

বিমানকে কিছু না বলার আরো কারন আছে ।ওর বাবা শালা প্রমোটার ,অনেক কালো টাকা পকেট সব সময় গরম। কারনে, অকারনে ধার দেয়, রেসটুরেন্টে নিয়ে খাওয়ার । এক্ষুনি দরাজ গলায় বল্ল –চল নবীনায় ম্যাটিনি শো-টা মেরে আসি । বিমান থাকলে আমরা কেউ পকেটে হাত দিই না । আজ আমার মুড নেই ।বললাম –না, রে তোরা যা , আমি আজ যেতে পারবনা ।

কেনরে তোর কি রাজকার্য আছে ?

তোরা তার কি বুঝবি রে, আকাট মুখ্যুর দল ! আমার আজ একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে। বেশ গর্বের সঙ্গে কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে আমি উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম । মনটা শালা এখন নিমতিত । আমার তো সবি ছিল, শিক্ষা, পরিচয় , চেহারা –সবাই তো বলে আমাকে নাকি অনেকটা হৃতিকের মতন দেখতে । চাকরীও পেতে চলেছি । তবে আমি শালা বিমানের থেকে কম কিসে । যদি না ভগবান মেরে না রাখত । শালার ভগবান কি আর কোনো কাজ নেই, লোক বেছে বেছে বাঁশ দেওয়া ।আমার ইন্টারভিউ দুপুর আড়াইটে ।এখন বাজে দশটাচল্লিশ , হাতে অনেক সময় । ঘুরে আসবনাকি কবিরাজের কাছ থেকে । শুনলাম বেটার ছেলে ধন্বন্তরী, একটা ট্রাই নেব নাকি!

আরে , আরে, কে রে ধাক্কা মারছিস । চমকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি ,মন্টুটা দাঁত কেলাচ্ছে – হাঁফ নিয়ে বল্ল –কোথায় ইন্টারভিউ রে তোর ! কিছু বলিসনিতো আগে ! আমি ভয়ানক মুখ করে বললাম –যাচ্ছি একটা শুভ কাজে, দিলি তো বাধা শালা আহাম্মক । মারব পাছায় এক লাথি । মুখ কাঁচু মাচু করে মন্টু – রাগ করছিস কেন রে । জানিস তো আমার বাড়ির অবস্থা । ছোট বোনটা শালা রোজ বিনুনি দুলিয়ে, ব্যাগ ঝুলিয়ে আপিস যাচ্ছে । প্রেস্টিজে আলকাতরা । তোর ছোটমামা তো ইনফোসিস এ –একটু বলিস না আমার হয়ে । তুই না আমার হাফ-প্যান্টের ইয়ার ! স্বপ্ন-টপ্ন সব ছাই রঙা হয় গেছে রে , রং-টঙ সব মুছে যাচ্ছে ।থালার মতন গোল মুখটাকে যথা-সাধ্য করুন করল ।

আমি চোখ সরু করে দেখলাম ওকে । বটে, এই নাকি স্বপ্নবিলাসী ।বেটাচ্ছেলে ছ-মাসেই টেকনিকলার থেকে সাদা-কালোতে নেমে এসেছে ।জীবনে রঙ না থাকলে স্বপ্নে দেখেনা যে, সে আবার স্বপ্নের, অনুভবের রেলা নায় ।

আমাকে দেখ, দ্যাখ শালা আমার দিকে তাকিয়ে । আমি স্বপ্নে পরীকে দেখেছি, শালা আমার বিছানায় । আমি পেরেছিরে, স্বপ্নে পেরেছি রে শুয়ার । ঘুমের থেকে উঠে তোদের মতন পা-জামা কাচতে দিতে হয়না রে আমায়, তবু আমি স্বপ্নে পেরেছি রে শালা ।

No comments:

Post a Comment